নিজস্ব প্রতিবেদক: জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক ‘বয়কট’ করেছে জামায়াতে ইসলামী। লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকের পর যে যৌথ ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, তার প্রতিবাদে জামায়াত কমিশনের বৈঠক ‘বয়কট’ করেছে বলে দলটির একজন জ্যেষ্ঠ নেতার বরাত দিয়ে জানিয়েছে একটি শীর্ষস্থানীয় সংবাদসংস্থা।
জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেছেন, মঙ্গলবার (১৭ জুন) সকালে শুরু হওয়া রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐক্যমত্য কমিশন দ্বিতীয় দফার সংলাপে তারা যোগ দেবেন না। এদিন সকাল সাড়ে ১১টায় বেইলি রোডের ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ৩০টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের মুলতবি বৈঠক শুরু হয়। আধাঘণ্টা দেরিতে বৈঠক শুরু হলেও জামায়াতের কোনো প্রতিনিধিকে দেখা যায়নি।
বিএনপির সালাহউদ্দিন আহমদের আসনের পাশের আসনটি জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহেরের জন্য রাখা হয়। তবে তা খালি দেখা যায়। এর পরের আসনটি জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি), সেখানে বসেছেন দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব তাসনিম জারা। এরপরে বসেছেন বিএনপির ইসমাইল জবিহউল্লাহ ও অধ্যাপক বোরহান উদ্দিন খান।
জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, আমরা অন প্রোটেস্ট আজকের বৈঠকে যাইনি। বুধবার (১৮ জুন) বৈঠকে যোগ দেবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা এখনই বলতে পারছি না। আমরা আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব।
গত ৩ জুন লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকের পরে যে যৌথ ঘোষণা বা বিবৃতিতে প্রকাশ করা হয় তা ‘যথাযথ প্রক্রিয়ায়’ হয়নি বলে জামায়াত মনে করে বলে দলটির একজন জ্যেষ্ঠ নেতা বলেছেন। তিনি বলেন, এজন্য আমরা আজকের জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের বৈঠকে যাইনি। কারণ এই কমিশনের প্রধান হচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুস। আমরা প্রধান উপদেষ্টা ও তারেক রহমানের বৈঠকের বিষয়ে কোনো কথা বলছি না। আমরা বলতে চাই, বৈঠকের পরে যেভাবে একটি দলের কথায় নির্বাচনের তারিখ বদলে দেওয়ার ঘোষণা হল, এটা কোনোভাবে মেনে নেওয়া যায় না। জামায়াতের এই নেতা বলেন, আমরা আশা করেছিলাম, দেশে ফিরে প্রধান উপদেষ্টা বিষয়টি রাজনৈতিক দলগুলোকে ডেকে স্পষ্ট করবেন।
এদিকে মধ্যাহ্ন বিরতিতে ঐকমত্য কমিশনের সংলাপ থেকে বের হওয়ার সময় কয়েকজন সাংবাদিক প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (ঐকমত্য) মনির হায়দারের কাছে জামায়াতের যোগ না দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামী প্রতীকী বয়কট করেছে।’
‘বয়কটের’ কারণ লন্ডনে ইউনূস-তারেক বৈঠক কি না, এ প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আপনারা বুঝে নেন।’ সংলাপ থেকে বের হওয়ার পর ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ সাংবাদিকদের বলেন, ‘জামায়াত কেন আসেনি সেটা তারা বলতে পারবে।’
খাওয়ার বিরতির সময় জাতীয় গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরও বলেন, ‘আজকে সংলাপে জামায়েতে ইসলামী অংশ নেয়নি, আমাদের সংলাপে জানানো হয়েছে যে তারা প্রতীকী বয়কট করেছে। আমরাও মনে করি একটি-দুইটি দলকে প্রাধান্য দিয়ে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত দিয়ে দিলেন, এটা কেন? নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত কীভাবে বলবেন কোন দল কত বড়।
সংলাপে অন্যদের মধ্যে যোগ দিয়েছেন জাতীয় গণফ্রন্টের টিপু বিশ্বাস, খেলাফত মজলিসের আহমেদ আবদুল কাদের, গণসংহতি আন্দোলনের আবুল হাসান রুবেল, এবি পার্টির আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান, এলডিপির রেদোয়ান আহমেদ, বিএলডিপির সাহাদাত হোসেন সেলিম, জেএসডির শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, বাংলাদেশ জাসদের মুশতাক হোসেনসহ ৩০টি রাজনৈতিক দলের নেতারা।
জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ এ বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। বৈঠকে কমিশনের সদস্যদের মধ্যে ছিলেন কমিশনের সদস্য বিচারপতি এমদাদুল হক, বদিউল আলম মজুমদার, আইয়ুর মিয়া, ইফতেখারুজ্জামান, সফর রাজ হোসেন।
ঐকমত্য কমিশন বলছে, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ধাপে ধাপে আলোচনা হবে। এতে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ, স্থায়ী কমিটির সভাপতি মনোনয়ন, নারী প্রতিনিধিত্বসহ দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ এবং প্রধান বিচারপতির নিয়োগ প্রক্রিয়ায় যে দ্বিমত রয়েছে সেসব বিষয়ে ঐক্যমত্যের ওপর গুরুত্বারোপ করা হবে। কোরবানির ঈদের আগে প্রথম ধাপের আলোচনা শেষে দ্বিতীয় ধাপের আলোচনার জন্য ২ জুন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসেছিল ঐকমত্য কমিশন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর গত অক্টোবরে গঠিত ছয়টি সংস্কার কমিনের প্রতিবেদন জমা পড়ে ফেব্রুয়ারি মাসে। এসব প্রতিবেদনের সুপারিশের বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৫ ফেব্রুয়ারি যাত্রা করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।