নিজস্ব প্রতিবেদক: ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নিবন্ধন আবেদন করার শেষ দিনে নতুন রাজনৈতিক দলগুলোর ‘হিড়িক’ পড়েছে।
রোববার (২২ জুন) দুপুর পর্যন্ত অন্তত দুই ডজন দলের আবেদন জমা দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। বিকাল ৫টা পর্যন্ত আবেদন জমা দেওয়া যাবে।
নিবন্ধন্প্রত্যাশী দলের চেয়ারম্যান, মহাসচিবও যেমন সশরীরে আসছেন, তেমনি দলীয় নেতাকর্মীদের ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে আসতে দেখা যায়। আবেদন জমা দিয়ে কেউ কেউ সাংবাদিকদের কাছে নিজেদের প্রতীক ও দলের নাম যেমন তুলে ধরতে চান, তেমনি অনেকে চুপচাপ আবেদন জমা দিয়ে চলে যাচ্ছেন। দলগুলোর মধ্যে কোনো কোনোটির রয়েছে বাহারি নামও। সবার দাবি, নির্বাচন কমিশন-ইসির সব শর্ত পূরণ করেই নিবন্ধন আবেদন করা হচ্ছে। তাদের দল নিবন্ধন পাবেই।
দুপুর পর্যন্ত যেসব দলের আবেদন জমা পড়েছে-জনতার পার্টি বাংলাদেশ (জেপিপি); গণদল, বাংলাদেশ জনজোট পার্টি (বাজপা); বাংলাদেশ রিপাবলিক পার্টি (বিআরপি), বাংলাদেশ সমতা পার্টি; বাংলাদেশ ফরায়েজী আন্দোলন; বাংলাদেশ সিটিজেন পার্টি; ইসলামী ঐক্যজোট ; নতুন বাংলাদেশ পার্টি (এনবিপি); বাংলাদেশ জাগ্রত জনতা পার্টি; বাংলাদেশ গণবিপ্লবী পার্টি ; ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ভাসানী ন্যাপ); বাংলাদেশ ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠী ফেডারেশন ; জনতার দল; বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা জনতা পার্টি ; বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল (এম এল); বাংলাদেশ নাগরিক পার্টি (বিসিপি); জাতীয় ন্যায় বিচার পার্টি; বাংলাদেশ ডেমোক্রেটিক পার্টি (বিডিপি), ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি). আ আমজনগণ পার্টি।
হাতি প্রতীকে নিবন্ধন চায় জনতা পার্টি বাংলাদেশ: হাতি প্রতীকে নিবন্ধন পেতে নির্বাচন কমিশনে আবেদন করেছে জনতা পার্টি বাংলাদেশ (জেপিবি)। নির্বাচন ভবনে আবেদন জমা দিয়ে দলটির মহাসচিব শওকত মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছি। নিবন্ধন বিধিমালার যে শর্ত আছে সেগুলো পালন করা খুব কষ্টকর। নির্বাচন কমিশন কিছু কিছু বিধিমালা সংস্কারের প্রস্তাব রেখেছে। এ প্রস্তাবগুলো কিন্তু এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। তারপরও পুরনো বিধিমালা অনুযায়ী আমরা আবেদন জমা দিয়েছি এবং আমরা আশা করি আমরা রাজনৈতিক দল হিসেবে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন পাবো। তিনি বলেন, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবগুলো বিবেচনায় নিয়ে যদি বিধিমালা সংস্কার করা হয় সেই সংস্কারেও নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা কারতে চান এবং দলটি হাতি প্রতীক চেয়েছে।
চাবি প্রতীকে নিবন্ধন চায় জনতার দল: নির্বাচন ভবনের প্রাপ্তি ও জারি শাখায় আবেদন জমা দেন দলের আহ্বায়ক অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম কামাল ও সদস্য সচিব আজম খান। আবেদন জমা দেওয়ার পর শামীম কামাল সাংবাদিকদের বলেন, নিবন্ধনের সব শর্ত পূরণ করে আমরা আবেদন করেছি। আমাদের জেলা ও উপজেলা কমিটি আইন অনুযায়ী গঠন করা হয়েছে। এখন বাকি সিদ্ধান্ত নেবে কমিশন। তিনি বলেন, দেশের রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তনের জন্য সাহসী, শিক্ষিত, দেশপ্রেমিক মানুষদের সংগঠিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তাদের উদ্দেশ্য পরবর্তী প্রজন্ম, সামনে নির্বাচন যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে পরবর্তী প্রজন্ম। গত ৫৪ বছরে দেশের রাজনীতিতে সুষ্ঠু ধারা তৈরি হয়নি, এমন পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে জনতার দলের এই নেতা বলেন, যে রাজনৈতিক সংস্কার, রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান তা গড়ে ওঠেনি।
সদস্য সচিব আজম খান বলেন, যে আশা-আকাঙ্ক্ষার জন্য দল সৃষ্টি করেছি, সে লক্ষ্যে নিবন্ধনের জন্য আবেদন জমা দিলোাম। গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্র নেতাদের নিয়ে গঠিত আলোচিত নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি বিকালে জমা দেওয়ার কথা রয়েছে। এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব মুশফিক উস সালেহীন জানিয়েছেন এদিন বিকাল ৪টায় নিবন্ধনের জন্য আবেদন জমা দিতে দলের প্রতিনিধিরা ইসিতে যাচ্ছেন। নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন পেলে নির্ধারিত প্রতীকে ভোট করতে পারবেন সংশ্লিষ্ট দলের প্রার্থীরা; ভোটে অংশ নিতে দলের প্রার্থীর বাইরে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার সুযোগ রয়েছে। এবারের নির্বাচনকে সামনে রেখে গত ১০ মার্চ আগ্রহী দলগুলোর কাছ থেকে নিবন্ধন আবেদন আহ্বান করা হয়। ২০ এপ্রিলের মধ্যে আবেদন করে ৬৫টি নতুন রাজনৈতিক দল। এনসিপিসহ ৪৬টি দলের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নিবন্ধন আবেদনের সময়সীমা দুই মাস বাড়িয়ে ২২ জুন পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়। বর্ধিত সেই সময় শেষ হচ্ছে এদিন।
যেভাবে নিবন্ধন: ৫ আগস্টের ক্ষমতার পট পরিবর্তনের এক মাসের মাথায় বিদায় নেয় তৎকালীন ইসি। বিদ্যমান আইনের আলোকে এ এম এম নাসির উদ্দিন কমিশন গঠিত হয় ২১ নভেম্বর। নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধনে বিদ্যমান আইন-বিধি অনুযায়ী ১০টি তথ্য আবেদনপত্রের সঙ্গে জমা দিতে হবে। নিবন্ধন ফি হিসেবে দিতে হবে ৫ হাজার টাকা, যা অফেরতযোগ্য। নতুন দলের ক্ষেত্রে নিবন্ধনের শর্ত হল, দলটির একটি সক্রিয় কেন্দ্রীয় কার্যালয় থাকতে হবে। কার্যকর কমিটি থাকতে হবে কমপক্ষে এক-তৃতীয়াংশ প্রশাসনিক জেলায়।
সদস্য হিসেবে অন্তত ১০০টি উপজেলা কিংবা মহানগরীর থানার কমপক্ষে ২০০ ভোটারের সমর্থনের নথিও দেখাতে হবে। দলীয় প্যাডে দরখাস্তের সঙ্গে দলের গঠনতন্ত্র, নির্বাচনি ইশতেহার (যদি থাকে), দলের বিধিমালা (যদি থাকে), দলের লোগো ও দলীয় পতাকার ছবি, দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সব সদস্যের নামের তালিকা, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও সর্বশেষ স্থিতি জমা দিতে হবে। আবেদন পাওয়ার পর নির্বাচন কমিশন তা যাচাই-বাছাই শুরু করবে। নিবন্ধন শর্ত পূরণ করতে পারলে দলীয় প্রতীকসহ নিবন্ধন সনদ দেবে। বর্তমানে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত দলের সংখ্যা ৫০টি। সম্প্রতি নিবন্ধন স্থগিত হয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের আর আদালতের আদেশে নিবন্ধন ফিরে পেয়েছে বাংলাদেশ জাময়াতে ইসলামী। গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে এ পর্যন্ত উচ্চ আদালতের নির্দেশে নিবন্ধন পেয়েছে ৬টি দল। সবমিলিয়ে এখন নিবন্ধিত দলের সংখ্যা ৫০। এর আগে গত দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ইসিতে ৯৩টি দল নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছিল।