নিজস্ব প্রতিবেদক: হাইকোর্টের রায় ও প্রজ্ঞাপনের পরও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসি) মেয়রের দায়িত্ব ইশরাক হোসেনকে বুঝিয়ে না দেওয়ার প্রতিবাদে তিন দিন ধরে নগরভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন দক্ষিণ সিটির বাসিন্দারা।
শনিবার (১৭ মে) অবস্থান কর্মসূচি থেকে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াকে ডিএসসিসির নগর ভবনে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন ইশরাক হোসেনের অনুসারীরা।
শনিবার সকাল ১০টায় নগরভবনের সামনে হাজার হাজার বিক্ষুব্ধ মানুষ জড়ো হয়ে প্রতিবাদ জানান। পরে একটি বিক্ষোভ মিছিল নগরভবন থেকে সচিবালয় এবং প্রেসক্লাব হয়ে পূণরায় নগরভবনে সামনে এসে শেষ হয়। পরে নগরভবনের সামনে এক সমাবেশে বিক্ষুব্ধ ঢাকাবাসীর পক্ষে কর্মসূচি ঘোষণা করেন সাবেক সিনিয়র সচিব মশিউর রহমান। তিনি জানান, রোববার (১৮ মে) বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করবেন ঢাকাবাসী।
এছাড়াও স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এবং তার সচিব রেজাউল মাকছুদ জাহেদীকে নগরভবনে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়। পাশাপাশি তাদের যেখানে পাওয়া যাবে সেখানে প্রতিহত করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।
ডিএসসিসির নগর ভবনে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অস্থায়ী দপ্তর। এখানেই দাপ্তরিক কাজ করেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। তবে ইশরাক অনুসারীদের টানা বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচির কারণে নগর ভবনে যাননি আসিফ।
নগরভবনের সামনে অবস্থান নেওয়া বিক্ষোভকারীরা বলেছেন, এখন পর্যন্ত ইশরাকের শপথ গ্রহণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তাই আমরা ইশরাককে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে গতকাল (শুক্রবার) বিক্ষোভ করেছি।
শনিবার নগর ভবনে অবস্থানের আগে সচিবালয় এলাকায় বিক্ষোভ করেন ইশরাকের অনুসারীরা। তারা ‘ঢাকাবাসী’ প্লাটফর্ম নামে এই কর্মসূচি পালন করছেন। এই প্লাটফর্মের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সাবেক সিনিয়র সচিব মশিউর রহমান।
শান্তিপূর্ণ এই অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে নগরের বাসিন্দারা বলছেন, আদালতের রায় ও নির্বাচন কমিশনের গেজেট অনুযায়ী ইশরাক হোসেন বৈধ মেয়র। এরপরও কেন তাকে এখনও শপথ পড়ানো হয়নি, তার ব্যাখ্যা চাচ্ছেন তারা। তাদের দাবি, একটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, মশামুক্ত এবং দুর্নীতিমুক্ত ঢাকা গড়তে ইশরাক হোসেনের মতো জনবান্ধব মেয়র প্রয়োজন।
বিক্ষোভকারীরা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, যতদিন ইশরাক হোসেনকে শপথ পড়ানো না হবে, ততদিন তারা নগরভবনের সামনে আন্দোলন চালিয়ে যাবেন এবং প্রয়োজনে আরো কঠোর কর্মসূচি দেবেন।
নগর ভবনের সব ফটকে তালা: এদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান কার্যালয় নগর ভবনের সব ফটকে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন ইশরাক হোসেনের সমর্থকেরা। এতে নগর ভবন থেকে সেবা সংক্রান্ত সব কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। শনিবার সকাল নয়টার দিকে নগর ভবনে প্রবেশের সব ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। ইশরাক হোসেনকে মেয়র পদে না বসানোর প্রতিবাদে ‘ঢাকাবাসী’ ব্যানারে বিক্ষোভে অংশ নেওয়া তাঁর সমর্থক ও অনুসারীরা এই পদক্ষেপ নিয়েছেন।
করপোরেশনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা কার্যত অঘোষিত ছুটি পালন করছেন। তাঁদের কেউ নগর ভবনে ঢুকতে পারছেন না। নগর ভবনে স্থানীয় সরকার বিভাগেরও অফিস রয়েছে। এখানেই স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া অফিস করেন। তালা ঝুলিয়ে দেওয়ার কারণে এই অফিসেরও সব কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে।
তবে বিক্ষোভে অংশ নেওয়া একাধিক ব্যক্তি বলেন, কর্মসূচি পালনের দ্বিতীয় দিনে গত বৃহস্পতিবারও নগর ভবনের সব ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। ওই দিন থেকেই কার্যত নগর ভবন থেকে সেবা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
পূর্বঘোষণা অনুযায়ী শনিবার সকাল নয়টার দিকে নগর ভবনের সামনে এসে জড়ো হতে থাকেন ইশরাক হোসেনের সমর্থকেরা। তাঁরা বেলা ১১ টা পর্যন্ত নগর ভবন প্রাঙ্গণে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন। বেলা ১১টার দিকে সচিবালয়ের দিকে মিছিল নিয়ে যান তাঁরা। সচিবালয়ের দিকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে গেলেও চারদিকে পুলিশের ব্যারিকেডের কারণে ইশরাকের সমর্থকেরা সচিবালয়ের সামনে যেতে পারেননি।
বেলা দেড়টার দিকে নগর ভবনের সামনে রোববারের কর্মসূচি ঘোষণা দিয়ে দিনের কর্মসূচি শেষ করেন বিক্ষোভকারীরা।
আদালতের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ঘোষণা করে গত ২৭ এপ্রিল গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এর ১৮ দিন পর গত বৃহস্পতিবার ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ২০২০ সালের মেয়র নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী ইশরাক হোসেনের দায়েরকৃত নির্বাচনী মামলার রায় ও নির্বাচন কমিশনের আপিল দায়ের না করা বিষয়ে কোনো আইনি জটিলতা আছে কি না, সে বিষয়ে আইন ও বিচার বিভাগে চিঠি দিয়েছে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়।
স্থানীয় সরকার বিভাগের যুগ্ম সচিব মাহবুবা আইরিন স্বাক্ষরিত ‘মতামত প্রদানসংক্রান্ত’ শিরোনামে চিঠিটি গত বৃহস্পতিবার আইন ও বিচার বিভাগের সচিব বরাবর পাঠানো হয়।
সেবা ব্যাহত: বিক্ষোভকারীরা নগর ভবনের মূল ফটক থেকে শুরু করে প্রতিটি ফটকে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন। বিক্ষোভকারীদের কয়েকজন বলেন, তারা নগর ভবনে মোট ৬৫টি তালা লাগিয়েছেন। সরেজমিনে গিয়ে তালা লাগানোর বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে একাধিক সংবাদমাধ্যম।
কেবল নগর ভবন নয়, সংস্থাটির ১০ টি আঞ্চলিক অফিসেও সেবা কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছেন ইশরাক হোসেনের সমর্থকেরা। একটি অঞ্চলের একজন নির্বাহী প্রকৌশলী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ইশরাকের সমর্থকেরা আঞ্চলিক কার্যালয়গুলোতেও বিক্ষোভ করেছেন। তারা সেখানে কোনো কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে প্রবেশ করতে দেননি। এর ফলে নগর ভবনে সেবা কার্যক্রম এক প্রকার বন্ধই রয়েছে। তবে সেবাপ্রার্থীরা এমন ভোগান্তির দ্রুত অবসান দাবি করেছেন।