নিজস্ব প্রতিবেদক: ‘জনগণের ভোট ছাড়া’ নির্বাচন সম্পন্ন করা এবং রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে বিএনপির করা মামলায় সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদার ফের চার দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছে আদালত।
ঢাকার মহানগর হাকিম আওলাদ হোসাইন মুহাম্মদ জোনাইদ শুক্রবার (২৭ জুন) শুনানি শেষে রিমান্ডের আদেশ দেন। গত রোববার গ্রেফতার করার পর সোমবার নূরুল হুমাকে চার দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছিল আদালত। সেই রিমান্ড শেষে শুক্রবার তাকে আদালতে হাজির করে পুনরায় দশ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শেরেবাংলা নগর থানার এসআই শামসুজ্জোহা সরকার। সেখানে বলা হয়, আসামির দেওয়া ‘চাঞ্চল্যকর’ তথ্য যাচাই-বাছাই করা এবং যে তথ্য দিয়েছেন, সেগুলো নথি সংক্রান্ত তথ্য হওয়ায় নথি উদ্ধার করে যাচাইবাছাই করা প্রয়োজন।
আসামি প্রধান নির্বাচন কমিশনার থাকাকালে যেহেতু ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পাতানো ছিল, সেহেতু এটি একটি দাপ্তরিক সংঘবদ্ধ অপরাধ। আসামির নির্দেশে কীভাবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পাতানোভাবে আয়োজন করা হয় তা এবং ওই নির্বাচনের বাজেট ও বাস্তবায়ন সংক্রান্ত তথ্য উদঘাটন করা প্রয়োজন।
আবেদনে বলা হয়, কে এম নূরুল হুদা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে জড়িত পলাতক আসামিদের বিষয়ে ‘গুরুত্বপূর্ণ তথ্য’ দিয়েছেন। পলাতক আসামিদের গ্রেফতার করে সেই তথ্য যাছাই করা প্রয়োজন। রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী রিমান্ডের পক্ষে শুনানি করেন। নুরুল হুদার পক্ষে অ্যাডভোকেট তৌহিদুল ইসলাম সজিব রিমান্ডের বিরোধিতা করে জামিন আবেদন করেন।
শুনানি শেষে আদালত জামিন নাকচ করে আরো চারদিন রিমান্ডে নিয়ে সাবেক এই সিইসিকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন বলে প্রসিকিউশন পুলিশের এসআই রফিকুল ইসলাম জানান। বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এবং মামলা, গুম, খুন ও তথ্য সংরক্ষণ সমন্বয়ক সালাহ উদ্দিন খান গত রোববার শেরেবাংলা নগর থানায় এ মামলা দায়ের করেন। মামলায় ২০১৪ সালের নির্বাচনের সিইসি কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ, ২০১৮ সালের নির্বাচনে সিইসি এ কে এম নূরুল হুদা ও ২০২৪ সালের নির্বাচনের সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালের পাশাপাশি তাদের সময়ের নির্বাচন কমিশনারদের আসামি করা হয়।
পাশাপাশি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) হাসান মাহমুদ খন্দকার, এ কে এম শহীদুল হক, জাবেদ পাটোয়ারী, বেনজীর আহমেদ ও চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে আসামি করা হয়েছে মামলায়।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ওই তিন নির্বাচনে ‘গায়েবী মামলা, অপহরণ, গুম খুন ও নির্যাতনের’ ভয় দেখিয়ে, বিএনপি নেতাকর্মীদের ‘গণগ্রেপ্তার’ করে নির্বাচন প্রক্রিয়া থেকে দূরে রাখা হয়। সংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে থাকা সত্বেও সংবিধান লঙ্ঘন, নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘন, সরকারি কর্মচারী হয়েও অবৈধভাবে ভোটে হস্তক্ষেপ, ভয়ভীতি দেখিয়ে ভোটের কাজ সম্পূর্ণ করা ও জনগণের ভোট না পেলেও সংসদ সদস্য হিসেবে মিথ্যাভাবে বিজয়ী ঘোষণা করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। উক্ত ঘটনার সাক্ষী সকল ভোট কেন্দ্র এলাকার ভোটাররা এবং ভোটারদের মধ্যে যারা ভোট প্রদান করতে বঞ্চিত হয়েছেন তারাসহ ভোট কেন্দ্রে নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনেক সদস্যরা। এছাড়া ভোট কেন্দ্রে অনেক সৎ প্রিজাইডিং অফিসার, পুলিংশ অফিসারসহ স্থানীয় লোকজনসহ আরো অন্যান্যরা ঘটনার সাক্ষী হবে। এছাড়া ব্যালট পেপারে যে সিল ও স্বাক্ষর রয়েছে, তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই প্রকৃতভাবে তারা ভোট দিয়েছে কিনা সে বিষয়ে উল্লেখিত ঘটনার সঠিক রহস্য তদন্তে সত্য উদঘাটিত হবে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শেরেবাংলা নগর থানার এসআই শামসুজ্জোহা সরকার বুধবার মামলায় দণ্ডবিধির ১২০ (ক)/ ৪২০/৪০৬ ধারায় অভিযোগ যুক্ত করার আবেদন করেন। ঢাকার মহানগর হাকিম মো. মিনহাজুর রহমান শুনানি শেষে আবেদন মঞ্জুর করেন। ফলে রাষ্ট্রদ্রোহ, প্রতারণা এবং অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ যুক্ত হয়েছে এ মামলায়। নূরুল হুদার পর আরেক সাবেক সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালকে বুধবার ঢাকার মগবাজার থেকে গ্রেফতার করা হয়। বৃহস্পতিবার তাকে আদালতে হাজির করে ৩ দিনের রিমান্ডে পেয়েছে পুলিশ।