ঢাকা ০২:১৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২১ জুন ২০২৫
দেশব্যাপী তীব্র সংকট

গ্যাস গেল কোথায়?

  • আপডেট সময় : ০৭:৪২:০৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫
  • ১৯ বার পড়া হয়েছে

তীব্র গ্যাস সংকটে জ¦লছে না চুলা। রাজধানীসহ দেশের প্রায় সবখানে প্রায়ই এমন সংকট দেখা যাচ্ছে -ছবি সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক: আমদানি করা এলএনজি খালাসে বিঘ্ন ঘটায় টানা তিনদিন ধরে তীব্র গ্যাস সংকটে পড়েছে মানুষ। গত মঙ্গলবার (১৭ জুন) থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে কল কারখানার চাকা বন্ধ হয়েছে, সিএনজি ফিলিং স্টেশনগুলো হঠাৎ গ্যাস দিতে পারছে না, বাসাবাড়িতেও রান্নাবান্না বন্ধ হওয়ার উপক্রম।

পেট্রোবাংলার অপারেশন অ্যান্ড মাইন বিভাগের পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম বলছেন, বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) রাত থেকে পরিস্থিতির উন্নতি হতে শুরু করেছে। শুক্রবার (২০ জুন) দুপুর নাগাদ অনেক এলাকায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। তবে সব জায়গায় সরবরাহ স্বাভাবিক হতে বেশ কয়েক ঘণ্টা সময় প্রয়োজন। সে কারণে একই সময়ে ঢাকার সব আবাসিক এলাকায় গ্যাস সংকট লাঘবের খবর মেলেনি।

মোহাম্মদপুর বাবর রোডে প্রায় ৩০ বছর ধরে বসবাসকারী একজন সাংবাদিকের স্ত্রী রেখা জানিয়েছেন, গত শীতকাল থেকে গ্যাসের চাপ কমতে শুরু করেছে। সকাল ৮টার আগে কিছুটা থাকে। এরপর চাপ কমতে কমতে এমন হয় যে, রান্নার মতো অবস্থা থাকে না। বেলা চারটার পরে আবার কিছুক্ষণ চাপ সামান্য বাড়ে, তাতে রান্নাবান্না মোটামুটি করা যায়। কিন্তু সন্ধ্যার পর থেকে চাপ কমে, যা রাত ১২টার আগে স্বাভাবিক হয়না। মধ্যরাত থেকে ভোর রাত পর্যন্ত গ্যাস মোটামুটি স্বাভাবিক থাকে। যে সময় বাস্তবে রান্নাবান্না সম্ভব না। খুব কষ্ট করতে হচ্ছে। এত ভোগান্তি কখনোই ছিল না। গৃহিণী রেখা আরো বলেন, বর্তমানের গ্যাসের সংকট অনেকগুন বেড়েছে। প্রথম প্রথম দিনের বেলায় চাপ কম থাকলেও মিন মিন করে অনেক সময় ধরে কিছু রান্না করা যেতো; এখন তা সম্ভব হচ্ছে না। এত ভোগান্তি আর ভালো লাগে না।

রাজধানীর বনশ্রী এলাকায় ভোজন বিলাস নামের একটি রেস্তোরাঁর ব্যবস্থাপক আলমগীর হোসেন শুক্রবার দুপুরে একটি সংবাদসংস্থাকে বলেছেন, গত দুই দিন ধরে বনশ্রী এলাকায় গ্যাস নেই। এখনো নেই। আমার হোটেলের রান্না ঘরে লাইনের গ্যাস আর সামনে রুটি পরটা ভাজার জন্য এলপি গ্যাস। গত দুই দিন এলপি গ্যাসের চুলা দিয়েই যতটা সম্ভব রান্না করতে হচ্ছে।

একই পরিস্থিতি বাসাবাড়িতেও। গ্যাস নেই, তাই রান্নাও নেই। যাদের বিকল্প চুলা আছে তারা কিছুটা পরিস্থিতি মানিয়ে নিতে পারলেও বাকিরা পড়ছেন বিড়ম্বনায়। শান্তিনগরের বাসিন্দা সাদিয়া আক্তার বলেন, ‘দীর্ঘদিন গ্যাসের সমস্যা ছিল না। ফলে ইলেক্ট্রিক চুলা কোথায় রেখেছি মনে ছিল না। একদিন গ্যাসের কষ্ট করার পর গতকাল (বৃহস্পতিবার) চুলা খুঁজে বের করলাম। তিনি প্রশ্ন করেন, এটা তো বাড়তি ঝামেলা। গ্যাসের সমস্যা কেন হচ্ছে, পরিস্থিতি কী সহসা ঠিক হবে?

খিলগাঁওয়ের একটি ছোট খাবার হোটেলের কর্মচারী শরীফ বলেন, গতকাল (বৃহস্পতিবার) সকাল থেকেই দেখলাম হোটেলে কাস্টমারের ভিড় অন্যদিনের চেয়ে বেশি। পরে শুনলাম গ্যাস সংকটের কারণে অনেকের বাসাবাড়িতে রান্না হয়নি।

কেন এই সংকট? বৈরী আবহাওয়ার কারণে সাগরে ভাসমান গ্যাস টার্মিনালে এলএনজির জাহাজ ভেড়ানো যাচ্ছিল না। ফলে সরবরাহ ব্যবস্থা বিঘ্নিত হতে থাকে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জাতীয় সরবরাহ ব্যবস্থায় প্রায় এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ কমে গিয়েছিল এই কারণে।

সমস্যা দেখা দেওয়ার পর থেকেই দৈনিক গ্যাস প্রতিবেদন প্রকাশ করা বন্ধ রেখেছে পেট্রোবাংলা। তবে সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশে দৈনিক গ্যাস সরবরাহ ছিল ২৮০০ মিলিয়ন ঘনফুটের কিছু বেশি। সেই সরবরাহ দুই হাজার মিলিয়ন ঘনফুটের নিচে নেমে যায় গত কয়েক দিনে।

বৈরী আবহাওয়ার কারণে সামিট এলএনজি এবং এক্সিলারেট এনার্জির এলএনজি টার্মিনাল দুটিতে কার্গো ভেড়ানো যায়নি। তবে বৃহস্পতিবার নাগাদ সেই সমস্যার সমাধান হয়েছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

পেট্রোবাংলার পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম শুক্রবার দুপুরে বলেন, দুপুর ১২টার খবর হচ্ছে দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল থেকে এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুটের কিছু বেশি গ্যাস সরবরাহ হচ্ছে। সেক্ষেত্রে জাতীয় সঞ্চালন ২৮৫০ মিলিয়ন ঘনফুটের কাছকাছি। অর্থাৎ পরিস্থিতি আগের অবস্থায় ফিরে গেছে। ধীরে ধীরে গ্রাহক পর্যায়েও এর প্রভাব পড়বে।

না প্রকাশে অনিচ্ছুক তিতাসের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘যতটুকু গ্যাস পাচ্ছি, ততটুকুই সরবরাহ করছি। আমাদের সরবরাহ ক্ষমতা সীমিত। দুইটি এলএনজি টার্মিনাল মিলিয়ে এখন প্রতিদিন ৯৯৭ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি সরবরাহ করছে, যা এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ। কিন্তু দেশীয় গ্যাসের যোগান কমে যাওয়ায় এলএনজি বাড়িয়েও তেমন লাভ হচ্ছে না। এলএনজি আমদানির পাশাপাশি রি-গ্যাসিফিকেশন ও সরবরাহের পরিকাঠামো দরকার, যা সীমিত।’

বাংলাদেশ সিএনজি ফিলিং স্টেশন অ্যান্ড কনভার্সন ওয়ার্কশপ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব ফারহান নূর জানান, গত বুধবার দেশের অধিকাংশ স্থান থেকে সিএনজি ফিলিং স্টেশনগুলো গ্যাসশূন্য হয়ে যাওয়ার অভিযোগ আসছিল। এলএনজি টার্মিনালে সমস্যা হওয়ার কারণে এমনটি হয়েছে বলে তিনি শুনেছেন।
দেশজুড়ে প্রতিদিনের গ্যাস চাহিদা প্রায় ৪ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট হলেও সরবরাহ করা হচ্ছে মাত্র ২ হাজার ৮১৬ মিলিয়ন ঘনফুট। বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য যেখানে ২ হাজার ৪২০ মিলিয়ন ঘনফুট দরকার, সেখানে মিলছে মাত্র ১ হাজার ১৯ মিলিয়ন ঘনফুট- যা চাহিদার অর্ধেকেরও কম। সার কারখানায়ও ৩১৯ মিলিয়ন ঘনফুট চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ হচ্ছে মাত্র ১১৯ মিলিয়ন ঘনফুট। রাজধানী ও আশপাশের এলাকায় স্বাভাবিক সরবরাহ বজায় রাখতে যেখানে প্রতিদিন ২ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস দরকার, সেখানে এখন সরবরাহ হচ্ছে মাত্র ১ হাজার ৫৫৩ মিলিয়ন ঘনফুট। তিতাস সূত্রে জানা গেছে, আগে তারা প্রতিদিন ১ হাজার ৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পেলে পরিস্থিতি মোটামুটি স্বাভাবিক থাকতো। কিন্তু সম্প্রতি সরবরাহ আরো কমে যাওয়ায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে।

প্রসঙ্গত, ২০২৬ সাল থেকে দেশের গ্যাসক্ষেত্রগুলোর উৎপাদন কমতে শুরু করবে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় আগের সরকার দুটি ভাসমান রি-গ্যাসিফিকেশন ইউনিট বসানোর সিদ্ধান্ত দিলেও অন্তর্বর্তী সরকার এসে তা বাতিল করে। ফলে সামনের দিনগুলোতে পরিস্থিতির উন্নতি হবে- এমন আশা করার সুযোগ খুবই কম। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিতাস গ্যাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহনেওয়াজ পারভেজ বলেন, ‘আমাদের অনেক গ্যাস লাইন পুরনো এবং সেখানেও সারা বছর সমস্যা থাকে। তাছাড়া যে পরিমাণ চাহিদা, সে অনুযায়ী গ্যাস সরবরাহ করতে পারছি না। আবাসিকে গ্যাস দিলে শিল্পে সমস্যা হয়, আবার শিল্পে দিলে আবাসিকে সংকট দেখা দেয়। চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে সরবরাহ বাড়ানো ছাড়া এই সংকটের কোনো স্থায়ী সমাধান নেই।’

 

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

দেশব্যাপী তীব্র সংকট

গ্যাস গেল কোথায়?

আপডেট সময় : ০৭:৪২:০৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক: আমদানি করা এলএনজি খালাসে বিঘ্ন ঘটায় টানা তিনদিন ধরে তীব্র গ্যাস সংকটে পড়েছে মানুষ। গত মঙ্গলবার (১৭ জুন) থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে কল কারখানার চাকা বন্ধ হয়েছে, সিএনজি ফিলিং স্টেশনগুলো হঠাৎ গ্যাস দিতে পারছে না, বাসাবাড়িতেও রান্নাবান্না বন্ধ হওয়ার উপক্রম।

পেট্রোবাংলার অপারেশন অ্যান্ড মাইন বিভাগের পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম বলছেন, বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) রাত থেকে পরিস্থিতির উন্নতি হতে শুরু করেছে। শুক্রবার (২০ জুন) দুপুর নাগাদ অনেক এলাকায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। তবে সব জায়গায় সরবরাহ স্বাভাবিক হতে বেশ কয়েক ঘণ্টা সময় প্রয়োজন। সে কারণে একই সময়ে ঢাকার সব আবাসিক এলাকায় গ্যাস সংকট লাঘবের খবর মেলেনি।

মোহাম্মদপুর বাবর রোডে প্রায় ৩০ বছর ধরে বসবাসকারী একজন সাংবাদিকের স্ত্রী রেখা জানিয়েছেন, গত শীতকাল থেকে গ্যাসের চাপ কমতে শুরু করেছে। সকাল ৮টার আগে কিছুটা থাকে। এরপর চাপ কমতে কমতে এমন হয় যে, রান্নার মতো অবস্থা থাকে না। বেলা চারটার পরে আবার কিছুক্ষণ চাপ সামান্য বাড়ে, তাতে রান্নাবান্না মোটামুটি করা যায়। কিন্তু সন্ধ্যার পর থেকে চাপ কমে, যা রাত ১২টার আগে স্বাভাবিক হয়না। মধ্যরাত থেকে ভোর রাত পর্যন্ত গ্যাস মোটামুটি স্বাভাবিক থাকে। যে সময় বাস্তবে রান্নাবান্না সম্ভব না। খুব কষ্ট করতে হচ্ছে। এত ভোগান্তি কখনোই ছিল না। গৃহিণী রেখা আরো বলেন, বর্তমানের গ্যাসের সংকট অনেকগুন বেড়েছে। প্রথম প্রথম দিনের বেলায় চাপ কম থাকলেও মিন মিন করে অনেক সময় ধরে কিছু রান্না করা যেতো; এখন তা সম্ভব হচ্ছে না। এত ভোগান্তি আর ভালো লাগে না।

রাজধানীর বনশ্রী এলাকায় ভোজন বিলাস নামের একটি রেস্তোরাঁর ব্যবস্থাপক আলমগীর হোসেন শুক্রবার দুপুরে একটি সংবাদসংস্থাকে বলেছেন, গত দুই দিন ধরে বনশ্রী এলাকায় গ্যাস নেই। এখনো নেই। আমার হোটেলের রান্না ঘরে লাইনের গ্যাস আর সামনে রুটি পরটা ভাজার জন্য এলপি গ্যাস। গত দুই দিন এলপি গ্যাসের চুলা দিয়েই যতটা সম্ভব রান্না করতে হচ্ছে।

একই পরিস্থিতি বাসাবাড়িতেও। গ্যাস নেই, তাই রান্নাও নেই। যাদের বিকল্প চুলা আছে তারা কিছুটা পরিস্থিতি মানিয়ে নিতে পারলেও বাকিরা পড়ছেন বিড়ম্বনায়। শান্তিনগরের বাসিন্দা সাদিয়া আক্তার বলেন, ‘দীর্ঘদিন গ্যাসের সমস্যা ছিল না। ফলে ইলেক্ট্রিক চুলা কোথায় রেখেছি মনে ছিল না। একদিন গ্যাসের কষ্ট করার পর গতকাল (বৃহস্পতিবার) চুলা খুঁজে বের করলাম। তিনি প্রশ্ন করেন, এটা তো বাড়তি ঝামেলা। গ্যাসের সমস্যা কেন হচ্ছে, পরিস্থিতি কী সহসা ঠিক হবে?

খিলগাঁওয়ের একটি ছোট খাবার হোটেলের কর্মচারী শরীফ বলেন, গতকাল (বৃহস্পতিবার) সকাল থেকেই দেখলাম হোটেলে কাস্টমারের ভিড় অন্যদিনের চেয়ে বেশি। পরে শুনলাম গ্যাস সংকটের কারণে অনেকের বাসাবাড়িতে রান্না হয়নি।

কেন এই সংকট? বৈরী আবহাওয়ার কারণে সাগরে ভাসমান গ্যাস টার্মিনালে এলএনজির জাহাজ ভেড়ানো যাচ্ছিল না। ফলে সরবরাহ ব্যবস্থা বিঘ্নিত হতে থাকে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জাতীয় সরবরাহ ব্যবস্থায় প্রায় এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ কমে গিয়েছিল এই কারণে।

সমস্যা দেখা দেওয়ার পর থেকেই দৈনিক গ্যাস প্রতিবেদন প্রকাশ করা বন্ধ রেখেছে পেট্রোবাংলা। তবে সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশে দৈনিক গ্যাস সরবরাহ ছিল ২৮০০ মিলিয়ন ঘনফুটের কিছু বেশি। সেই সরবরাহ দুই হাজার মিলিয়ন ঘনফুটের নিচে নেমে যায় গত কয়েক দিনে।

বৈরী আবহাওয়ার কারণে সামিট এলএনজি এবং এক্সিলারেট এনার্জির এলএনজি টার্মিনাল দুটিতে কার্গো ভেড়ানো যায়নি। তবে বৃহস্পতিবার নাগাদ সেই সমস্যার সমাধান হয়েছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

পেট্রোবাংলার পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম শুক্রবার দুপুরে বলেন, দুপুর ১২টার খবর হচ্ছে দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল থেকে এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুটের কিছু বেশি গ্যাস সরবরাহ হচ্ছে। সেক্ষেত্রে জাতীয় সঞ্চালন ২৮৫০ মিলিয়ন ঘনফুটের কাছকাছি। অর্থাৎ পরিস্থিতি আগের অবস্থায় ফিরে গেছে। ধীরে ধীরে গ্রাহক পর্যায়েও এর প্রভাব পড়বে।

না প্রকাশে অনিচ্ছুক তিতাসের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘যতটুকু গ্যাস পাচ্ছি, ততটুকুই সরবরাহ করছি। আমাদের সরবরাহ ক্ষমতা সীমিত। দুইটি এলএনজি টার্মিনাল মিলিয়ে এখন প্রতিদিন ৯৯৭ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি সরবরাহ করছে, যা এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ। কিন্তু দেশীয় গ্যাসের যোগান কমে যাওয়ায় এলএনজি বাড়িয়েও তেমন লাভ হচ্ছে না। এলএনজি আমদানির পাশাপাশি রি-গ্যাসিফিকেশন ও সরবরাহের পরিকাঠামো দরকার, যা সীমিত।’

বাংলাদেশ সিএনজি ফিলিং স্টেশন অ্যান্ড কনভার্সন ওয়ার্কশপ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব ফারহান নূর জানান, গত বুধবার দেশের অধিকাংশ স্থান থেকে সিএনজি ফিলিং স্টেশনগুলো গ্যাসশূন্য হয়ে যাওয়ার অভিযোগ আসছিল। এলএনজি টার্মিনালে সমস্যা হওয়ার কারণে এমনটি হয়েছে বলে তিনি শুনেছেন।
দেশজুড়ে প্রতিদিনের গ্যাস চাহিদা প্রায় ৪ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট হলেও সরবরাহ করা হচ্ছে মাত্র ২ হাজার ৮১৬ মিলিয়ন ঘনফুট। বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য যেখানে ২ হাজার ৪২০ মিলিয়ন ঘনফুট দরকার, সেখানে মিলছে মাত্র ১ হাজার ১৯ মিলিয়ন ঘনফুট- যা চাহিদার অর্ধেকেরও কম। সার কারখানায়ও ৩১৯ মিলিয়ন ঘনফুট চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ হচ্ছে মাত্র ১১৯ মিলিয়ন ঘনফুট। রাজধানী ও আশপাশের এলাকায় স্বাভাবিক সরবরাহ বজায় রাখতে যেখানে প্রতিদিন ২ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস দরকার, সেখানে এখন সরবরাহ হচ্ছে মাত্র ১ হাজার ৫৫৩ মিলিয়ন ঘনফুট। তিতাস সূত্রে জানা গেছে, আগে তারা প্রতিদিন ১ হাজার ৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পেলে পরিস্থিতি মোটামুটি স্বাভাবিক থাকতো। কিন্তু সম্প্রতি সরবরাহ আরো কমে যাওয়ায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে।

প্রসঙ্গত, ২০২৬ সাল থেকে দেশের গ্যাসক্ষেত্রগুলোর উৎপাদন কমতে শুরু করবে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় আগের সরকার দুটি ভাসমান রি-গ্যাসিফিকেশন ইউনিট বসানোর সিদ্ধান্ত দিলেও অন্তর্বর্তী সরকার এসে তা বাতিল করে। ফলে সামনের দিনগুলোতে পরিস্থিতির উন্নতি হবে- এমন আশা করার সুযোগ খুবই কম। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিতাস গ্যাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহনেওয়াজ পারভেজ বলেন, ‘আমাদের অনেক গ্যাস লাইন পুরনো এবং সেখানেও সারা বছর সমস্যা থাকে। তাছাড়া যে পরিমাণ চাহিদা, সে অনুযায়ী গ্যাস সরবরাহ করতে পারছি না। আবাসিকে গ্যাস দিলে শিল্পে সমস্যা হয়, আবার শিল্পে দিলে আবাসিকে সংকট দেখা দেয়। চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে সরবরাহ বাড়ানো ছাড়া এই সংকটের কোনো স্থায়ী সমাধান নেই।’