নিজস্ব প্রতিবেদক: এবার দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ইসির নেতৃত্ব দেওয়া সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) হাবিবুল আউয়ালকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ বুধবার (২৫ জুন) দুপুরে রাজধানীর মগবাজার থেকে হাবিবুল আউয়ালকে গ্রেফতার করে বলে ডিএমপির জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জানান।
আর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (দক্ষিণ) নাসিরুল ইসলাম জানান, বিএনপির করা শেরেবাংলা নগর থানার মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে সাবেক এই সিইসিকে। সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার নূরুল হুদাকে গ্রেফতারের তিন দিনের মাথায় গ্রেফতার হলেন হাবিবুল আউয়াল।‘জনগণের ভোট ছাড়া’ নির্বাচন সম্পন্ন করার অভিযোগে বিএনপির মামলায় তিনিও আসামি। ঢাকার শেরেবাংলা নগর থানায় করা ওই মামলায় কেবল দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন নয়, ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত দশম ও ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনের সময় দায়িত্ব পালন করা নির্বাচন কমিশনের সকল পদাধিকারী এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১৯ জনের নাম রয়েছে।
বিএনপি ওই মামলা করার কয়েক ঘণ্টা পর রোববার সন্ধ্যায় কথিত জনতা উত্তরার বাসা থেকে সাবেক সিইসি নূরুল হুদাকে আটক করে। সে সময় তাকে অপদস্থ ও মারধর করা হয়, সেই ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনা হয় নানা মহলে। পরদিন আদালতে তোলা হলে বিচারক বিএনপির করা মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নূরুল হুদাকে চার দিনের রিমান্ডে পাঠান।
২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারিতে বিএনপি ও সমমনাদের বর্জনে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক দেখাতে শরিক ও বিরোধীদল জাতীয় পার্টির জন্য আসন ছেড়ে দেয় আওয়ামী লীগ। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের সঙ্গে দলের বিদ্রোহীদের। এ নির্বাচনের নাম হয় ‘আমি আর ডামি’ নির্বাচন। কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন এ কমিশনে চার নির্বাচন কমিশনার ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত জ্যেষ্ঠ সচিব মো. আলমগীর ও আনিছুর রহমান, অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ রাশেদা সুলতানা ও অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহসান হাবীব খান। প্রশ্নবিদ্ধ ওই তিন নির্বাচনেই আওয়ামী লীগ জয়ী হয় এবং ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে দেশ শাসন করে যায়। শেষ পর্যন্ত ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের পতন ঘটে। গত বছর ডিসেম্বরে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী আংশিক বাতিল করে রায় দেয় হাই কোর্টের একটি বেঞ্চ। তাতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফেরানোর পথ তৈরি হয়। অবাধ ও নিরপেক্ষতা ‘নিশ্চিত করতে না পারায়’ আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত তিন জাতীয় নির্বাচনে ‘জনগণের আস্থা ধ্বংস করা হয়েছে’ বলে পর্যবেক্ষণ দেওয়া হয় ওই রায়ে।
নূরুল হুদাকে লাঞ্ছনার ঘটনায় গ্রেফতার ৩ জনের জামিন: ‘মব’ সৃষ্টি করে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদাকে জুতার মালা পরিয়ে মারধরের ঘটনায় গ্রেফতার স্বেচ্ছাসেবক দলের ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি ও মামলার প্রধান আসামি মোজাম্মেল হক ঢালী, উত্তরা পশ্চিম থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক মো. হানিফ, উত্তরা পূর্ব থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. কাইয়ূমের জামিন মঞ্জুর করেছেন আদালত।
বুধবার (২৫ জুন) ঢাকার অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. ছানাউল্যাহর আদালত শুনানি শেষে এ আদেশ দেন। এর আগে তাদের তিন জনকে আদালতে হাজির করে কারাগারে রাখার আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও উত্তরা পশ্চিম থানার পরিদর্শক মো. নজরুল ইসলাম। পরে আসামি পক্ষের আইনজীবীরা জামিন আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিচারক সবার জামিন মঞ্জুর করেন। আদালতের প্রসিকিউশন বিভাগের উপপরিদর্শক আতিকুর রহমান এ তথ্য জানান। এর আগে, সোমবার রাতে সেনাবাহিনীর একটি দল হানিফকে উত্তরা এলাকা থেকে আটক করে। মঙ্গলবার আরো দুজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, গত ২২ জুন রাজধানীর উত্তরার বাসায় ঢুকে একদল লোক নূরুল হুদাকে বের করে আনেন। জুতার মালা পরিয়ে তাকে হেনস্তা করে পুলিশে সোপর্দ করেন। জুতা দিয়ে নূরুল হুদাকে আঘাত ও ডিম নিক্ষেপ করেন। পরে ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় ২৪ জুন উত্তরা পশ্চিম থানার উপপরিদর্শক সজীব হাসান বাদী হয়ে মামলা করেন।
 
																			 
										



















