ঢাকা ০২:৫৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৭ জুন ২০২৫

রহস্যময় ‘তারা’র স্পন্দনে হতবাক বিজ্ঞানীরা

  • আপডেট সময় : ০৫:৩৮:১২ অপরাহ্ন, বুধবার, ৪ জুন ২০২৫
  • ১৭ বার পড়া হয়েছে

প্রযুক্তি ডেস্ক: সম্প্রতি রহস্যময় এক তারার ‘স্পন্দন’ হতবাক করেছে বিজ্ঞানীদের। পৃথিবী থেকে প্রায় ১৫ হাজার আলোকবর্ষ দূরে অদ্ভুত কিছু ঘটছে। ‘স্কুটাম’ নামের নক্ষত্রমণ্ডল থেকে অজানা এক বস্তু মহাকাশে সংকেত পাঠাচ্ছে, যা অদ্ভুত ধরনের এক আলোর ঝলকানি। প্রতি ৪৪ মিনিটে একবার করে এক্স-রে ও রেডিও সংকেতের মতো টিপটিপ করছে বা জ্বলছে এটি। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এমন কিছু আগে কখনও দেখেননি বলে প্রতিবেদনে লিখেছে টাইম ম্যাগাজিন।

বস্তুটি কী হতে পারে সে বিষয়ে বিজ্ঞানীরা এখনও নিশ্চিত নন। হতে পারে এটি শ্বেত বামন বা এক ধরনের মৃত তারা। আবার হতে পারে এটি ম্যাগনেটার বা খুব শক্তিশালী চৌম্বক শক্তিওয়ালা নিউট্রন তারা। তবে বিজ্ঞানীরা বলছেন, হতে পারে বস্তুটি এসবের কিছুই নয়, অর্থাৎ একেবারে নতুন ধরনের কোনো জিনিসও হতে পারে এটি।

এ গবেষণাপত্রের প্রধান লেখক ও অস্ট্রেলিয়ার ‘কার্টিন ইউনিভার্সিটি’র জ্যোতির্বিদ জিটেং ওয়াং বলেছেন, “জ্যোতির্বিদেরা সব ধরনের টেলিস্কোপ দিয়ে অসংখ্য তারা খতিয়ে দেখেছেন, তবে এমন আচরণ কোনো তারার মধ্যে আগে কখনও দেখা যায়নি। তারার মধ্যে এমন নতুন আচরণ দেখার বিষয়টি সত্যিই রোমাঞ্চকর। এ রহস্যময় বস্তুর ওপর করা তার গবেষণাটি প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘নেচার-এ।
বিজ্ঞানীরা এ রহস্যময় বস্তুটির নাম রেখেছেন ‘এএসকেএপি জে১৮৩২’। তবে এখনও কেউ নিশ্চিতভাবে জানে না এটি আসলে ঠিক কী ও এ ধরনের বস্তু আসলে কতটা সাধারণ। ‘এএসকেএপি জে১৮৩২’ যেভাবে আলোর ঝলক পাঠাচ্ছে তা মহাবিশ্বে একেবারে প্রথম নয়। এ ধরনের আচরণ পালসার নামের বিভিন্ন বস্তুর মধ্যেও দেখা যায়। পালসার হচ্ছে, দ্রুত ঘূর্ণায়মান নিউট্রন তারা, যেগুলো খুব দ্রুত বা মিলিসেকেন্ড থেকে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে রেডিও তরঙ্গ পাঠায়। তবে ‘এএসকেএপি জে১৮৩২’ আলোর ঝলক পাঠাচ্ছে ৪৪ মিনিট পরপর, যা পালসারের চেয়ে অনেক ধীরলয়ের।
২০২২ সালে বিজ্ঞানীরা নতুন এক ধরনের বস্তু আবিষ্কার করেন, যা ‘লং-পিরিয়ড ট্রানজিয়েন্ট’ নামে পরিচিত। এসব বস্তুও প্রতি মিনিটে আলোর ঝলক পাঠায়, ঠিক যেমন ‘এএসকেএপি জে১৮৩২’ পাঠাচ্ছে। এখন পর্যন্ত এরকম কেবল ১০টি বস্তুর সন্ধান পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। ‘এএসকেএপি জে১৮৩২’-এর আলাদা হওয়ার কারণ, এটিই প্রথম লং-পিরিয়ড ট্রানজিয়েন্ট, যা কেবল রেডিও নয়, এক্স-রে আলোও পাঠিয়েছে। এর আগে যেগুলো দেখা গিয়েছে, সেগুলো থেকে এক্স-রে বের হওয়ার প্রমাণ মেলেনি।
বিস্ময়কর বিষয় হচ্ছে ‘এএসকেএপি জে১৮৩২’ যেভাবে রেডিও ও এক্স-রে সিগনাল পাঠায়, সেটিও সময়ের সঙ্গে বদলাচ্ছে। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে মহাকাশে থাকা নাসার ‘চন্দ্র এক্স-রে অবজারভেটরি’ দিয়ে পর্যবেক্ষণের সময় দেখা গিয়েছে এ বস্তুটি অনেক জোরে ও স্পষ্টভাবে রেডিও এবং এক্স-রে সিগনাল পাঠাচ্ছিল। তবে ঠিক ছয় মাস পর আবার পর্যবেক্ষণে দেখা গেল এর রেডিও তরঙ্গ ছিল আগের তুলনায় ১ হাজার ভাগের এক ভাগ এবং ওই সময় এর এক্স-রে সিগনাল শনাক্ত করা যায়নি। বিজ্ঞানীদের জন্য এটা এক রহস্য। কারণ তারা এখনও বুঝে উঠতে পারছেন না কেন আচমকা এত পরিবর্তন ঘটলো এর। এমন আচরণ আগে কোনো পরিচিত তারা বা মহাজাগতিক বস্তুতে দেখা যায়নি। ‘এএসকেএপি জে১৮৩২’ এখনও এক রহস্যময় ধাঁধা।

এক বিবৃতিতে এ গবেষণার সহ-লেখক ও বার্সেলোনার ‘ইনস্টিটিউট অফ স্পেস সায়েন্সেস’-এর নান্দা রিয়া বলেছেন, “আমরা নিউট্রন তারা ও শ্বেত বামন তারা নিয়ে বিভিন্ন ধরনের সম্ভাবনা খুঁজে দেখেছি। যেমন– এরা একা থাকলে কী হয়, আবার কোনো সঙ্গী তারা থাকলে কী হয় তা-ও বিবেচনা করেছি। তবে এখনও পর্যন্ত কোনো ব্যাখ্যা পুরোপুরি মিলে যায়নি। তবে এক্ষেত্রে কিছু ধারণা অন্যগুলোর চেয়ে একটু ভালো কাজ করেছে। বিজ্ঞানীদের একটি সম্ভাব্য ব্যাখ্যা হচ্ছে, ম্যাগনেটার, যা এক ধরনের শক্তিশালী নিউট্রন তারা। তবে সেটিও পুরোপুরি মেলে না। কারণ ‘এএসকেএপি জে১৮৩২’ যেভাবে উজ্জ্বল ও বদলাতে থাকা রেডিও সংকেত পাঠায়, তা সাধারণ ম্যাগনেটারের সঙ্গে একেবারেই মেলে না।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

রহস্যময় ‘তারা’র স্পন্দনে হতবাক বিজ্ঞানীরা

আপডেট সময় : ০৫:৩৮:১২ অপরাহ্ন, বুধবার, ৪ জুন ২০২৫

প্রযুক্তি ডেস্ক: সম্প্রতি রহস্যময় এক তারার ‘স্পন্দন’ হতবাক করেছে বিজ্ঞানীদের। পৃথিবী থেকে প্রায় ১৫ হাজার আলোকবর্ষ দূরে অদ্ভুত কিছু ঘটছে। ‘স্কুটাম’ নামের নক্ষত্রমণ্ডল থেকে অজানা এক বস্তু মহাকাশে সংকেত পাঠাচ্ছে, যা অদ্ভুত ধরনের এক আলোর ঝলকানি। প্রতি ৪৪ মিনিটে একবার করে এক্স-রে ও রেডিও সংকেতের মতো টিপটিপ করছে বা জ্বলছে এটি। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এমন কিছু আগে কখনও দেখেননি বলে প্রতিবেদনে লিখেছে টাইম ম্যাগাজিন।

বস্তুটি কী হতে পারে সে বিষয়ে বিজ্ঞানীরা এখনও নিশ্চিত নন। হতে পারে এটি শ্বেত বামন বা এক ধরনের মৃত তারা। আবার হতে পারে এটি ম্যাগনেটার বা খুব শক্তিশালী চৌম্বক শক্তিওয়ালা নিউট্রন তারা। তবে বিজ্ঞানীরা বলছেন, হতে পারে বস্তুটি এসবের কিছুই নয়, অর্থাৎ একেবারে নতুন ধরনের কোনো জিনিসও হতে পারে এটি।

এ গবেষণাপত্রের প্রধান লেখক ও অস্ট্রেলিয়ার ‘কার্টিন ইউনিভার্সিটি’র জ্যোতির্বিদ জিটেং ওয়াং বলেছেন, “জ্যোতির্বিদেরা সব ধরনের টেলিস্কোপ দিয়ে অসংখ্য তারা খতিয়ে দেখেছেন, তবে এমন আচরণ কোনো তারার মধ্যে আগে কখনও দেখা যায়নি। তারার মধ্যে এমন নতুন আচরণ দেখার বিষয়টি সত্যিই রোমাঞ্চকর। এ রহস্যময় বস্তুর ওপর করা তার গবেষণাটি প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘নেচার-এ।
বিজ্ঞানীরা এ রহস্যময় বস্তুটির নাম রেখেছেন ‘এএসকেএপি জে১৮৩২’। তবে এখনও কেউ নিশ্চিতভাবে জানে না এটি আসলে ঠিক কী ও এ ধরনের বস্তু আসলে কতটা সাধারণ। ‘এএসকেএপি জে১৮৩২’ যেভাবে আলোর ঝলক পাঠাচ্ছে তা মহাবিশ্বে একেবারে প্রথম নয়। এ ধরনের আচরণ পালসার নামের বিভিন্ন বস্তুর মধ্যেও দেখা যায়। পালসার হচ্ছে, দ্রুত ঘূর্ণায়মান নিউট্রন তারা, যেগুলো খুব দ্রুত বা মিলিসেকেন্ড থেকে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে রেডিও তরঙ্গ পাঠায়। তবে ‘এএসকেএপি জে১৮৩২’ আলোর ঝলক পাঠাচ্ছে ৪৪ মিনিট পরপর, যা পালসারের চেয়ে অনেক ধীরলয়ের।
২০২২ সালে বিজ্ঞানীরা নতুন এক ধরনের বস্তু আবিষ্কার করেন, যা ‘লং-পিরিয়ড ট্রানজিয়েন্ট’ নামে পরিচিত। এসব বস্তুও প্রতি মিনিটে আলোর ঝলক পাঠায়, ঠিক যেমন ‘এএসকেএপি জে১৮৩২’ পাঠাচ্ছে। এখন পর্যন্ত এরকম কেবল ১০টি বস্তুর সন্ধান পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। ‘এএসকেএপি জে১৮৩২’-এর আলাদা হওয়ার কারণ, এটিই প্রথম লং-পিরিয়ড ট্রানজিয়েন্ট, যা কেবল রেডিও নয়, এক্স-রে আলোও পাঠিয়েছে। এর আগে যেগুলো দেখা গিয়েছে, সেগুলো থেকে এক্স-রে বের হওয়ার প্রমাণ মেলেনি।
বিস্ময়কর বিষয় হচ্ছে ‘এএসকেএপি জে১৮৩২’ যেভাবে রেডিও ও এক্স-রে সিগনাল পাঠায়, সেটিও সময়ের সঙ্গে বদলাচ্ছে। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে মহাকাশে থাকা নাসার ‘চন্দ্র এক্স-রে অবজারভেটরি’ দিয়ে পর্যবেক্ষণের সময় দেখা গিয়েছে এ বস্তুটি অনেক জোরে ও স্পষ্টভাবে রেডিও এবং এক্স-রে সিগনাল পাঠাচ্ছিল। তবে ঠিক ছয় মাস পর আবার পর্যবেক্ষণে দেখা গেল এর রেডিও তরঙ্গ ছিল আগের তুলনায় ১ হাজার ভাগের এক ভাগ এবং ওই সময় এর এক্স-রে সিগনাল শনাক্ত করা যায়নি। বিজ্ঞানীদের জন্য এটা এক রহস্য। কারণ তারা এখনও বুঝে উঠতে পারছেন না কেন আচমকা এত পরিবর্তন ঘটলো এর। এমন আচরণ আগে কোনো পরিচিত তারা বা মহাজাগতিক বস্তুতে দেখা যায়নি। ‘এএসকেএপি জে১৮৩২’ এখনও এক রহস্যময় ধাঁধা।

এক বিবৃতিতে এ গবেষণার সহ-লেখক ও বার্সেলোনার ‘ইনস্টিটিউট অফ স্পেস সায়েন্সেস’-এর নান্দা রিয়া বলেছেন, “আমরা নিউট্রন তারা ও শ্বেত বামন তারা নিয়ে বিভিন্ন ধরনের সম্ভাবনা খুঁজে দেখেছি। যেমন– এরা একা থাকলে কী হয়, আবার কোনো সঙ্গী তারা থাকলে কী হয় তা-ও বিবেচনা করেছি। তবে এখনও পর্যন্ত কোনো ব্যাখ্যা পুরোপুরি মিলে যায়নি। তবে এক্ষেত্রে কিছু ধারণা অন্যগুলোর চেয়ে একটু ভালো কাজ করেছে। বিজ্ঞানীদের একটি সম্ভাব্য ব্যাখ্যা হচ্ছে, ম্যাগনেটার, যা এক ধরনের শক্তিশালী নিউট্রন তারা। তবে সেটিও পুরোপুরি মেলে না। কারণ ‘এএসকেএপি জে১৮৩২’ যেভাবে উজ্জ্বল ও বদলাতে থাকা রেডিও সংকেত পাঠায়, তা সাধারণ ম্যাগনেটারের সঙ্গে একেবারেই মেলে না।