- সুখদেব কুমার সানা
বছর ঘুরে ফিরে এলো পবিত্র ঈদুল আজহার দিন। ত্যাগের মহিমায় আগামী শনিবার (৭ জুন) দেশব্যাপী উদযাপিত হবে পবিত্র ঈদুল আজহা। হিজরি বর্ষপঞ্জি অনুসারে জিলহজ মাসের ১০ তারিখে ঈদুল আজহা পালিত হয়। ঈদুল ফিতরের মতো ঈদুল আজহায় ঠিক আগের দিন চাঁদ দেখার রীতি নেই। ১০ দিন আগেই ঠিক হয়ে যায় ঈদের দিনক্ষণ। সে অনুসারে পশু কেনা, নাড়ির টানে গ্রামে যাওয়াসহ ঈদের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করে থাকেন সবাই। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। গ্রামের বাড়ি যাচ্ছে মানুষ, যার যার সাধ্যমতো কিনছেন পশু। কয়েক দিন আগে থেকে পাড়ায়-মহল্লায় কোরবানির পশু কিনে এনে বেঁধে রাখা হচ্ছে। শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে উৎসুক মানুষ দেখছে কোরবানির গরু-ছাগল।
হ্যাঁ, এবার যেটা ব্যতিক্রম তা হলো- অন্য যেকোনো বছরের চেয়ে দীর্ঘ ছুটির ফাঁদে পড়ছে দেশ। সরকারি ছুটি বেশি থাকলেও বেসরকারি ছুটিও নেহায়েত কম নয়। এবার সংবাদপত্রেও প্রথমবারের মতো টানা ৫ দিন ছুটি ঘোষণা করেছে সংবাদপত্র মালিকদের সংগঠন নিউজপেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (নোয়াব)। অন্য সব ক্ষেত্রেই ছুটির পরিমাণ বেশি। সুতরাং আশা করাই যায় যে, যাতায়াত, বেড়ানো সব কিছুতেই এবারের ঈদে বাড়তি আনন্দ পাবে মানুষ।
পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে শুভেচ্ছা জানিয়ে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টা দেশবাসীর উদ্দেশে বাণী দেবেন।
ঈদুল ফিতরের পর মুসলমান ধর্মাবলম্বীদের দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎসব ঈদুল আজহা। ঈদুল আজহা আমাদের দেশের মানুষের কাছে ‘কোরবানির ঈদ’ নামে পরিচিত। এর ইতিহাস সুপ্রাচীন। সারা বিশ্বের মুসলমানরা ১০ জিলহজ কোরবানি দিয়ে থাকেন। আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে হজরত ইব্রাহিম (আ.) তার প্রিয় পুত্রকে কোরবানি করতে চেয়েছিলেন। ইব্রাহিম (আ.)-এর নিয়ত ও তা বাস্তবায়নের উদ্যোগে খুশি হয়ে তার পুত্রের বদলে পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালার ইশারায় দুম্বা কোরবানি হয়। হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর অসামান্য এই ত্যাগের মহিমা জাগ্রত রাখতে সারা বিশ্বের মুসলিম সম্প্রদায় জিলহজ মাসের ১০ তারিখে পশু কোরবানি করেন। ঈদুল আজহার পরের দুদিন অর্থাৎ ১১ ও ১২ জিলহজেও পশু কোরবানির সুযোগ থাকে।
পবিত্র ঈদের দিন সকালে দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ আদায়ের মাধ্যমে ঈদ উদযাপনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। নামাজের পর খুতবায় ইমাম সাহেব কোরবানির মর্মবাণী তুলে ধরবেন। পশু কোরবানির মাধ্যমে মনের পশুকে দমনের আহ্বান থাকে খুতবায়। দোয়ার মাধ্যমে ঈদ উদযাপনের প্রথম পর্ব শেষ হবে। এরপর পশু কোরবানির মাধ্যমে শুরু হবে ঈদুল আজহার দ্বিতীয় পর্বের উদযাপন। গ্রাম থেকে শহর সব জায়গায় বিকাল পর্যন্ত আত্মীয়স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীর মধ্যে কোরবানির পশুর মাংস বিতরণের আনন্দে মেতে উঠবেন অনেকে। রাজধানী ঢাকায় বেশ কয়েকটি ঈদের নামাজের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। ঈদের জামাতের নিরাপত্তা নিশ্চিতে র্যাব ও পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সার্বক্ষণিক নজরদারি থাকবে।
উন্নয়নশীল বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার অনেক উন্নতি হওয়ায়, গত ঈদুল ফিতরের মতো এই ঈদযাত্রাও এখন পর্যন্ত যথেষ্ট স্বস্তিদায়ক বলে দেখা গেছে। উল্লেখযোগ্য কোনো দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ছাড়াই নিরাপদেই হোক সবার যাতায়াত-ভ্রমণ-বেড়ানো। দেশে দেশে চলমান যুদ্ধের অবসান ঘটুক। পৃথিবীব্যাপী যুদ্ধের নামে যে অশান্তি সৃষ্টি হয়েছে, অচিরেই তা বন্ধ হোক, শান্তি নেমে আসুক মানুষের জীবনে। সব কিছুই স্বাভাবিক হোক। দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে যে শূন্যতা বিরাজ করছে, তাও কেটে যাক দ্রুতসময়ে।
আশা করবো-সবাই সুস্থ-সুন্দর-স্বাভাবিকভাবে যথাযথ ভাবগাম্ভীর্য ও উৎসবমুখর পরিবেশে মুসলমান সম্প্রদায়ের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই ধর্মীয় উৎসব পালন করে কর্মস্থলে ফিরে আসবেন।
ঈদের প্রধান জামাত সকাল সাড়ে ৭টায়, বায়তুল মোকাররমে ৫টি জামাত: পবিত্র ঈদুল আজহার প্রধান জামাত শনিবার সকাল সাড়ে ৭টায় অনুষ্ঠিত হবে। জাতীয় ঈদগাহে এই জামাত হবে। এ ছাড়া বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে পর্যায়ক্রমে ৫টি জামাতের আয়োজনের কথা রয়েছে। গত মঙ্গলবার (৩ জুন) ইসলামিক ফাউন্ডেশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
৭ জুন (শনিবার) পবিত্র ঈদুল আজহার প্রধান জামাত রাজধানীর হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে জাতীয় ঈদগাহে অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া আবহাওয়া প্রতিকূল থাকলে বায়তুল মোকাররম মসজিদে প্রধান জামাত সকাল আটটায় অনুষ্ঠিত হবে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রতিবছরের মতো এবারও বায়তুল মোকাররম মসজিদে ঈদের পাঁচটি জামাত অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম জামাত সকাল ৭টায় এবং দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম ও শেষ জামাত পর্যায়ক্রমে সকাল ৮টা, ৯টা, ১টা এবং ১০টা ৪৫ মিনিটে অনুষ্ঠিত হবে। জাতীয় ঈদগাহে অনুষ্ঠেয় জামাত টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করা হবে বলে জানানো হয়েছে। এ ছাড়া রাজধানীর বাইরে প্রসিদ্ধ মসজিদগুলোর ঈদ জামাত ও বৃহত্তর জেলাগুলোর প্রধান জামাতের সময়সূচি ঈদের আগের দিন বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতারসহ বেসরকারি চ্যানেলের মাধ্যমে জানানো হবে।