ঢাকা ০৪:৪২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২১ জুলাই ২০২৫

চাঁদের দূরবর্তী অংশের লুকানো ইতিহাস উন্মোচন

  • আপডেট সময় : ০৯:০৭:২৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ জুলাই ২০২৫
  • ১৩ বার পড়া হয়েছে

প্রযুক্তি ডেস্ক: চাঁদের দুই পাশ কেন এত ভিন্ন বা আলাদা তা কয়েক দশক ধরেই ভাবাচ্ছে বিজ্ঞানীদের। পৃথিবী থেকে চাঁদের যে পাশটি দেখা যায়, তা ‘নিকটবর্তী পাশ’ নামে পরিচিত। চাঁদের এ পাশটি অপেক্ষাকৃত মসৃণ ও এখানে বেশি আগ্নেয়গিরির সমতলভূমি রয়েছে। বিপরীতে, ‘দূরবর্তী পাশটি’ অমসৃণ, রুক্ষ ও অনেক কম সক্রিয়।

এখন চীনের চাং’ই-৬ মিশনের সৌজন্যে দীর্ঘদিন ধরে থাকা চাঁদের এই দূরবর্তী পাশের রহস্য সমাধানের নতুন সূত্র পেয়েছেন বলে দাবি গবেষকদের।

২০২৪ সালের ৩ মে উৎক্ষেপণ করা চাং’ই-৬ ছিল ইতিহাসের প্রথম মিশন, যা চাঁদের দূরবর্তী পাশ থেকে নমুনা সংগ্রহ করে পৃথিবীতে ফিরিয়ে এনেছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।
চাঁদের সবচেয়ে বড়, গভীর ও প্রাচীনতম গর্ত হিসেবে পরিচিত ‘সাউথ পোল-আইটকেন বেসিন’-এ অবতরণ করে চাং’ই-৬। মহাকাশযানটি চাঁদের মাটি ও শিলার মোট এক হাজার নয়শ ৩৫.৩ গ্রাম নমুনা সংগ্রহ করে ও সেগুলো ২০২৪ সালের ২৫ জুন নিরাপদে পৃথিবীতে নিয়ে আসে।

চাঁদের এ অঞ্চলটি বহু বছর ধরেই মুগ্ধ করে আসছে বিজ্ঞানীদের। প্রায় চারশ ২৫ কোটি বছর আগে এক বিশাল সংঘর্ষে তৈরি হয়েছিল ‘সাইথ পোল-আইটকেন বেসিন’। ওই সংঘর্ষ এতটাই শক্তিশালী ছিল যে, এতে এক ট্রিলিয়নেরও বেশি পারমাণবিক বোমার শক্তির চেয়ে বেশি শক্তি নির্গত হয়েছিল।

গবেষকরা বলছেন, তবে সেই ভয়াবহ ঘটনার পর কী ঘটেছিল তা এতদিন স্পষ্ট ছিল না। তবে চাং’ই-৬ মিশনের মাধ্যমে চাঁদ থেকে আনা নতুন মাটি ও পাথরের নমুনা বিশ্লেষণ করে চাঁদের ভেতরের গঠন ও পরিবর্তনের ব্যাপারে কিছু বড় ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানতে পেরেছেন তারা।

গত এক বছরে চীনের শীর্ষস্থানীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যেমন ‘ইনস্টিটিউট অফ জিওলজি অ্যান্ড জিওফিজিক্স’ বা আইজিজি, ‘ন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল অবজারভেটরি’ বা এনএওসি এবং ‘নানজিং ইউনিভার্সিটি’র বিজ্ঞানীরা তাদের গবেষণার ফলাফল চারটি প্রচ্ছদ প্রতিবেদনে প্রকাশ করেছেন বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘নেচার’-এ।

এসব গবেষণায় উঠে এসেছে, কীভাবে চাঁদের ভেতর ও পৃষ্ঠে দীর্ঘস্থায়ী ছাপ ফেলেছে প্রাচীন ওই সংঘর্ষ। একটি আবিষ্কার হচ্ছে, চাঁদের দূরবর্তী পাশের আগ্নেয়গিরির কার্যকলাপ বিজ্ঞানীদের আগের অনুমান থেকেও অনেক বেশি সময় ধরে চলেছে। চ্যাং’ই-৬-এর আনা এসব নমুনা থেকে দুইটি আলাদা আগ্নেয়গিরির ঘটনার সন্ধান মিলেছে, যেখানে একটি প্রায় চারশ ২০ কোটি বছর আগে এবং অন্যটি দুইশো ৮০ কোটি বছর আগে। এর থেকে ইঙ্গিত মেলে, চাঁদে আগ্নেয়গিরি অগ্ন্যুৎপাত কম করে হলেও একশ ৪০ কোটি বছর ধরে চলতে পারে।

চাঁদের প্রাচীন চৌম্বকীয় ক্ষেত্রের গবেষণা করে আরেকটি বিস্ময়কর বিষয়ের খোঁজ পেয়েছেন গবেষকরা। এসব নমুনার পাথরের বিভিন্ন টুকরা থেকে ইঙ্গিত মিলেছে, বিজ্ঞানীরা যেটিকে ক্রমাগত কমে যাওয়া মনে করেছিল চাঁদের সেই চৌম্বকীয় ক্ষেত্র আসলে দুইশা ৮০ কোটি বছর আগে পুনরুজ্জীবিত হয়েছিল।

গবেষকরা বলছেন, চাঁদের চৌম্বকীয় ক্ষেত্র সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ওঠানামা করেছিল, সম্ভবত চাঁদের গভীরে থাকা অভ্যন্তরীণ পরিবর্তনের কারণে।

গবেষণা দলটি আরো খোঁজ পেয়েছে, চাঁদের নিকটবর্তী পাশের চেয়ে দূরবর্তী পাশের ম্যান্টলে পানি পরিমাণ অনেক কম। এই অসম পানির বণ্টন চাঁদের দুই পাশে এত পার্থক্য কেন রয়েছে এর রহস্য আরো জটিল করে তুলেছে।

শেষ পর্যন্ত এসব নমুনার রাসায়নিক গঠনে উঠে এসেছে, চাঁদের পৃষ্ঠের নিচে ‘অসম্ভব শুষ্ক’ একটি ম্যান্টল রয়েছে, যা সম্ভবত ‘সাউথ পোল-আইটকেন বেসিন’ তৈরির একই বিশাল সংঘর্ষ থেকে তৈরি হয়েছে।

গবেষকরা বলছেন, গবেষণার এসব চমকপ্রদ ফলাফল তো কেবল শুরু। চ্যাং’ই-৬ মিশন চাঁদের ইতিহাস সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের ধারণাকে আরো এগিয়ে নিয়েছে। একইসঙ্গে বিভিন্ন গ্রহ, বিশেষ করে পৃথিবী কীভাবে গড়ে ওঠে ও সময়ের সঙ্গে পরিবর্তিত হয়েছে তারও নতুন ধারণা দিয়েছে এ গবেষণা।

 

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

এক নারীকে দুই ভাই বিয়ে করে বললেন- আমরা গর্বিত

চাঁদের দূরবর্তী অংশের লুকানো ইতিহাস উন্মোচন

আপডেট সময় : ০৯:০৭:২৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ জুলাই ২০২৫

প্রযুক্তি ডেস্ক: চাঁদের দুই পাশ কেন এত ভিন্ন বা আলাদা তা কয়েক দশক ধরেই ভাবাচ্ছে বিজ্ঞানীদের। পৃথিবী থেকে চাঁদের যে পাশটি দেখা যায়, তা ‘নিকটবর্তী পাশ’ নামে পরিচিত। চাঁদের এ পাশটি অপেক্ষাকৃত মসৃণ ও এখানে বেশি আগ্নেয়গিরির সমতলভূমি রয়েছে। বিপরীতে, ‘দূরবর্তী পাশটি’ অমসৃণ, রুক্ষ ও অনেক কম সক্রিয়।

এখন চীনের চাং’ই-৬ মিশনের সৌজন্যে দীর্ঘদিন ধরে থাকা চাঁদের এই দূরবর্তী পাশের রহস্য সমাধানের নতুন সূত্র পেয়েছেন বলে দাবি গবেষকদের।

২০২৪ সালের ৩ মে উৎক্ষেপণ করা চাং’ই-৬ ছিল ইতিহাসের প্রথম মিশন, যা চাঁদের দূরবর্তী পাশ থেকে নমুনা সংগ্রহ করে পৃথিবীতে ফিরিয়ে এনেছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।
চাঁদের সবচেয়ে বড়, গভীর ও প্রাচীনতম গর্ত হিসেবে পরিচিত ‘সাউথ পোল-আইটকেন বেসিন’-এ অবতরণ করে চাং’ই-৬। মহাকাশযানটি চাঁদের মাটি ও শিলার মোট এক হাজার নয়শ ৩৫.৩ গ্রাম নমুনা সংগ্রহ করে ও সেগুলো ২০২৪ সালের ২৫ জুন নিরাপদে পৃথিবীতে নিয়ে আসে।

চাঁদের এ অঞ্চলটি বহু বছর ধরেই মুগ্ধ করে আসছে বিজ্ঞানীদের। প্রায় চারশ ২৫ কোটি বছর আগে এক বিশাল সংঘর্ষে তৈরি হয়েছিল ‘সাইথ পোল-আইটকেন বেসিন’। ওই সংঘর্ষ এতটাই শক্তিশালী ছিল যে, এতে এক ট্রিলিয়নেরও বেশি পারমাণবিক বোমার শক্তির চেয়ে বেশি শক্তি নির্গত হয়েছিল।

গবেষকরা বলছেন, তবে সেই ভয়াবহ ঘটনার পর কী ঘটেছিল তা এতদিন স্পষ্ট ছিল না। তবে চাং’ই-৬ মিশনের মাধ্যমে চাঁদ থেকে আনা নতুন মাটি ও পাথরের নমুনা বিশ্লেষণ করে চাঁদের ভেতরের গঠন ও পরিবর্তনের ব্যাপারে কিছু বড় ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানতে পেরেছেন তারা।

গত এক বছরে চীনের শীর্ষস্থানীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যেমন ‘ইনস্টিটিউট অফ জিওলজি অ্যান্ড জিওফিজিক্স’ বা আইজিজি, ‘ন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল অবজারভেটরি’ বা এনএওসি এবং ‘নানজিং ইউনিভার্সিটি’র বিজ্ঞানীরা তাদের গবেষণার ফলাফল চারটি প্রচ্ছদ প্রতিবেদনে প্রকাশ করেছেন বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘নেচার’-এ।

এসব গবেষণায় উঠে এসেছে, কীভাবে চাঁদের ভেতর ও পৃষ্ঠে দীর্ঘস্থায়ী ছাপ ফেলেছে প্রাচীন ওই সংঘর্ষ। একটি আবিষ্কার হচ্ছে, চাঁদের দূরবর্তী পাশের আগ্নেয়গিরির কার্যকলাপ বিজ্ঞানীদের আগের অনুমান থেকেও অনেক বেশি সময় ধরে চলেছে। চ্যাং’ই-৬-এর আনা এসব নমুনা থেকে দুইটি আলাদা আগ্নেয়গিরির ঘটনার সন্ধান মিলেছে, যেখানে একটি প্রায় চারশ ২০ কোটি বছর আগে এবং অন্যটি দুইশো ৮০ কোটি বছর আগে। এর থেকে ইঙ্গিত মেলে, চাঁদে আগ্নেয়গিরি অগ্ন্যুৎপাত কম করে হলেও একশ ৪০ কোটি বছর ধরে চলতে পারে।

চাঁদের প্রাচীন চৌম্বকীয় ক্ষেত্রের গবেষণা করে আরেকটি বিস্ময়কর বিষয়ের খোঁজ পেয়েছেন গবেষকরা। এসব নমুনার পাথরের বিভিন্ন টুকরা থেকে ইঙ্গিত মিলেছে, বিজ্ঞানীরা যেটিকে ক্রমাগত কমে যাওয়া মনে করেছিল চাঁদের সেই চৌম্বকীয় ক্ষেত্র আসলে দুইশা ৮০ কোটি বছর আগে পুনরুজ্জীবিত হয়েছিল।

গবেষকরা বলছেন, চাঁদের চৌম্বকীয় ক্ষেত্র সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ওঠানামা করেছিল, সম্ভবত চাঁদের গভীরে থাকা অভ্যন্তরীণ পরিবর্তনের কারণে।

গবেষণা দলটি আরো খোঁজ পেয়েছে, চাঁদের নিকটবর্তী পাশের চেয়ে দূরবর্তী পাশের ম্যান্টলে পানি পরিমাণ অনেক কম। এই অসম পানির বণ্টন চাঁদের দুই পাশে এত পার্থক্য কেন রয়েছে এর রহস্য আরো জটিল করে তুলেছে।

শেষ পর্যন্ত এসব নমুনার রাসায়নিক গঠনে উঠে এসেছে, চাঁদের পৃষ্ঠের নিচে ‘অসম্ভব শুষ্ক’ একটি ম্যান্টল রয়েছে, যা সম্ভবত ‘সাউথ পোল-আইটকেন বেসিন’ তৈরির একই বিশাল সংঘর্ষ থেকে তৈরি হয়েছে।

গবেষকরা বলছেন, গবেষণার এসব চমকপ্রদ ফলাফল তো কেবল শুরু। চ্যাং’ই-৬ মিশন চাঁদের ইতিহাস সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের ধারণাকে আরো এগিয়ে নিয়েছে। একইসঙ্গে বিভিন্ন গ্রহ, বিশেষ করে পৃথিবী কীভাবে গড়ে ওঠে ও সময়ের সঙ্গে পরিবর্তিত হয়েছে তারও নতুন ধারণা দিয়েছে এ গবেষণা।