ঢাকা ০৪:৪৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৬ মে ২০২৫
সব সমস্যা সমাধানের চটকদার বিজ্ঞাপন

জিনের বাদশা প্রতারণায় কোটি কোটি টাকা হাতিয়েছে চক্রটি

  • আপডেট সময় : ০৮:০৭:১২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৫ মে ২০২৫
  • ৬ বার পড়া হয়েছে

রোববার শেরেবাংলা নগর পশ্চিম আগারগাঁওয়ে পিবিআই কার্যালয়ে ‘জিনের মাধ্যমে জোনপরী মা ফাতেমার সব সমস্যার সমাধান চক্রের গ্রেফতার সদস্যদের হাজির করা হয় -ছবি সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক: সৌদি প্রবাসী স্বামী ১৭ জন বাংলাদেশির ভিসার জন্য সৌদির কফিলকে ৩৫ লাখ টাকা দিয়েও ভিসা এবং টাকা না পেয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন। স্বামীর এমন সমস্যা সমাধানে স্ত্রীর নজরে আসে জিনের বাদশা তান্ত্রিক, শাস্ত্রিক জৈনপুরী মা ফাতেমার দরবারের সব সমস্যার সমাধানের লোভনীয় চটকদার বিজ্ঞাপন।

বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হয়ে সমস্যা সমাধানের জন্য জিনের বাদশাখ্যাত প্রতারক চক্রের সঙ্গে যোগাযোগ করেন সৌদি প্রবাসীর ওই স্ত্রী। এরপরই শুরু হয় প্রতারণা। শুরুতে কোনো টাকা লাগবে না বলে জানানো হলেও সৌদি কফিল বাধ্য না হওয়ায় তাকে বাধ্য করার জন্য সৌদি কফিলের কাছে যেতে জিন পরীকে পাক পবিত্র করতে হবে বলে জানান প্রতারক চক্র।

 

আর এর জন্য ভুটানি গরুর ২১ কেজি দুধ দিয়ে ধুয়ে জিন পরীকে পবিত্র করতে হবে বলে জানিয়ে দুধ কেনা বাবদ চাওয়া হয় টাকা। একইভাবে বিভিন্ন অযুহাতে ধাপে ধাপে হাতিয়ে নেওয়া হয় ১০ লাখ ২০ হাজার টাকা। এভাবে প্রতারণার মাধ্যমে বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এই চক্রটি। এমনই এক প্রতারক চক্রের ৩ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন- মো. রাকিব (২০), মো. রাকিব মোল্লা (২৯), মো. আলাউদ্দিন। ভোলা জেলার বোরহানউদ্দিন থানা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

গতকাল রোববার (২৫ মে) রাজধানীর শেরেবাংলা নগর পশ্চিম আগারগাঁওয়ে পিবিআই কার্যালয়ে ‘জিনের মাধ্যমে জোনপরী মা ফাতেমার সব সমস্যার সমাধান চক্রের সদস্য গ্রেফতার সংক্রান্ত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান অতিরিক্ত উপ-পুলিশ মহাপরিদর্শক মো. এনায়েত হোসেন মান্নান।

মো. এনায়েত হোসেন মান্নান বলেন, তেজকুনীপাড়া তেজগাঁওয়ের গৃহবধূ রহিমা বেগমের সৌদি প্রবাসী স্বামী ১৭ জন বাংলাদেশির ভিসার জন্য ৩৫ লাখ টাকা কফিলকে দিয়ে ভিসাও পায়নি এবং টাকাও না পেয়ে দিশেহারা হয়ে পরেন। এমন সময় তার স্ত্রী জিনের বাদশা তান্ত্রিক, শাস্ত্রিক জৈনপুরী মা ফাতেমার দরবারের সব সমস্যার সমাধানের লোভনীয় বিজ্ঞাপন দেখে প্রতারকচক্রের মিথ্যে নাটক ও প্রতারণার ফাঁদে পড়ে দাপে ধাপে ১০ লাখ ২০ হাজার টাকা হারিয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে পরেন। পরে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে তেজগাঁও থানার একটি মামলা দায়ের করেন তিনি। তিনি আরো বলেন, মামলার বাদীর দাবি ১০ লাখ ২০ হাজার টাকা প্রতারকের খপ্পরে পড়ে নেওয়ার কথা উল্লেখ করলেও মামলা তদন্তকালে ও আসামিদের গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদে প্রকাশ্যে ইউটিউব চ্যানেলে ও বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রতারণার ফাঁদ পেতে হাজার হাজার লোককে বোকা বানিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় বলে জানা যায়।

মানুষকে প্রলুব্ধ ও আকর্ষণ করার জন্য জিনের বাদশা খ্যাত প্রতারকচক্র বিভিন্ন চটকদার বিজ্ঞাপন দেয় জানিয়ে অতিরিক্ত উপ-পুলিশ মহাপরিদর্শক বলেন, চক্রটি বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে কৌশলে বিপদগ্রস্ত মানুষকে সব সমস্যার সমাধানের প্রলোভন দেখায়। বিজ্ঞাপন দেখে প্রলুব্ধ হয়ে তাদের দেওয়া নম্বরে ফোন করলে তারা তখন জানায়, তারা সব সমস্যার সমাধান, পাওনা টাকা আদায়, স্বামীর সঙ্গে মিল, প্রেমিকাকে পাইয়ে দেওয়া, ঝগড়া বিবাদ মিট করা, মামলা মোকদ্দমায় জয়ী করা, গুপ্তধন পাইয়ে দেওয়া, লটারিতে বিজয়ী করা, কোটি কোটি টাকার মালিক বানিয়ে দেওয়া, কঠিন রোগ থেকে আরোগ্য লাভ করা, পাওনা টাকা আদায় করা, আকামা লাগিয়ে দেওয়া, ভিসা পাইয়ে দেওয়া, ভাগ্য পরিবর্তন করে দেবেন ইত্যাদি।
প্রতারণা করার উদ্দেশ্যে সৌদি কফিলকে বাধ্য করার জন্য প্রাথমিকভাবে মেডিসিন হিসেবে আগরবাতি, মোমবাতি, গোলাপজল, কাপ সিন্দুর লাগবে জানিয়ে টাকা হাতিয়ে নেয়।

পরে আবার সৌদি কফিল বাধ্য না হওয়ায় তাকে বাধ্য করার জন্য জিন পরীকে সৌদি কফিলের কাছে যেতে জিন পরীকে পাক পবিত্র করতে হবে। এই জন্য ভুটানি গরুর ২১ কেজি দুধ দিয়ে ধুয়ে জিন পরীকে পবিত্র করতে হবে। কফিলকে বাধ্য করতে বাদীকে রতাময়ী শ্রী আংটি পড়তে হবে। আংটি জিনেরা বাদীর কাছে পৌঁছে দিবে তাই জিনদের মিষ্টি খাওয়ানোর জন্য টাকা লাগবে। জিন পরীরা বাদীর কাছে যেতে মানুষের রূপ ধারণ করতে হবে সে জন্য জিন পরীদের আগুন মোয়া শাড়ি লাগবে এবং তাতে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা লাগবে।

পরবর্তীতে জিনেরা বাদীর নিকট যাওয়ার সময় পথিমধ্যে খবিশ জিরো তাদের ওপর প্রস্রাব করে দিয়েছে তাতে জিরো আটকিয়ে গেছে এবং সেখান থেকে তাদের ছাড়াতে হলে পাঠা বলি দিতে হবে জানিয়ে নানা কৌশলে ধাপে ধাপে প্রতারণার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের টাকা হাতিয়ে নেওয়াই এই জিনের বাদশার কাজ।

তিনি আরো বলেন, হতাশাগ্রস্ত লোকদের প্রতারক চক্রে বাধ্য করার জন্য তাদের কথামতো কাজ না করলে ইউটিউব থেকে ডাউনলোড করা জিন-পরীর বীভৎস ছবি পাঠিয়ে ভয় দেখানো এবং কাউকে কিছু বললে সন্তানের মুখ দিয়ে রক্তবমি হয়ে সন্তান মারা যাবে ও পরিবারের অন্য সদস্যদের মারাত্মক ক্ষতিসহ অঙ্গহানি হবে জানিয়ে ভয়ভীতি দেখানো হয়।

জিরে কণ্ঠ নকলের তথ্য তুলে দরে মো. এনায়েত হোসেন মান্নান বলেন, অ্যাপসের মাধ্যমে প্রতারণার অংশ হিসেবে জৈনপুরী মা ফাতেমা নারী কণ্ঠে ভয়েজ দিয়ে পুরুষ প্রতারক কথা বলে এবং জিনের বাদশার কণ্ঠ ভয়েজে দিয়ে ব্যবহার করে মানুষকে বিশ্বাসযোগ্য করে ভয়, আতঙ্ক ও পীরের দরবার বলে চালানো হতো।

চক্রটির বিকাশ-নগদের তথ্য জানিয়ে তিনি বলেন, অন্যের নামে রেজিস্ট্রেশন করে ভুয়া সিম তুলে বিকাশ ও নগদ অ্যাকাউন্ট খুলে লেনদেন ও টাকা নিয়েছে মর্মে স্বীকার করেছে। তদন্তে বিকাশ স্টেটমেন্ট পাওয়া গেছে। যেখানে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার তথ্য পাওয়া যায়।

গ্রেফতার আসামিদের জবানবন্দিতে ভয়াবহ, লোমহর্ষক, চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে জানিয়ে এনায়েত বলেন, আসামিদের সঙ্গে তাদের প্রতারণার কাজে আরো একাধিক আসামি জড়িত রয়েছেন।

 

গ্রেফতারকৃত আসামিসহ প্রতারকচক্র গত ২০১৯ সাল থেকে শুরু করে বর্তমান পর্যন্ত ৭ বছর প্রতারণা করে হাজার হাজার মানুষের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এ সময় তাদের কাছ থেকে মোবাইল ৪টি, লোভনীয় বিজ্ঞাপনের ভিডিও ৩টি, আসামিদের সঙ্গে বিভিন্ন ভিকটিমের কথা বলার ভয়েস রেকর্ড ১০টি, বিভিন্ন বিজ্ঞাপনের ছবি ৭টি, বিকাশ স্টেটমেন্ট ১৫০ পাতা ও কোটি কোটি টাকার লেনদেনের ৫টি বিকাশ অ্যাকাউন্ট শনাক্ত করার কথা জানানো হয়।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

‘ক্ষমতায় থাকতে’ ইউনূস মৌলবাদীদের ‘একখানে করেছেন’: গয়েশ্বর

সব সমস্যা সমাধানের চটকদার বিজ্ঞাপন

জিনের বাদশা প্রতারণায় কোটি কোটি টাকা হাতিয়েছে চক্রটি

আপডেট সময় : ০৮:০৭:১২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৫ মে ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক: সৌদি প্রবাসী স্বামী ১৭ জন বাংলাদেশির ভিসার জন্য সৌদির কফিলকে ৩৫ লাখ টাকা দিয়েও ভিসা এবং টাকা না পেয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন। স্বামীর এমন সমস্যা সমাধানে স্ত্রীর নজরে আসে জিনের বাদশা তান্ত্রিক, শাস্ত্রিক জৈনপুরী মা ফাতেমার দরবারের সব সমস্যার সমাধানের লোভনীয় চটকদার বিজ্ঞাপন।

বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হয়ে সমস্যা সমাধানের জন্য জিনের বাদশাখ্যাত প্রতারক চক্রের সঙ্গে যোগাযোগ করেন সৌদি প্রবাসীর ওই স্ত্রী। এরপরই শুরু হয় প্রতারণা। শুরুতে কোনো টাকা লাগবে না বলে জানানো হলেও সৌদি কফিল বাধ্য না হওয়ায় তাকে বাধ্য করার জন্য সৌদি কফিলের কাছে যেতে জিন পরীকে পাক পবিত্র করতে হবে বলে জানান প্রতারক চক্র।

 

আর এর জন্য ভুটানি গরুর ২১ কেজি দুধ দিয়ে ধুয়ে জিন পরীকে পবিত্র করতে হবে বলে জানিয়ে দুধ কেনা বাবদ চাওয়া হয় টাকা। একইভাবে বিভিন্ন অযুহাতে ধাপে ধাপে হাতিয়ে নেওয়া হয় ১০ লাখ ২০ হাজার টাকা। এভাবে প্রতারণার মাধ্যমে বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এই চক্রটি। এমনই এক প্রতারক চক্রের ৩ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন- মো. রাকিব (২০), মো. রাকিব মোল্লা (২৯), মো. আলাউদ্দিন। ভোলা জেলার বোরহানউদ্দিন থানা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

গতকাল রোববার (২৫ মে) রাজধানীর শেরেবাংলা নগর পশ্চিম আগারগাঁওয়ে পিবিআই কার্যালয়ে ‘জিনের মাধ্যমে জোনপরী মা ফাতেমার সব সমস্যার সমাধান চক্রের সদস্য গ্রেফতার সংক্রান্ত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান অতিরিক্ত উপ-পুলিশ মহাপরিদর্শক মো. এনায়েত হোসেন মান্নান।

মো. এনায়েত হোসেন মান্নান বলেন, তেজকুনীপাড়া তেজগাঁওয়ের গৃহবধূ রহিমা বেগমের সৌদি প্রবাসী স্বামী ১৭ জন বাংলাদেশির ভিসার জন্য ৩৫ লাখ টাকা কফিলকে দিয়ে ভিসাও পায়নি এবং টাকাও না পেয়ে দিশেহারা হয়ে পরেন। এমন সময় তার স্ত্রী জিনের বাদশা তান্ত্রিক, শাস্ত্রিক জৈনপুরী মা ফাতেমার দরবারের সব সমস্যার সমাধানের লোভনীয় বিজ্ঞাপন দেখে প্রতারকচক্রের মিথ্যে নাটক ও প্রতারণার ফাঁদে পড়ে দাপে ধাপে ১০ লাখ ২০ হাজার টাকা হারিয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে পরেন। পরে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে তেজগাঁও থানার একটি মামলা দায়ের করেন তিনি। তিনি আরো বলেন, মামলার বাদীর দাবি ১০ লাখ ২০ হাজার টাকা প্রতারকের খপ্পরে পড়ে নেওয়ার কথা উল্লেখ করলেও মামলা তদন্তকালে ও আসামিদের গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদে প্রকাশ্যে ইউটিউব চ্যানেলে ও বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রতারণার ফাঁদ পেতে হাজার হাজার লোককে বোকা বানিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় বলে জানা যায়।

মানুষকে প্রলুব্ধ ও আকর্ষণ করার জন্য জিনের বাদশা খ্যাত প্রতারকচক্র বিভিন্ন চটকদার বিজ্ঞাপন দেয় জানিয়ে অতিরিক্ত উপ-পুলিশ মহাপরিদর্শক বলেন, চক্রটি বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে কৌশলে বিপদগ্রস্ত মানুষকে সব সমস্যার সমাধানের প্রলোভন দেখায়। বিজ্ঞাপন দেখে প্রলুব্ধ হয়ে তাদের দেওয়া নম্বরে ফোন করলে তারা তখন জানায়, তারা সব সমস্যার সমাধান, পাওনা টাকা আদায়, স্বামীর সঙ্গে মিল, প্রেমিকাকে পাইয়ে দেওয়া, ঝগড়া বিবাদ মিট করা, মামলা মোকদ্দমায় জয়ী করা, গুপ্তধন পাইয়ে দেওয়া, লটারিতে বিজয়ী করা, কোটি কোটি টাকার মালিক বানিয়ে দেওয়া, কঠিন রোগ থেকে আরোগ্য লাভ করা, পাওনা টাকা আদায় করা, আকামা লাগিয়ে দেওয়া, ভিসা পাইয়ে দেওয়া, ভাগ্য পরিবর্তন করে দেবেন ইত্যাদি।
প্রতারণা করার উদ্দেশ্যে সৌদি কফিলকে বাধ্য করার জন্য প্রাথমিকভাবে মেডিসিন হিসেবে আগরবাতি, মোমবাতি, গোলাপজল, কাপ সিন্দুর লাগবে জানিয়ে টাকা হাতিয়ে নেয়।

পরে আবার সৌদি কফিল বাধ্য না হওয়ায় তাকে বাধ্য করার জন্য জিন পরীকে সৌদি কফিলের কাছে যেতে জিন পরীকে পাক পবিত্র করতে হবে। এই জন্য ভুটানি গরুর ২১ কেজি দুধ দিয়ে ধুয়ে জিন পরীকে পবিত্র করতে হবে। কফিলকে বাধ্য করতে বাদীকে রতাময়ী শ্রী আংটি পড়তে হবে। আংটি জিনেরা বাদীর কাছে পৌঁছে দিবে তাই জিনদের মিষ্টি খাওয়ানোর জন্য টাকা লাগবে। জিন পরীরা বাদীর কাছে যেতে মানুষের রূপ ধারণ করতে হবে সে জন্য জিন পরীদের আগুন মোয়া শাড়ি লাগবে এবং তাতে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা লাগবে।

পরবর্তীতে জিনেরা বাদীর নিকট যাওয়ার সময় পথিমধ্যে খবিশ জিরো তাদের ওপর প্রস্রাব করে দিয়েছে তাতে জিরো আটকিয়ে গেছে এবং সেখান থেকে তাদের ছাড়াতে হলে পাঠা বলি দিতে হবে জানিয়ে নানা কৌশলে ধাপে ধাপে প্রতারণার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের টাকা হাতিয়ে নেওয়াই এই জিনের বাদশার কাজ।

তিনি আরো বলেন, হতাশাগ্রস্ত লোকদের প্রতারক চক্রে বাধ্য করার জন্য তাদের কথামতো কাজ না করলে ইউটিউব থেকে ডাউনলোড করা জিন-পরীর বীভৎস ছবি পাঠিয়ে ভয় দেখানো এবং কাউকে কিছু বললে সন্তানের মুখ দিয়ে রক্তবমি হয়ে সন্তান মারা যাবে ও পরিবারের অন্য সদস্যদের মারাত্মক ক্ষতিসহ অঙ্গহানি হবে জানিয়ে ভয়ভীতি দেখানো হয়।

জিরে কণ্ঠ নকলের তথ্য তুলে দরে মো. এনায়েত হোসেন মান্নান বলেন, অ্যাপসের মাধ্যমে প্রতারণার অংশ হিসেবে জৈনপুরী মা ফাতেমা নারী কণ্ঠে ভয়েজ দিয়ে পুরুষ প্রতারক কথা বলে এবং জিনের বাদশার কণ্ঠ ভয়েজে দিয়ে ব্যবহার করে মানুষকে বিশ্বাসযোগ্য করে ভয়, আতঙ্ক ও পীরের দরবার বলে চালানো হতো।

চক্রটির বিকাশ-নগদের তথ্য জানিয়ে তিনি বলেন, অন্যের নামে রেজিস্ট্রেশন করে ভুয়া সিম তুলে বিকাশ ও নগদ অ্যাকাউন্ট খুলে লেনদেন ও টাকা নিয়েছে মর্মে স্বীকার করেছে। তদন্তে বিকাশ স্টেটমেন্ট পাওয়া গেছে। যেখানে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার তথ্য পাওয়া যায়।

গ্রেফতার আসামিদের জবানবন্দিতে ভয়াবহ, লোমহর্ষক, চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে জানিয়ে এনায়েত বলেন, আসামিদের সঙ্গে তাদের প্রতারণার কাজে আরো একাধিক আসামি জড়িত রয়েছেন।

 

গ্রেফতারকৃত আসামিসহ প্রতারকচক্র গত ২০১৯ সাল থেকে শুরু করে বর্তমান পর্যন্ত ৭ বছর প্রতারণা করে হাজার হাজার মানুষের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এ সময় তাদের কাছ থেকে মোবাইল ৪টি, লোভনীয় বিজ্ঞাপনের ভিডিও ৩টি, আসামিদের সঙ্গে বিভিন্ন ভিকটিমের কথা বলার ভয়েস রেকর্ড ১০টি, বিভিন্ন বিজ্ঞাপনের ছবি ৭টি, বিকাশ স্টেটমেন্ট ১৫০ পাতা ও কোটি কোটি টাকার লেনদেনের ৫টি বিকাশ অ্যাকাউন্ট শনাক্ত করার কথা জানানো হয়।