ঢাকা ০১:০৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৮ মে ২০২৫
ঢাবি শিক্ষার্থী সাম্য হত্যা

অপরাধ করলে তো পালানোর চেষ্টা করতাম, আদালতকে তিন আসামি

  • আপডেট সময় : ০৯:১৩:৪২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৭ মে ২০২৫
  • ২৮ বার পড়া হয়েছে

সাম্য হত্যায় গ্রেফতার তিনজন -ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যা মামলার রিমান্ড শুনানিতে তিন আসামি নিজেদের নির্দোষ দাবি করেছেন। তারা আদালতকে বলেছেন, কোনো অপরাধ করলে তারা পালানোর চেষ্টাই করতেন।
ঢাকার মহানগর হাকিম শাহিন রেজার আদালতে শনিবার (১৭ মে) রিমান্ড শুনানিতে তারা এ কথা বলেন। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ভেতর দিয়ে মোটরসাইকেল চালিয়ে আসার সময় মঙ্গলবার রাত ১১টার ছুরিকাঘাতে আহত হন শাহরিয়ার আলম সাম্য (২৫)। পরে বন্ধুরা সাম্যকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে এলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর রাজাবাজারসহ কয়েকটি এলাকা থেকে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়। এরা হলেন মাদারীপুর সদরের এরশাদ হাওলাদারের ছেলে তামিম হাওলাদার (৩০), কালাম সরদারের ছেলে পলাশ সরদার (৩০) ও ডাসার থানার যতিন্দ্রনাথ মল্লিকের ছেলে সম্রাট মল্লিক (২৮)। পরদিন বুধবার সকালে সাম্যর বড় ভাই শরীফুল ইসলাম শাহবাগ থানায় ১০ থেকে ১২ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। ওই আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। পরদিন বৃহস্পতিবার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহবাগ থানার এসআই তৌফিক হাসান আসামিদের ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করলেও ওইদিন শুনানি হয়নি। আদালত আসামিদের উপস্থিতিতে রিমান্ড শুনানির দিন শনিবার ধার্য করেছিল। রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, সাম্য বন্ধুদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে জানা গেছে, তিন আসামি অজ্ঞাত আরো কয়েকজনের সঙ্গে মিলে এই ঘটনা ঘটিয়েছেন। মামলার সুষ্ঠু তদন্ত, মূল রহস্য উদঘাটন ও অজ্ঞাত আসামিদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহের তিন আসামিকে জ্ঞিাসাবকাদ করা প্রযোজন বলে রিমান্ড আবেদনে বলা হয়। শনিবার ঢাকার মহানগর হাকিম শাহিন রেজার আদালতে তিন আসামি হাজির করা হলে বিচারক তাদেরকে প্রশ্ন করেন, “আপনাদের আইনজীবী নাই?” আসামিরা ‘আছে’ বলে জানান। তবে শুনানিতে তাদের পক্ষে কোনো আইনজীবীকে দেখা যায়নি। এসময় আসামিদের কিছু বলার আছে কি না জানতে চান বিচারক।
তখন আসামি তামিম হওলাদার বলেন, ‘আমাদের ফার্মগেট আর গুলিস্তানে ফুটপাতে দোকান আছে। গুলিস্তানের দোকানে বিক্রি ভালো হতো না। এজন্য গুলিস্তান থেকে দোকানটা ফার্মগেট নিয়ে যাই। সেখানে একটা চৌকি ছিল, নিয়ে যাই। আমরা তিনজন সুজুকি বাইকে করে যাচ্ছিলাম। যাওয়ার পথে রমনা কালিমন্দিরে গিয়ে বসি।
‘দেখি স্টুডেন্টদের দুই পক্ষ দৌড়াদৌড়ি করছে। তাদের দৌড়ে আমাদের বাইকটা পড়ে যায়। লুকিং গ্ল্যাস ভেঙে যায়। আমরা বলি, আমাদের বাইকের ক্ষতি করলেন। এসময় কয়েকজন আমাদের এলোপাতাড়ি আঘাত করে। আমরা আহত হই। আমাদের হাউকাউয়ে লোকজন জমা হয়। শাহবাগ থানার পুলিশও আসে। এসআই কামাল স্যার আমাদের এঅবস্থা দেখে ট্রিটমেন্ট নিতে বলেন। আমরা শমরিতা হাসপাতালে যাই চিকিৎসা নিতে। আমরা অপরাধ করলে তো পালিয়ে যেতাম।’
এসময় তিনজনই বলেন, এই ঘটনার পর বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তারা কোনো অপরাধ করেননি, সন্দেহের বশে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ সময় তিনজনই কান্নায় ভেঙে পড়েন। পরে আদালত আসামিদের ছয় দিন রিমান্ডের আদেশ দেয়। পরে আদালত থেকে কারাগারে নিয়ে যাওয়ার পথে তামিম বলেন, ‘আমরা এ হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত না। আপনারা সবাই আমাদের ভুল বুঝতেছেন। মামলার সুষ্ঠু তদন্ত হোক। মূল যে আসামি তাকে ধরা হোক। আমাদের কেন ধরছে? সুইসাইড করা ছাড়া আমাদের আর কোনো উপায় নেই।’
আরেক আসামি সম্রাট মল্লিক বলেন, ‘আমাদের মিথ্যাভাবে ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা পথচারী। সেখানে আমরা চা খেতে গিয়েছিলাম।’

 

 

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

ঢাবি শিক্ষার্থী সাম্য হত্যা

অপরাধ করলে তো পালানোর চেষ্টা করতাম, আদালতকে তিন আসামি

আপডেট সময় : ০৯:১৩:৪২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৭ মে ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যা মামলার রিমান্ড শুনানিতে তিন আসামি নিজেদের নির্দোষ দাবি করেছেন। তারা আদালতকে বলেছেন, কোনো অপরাধ করলে তারা পালানোর চেষ্টাই করতেন।
ঢাকার মহানগর হাকিম শাহিন রেজার আদালতে শনিবার (১৭ মে) রিমান্ড শুনানিতে তারা এ কথা বলেন। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ভেতর দিয়ে মোটরসাইকেল চালিয়ে আসার সময় মঙ্গলবার রাত ১১টার ছুরিকাঘাতে আহত হন শাহরিয়ার আলম সাম্য (২৫)। পরে বন্ধুরা সাম্যকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে এলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর রাজাবাজারসহ কয়েকটি এলাকা থেকে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়। এরা হলেন মাদারীপুর সদরের এরশাদ হাওলাদারের ছেলে তামিম হাওলাদার (৩০), কালাম সরদারের ছেলে পলাশ সরদার (৩০) ও ডাসার থানার যতিন্দ্রনাথ মল্লিকের ছেলে সম্রাট মল্লিক (২৮)। পরদিন বুধবার সকালে সাম্যর বড় ভাই শরীফুল ইসলাম শাহবাগ থানায় ১০ থেকে ১২ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। ওই আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। পরদিন বৃহস্পতিবার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহবাগ থানার এসআই তৌফিক হাসান আসামিদের ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করলেও ওইদিন শুনানি হয়নি। আদালত আসামিদের উপস্থিতিতে রিমান্ড শুনানির দিন শনিবার ধার্য করেছিল। রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, সাম্য বন্ধুদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে জানা গেছে, তিন আসামি অজ্ঞাত আরো কয়েকজনের সঙ্গে মিলে এই ঘটনা ঘটিয়েছেন। মামলার সুষ্ঠু তদন্ত, মূল রহস্য উদঘাটন ও অজ্ঞাত আসামিদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহের তিন আসামিকে জ্ঞিাসাবকাদ করা প্রযোজন বলে রিমান্ড আবেদনে বলা হয়। শনিবার ঢাকার মহানগর হাকিম শাহিন রেজার আদালতে তিন আসামি হাজির করা হলে বিচারক তাদেরকে প্রশ্ন করেন, “আপনাদের আইনজীবী নাই?” আসামিরা ‘আছে’ বলে জানান। তবে শুনানিতে তাদের পক্ষে কোনো আইনজীবীকে দেখা যায়নি। এসময় আসামিদের কিছু বলার আছে কি না জানতে চান বিচারক।
তখন আসামি তামিম হওলাদার বলেন, ‘আমাদের ফার্মগেট আর গুলিস্তানে ফুটপাতে দোকান আছে। গুলিস্তানের দোকানে বিক্রি ভালো হতো না। এজন্য গুলিস্তান থেকে দোকানটা ফার্মগেট নিয়ে যাই। সেখানে একটা চৌকি ছিল, নিয়ে যাই। আমরা তিনজন সুজুকি বাইকে করে যাচ্ছিলাম। যাওয়ার পথে রমনা কালিমন্দিরে গিয়ে বসি।
‘দেখি স্টুডেন্টদের দুই পক্ষ দৌড়াদৌড়ি করছে। তাদের দৌড়ে আমাদের বাইকটা পড়ে যায়। লুকিং গ্ল্যাস ভেঙে যায়। আমরা বলি, আমাদের বাইকের ক্ষতি করলেন। এসময় কয়েকজন আমাদের এলোপাতাড়ি আঘাত করে। আমরা আহত হই। আমাদের হাউকাউয়ে লোকজন জমা হয়। শাহবাগ থানার পুলিশও আসে। এসআই কামাল স্যার আমাদের এঅবস্থা দেখে ট্রিটমেন্ট নিতে বলেন। আমরা শমরিতা হাসপাতালে যাই চিকিৎসা নিতে। আমরা অপরাধ করলে তো পালিয়ে যেতাম।’
এসময় তিনজনই বলেন, এই ঘটনার পর বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তারা কোনো অপরাধ করেননি, সন্দেহের বশে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ সময় তিনজনই কান্নায় ভেঙে পড়েন। পরে আদালত আসামিদের ছয় দিন রিমান্ডের আদেশ দেয়। পরে আদালত থেকে কারাগারে নিয়ে যাওয়ার পথে তামিম বলেন, ‘আমরা এ হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত না। আপনারা সবাই আমাদের ভুল বুঝতেছেন। মামলার সুষ্ঠু তদন্ত হোক। মূল যে আসামি তাকে ধরা হোক। আমাদের কেন ধরছে? সুইসাইড করা ছাড়া আমাদের আর কোনো উপায় নেই।’
আরেক আসামি সম্রাট মল্লিক বলেন, ‘আমাদের মিথ্যাভাবে ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা পথচারী। সেখানে আমরা চা খেতে গিয়েছিলাম।’