ঢাকা ০২:৫১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

ফাঁস হওয়া ফোন কলের জন্য বরখাস্ত থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী

  • আপডেট সময় : ০৫:৫৭:৪২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ জুলাই ২০২৫
  • ১৭ বার পড়া হয়েছে

থাইল্যান্ডর সদ্য বরখাস্ত হওয়া প্রধানমন্ত্রী পায়েতংতার্ন সিনাওয়াত্রা -ছবি রয়টার্স

প্রত্যাশা ডেস্ক: ক্যাম্বোডিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী হুন সেনের সঙ্গে ফোনে কথোপকথনের ফাঁস হওয়া একটি অডিওকে কেন্দ্র করে থাইল্যান্ডের সাংবিধানিক আদালত দেশটির প্রধানমন্ত্রী পায়েতংতার্ন সিনাওয়াত্রাকে বরখাস্ত করেছেন।
ফাঁস হওয়া ওই ফোন কলকে ঘিরে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করার পর্বতসম চাপে ছিলেন পায়েতংতার্ন। ফোনে সীমান্ত বিরোধ নিয়ে হুন সেনের সঙ্গে পায়েতংতার্নের কথা হয়েছিল। ফোনালাপের সময় পারিবারিকভাবে পরিচিত হুন সেনকে ‘আঙ্কেল’ সম্বোধন করে তাকে ‘সহযোগিতা’ করার আশ্বাস দিয়েছিলেন পায়েতংতার্ন। পাশাপাশি ক্যাম্বোডিয়ার সঙ্গে সীমান্ত বিরোধ প্রসঙ্গে থাইল্যান্ডের সামরিক বাহিনীর এক কমান্ডারের সমালোচনাও করেছিলেন। তাদের এই কথোপকথন জনমনে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি করে। প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ দাবি করে রাজধানী ব্যাংককে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন হাজার হাজার মানুষ।

এতে মেয়াদ পূর্ণ করার আগেই প্রভাবশালী সিনাওয়াত্রা পরিবারের ক্ষমতা হারানো তৃতীয় রাজনীতিক হতে পরেন পায়েতংতার্ন (৩৮)। এর আগে ২০১৪ সালে পায়েতংতার্নের ফুফু তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইংলাক সিনাওয়াত্রাকে ক্ষমতা থেকে অপসারণ করেছিল থাইল্যান্ডের সাংবিধানিক আদালত। তারও আগে ২০০৬ সালে পায়েতংতার্নের বাবা তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রা এক সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হন।
অত্যন্ত প্রভাবশালী এই পরিবারটি গত দুই দশক ধরে থাইল্যান্ডের রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করে আছে।

২৮ মে থাইল্যান্ড ও ক্যাম্বোডিয়ার সীমান্তের অচিহ্নিত একটি এলাকায় সংঘর্ষে এক ক্যাম্বোডীয় সেনা নিহত হওয়ার পর থেকে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বাড়তে থাকে। উত্তেজনাকর এই পরিস্থিতির মধ্যেই হুন সেনের সঙ্গে পায়েতংতার্নের ওই ফোনালাপ ফাঁস হয়।

সীমান্ত বিরোধের সময় থাই পক্ষের নেতৃত্ব দেওয়া সেনা কর্মকর্তাকে নিয়ে ফোনালাপে নেতিবাচক মন্তব্য করতেও শোনা গিয়েছিল পায়েতংতার্নকে। হুন সেনের সঙ্গে ফোনালাপে ওই সামরিক কমান্ডারকে বরখাস্ত করতে চাওয়ার কথাও বলেছিলেন তিনি। এসব কথোপকথন ফাঁস হওয়ার পর থাইল্যান্ডের রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গনে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয়। জনরোষ ছড়িয়ে পড়ার পর দুই সপ্তাহ আগে পায়েতংতার্নের ফ্যু থাই পার্টির নেতৃত্বাধীন সরকারের অংশীদার দ্বিতীয় বৃহত্তম দল রক্ষণশীল ভূমজাইথাই পার্টি ক্ষমতাসীন জোট থেকে বেরিয়ে যায়। এতে পার্লামেন্টে বড় ধাক্কা খায় পায়েতংতার্নের দল। এরপরও পার্লামেন্টে ফ্যু থাই পার্টির নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন জোটের সংখ্যাগরিষ্ঠতা সামান্য ব্যবধানে বজায় ছিল।

বিবিসি জানিয়েছে, সাংবাধিনিক আদালতে পায়েতংতার্নকে বরখাস্ত করার পক্ষে ভোট পড়ে সাতটি, বিপক্ষে দুইটি। এর আগে আদালত তাকে বরাখাস্তের জন্য করা মামলাটি বিবেচনা করে। আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য ১৫ দিন সময় পাবেন পায়েতংতার্ন। এই সময়টিতে উপপ্রধানমন্ত্রী সুরিয়া জুংরুংরুয়াংকিত থাইল্যান্ডের ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বপালন করবেন।

শেষ পর্যন্ত তিনি যদি ক্ষমতাচ্যুত হন তাহলে পায়েতংতার্ন হবেন গত বছরের আগস্টের পর থেকে ফ্যু থাই পার্টির ক্ষমতা হারানো দ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রী। ওই সময় তার পুর্বসূরী প্রধানমন্ত্রী স্রেথা থাভিসিনকে অতীতে জেলখাটা সাবেক এক আইনজীবীকে মন্ত্রিপরিষদে নিয়োগ দেওয়ার কারণে বরখাস্ত করে দেশটির সাংবিধানিক আদালত।

থাভিসিনকে ক্ষমতাচ্যুত করার কয়েকদিনের মধ্যে থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন থাকসিন পরিবারের সদস্য পায়েতংতার্ন। তিনি দেশটির সবচেয়ে কম বয়সী এবং ফুফু ইংলাকের পর দ্বিতীয় নারী প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন।

থাইল্যান্ডের রাজনীতিতে সামরিক বাহিনীর উল্লেখযোগ্য প্রভাব রয়েছে। সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে সমালোচনা এই দেশে একটি রেড লাইন অতিক্রমণ করার মতো। ফোনালাপ ফাঁস হওয়ার পর তার মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চেয়েছিলেন পায়েতংতার্ন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বরখাস্তের মতো পরিণতির মুখোমুখি হতে হল তাকে।

 

 

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

নতুন আপদ ‘মব সন্ত্রাস’, আতঙ্কে সারা দেশ

ফাঁস হওয়া ফোন কলের জন্য বরখাস্ত থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী

আপডেট সময় : ০৫:৫৭:৪২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ জুলাই ২০২৫

প্রত্যাশা ডেস্ক: ক্যাম্বোডিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী হুন সেনের সঙ্গে ফোনে কথোপকথনের ফাঁস হওয়া একটি অডিওকে কেন্দ্র করে থাইল্যান্ডের সাংবিধানিক আদালত দেশটির প্রধানমন্ত্রী পায়েতংতার্ন সিনাওয়াত্রাকে বরখাস্ত করেছেন।
ফাঁস হওয়া ওই ফোন কলকে ঘিরে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করার পর্বতসম চাপে ছিলেন পায়েতংতার্ন। ফোনে সীমান্ত বিরোধ নিয়ে হুন সেনের সঙ্গে পায়েতংতার্নের কথা হয়েছিল। ফোনালাপের সময় পারিবারিকভাবে পরিচিত হুন সেনকে ‘আঙ্কেল’ সম্বোধন করে তাকে ‘সহযোগিতা’ করার আশ্বাস দিয়েছিলেন পায়েতংতার্ন। পাশাপাশি ক্যাম্বোডিয়ার সঙ্গে সীমান্ত বিরোধ প্রসঙ্গে থাইল্যান্ডের সামরিক বাহিনীর এক কমান্ডারের সমালোচনাও করেছিলেন। তাদের এই কথোপকথন জনমনে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি করে। প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ দাবি করে রাজধানী ব্যাংককে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন হাজার হাজার মানুষ।

এতে মেয়াদ পূর্ণ করার আগেই প্রভাবশালী সিনাওয়াত্রা পরিবারের ক্ষমতা হারানো তৃতীয় রাজনীতিক হতে পরেন পায়েতংতার্ন (৩৮)। এর আগে ২০১৪ সালে পায়েতংতার্নের ফুফু তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইংলাক সিনাওয়াত্রাকে ক্ষমতা থেকে অপসারণ করেছিল থাইল্যান্ডের সাংবিধানিক আদালত। তারও আগে ২০০৬ সালে পায়েতংতার্নের বাবা তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রা এক সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হন।
অত্যন্ত প্রভাবশালী এই পরিবারটি গত দুই দশক ধরে থাইল্যান্ডের রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করে আছে।

২৮ মে থাইল্যান্ড ও ক্যাম্বোডিয়ার সীমান্তের অচিহ্নিত একটি এলাকায় সংঘর্ষে এক ক্যাম্বোডীয় সেনা নিহত হওয়ার পর থেকে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বাড়তে থাকে। উত্তেজনাকর এই পরিস্থিতির মধ্যেই হুন সেনের সঙ্গে পায়েতংতার্নের ওই ফোনালাপ ফাঁস হয়।

সীমান্ত বিরোধের সময় থাই পক্ষের নেতৃত্ব দেওয়া সেনা কর্মকর্তাকে নিয়ে ফোনালাপে নেতিবাচক মন্তব্য করতেও শোনা গিয়েছিল পায়েতংতার্নকে। হুন সেনের সঙ্গে ফোনালাপে ওই সামরিক কমান্ডারকে বরখাস্ত করতে চাওয়ার কথাও বলেছিলেন তিনি। এসব কথোপকথন ফাঁস হওয়ার পর থাইল্যান্ডের রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গনে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয়। জনরোষ ছড়িয়ে পড়ার পর দুই সপ্তাহ আগে পায়েতংতার্নের ফ্যু থাই পার্টির নেতৃত্বাধীন সরকারের অংশীদার দ্বিতীয় বৃহত্তম দল রক্ষণশীল ভূমজাইথাই পার্টি ক্ষমতাসীন জোট থেকে বেরিয়ে যায়। এতে পার্লামেন্টে বড় ধাক্কা খায় পায়েতংতার্নের দল। এরপরও পার্লামেন্টে ফ্যু থাই পার্টির নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন জোটের সংখ্যাগরিষ্ঠতা সামান্য ব্যবধানে বজায় ছিল।

বিবিসি জানিয়েছে, সাংবাধিনিক আদালতে পায়েতংতার্নকে বরখাস্ত করার পক্ষে ভোট পড়ে সাতটি, বিপক্ষে দুইটি। এর আগে আদালত তাকে বরাখাস্তের জন্য করা মামলাটি বিবেচনা করে। আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য ১৫ দিন সময় পাবেন পায়েতংতার্ন। এই সময়টিতে উপপ্রধানমন্ত্রী সুরিয়া জুংরুংরুয়াংকিত থাইল্যান্ডের ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বপালন করবেন।

শেষ পর্যন্ত তিনি যদি ক্ষমতাচ্যুত হন তাহলে পায়েতংতার্ন হবেন গত বছরের আগস্টের পর থেকে ফ্যু থাই পার্টির ক্ষমতা হারানো দ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রী। ওই সময় তার পুর্বসূরী প্রধানমন্ত্রী স্রেথা থাভিসিনকে অতীতে জেলখাটা সাবেক এক আইনজীবীকে মন্ত্রিপরিষদে নিয়োগ দেওয়ার কারণে বরখাস্ত করে দেশটির সাংবিধানিক আদালত।

থাভিসিনকে ক্ষমতাচ্যুত করার কয়েকদিনের মধ্যে থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন থাকসিন পরিবারের সদস্য পায়েতংতার্ন। তিনি দেশটির সবচেয়ে কম বয়সী এবং ফুফু ইংলাকের পর দ্বিতীয় নারী প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন।

থাইল্যান্ডের রাজনীতিতে সামরিক বাহিনীর উল্লেখযোগ্য প্রভাব রয়েছে। সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে সমালোচনা এই দেশে একটি রেড লাইন অতিক্রমণ করার মতো। ফোনালাপ ফাঁস হওয়ার পর তার মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চেয়েছিলেন পায়েতংতার্ন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বরখাস্তের মতো পরিণতির মুখোমুখি হতে হল তাকে।