স্বাস্থ্য ও পরিচর্যা ডেস্ক: রান্না করতে যদি আলসেমি লাগে তবে এই খবর শুনে আনন্দ লাগতেই পারে। কারণ কষ্ট করে চুলা না জ্বালিয়ে বরং কাঁচা খেয়েই উপকার মিলবে কিছু সবজি থেকে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংগঠন ‘দ্য ফাউন্ডেশন ফর ফ্রেশ প্রোডিউস’ জানায়, দেশটির ৯০ শতাংশ মানুষ প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে ফল ও সবজি খায় না। যার কারণ হিসেবে তারা মূলত সময়ের অভাব, রান্নার অনিচ্ছা এবং সহজে প্রস্তুত করার পদ্ধতি না জানা এই বিষয়গুলোকে দায়ী করে। অথচ অনেক সবজি রয়েছে, যেগুলো কাঁচা খাওয়া যায় খুব সহজে। আর এতে প্রয়োজনীয় ভিটামিন, খনিজ এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট অক্ষুণ্ন থাকে। রিয়েলসিম্পল ডটকম-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক নিবন্ধিত পুষ্টিবিদ মারিয়া লুসি বলেন, “২০১৮ সালে করা এক গবেষণায় দেখা যায়, কাঁচা ফল ও সবজি খাওয়ার সঙ্গে মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি, হতাশা কমে যাওয়া এবং জীবনের প্রতি সন্তুষ্টি এই উপকারগুলো গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত।“
ক্যাপসিকাম বা বেল পেপার: ভিটামিন সি-এর উৎস
কানাডাভিত্তিক পুষ্টিবিদ অ্যাভরি জেনকার বলেন, “লাল বেল পেপার কাঁচা অবস্থায় খেলে এতে থাকা ভিটামিন সি ধ্বংস হয় না। কারণ ভিটামিন সি তাপ সহ্য করতে পারে না এবং পানিতে দ্রবণীয় বলে রান্নার সময় তা নষ্ট হয়ে যায়। আধা কাপ কাঁচা লাল বেল পেপারেই দৈনিক প্রয়োজনীয় ভিটামিন সি-এর শতভাগ পাওয়া যায়।” কাঁচা ক্যাপসিকাম খাওয়ার সহজ উপায়: ছোলা, তিলের পেস্ট, লেবুর রস, রসুন এবং অলিভ অয়েল দিয়ে খাওয়া, শুধু ছোলার সালাদ দিয়ে খাওয়া, র্যাপ ও স্যান্ডউইচে ব্যবহার করে খাওয়া যায়।
ব্রকলি: সালফোরাফেন বজায় রাখতে কাঁচাই শ্রেয়
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক পুষ্টিবিদ ও লেখক টবি অ্যামিডর বলেন, “ব্রকলিতে থাকা মেদরোসিনেজ নামক এক এনজাইম রান্নার সময় নষ্ট হয়ে যায়। এই এনজাইম সালফোরাফেন নামক উপাদান তৈরি করে, যা ক্যান্সার প্রতিরোধে এবং প্রদাহ কমাতে সহায়ক।” সর্বোচ্চ উপকারের জন্য ব্রকলি কাঁচা খেতে হবে। সালাদে কুচি করে দেওয়া, ছোলা, তিলের পেস্ট, লেবুর রস, রসুন এবং অলিভ অয়েলে ডুবিয়ে খাওয়া যায়।
রসুন: হৃদযন্ত্র সুস্থ রাখতে কাঁচা খাওয়া
রসুন সাধারণত মসলা হিসেবে ব্যবহৃত হলেও এটি একটি শক্তিশালী সবজি। এতে থাকে অ্যালিসিন, যা কাঁচা রসুন চিবানো বা কুচি করার সময় তৈরি হয়। অ্যালিসিন হৃদযন্ত্র ভালো রাখতে ও প্রদাহ প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে। অ্যামিডর বলেন, “১৪০ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রার বেশি হলে রসুনের অ্যালিসিন নষ্ট হয়ে যায়। কাঁচা রসুন খেতে কষ্ট হলে সালাদ ড্রেসিং, ডিপ বা মাখনে ব্যবহার করা যেতে পারে। এক কোঁয়া রসুন ঘষে টোস্টে লাগিয়ে তার ওপর টমেটো বা অ্যাভোকাডো দিলেও দারুণ লাগে।
বিট: রংয়েই আছে উপকার
অ্যাভরি জেনকার বলেন, “বিটে থাকা বেটালেইন নামক অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট তাপ সহ্য করতে পারে না। তাই রান্না করলে তা অনেকাংশে নষ্ট হয়ে যায়। বিটে আরও আছে ভিটামিন সি ও প্রাকৃতিক নাইট্রেট, যা রক্তপ্রবাহ বাড়িয়ে হৃদযন্ত্র ভালো রাখতে সহায়ক।“ কাঁচা বিট খাওয়ার উপায়: কুচি করে সালাদে দেওয়া, গাজর ও আপেলের সঙ্গে মিশিয়ে বা ‘স্লো’ করে খাওয়া। ‘স্ল’ হল বিভিন্ন কাঁচা সবজি বিশেষ করে বাঁধাকপি, গাজর ইত্যাদি পাতলা করে কেটে বা কুচি করে তৈরি করা একটি ঠা-া সালাদ, যা সাধারণত একটি ড্রেসিং বা সসের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়া হয়। এছাড়া স্মুদি বা ডিপস’য়ে ব্যবহার, পাতলা করে কেটে লেবু, অলিভ অয়েল ও চিজ দিয়ে বিট ‘কার্পাচিও’ বানানো। কার্পাচিও তৈরি করা হয় পাতলা করে কাটা কাঁচা উপাদান, লেবুর রস বা ভিনেগার, অলিভ অয়েল, লবণ-মরিচ/ পনির/ সবুজ ভেজষ মসলা দিয়ে।
গাজর: আঁশ ও মিষ্টতা দুইই অক্ষুণ্ন থাকে
গাজর এমন এক সবজি, যা কাঁচা খাওয়া সহজ, সুস্বাদু এবং উপকারী। এতে থাকা আঁশ হজমে সহায়ক, রক্তে চিনি ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে।
তবে, গাজরের বিটা-ক্যারোটিন রান্নার পর শরীর সহজে গ্রহণ করতে পারে। তাই সবচেয়ে ভালো ফল পাওয়ার জন্য কাঁচা ও রান্না করা, দুভাবেই গাজর খাওয়া উচিত।
গাজর কাঁচা খাওয়ার উপায়: লম্বা করে কেটে, ‘স্লো’তে বা মধু, ভিনেগার ও আদা দিয়ে ড্রেসিংয়ে ব্যবহার করে।
শসা: দেহ আর্দ্র ও ঠা-া অনুভূতির জন্য উপযোগী
শসা মূলত ফল হলেও সবজি হিসেবেই খাওয়া হয়। এটি ৯৫ শতাংশ পানি দিয়ে গঠিত, ফলে স্বাভাবিকভাবেই শরীরকে আর্দ্র রাখতে সাহায্য করে। এতে রয়েছে অল্প পরিমাণে পটাসিয়াম, ভিটামিন কে এবং ‘কিউকারবিটাসিন’ নামক অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা প্রদাহ কমাতে ও ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক। মারিয়া লুসি জানান, “শসা কাঁচা অবস্থায় খেলে মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি হয় বলেও গবেষণায় দেখা গেছে।”
শসা কাঁচা খাওয়ার উপায়: সালাদে, স্যান্ডউইচে, ঠা-া স্যুপে বা পাতলা টুকরা করে হামাস, চিজ বা স্মোকড স্যামনের সঙ্গে খাওয়া।
অতিরিক্ত টিপস: কাঁচা সবজি খাওয়ার আগে মনে রাখতে হবে
ভালো করে ধুয়ে নেওয়া: খোসা ছাড়ানোর পরেও সবজিতে মাটি ও ব্যাক্টেরিয়া থাকে। তাই ভালোভাবে ধোয়া জরুরি।
সুস্থ চর্বির সঙ্গে খাওয়া: সবজিতে থাকা পুষ্টি সাধারণত ‘ফ্যাট’ বা চর্বিতে দ্রবণীয় উপাদান। দেহে এই পুষ্টি ভালোভাবে শোষণের জন্য সঙ্গে অলিভ অয়েল, বাদামের সাথে খাওয়া ভালো।
আগেই কেটে রাখা: সপ্তাহান্তে সময় পেলে কাঁচা সবজি কেটে সংরক্ষণ করতে হবে। ভেজা টিস্যু দিয়ে মোড়ানো ‘এয়ারটাইট’ বা বায়ুরোধক পাত্রে রাখলে কাটা সবজি দীর্ঘ সময় টাটকা থাকবে।
রান্না ও কাঁচা দুইটাই রাখতে হবে খাদ্যতালিকায়: সবজি রান্না ও কাঁচা দুভাবে খেলে সর্বোচ্চ পুষ্টিগুণ পাওয়া যায়।
যেসব সবজি রান্নার চাইতে কাঁচাই স্বাস্থ্যকর
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ