ঢাকা ০৬:০০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫
‘স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি’র গবেষণায় তথ্য

তাপ ও খরায় বিশ্বব্যাপী ফসল উৎপাদন কমছে

  • আপডেট সময় : ০৪:১৭:১৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ১২ মে ২০২৫
  • ১৬ বার পড়া হয়েছে

প্রায় প্রতিটি বড় কৃষি অঞ্চলে ৫০ বছর আগে যে তাপ ও শুষ্কতা ছিল, বর্তমানে এসব অঞ্চলে তাপ ও শুষ্কতা সে সময়ের চেয়ে বেশি - সংগৃহীত প্রতীকী ছবি

প্রত্যাশা ডেস্ক: উষ্ণতা ও খরার কারণে ধীরে ধীরে বিশ্বে ফসলের উৎপাদন কমে যাচ্ছে বলে উঠে এসেছে সাম্প্রতিক এক গবেষণায়।

‘স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি’র নতুন এক গবেষণা বলছে, তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি শুকনা আবহাওয়া বৈশ্বিক ফসল উৎপাদনের ওপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলছে, বিশেষ করে গম, যব ও ভুট্টার মতো গুরুত্বপূর্ণ শস্যের বেলায়।

গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় প্রতিটি বড় কৃষি অঞ্চলে ৫০ বছর আগে যে তাপ ও শুষ্কতা ছিল, বর্তমানে এসব অঞ্চলে তাপ ও শুষ্কতা সে সময়ের চেয়ে বেশি। এসব পরিবর্তন নীরবে গোটা বিশ্বের খাদ্য উৎপাদনে প্রভাব ফেলছে, যার ফলে কমে যাচ্ছে উৎপাদিত ফসলের পরিমাণ।

স্ট্যানফোর্ডের খাদ্য নিরাপত্তা ও পরিবেশ বিষয়ক কেন্দ্রের পরিচালক ডেভিড লোবেলের নেতৃত্বে পরিচালিত এ গবেষণায় উঠে এসেছে, জলবায়ু পরিবর্তন না ঘটলে বিশ্বজুড়ে এসব গুরুত্বপূর্ণ শস্যের উৎপাদন বর্তমানে যে পরিমাণ হচ্ছে, তার চেয়ে ৪ থেকে ১৩ শতাংশ বেশি হতো।

বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার ফলে কখনো কখনো গাছপালা দ্রুত বাড়লেও গরম ও শুষ্ক মৌসুমে ফসলের যে ক্ষতি হচ্ছে, তা পুষিয়ে দেওয়ার জন্য এই উপকার যথেষ্ট নয় বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।

লোবেল বলেছেন, তাকে প্রায়ই প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়, ফসলের ক্ষতি কি ধারণার চেয়েও দ্রুত ঘটছে? এ কৌতূহল থেকেই বিশ্বজুড়ে মাঠপর্যায়ের পরিস্থিতি ঘনিষ্ঠভাবে পর্যালোচনা করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি ও তার গবেষণা দল।
তাদের গবেষণা বলছে, কিছু জলবায়ু মডেল বৈশ্বিক উষ্ণতার সামগ্রিক চিত্রের সঠিক পূর্বাভাস দিতে পারলেও গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় বাদ থেকে গেছে সেখানে। আর সেটি হচ্ছে শুষ্কতার মাত্রা, বিশেষ করে ইউরোপ ও চীনের মতো মৃদু অঞ্চলে।

বিজ্ঞানীদের ধারণার চেয়েও অনেক বেশি শুষ্ক হয়ে উঠেছে এসব অঞ্চল, যার ফলে ফসলের ওপর আরো বেশি চাপ পড়ছে।

অন্যদিকে, পূর্বাভাস করা মডেলের চেয়ে কম তাপ ও শুষ্কতার মুখে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন খামার, বিশেষ করে মধ্য পশ্চিম অঞ্চলের খামারগুলো। এ পার্থক্যটি গবেষকদের চমকে দিয়েছে এবং উন্মোচন করেছে জলবায়ু মডেলিংয়ের একটি বড় ত্রুটি।

‘স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি’র গবেষণায় ডেটা বিশ্লেষক ও এ গবেষণার সহলেখক স্টেফানিয়া ডি টমাসো বলেছেন, গবেষণার এসব অপ্রত্যাশিত ফলাফল বোঝা গুরুত্বপূর্ণ। জলবায়ু মডেলগুলোর এসব ত্রুটি সংশোধন করা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সঠিকভাবে পূর্বাভাস দেওয়া এবং আরো স্মার্ট কৃষি কৌশল পরিকল্পনা করার জন্য অনেক জরুরি।

বিভিন্ন ভুল মডেল কীভাবে দুর্বল পরিকল্পনার দিকে নিয়ে গিয়েছে তার একটি উদাহরণ হল, দীর্ঘমেয়াদী পরিপক্বতা সম্পন্ন ফসলের জাত উদ্ভাবনের তাগিদ।

চাষের মৌসুম বাড়ানোর উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছিল এসব ফসল। তবে অপ্রত্যাশিতভাবে এখন শুষ্কতা বেড়ে যাওয়ায় এসব ফসলের উৎপাদন হুমকির মুখে পড়েছে। বিশ্বের অনেক অংশে খরা পরিস্থিতি আরো খারাপ হওয়ার কারণে কৃষকদের এসব কৌশলের ওপর নির্ভর করা কঠিন হয়ে পড়ছে।

মার্চ মাসে প্রকাশ পেয়েছে এমন এক আলাদা গবেষণার সঙ্গেও এ গবেষণার ফলাফল মিলে যায়, যেখানে সতর্ক করা হয়েছিল যে, যদি জলবায়ু অভিযোজনের জন্য বড় বিনিয়োগ না করা হয় তবে যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি উৎপাদনশীলতা আগামী বছরে ব্যাপকহারে কমে আসতে পারে।

উভয় গবেষণায়ই পরিবর্তিত পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে আরো ভালো জলবায়ু পূর্বাভাস এবং আরো টেকসই কৃষি কৌশলের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব দিয়েছে।

লোবেল বলেছেন, প্রধান শস্যের ওপর জলবায়ুর প্রভাবের পূর্বাভাস দেওয়ার ক্ষেত্রে অসাধারণ কাজ করেছে জলবায়ু বিজ্ঞান। তবে এখনও কিছু অঞ্চল রয়েছে, বিশেষ করে কফি, কোকো, কমলা এবং জলপাইয়ের মতো বিশেষ ফসলের ক্ষেত্রে। এসব শস্য খাদ্য নিরাপত্তার জন্য ততটা গুরুত্বপূর্ণ না হলেও এগুলো ভোক্তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং সরবরাহের চ্যালেঞ্জের কারণে এসব পণ্যের দাম বাড়ছে।

গবেষকরা বলছেন, নীতিনির্ধারক ও কৃষকদের জন্য একটি সতর্কবার্তা হিসেবে কাজ করছে এ গবেষণা, যা উষ্ণায়িত পৃথিবীতে বৈশ্বিক খাদ্য সরবরাহ রক্ষায় উন্নত জলবায়ু মডেল ও লাগসই বিভিন্ন অভিযোজন কৌশলের জরুরি প্রয়োজনীয়তাকে তুলে ধরেছে। গবেষণাটি প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘প্রসিডিংস অফ দ্য ন্যাশনাল একাডেমি অফ সায়েন্সেস’-এ। সূত্র: বিডিনিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

‘স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি’র গবেষণায় তথ্য

তাপ ও খরায় বিশ্বব্যাপী ফসল উৎপাদন কমছে

আপডেট সময় : ০৪:১৭:১৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ১২ মে ২০২৫

প্রত্যাশা ডেস্ক: উষ্ণতা ও খরার কারণে ধীরে ধীরে বিশ্বে ফসলের উৎপাদন কমে যাচ্ছে বলে উঠে এসেছে সাম্প্রতিক এক গবেষণায়।

‘স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি’র নতুন এক গবেষণা বলছে, তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি শুকনা আবহাওয়া বৈশ্বিক ফসল উৎপাদনের ওপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলছে, বিশেষ করে গম, যব ও ভুট্টার মতো গুরুত্বপূর্ণ শস্যের বেলায়।

গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় প্রতিটি বড় কৃষি অঞ্চলে ৫০ বছর আগে যে তাপ ও শুষ্কতা ছিল, বর্তমানে এসব অঞ্চলে তাপ ও শুষ্কতা সে সময়ের চেয়ে বেশি। এসব পরিবর্তন নীরবে গোটা বিশ্বের খাদ্য উৎপাদনে প্রভাব ফেলছে, যার ফলে কমে যাচ্ছে উৎপাদিত ফসলের পরিমাণ।

স্ট্যানফোর্ডের খাদ্য নিরাপত্তা ও পরিবেশ বিষয়ক কেন্দ্রের পরিচালক ডেভিড লোবেলের নেতৃত্বে পরিচালিত এ গবেষণায় উঠে এসেছে, জলবায়ু পরিবর্তন না ঘটলে বিশ্বজুড়ে এসব গুরুত্বপূর্ণ শস্যের উৎপাদন বর্তমানে যে পরিমাণ হচ্ছে, তার চেয়ে ৪ থেকে ১৩ শতাংশ বেশি হতো।

বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার ফলে কখনো কখনো গাছপালা দ্রুত বাড়লেও গরম ও শুষ্ক মৌসুমে ফসলের যে ক্ষতি হচ্ছে, তা পুষিয়ে দেওয়ার জন্য এই উপকার যথেষ্ট নয় বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।

লোবেল বলেছেন, তাকে প্রায়ই প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়, ফসলের ক্ষতি কি ধারণার চেয়েও দ্রুত ঘটছে? এ কৌতূহল থেকেই বিশ্বজুড়ে মাঠপর্যায়ের পরিস্থিতি ঘনিষ্ঠভাবে পর্যালোচনা করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি ও তার গবেষণা দল।
তাদের গবেষণা বলছে, কিছু জলবায়ু মডেল বৈশ্বিক উষ্ণতার সামগ্রিক চিত্রের সঠিক পূর্বাভাস দিতে পারলেও গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় বাদ থেকে গেছে সেখানে। আর সেটি হচ্ছে শুষ্কতার মাত্রা, বিশেষ করে ইউরোপ ও চীনের মতো মৃদু অঞ্চলে।

বিজ্ঞানীদের ধারণার চেয়েও অনেক বেশি শুষ্ক হয়ে উঠেছে এসব অঞ্চল, যার ফলে ফসলের ওপর আরো বেশি চাপ পড়ছে।

অন্যদিকে, পূর্বাভাস করা মডেলের চেয়ে কম তাপ ও শুষ্কতার মুখে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন খামার, বিশেষ করে মধ্য পশ্চিম অঞ্চলের খামারগুলো। এ পার্থক্যটি গবেষকদের চমকে দিয়েছে এবং উন্মোচন করেছে জলবায়ু মডেলিংয়ের একটি বড় ত্রুটি।

‘স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি’র গবেষণায় ডেটা বিশ্লেষক ও এ গবেষণার সহলেখক স্টেফানিয়া ডি টমাসো বলেছেন, গবেষণার এসব অপ্রত্যাশিত ফলাফল বোঝা গুরুত্বপূর্ণ। জলবায়ু মডেলগুলোর এসব ত্রুটি সংশোধন করা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সঠিকভাবে পূর্বাভাস দেওয়া এবং আরো স্মার্ট কৃষি কৌশল পরিকল্পনা করার জন্য অনেক জরুরি।

বিভিন্ন ভুল মডেল কীভাবে দুর্বল পরিকল্পনার দিকে নিয়ে গিয়েছে তার একটি উদাহরণ হল, দীর্ঘমেয়াদী পরিপক্বতা সম্পন্ন ফসলের জাত উদ্ভাবনের তাগিদ।

চাষের মৌসুম বাড়ানোর উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছিল এসব ফসল। তবে অপ্রত্যাশিতভাবে এখন শুষ্কতা বেড়ে যাওয়ায় এসব ফসলের উৎপাদন হুমকির মুখে পড়েছে। বিশ্বের অনেক অংশে খরা পরিস্থিতি আরো খারাপ হওয়ার কারণে কৃষকদের এসব কৌশলের ওপর নির্ভর করা কঠিন হয়ে পড়ছে।

মার্চ মাসে প্রকাশ পেয়েছে এমন এক আলাদা গবেষণার সঙ্গেও এ গবেষণার ফলাফল মিলে যায়, যেখানে সতর্ক করা হয়েছিল যে, যদি জলবায়ু অভিযোজনের জন্য বড় বিনিয়োগ না করা হয় তবে যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি উৎপাদনশীলতা আগামী বছরে ব্যাপকহারে কমে আসতে পারে।

উভয় গবেষণায়ই পরিবর্তিত পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে আরো ভালো জলবায়ু পূর্বাভাস এবং আরো টেকসই কৃষি কৌশলের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব দিয়েছে।

লোবেল বলেছেন, প্রধান শস্যের ওপর জলবায়ুর প্রভাবের পূর্বাভাস দেওয়ার ক্ষেত্রে অসাধারণ কাজ করেছে জলবায়ু বিজ্ঞান। তবে এখনও কিছু অঞ্চল রয়েছে, বিশেষ করে কফি, কোকো, কমলা এবং জলপাইয়ের মতো বিশেষ ফসলের ক্ষেত্রে। এসব শস্য খাদ্য নিরাপত্তার জন্য ততটা গুরুত্বপূর্ণ না হলেও এগুলো ভোক্তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং সরবরাহের চ্যালেঞ্জের কারণে এসব পণ্যের দাম বাড়ছে।

গবেষকরা বলছেন, নীতিনির্ধারক ও কৃষকদের জন্য একটি সতর্কবার্তা হিসেবে কাজ করছে এ গবেষণা, যা উষ্ণায়িত পৃথিবীতে বৈশ্বিক খাদ্য সরবরাহ রক্ষায় উন্নত জলবায়ু মডেল ও লাগসই বিভিন্ন অভিযোজন কৌশলের জরুরি প্রয়োজনীয়তাকে তুলে ধরেছে। গবেষণাটি প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘প্রসিডিংস অফ দ্য ন্যাশনাল একাডেমি অফ সায়েন্সেস’-এ। সূত্র: বিডিনিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম