ঢাকা ০৮:৪৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ জুলাই ২০২৫

ছয়জনে এক কিশোরী সাইবার বুলিংয়ের শিকার

  • আপডেট সময় : ০৮:৫৬:২৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫
  • ১৫ বার পড়া হয়েছে

নারী ও শিশু ডেস্ক: আধুনিক যুগে এক নতুন মনস্তাত্ত্বিক অত্যাচারের নাম অনলাইনে বুলিং বা সাইবার অপরাধ। ইন্টারনেটের সহজলভ্যতার কারণে আবালবৃদ্ধবনিতা প্রতিনিয়ত ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে সংযুক্ত হচ্ছে। কেনাকাটা থেকে শুরু করে আর্থিক লেনদেন, ইমেইল থেকে শুরু করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম- সবকিছুতেই জড়িয়ে আছে জীবন-জীবিকার সঙ্গে। বর্তমানে প্রযুক্তির ব্যবহার যত বাড়ছে, পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সাইবার অপরাধ।

সাইবার অপরাধ হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপত্তিকর মন্তব্য, অপমান, হুমকি, কটূক্তি, অবমাননাকর আচরণ করা, ব্ল্যাকমেইলিং করা, বিকৃত ছবি পোস্ট করা। এ ছাড়াও হ্যাকিং করে ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস করা, আপত্তিকর ইমেইল বা মেসেজ পাঠানো। অন্যের নামে মিথ্যা আইডি খুলে হয়রানি, উসকানি দেওয়া ও মিথ্যা তথ্য প্রচার করা। বুলিংয়ের ফলে ব্যক্তির মানসিক, সামাজিক এবং কখনো কখনো শারীরিক ক্ষতিও হয়। বুলিং এক ধরনের মানসিক বা মৌখিক অত্যাচার; যেখানে একজন মানুষ ইচ্ছাকৃতভাবে অন্যকে অপমান করে, হুমকি দেয় বা হেনস্তা করে।

সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশন (সিক্যাফ) সাইবার অপরাধ প্রবণতা প্রতিবেদনে দেখা গেছে, দেশে সাইবার অপরাধে যুক্ত হচ্ছে নতুন অপরাধ। এক বছরের ব্যবধানে এ হার দ্বিগুণের বেশি বেড়ে মোট অপরাধের ১১.৮৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। পর পর দুই বছরের জরিপ-ফল থেকে ১৮ বছরের কম বয়সী সাইবার আক্রান্ত শিশুদের হার কমে দাঁড়িয়েছে ১৩.৬৫ শতাংশে। ভুক্তভোগীদের মধ্যে সর্বোচ্চ ৭৮.৭৮ শতাংশের বয়স ১৮ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। এ ছাড়া আক্রান্তদের প্রায় ৫৯ শতাংশই নারী। অপরাধের ধরনের মধ্যে ২১.৬৫ শতাংশ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও অনলাইনে অ্যাকাউন্ট হ্যাকিংয়ের শিকার হয়ে শীর্ষে রয়েছে। বর্তমানে দেশে সাইবার জগতে ‘পর্নোগ্রাফি’ অপরাধ বৃদ্ধির প্রবণতা দেখা গেছে।

কলেজে সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত সুন্দরী চৌকস ও জনপ্রিয় এক শিক্ষিকার ছবি এআইর মাধ্যমে পর্নো ভিডিওতে এডিট করে নেটে ছেড়ে দেওয়া হয়। এসব ভিডিওর সত্য-মিথ্যা যাচাইয়ের আগেই সেই শিক্ষিকাকে পারিবারিক লাঞ্ছনার সম্মুখীন হতে হয়। পারিবারিক ও সামাজিক হেনস্তার শিকার হয়ে অতি আবেগে তিনি আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। পরে জানা যায় যে, ভিডিও ফেক ছিল। এমন ছবি ও ভিডিও ফাঁদে পড়ে সবচেয়ে বেশি টিনএজাররা। এ ছাড়া অনলাইনে যারা ব্যবসা করে তাদের লাইভে কত বিকৃত রুচির মানুষ কত রকম যে অশালীন মন্তব্য ও কটূক্তি করে তার ইয়াত্তা নেই।

তথ্যপ্রযুক্তির প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবীর নানা প্রান্তেই কিশোর-কিশোরীদের সাইবার নিপীড়নের শিকার হওয়ার ঘটনা অহরহ ঘটছে। এসব নিয়ে ধারাবাহিক আলোচনা হলেও সামগ্রিকভাবে চিত্র বদলায়নি। সম্প্রতি একটি গবেষণায় দেখা গেছে, স্কুলপড়ুয়া প্রতি ছয়জনের একজন সাইবার বুলিংয়ের শিকার হচ্ছেন।

সাইবার বুলিং প্রতিরোধে করণীয়: প্রথমত, প্রমাণ সংরক্ষণ করা। বুলিংয়ের শিকার হলে প্রথমেই সেই ঘটনার প্রমাণগুলো সংরক্ষণ করতে হবে। স্ক্রিনশট, মেসেজ বা যে কোনো ধরনের তথ্য জমা রাখুন, যা পরে প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপে সহায়ক হতে পারে। দ্বিতীয়ত, পাল্টা আক্রমণ না করা। বরং যতটা সম্ভব তা এড়িয়ে চলুন এবং নিজেদের মানসিক শক্তি ধরে রাখুন। তৃতীয়ত, অনেক ভুক্তভোগী নারী বা কিশোর-কিশোরী এই বিষয়টি পরিবার বা বন্ধুর সঙ্গে শেয়ার করতে দ্বিধাবোধ করে। শেয়ার করা অত্যন্ত জরুরি, কারণ আপনাকে মানসিক সহায়তা দিতে পারবে আপনার কাছের মানুষরাই। চতুর্থত, যদি কেউ আপনাকে হেনস্তা করে, সঙ্গে সঙ্গে সেই ব্যক্তির সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট ব্লক করে দিন। পঞ্চমত, আইনি সহায়তা গ্রহণ করুন, যদি বুলিংয়ের প্রভাব শারীরিক হুমকি বা জীবননাশের পর্যায়ে পৌঁছায়, তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশের সাহায্য নিন। বাংলাদেশে ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে জরুরি পুলিশ সেবা পাওয়া যায়।

আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

ছয়জনে এক কিশোরী সাইবার বুলিংয়ের শিকার

আপডেট সময় : ০৮:৫৬:২৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫

নারী ও শিশু ডেস্ক: আধুনিক যুগে এক নতুন মনস্তাত্ত্বিক অত্যাচারের নাম অনলাইনে বুলিং বা সাইবার অপরাধ। ইন্টারনেটের সহজলভ্যতার কারণে আবালবৃদ্ধবনিতা প্রতিনিয়ত ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে সংযুক্ত হচ্ছে। কেনাকাটা থেকে শুরু করে আর্থিক লেনদেন, ইমেইল থেকে শুরু করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম- সবকিছুতেই জড়িয়ে আছে জীবন-জীবিকার সঙ্গে। বর্তমানে প্রযুক্তির ব্যবহার যত বাড়ছে, পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সাইবার অপরাধ।

সাইবার অপরাধ হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপত্তিকর মন্তব্য, অপমান, হুমকি, কটূক্তি, অবমাননাকর আচরণ করা, ব্ল্যাকমেইলিং করা, বিকৃত ছবি পোস্ট করা। এ ছাড়াও হ্যাকিং করে ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস করা, আপত্তিকর ইমেইল বা মেসেজ পাঠানো। অন্যের নামে মিথ্যা আইডি খুলে হয়রানি, উসকানি দেওয়া ও মিথ্যা তথ্য প্রচার করা। বুলিংয়ের ফলে ব্যক্তির মানসিক, সামাজিক এবং কখনো কখনো শারীরিক ক্ষতিও হয়। বুলিং এক ধরনের মানসিক বা মৌখিক অত্যাচার; যেখানে একজন মানুষ ইচ্ছাকৃতভাবে অন্যকে অপমান করে, হুমকি দেয় বা হেনস্তা করে।

সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশন (সিক্যাফ) সাইবার অপরাধ প্রবণতা প্রতিবেদনে দেখা গেছে, দেশে সাইবার অপরাধে যুক্ত হচ্ছে নতুন অপরাধ। এক বছরের ব্যবধানে এ হার দ্বিগুণের বেশি বেড়ে মোট অপরাধের ১১.৮৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। পর পর দুই বছরের জরিপ-ফল থেকে ১৮ বছরের কম বয়সী সাইবার আক্রান্ত শিশুদের হার কমে দাঁড়িয়েছে ১৩.৬৫ শতাংশে। ভুক্তভোগীদের মধ্যে সর্বোচ্চ ৭৮.৭৮ শতাংশের বয়স ১৮ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। এ ছাড়া আক্রান্তদের প্রায় ৫৯ শতাংশই নারী। অপরাধের ধরনের মধ্যে ২১.৬৫ শতাংশ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও অনলাইনে অ্যাকাউন্ট হ্যাকিংয়ের শিকার হয়ে শীর্ষে রয়েছে। বর্তমানে দেশে সাইবার জগতে ‘পর্নোগ্রাফি’ অপরাধ বৃদ্ধির প্রবণতা দেখা গেছে।

কলেজে সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত সুন্দরী চৌকস ও জনপ্রিয় এক শিক্ষিকার ছবি এআইর মাধ্যমে পর্নো ভিডিওতে এডিট করে নেটে ছেড়ে দেওয়া হয়। এসব ভিডিওর সত্য-মিথ্যা যাচাইয়ের আগেই সেই শিক্ষিকাকে পারিবারিক লাঞ্ছনার সম্মুখীন হতে হয়। পারিবারিক ও সামাজিক হেনস্তার শিকার হয়ে অতি আবেগে তিনি আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। পরে জানা যায় যে, ভিডিও ফেক ছিল। এমন ছবি ও ভিডিও ফাঁদে পড়ে সবচেয়ে বেশি টিনএজাররা। এ ছাড়া অনলাইনে যারা ব্যবসা করে তাদের লাইভে কত বিকৃত রুচির মানুষ কত রকম যে অশালীন মন্তব্য ও কটূক্তি করে তার ইয়াত্তা নেই।

তথ্যপ্রযুক্তির প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবীর নানা প্রান্তেই কিশোর-কিশোরীদের সাইবার নিপীড়নের শিকার হওয়ার ঘটনা অহরহ ঘটছে। এসব নিয়ে ধারাবাহিক আলোচনা হলেও সামগ্রিকভাবে চিত্র বদলায়নি। সম্প্রতি একটি গবেষণায় দেখা গেছে, স্কুলপড়ুয়া প্রতি ছয়জনের একজন সাইবার বুলিংয়ের শিকার হচ্ছেন।

সাইবার বুলিং প্রতিরোধে করণীয়: প্রথমত, প্রমাণ সংরক্ষণ করা। বুলিংয়ের শিকার হলে প্রথমেই সেই ঘটনার প্রমাণগুলো সংরক্ষণ করতে হবে। স্ক্রিনশট, মেসেজ বা যে কোনো ধরনের তথ্য জমা রাখুন, যা পরে প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপে সহায়ক হতে পারে। দ্বিতীয়ত, পাল্টা আক্রমণ না করা। বরং যতটা সম্ভব তা এড়িয়ে চলুন এবং নিজেদের মানসিক শক্তি ধরে রাখুন। তৃতীয়ত, অনেক ভুক্তভোগী নারী বা কিশোর-কিশোরী এই বিষয়টি পরিবার বা বন্ধুর সঙ্গে শেয়ার করতে দ্বিধাবোধ করে। শেয়ার করা অত্যন্ত জরুরি, কারণ আপনাকে মানসিক সহায়তা দিতে পারবে আপনার কাছের মানুষরাই। চতুর্থত, যদি কেউ আপনাকে হেনস্তা করে, সঙ্গে সঙ্গে সেই ব্যক্তির সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট ব্লক করে দিন। পঞ্চমত, আইনি সহায়তা গ্রহণ করুন, যদি বুলিংয়ের প্রভাব শারীরিক হুমকি বা জীবননাশের পর্যায়ে পৌঁছায়, তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশের সাহায্য নিন। বাংলাদেশে ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে জরুরি পুলিশ সেবা পাওয়া যায়।

আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ