ঢাকা ০৩:১০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৮ মে ২০২৫
আইনে থাকতে হবে সামাজিক বাণিজ্যিক ব্যাংক

‘ক্ষুদ্রঋণ ব্যাংক’ প্রতিষ্ঠার তাগিদ প্রধান উপদেষ্টার

  • আপডেট সময় : ০৬:২৭:০৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৭ মে ২০২৫
  • ৩৪ বার পড়া হয়েছে

শনিবার আগারগাঁওয়ে মাইক্রো ক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির (এমআরএ) নতুন ভবন উদ্বোধন করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস -ছবি সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক: অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস দেশের তরুণ ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে ‘ক্ষুদ্রঋণ ব্যাংক’ স্থাপনের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। এ জন্য তিনি ‘মাইক্রো ক্রেডিট রেগুলেটরি’ আইন করার কথাও বলেছেন। এ সময় অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘এই ব্যাংক প্রচলিত ধারার ব্যাংকগুলোর মতো হবে না। ব্যাংক চলবে বিশ্বাস ও আস্থার ওপর ভিত্তি করে। ঋণ নিতে জামানত লাগবে না। এর পাশাপাশি এই ব্যাংকের বড় উদ্দেশ্য হবে সামাজিক ব্যবসাকে ছড়িয়ে দেওয়া। এই ব্যাংকগুলো যেগুলো হবে সেগুলো হবে সামাজিক বাণিজ্যের ব্যাংক, সামাজিক ব্যবসা ব্যাংক। আইনের মধ্যেই থাকবে যে এটা হচ্ছে সামাজিক বাণিজ্যিক ব্যাংক।’

শনিবার (১৭ মে) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে মাইক্রো ক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির (এমআরএ) নতুন ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।

প্রধান উপদেষ্টা আরো বলেন, ‘মানুষ মাত্রই উদ্যোক্তা। আমরা ব্যাংকের মাধ্যমে উদ্যোক্তা হওয়ার সরঞ্জাম তাঁর হাতে তুলে দেব। বিনিয়োগের টাকা পেলে মানুষ, বিশেষ করে তরুণেরা নিজেদের বুদ্ধি দিয়ে ব্যবসা চালু করতে পারবে।’

অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশে মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি গঠনের ইতিহাস তুলে ধরে ক্ষুদ্রঋণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজনীয় আইন করার কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘সেটাই প্রকৃত ব্যাংক যার ওপর মানুষ বিশ্বাস রাখে, আস্থা রাখে যেমন- ক্ষুদ্রঋণ ব্যাংক।’

ক্ষুদ্রঋণের সাফল্য তুলে ধরে অধ্যাপক ইউনূস আরো বলেন, ‘ক্ষুদ্রঋণ গ্রহণকারীরা কেউ টাকা মেরে চলে যায়নি। অথচ প্রচলিত ধারার অনেক ব্যাংক হাওয়া হয়ে গেছে। ব্যাংকের টাকা নিয়ে অনেকে উধাও হয়ে গেছেন। তাই আমাদের এখন প্রকৃত ব্যাংকের দিকে নজর দিতে হবে।’
এমআরএ কেবল বাংলাদেশের ক্ষুদ্রঋণের জন্য নয়, বরং পৃথিবীর অন্যান্য দেশের জন্যও ভালো কাজ করছে বলেও মন্তব্য করেন অধ্যাপক ইউনূস।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, মাইক্রো ক্রেডিট নিয়ে আমরা এমন পর্যায়ে এসেছি, এটা নিয়ে নতুন করে চিন্তা করতে হবে। মাইক্রো ক্রেডিট ব্যাংক স্থাপন…. এটা এখন এনজিও। এনজিও থেকে উত্তরণ হতে হবে। এনজিও পর্যায়ে গেলে এটা ঠিক ব্যাংকিং মেজাজে আসবে না। মেজাজ আসতে গেলে তাকে ব্যাংক হতে হবে। মাইক্রোক্রেডিট ব্যাংক নামে একটা আইন করতে হবে। এটা নতুন একটা ব্যাংক হতে হবে। এটা মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি করতে পারে।

তিনি বলেন, তারা সদস্যদের সঞ্চয় নিতে পারে, বাইরের কারো ডিপোজিট নিতে পারে না। এটা তাদের সীমাবদ্ধতা। সীমাবদ্ধতার কারণে তাকে অপরের কাছে হাত পাততে হয়, দায়বদ্ধ হতে হয়, কেন হবে? সে এতো সুন্দর ব্যাংকিং করে, আরেকজনের কাছে হাত পেতে কেন করবে? তার মধ্যে কি অভাব আছে? যেটা সমবায় ব্যাংকের ছিল। সমবায় ব্যাংককে আপনারা ব্যাংক বলছেন, মাইক্রোক্রেডিট ব্যাংককে আপনারা ব্যাংক বলবেন না? তাকে সেই অধিকার দেবেন না, কী কী পাস করতে হবে তাকে এটা করার জন্য? সে তো সবকিছু পাস করে এসেছে। কাজেই আমার মনে হয় সময় এসেছে, মাইক্রো ক্রেডিট ব্যাংক আইন করার।
তিনি আরো বলেন, আমরা যখন মাইক্রো ক্রেডিট ব্যাংকের জন্য লাইসেন্স দেবো তখন পরিষ্কার বলতে হবে যে, এই কাজের জন্য আপনাকে ব্যাংকের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। এই ব্যাংকগুলো যেগুলো হবে সেগুলো হবে সামাজিক বাণিজ্যের ব্যাংক, সামাজিক ব্যবসা ব্যাংক। আইনের মধ্যেই থাকবে যে এটা হচ্ছে সামাজিক বাণিজ্যিক ব্যাংক।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, মাইক্রোক্রেডিট সৃষ্টি হওয়ার মূলে যেটা ছিল এটা আইডিয়া, মানুষ মাত্রই উদ্যোক্তা। সে চাকরি চাইবে না নিজে উদ্যোক্তা হবে। উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য আমরা হাতে সরঞ্জাম তুলে দিচ্ছি। যে কারণে সে উদ্যোক্তা হতে পারবে। যেকোনো ছেলে-মেয়ে মাইক্রো ক্রেডিট ব্যাংক থেকে বিনিয়োগ পাবে।
তিনি বলেন, যদি বিনিয়োগের টাকা পায়, তাহলে কোনো তরুণ চাকরির সন্ধানে যাবে না। যাওয়ার দরকারও নাই। সরকারের দায়িত্ব হলো প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি করে দেওয়া। ব্যাংক সৃষ্টি করার দায়িত্ব হলো আমাদের। তরুণ যারা আছে, নারী-পুরুষ, তারা যেন বিনিয়োগ পায়। নিজের বুদ্ধিতে নিজের ব্যবসা করে ফেলতে পারে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর, মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন আহমেদ, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী এম আনিসুজ্জামান চৌধুরী, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারকসহ আরো অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

আইনে থাকতে হবে সামাজিক বাণিজ্যিক ব্যাংক

‘ক্ষুদ্রঋণ ব্যাংক’ প্রতিষ্ঠার তাগিদ প্রধান উপদেষ্টার

আপডেট সময় : ০৬:২৭:০৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৭ মে ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক: অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস দেশের তরুণ ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে ‘ক্ষুদ্রঋণ ব্যাংক’ স্থাপনের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। এ জন্য তিনি ‘মাইক্রো ক্রেডিট রেগুলেটরি’ আইন করার কথাও বলেছেন। এ সময় অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘এই ব্যাংক প্রচলিত ধারার ব্যাংকগুলোর মতো হবে না। ব্যাংক চলবে বিশ্বাস ও আস্থার ওপর ভিত্তি করে। ঋণ নিতে জামানত লাগবে না। এর পাশাপাশি এই ব্যাংকের বড় উদ্দেশ্য হবে সামাজিক ব্যবসাকে ছড়িয়ে দেওয়া। এই ব্যাংকগুলো যেগুলো হবে সেগুলো হবে সামাজিক বাণিজ্যের ব্যাংক, সামাজিক ব্যবসা ব্যাংক। আইনের মধ্যেই থাকবে যে এটা হচ্ছে সামাজিক বাণিজ্যিক ব্যাংক।’

শনিবার (১৭ মে) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে মাইক্রো ক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির (এমআরএ) নতুন ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।

প্রধান উপদেষ্টা আরো বলেন, ‘মানুষ মাত্রই উদ্যোক্তা। আমরা ব্যাংকের মাধ্যমে উদ্যোক্তা হওয়ার সরঞ্জাম তাঁর হাতে তুলে দেব। বিনিয়োগের টাকা পেলে মানুষ, বিশেষ করে তরুণেরা নিজেদের বুদ্ধি দিয়ে ব্যবসা চালু করতে পারবে।’

অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশে মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি গঠনের ইতিহাস তুলে ধরে ক্ষুদ্রঋণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজনীয় আইন করার কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘সেটাই প্রকৃত ব্যাংক যার ওপর মানুষ বিশ্বাস রাখে, আস্থা রাখে যেমন- ক্ষুদ্রঋণ ব্যাংক।’

ক্ষুদ্রঋণের সাফল্য তুলে ধরে অধ্যাপক ইউনূস আরো বলেন, ‘ক্ষুদ্রঋণ গ্রহণকারীরা কেউ টাকা মেরে চলে যায়নি। অথচ প্রচলিত ধারার অনেক ব্যাংক হাওয়া হয়ে গেছে। ব্যাংকের টাকা নিয়ে অনেকে উধাও হয়ে গেছেন। তাই আমাদের এখন প্রকৃত ব্যাংকের দিকে নজর দিতে হবে।’
এমআরএ কেবল বাংলাদেশের ক্ষুদ্রঋণের জন্য নয়, বরং পৃথিবীর অন্যান্য দেশের জন্যও ভালো কাজ করছে বলেও মন্তব্য করেন অধ্যাপক ইউনূস।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, মাইক্রো ক্রেডিট নিয়ে আমরা এমন পর্যায়ে এসেছি, এটা নিয়ে নতুন করে চিন্তা করতে হবে। মাইক্রো ক্রেডিট ব্যাংক স্থাপন…. এটা এখন এনজিও। এনজিও থেকে উত্তরণ হতে হবে। এনজিও পর্যায়ে গেলে এটা ঠিক ব্যাংকিং মেজাজে আসবে না। মেজাজ আসতে গেলে তাকে ব্যাংক হতে হবে। মাইক্রোক্রেডিট ব্যাংক নামে একটা আইন করতে হবে। এটা নতুন একটা ব্যাংক হতে হবে। এটা মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি করতে পারে।

তিনি বলেন, তারা সদস্যদের সঞ্চয় নিতে পারে, বাইরের কারো ডিপোজিট নিতে পারে না। এটা তাদের সীমাবদ্ধতা। সীমাবদ্ধতার কারণে তাকে অপরের কাছে হাত পাততে হয়, দায়বদ্ধ হতে হয়, কেন হবে? সে এতো সুন্দর ব্যাংকিং করে, আরেকজনের কাছে হাত পেতে কেন করবে? তার মধ্যে কি অভাব আছে? যেটা সমবায় ব্যাংকের ছিল। সমবায় ব্যাংককে আপনারা ব্যাংক বলছেন, মাইক্রোক্রেডিট ব্যাংককে আপনারা ব্যাংক বলবেন না? তাকে সেই অধিকার দেবেন না, কী কী পাস করতে হবে তাকে এটা করার জন্য? সে তো সবকিছু পাস করে এসেছে। কাজেই আমার মনে হয় সময় এসেছে, মাইক্রো ক্রেডিট ব্যাংক আইন করার।
তিনি আরো বলেন, আমরা যখন মাইক্রো ক্রেডিট ব্যাংকের জন্য লাইসেন্স দেবো তখন পরিষ্কার বলতে হবে যে, এই কাজের জন্য আপনাকে ব্যাংকের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। এই ব্যাংকগুলো যেগুলো হবে সেগুলো হবে সামাজিক বাণিজ্যের ব্যাংক, সামাজিক ব্যবসা ব্যাংক। আইনের মধ্যেই থাকবে যে এটা হচ্ছে সামাজিক বাণিজ্যিক ব্যাংক।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, মাইক্রোক্রেডিট সৃষ্টি হওয়ার মূলে যেটা ছিল এটা আইডিয়া, মানুষ মাত্রই উদ্যোক্তা। সে চাকরি চাইবে না নিজে উদ্যোক্তা হবে। উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য আমরা হাতে সরঞ্জাম তুলে দিচ্ছি। যে কারণে সে উদ্যোক্তা হতে পারবে। যেকোনো ছেলে-মেয়ে মাইক্রো ক্রেডিট ব্যাংক থেকে বিনিয়োগ পাবে।
তিনি বলেন, যদি বিনিয়োগের টাকা পায়, তাহলে কোনো তরুণ চাকরির সন্ধানে যাবে না। যাওয়ার দরকারও নাই। সরকারের দায়িত্ব হলো প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি করে দেওয়া। ব্যাংক সৃষ্টি করার দায়িত্ব হলো আমাদের। তরুণ যারা আছে, নারী-পুরুষ, তারা যেন বিনিয়োগ পায়। নিজের বুদ্ধিতে নিজের ব্যবসা করে ফেলতে পারে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর, মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন আহমেদ, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী এম আনিসুজ্জামান চৌধুরী, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারকসহ আরো অনেকে উপস্থিত ছিলেন।