ঢাকা ১২:০৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০৭ মে ২০২৫

র‍্যাঙ্কিংয়ে ধস, ২০২৭ বিশ্বকাপ সরাসরি খেলা নিয়ে শঙ্কায় বাংলাদেশ

  • আপডেট সময় : ০৭:২৩:০৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৬ মে ২০২৫
  • ৭ বার পড়া হয়েছে

২০২৭ বিশ্বকাপ সরাসরি খেলা নিয়ে শঙ্কায় বাংলাদেশ

ক্রীড়া ডেস্ক: বাংলাদেশ ক্রিকেটে এখন চলছে এক বড় পরিবর্তনের সময়। দীর্ঘ দেড় দশকের বেশি সময় ধরে জাতীয় দলের দায়িত্ব কাঁধে নেওয়া অভিজ্ঞ তারকারা একে একে অবসরের পথে হাঁটছেন। ২০২৫ সালেই আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায়ের ঘোষণা দিয়েছেন তামিম ইকবাল, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও মুশফিকুর রহিম। এর মধ্যে মুশফিক বর্তমানে কেবল টেস্ট ফরম্যাটে সক্রিয়। আর সাকিব আল হাসানের ভবিষ্যৎ নিয়েও তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা—এই পরিবর্তিত বাংলাদেশে আদৌ তার জায়গা হবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে ক্রিকেট মহলে।

এই প্রজন্মান্তরের ধাক্কা সরাসরি পড়েছে পারফরম্যান্সে। একসময় যারা ওয়ানডেতে ধারাবাহিক পারফরম্যান্স দিয়ে উপরের সারিতে অবস্থান করত, আজ তারা নেমে গেছে দশম স্থানে। আইসিসির সদ্য প্রকাশিত র‍্যাঙ্কিং অনুসারে চার পয়েন্ট হারিয়ে বাংলাদেশ ওয়েস্ট ইন্ডিজের নিচে চলে গেছে। এটি শুধু আত্মবিশ্বাসে ধাক্কা নয়, বরং ভবিষ্যতের জন্যও এক বড় সতর্কবার্তা।

বিশ্বকাপ সরাসরি খেলা নিয়ে অনিশ্চয়তা

২০২৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা, নামিবিয়া ও জিম্বাবুয়ের মাটিতে বসতে যাচ্ছে ওয়ানডে বিশ্বকাপের আসর। সবমিলিয়ে ১৪টি দল অংশ নেবে এই টুর্নামেন্টে। তবে বিশ্বকাপে সরাসরি খেলবে আইসিসির র‍্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষ ৮ দল (এদের মধ্যে আয়োজক দেশ দক্ষিণ আফ্রিকা ও জিম্বাবুয়ে ছাড়া)। তবে দক্ষিণ আফ্রিকা যদি শীর্ষ ৮-এ থাকে, সেক্ষেত্রে ৯ নম্বর দলও পাবে সরাসরি বিশ্বকাপের টিকিট।

বর্তমানে বাংলাদেশ অবস্থান করছে ১০ম স্থানে। এই অবস্থানে থেকে বিশ্বকাপে সরাসরি অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়ছে। র‍্যাঙ্কিং উন্নত করতে হলে প্রয়োজন ধারাবাহিক জয়। কিন্তু সেই পথও খুব মসৃণ নয়।

ওয়ানডের সংখ্যাও কমে আসছে

আরেকটি বড় সমস্যা হলো, আসন্ন বছরগুলোতে বাংলাদেশ খুব বেশি ওয়ানডে খেলবে না। ২০২৬ সালে রয়েছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। ফলে অনেক সিরিজেই ওয়ানডে বাদ দিয়ে কেবল টি-টোয়েন্টি খেলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। যেমন, পাকিস্তানের বিপক্ষে আসন্ন সিরিজে শুধু টি-টোয়েন্টি খেলবে বাংলাদেশ। ভবিষ্যতেও এমন সিদ্ধান্ত আসতে পারে—পরিস্থিতির ভিত্তিতে।

এমন সিদ্ধান্ত র‍্যাঙ্কিং উন্নয়নের সম্ভাবনা আরও সংকুচিত করছে। কারণ, ম্যাচ খেলাই যেখানে কমে যাচ্ছে, সেখানে জয় পেতে না পারলে রেটিং পয়েন্ট বাড়ানোর সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে।

ফিউচার ট্যুর প্রোগ্রামে (FTP) কী বলছে?

আইসিসির ফিউচার ট্যুর প্রোগ্রাম অনুসারে, ২০২৭ সালের মার্চের আগে পর্যন্ত বাংলাদেশের সামনে রয়েছে ২৯টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলার সুযোগ। এর মধ্যে ৮টি ম্যাচে প্রতিপক্ষ আয়ারল্যান্ড ও জিম্বাবুয়ে—তুলনামূলক সহজ প্রতিপক্ষ ধরা যায়। তবে বাকি ২১টি ম্যাচ খেলতে হবে দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, পাকিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও শ্রীলঙ্কার মতো শক্তিশালী দলের বিপক্ষে।

এই সিরিজগুলো সহজ তো নয়ই, বরং ফর্মে না থাকলে হোয়াইটওয়াশের আশঙ্কাও থাকে। এমন পরিস্থিতিতে পয়েন্ট বাড়ানো তো দূরের কথা, বরং আরও নিচে নেমে যাওয়ার ভয় থেকেই যাচ্ছে।

বাছাইপর্বে খেলার শঙ্কা

যদি বাংলাদেশ র‍্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষ ৮ বা ৯-এ না থাকতে পারে, তাহলে খেলতে হবে বিশ্বকাপের বাছাইপর্ব। যেখানে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে থাকবে আফগানিস্তান, আয়ারল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, নামিবিয়া ও অন্যান্য দেশ। এই বাছাইপর্ব থেকে বিশ্বকাপে উঠতে পারাটাও খুব সহজ কিছু নয়—বিশেষ করে যখন মানসিকভাবে দল থাকবে চাপে।

বাংলাদেশ যদি সময়মতো ঘুরে দাঁড়াতে না পারে, তাহলে বাছাইপর্বে খেলেই বিশ্বকাপে জায়গা করে নিতে হবে। যা দেশের ক্রিকেটের মর্যাদার জন্য এক বড় ধাক্কা হবে নিঃসন্দেহে।

এখনই প্রয়োজন পরিবর্তনের ছাপ

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই সংকটময় মুহূর্তে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড ও টিম ম্যানেজমেন্টকে হতে হবে দূরদর্শী। তরুণদের ওপর আস্থা রাখতে হবে, তাদের প্রস্তুত করতে হবে এখন থেকেই। পাশাপাশি সিনিয়রদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে একটি ভারসাম্যপূর্ণ দল গঠন জরুরি। ওয়ানডে ফরম্যাটে আরও মনোযোগ দিতে হবে, সিরিজগুলোকে নিতে হবে ‘ডু অর ডাই’ হিসেবে।

অন্যথায়, শুধু বিশ্বকাপ নয়—আগামী দিনগুলোতেও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশকে পিছিয়ে পড়তেই হতে পারে।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

র‍্যাঙ্কিংয়ে ধস, ২০২৭ বিশ্বকাপ সরাসরি খেলা নিয়ে শঙ্কায় বাংলাদেশ

আপডেট সময় : ০৭:২৩:০৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৬ মে ২০২৫

ক্রীড়া ডেস্ক: বাংলাদেশ ক্রিকেটে এখন চলছে এক বড় পরিবর্তনের সময়। দীর্ঘ দেড় দশকের বেশি সময় ধরে জাতীয় দলের দায়িত্ব কাঁধে নেওয়া অভিজ্ঞ তারকারা একে একে অবসরের পথে হাঁটছেন। ২০২৫ সালেই আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায়ের ঘোষণা দিয়েছেন তামিম ইকবাল, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও মুশফিকুর রহিম। এর মধ্যে মুশফিক বর্তমানে কেবল টেস্ট ফরম্যাটে সক্রিয়। আর সাকিব আল হাসানের ভবিষ্যৎ নিয়েও তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা—এই পরিবর্তিত বাংলাদেশে আদৌ তার জায়গা হবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে ক্রিকেট মহলে।

এই প্রজন্মান্তরের ধাক্কা সরাসরি পড়েছে পারফরম্যান্সে। একসময় যারা ওয়ানডেতে ধারাবাহিক পারফরম্যান্স দিয়ে উপরের সারিতে অবস্থান করত, আজ তারা নেমে গেছে দশম স্থানে। আইসিসির সদ্য প্রকাশিত র‍্যাঙ্কিং অনুসারে চার পয়েন্ট হারিয়ে বাংলাদেশ ওয়েস্ট ইন্ডিজের নিচে চলে গেছে। এটি শুধু আত্মবিশ্বাসে ধাক্কা নয়, বরং ভবিষ্যতের জন্যও এক বড় সতর্কবার্তা।

বিশ্বকাপ সরাসরি খেলা নিয়ে অনিশ্চয়তা

২০২৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা, নামিবিয়া ও জিম্বাবুয়ের মাটিতে বসতে যাচ্ছে ওয়ানডে বিশ্বকাপের আসর। সবমিলিয়ে ১৪টি দল অংশ নেবে এই টুর্নামেন্টে। তবে বিশ্বকাপে সরাসরি খেলবে আইসিসির র‍্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষ ৮ দল (এদের মধ্যে আয়োজক দেশ দক্ষিণ আফ্রিকা ও জিম্বাবুয়ে ছাড়া)। তবে দক্ষিণ আফ্রিকা যদি শীর্ষ ৮-এ থাকে, সেক্ষেত্রে ৯ নম্বর দলও পাবে সরাসরি বিশ্বকাপের টিকিট।

বর্তমানে বাংলাদেশ অবস্থান করছে ১০ম স্থানে। এই অবস্থানে থেকে বিশ্বকাপে সরাসরি অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়ছে। র‍্যাঙ্কিং উন্নত করতে হলে প্রয়োজন ধারাবাহিক জয়। কিন্তু সেই পথও খুব মসৃণ নয়।

ওয়ানডের সংখ্যাও কমে আসছে

আরেকটি বড় সমস্যা হলো, আসন্ন বছরগুলোতে বাংলাদেশ খুব বেশি ওয়ানডে খেলবে না। ২০২৬ সালে রয়েছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। ফলে অনেক সিরিজেই ওয়ানডে বাদ দিয়ে কেবল টি-টোয়েন্টি খেলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। যেমন, পাকিস্তানের বিপক্ষে আসন্ন সিরিজে শুধু টি-টোয়েন্টি খেলবে বাংলাদেশ। ভবিষ্যতেও এমন সিদ্ধান্ত আসতে পারে—পরিস্থিতির ভিত্তিতে।

এমন সিদ্ধান্ত র‍্যাঙ্কিং উন্নয়নের সম্ভাবনা আরও সংকুচিত করছে। কারণ, ম্যাচ খেলাই যেখানে কমে যাচ্ছে, সেখানে জয় পেতে না পারলে রেটিং পয়েন্ট বাড়ানোর সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে।

ফিউচার ট্যুর প্রোগ্রামে (FTP) কী বলছে?

আইসিসির ফিউচার ট্যুর প্রোগ্রাম অনুসারে, ২০২৭ সালের মার্চের আগে পর্যন্ত বাংলাদেশের সামনে রয়েছে ২৯টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলার সুযোগ। এর মধ্যে ৮টি ম্যাচে প্রতিপক্ষ আয়ারল্যান্ড ও জিম্বাবুয়ে—তুলনামূলক সহজ প্রতিপক্ষ ধরা যায়। তবে বাকি ২১টি ম্যাচ খেলতে হবে দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, পাকিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও শ্রীলঙ্কার মতো শক্তিশালী দলের বিপক্ষে।

এই সিরিজগুলো সহজ তো নয়ই, বরং ফর্মে না থাকলে হোয়াইটওয়াশের আশঙ্কাও থাকে। এমন পরিস্থিতিতে পয়েন্ট বাড়ানো তো দূরের কথা, বরং আরও নিচে নেমে যাওয়ার ভয় থেকেই যাচ্ছে।

বাছাইপর্বে খেলার শঙ্কা

যদি বাংলাদেশ র‍্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষ ৮ বা ৯-এ না থাকতে পারে, তাহলে খেলতে হবে বিশ্বকাপের বাছাইপর্ব। যেখানে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে থাকবে আফগানিস্তান, আয়ারল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, নামিবিয়া ও অন্যান্য দেশ। এই বাছাইপর্ব থেকে বিশ্বকাপে উঠতে পারাটাও খুব সহজ কিছু নয়—বিশেষ করে যখন মানসিকভাবে দল থাকবে চাপে।

বাংলাদেশ যদি সময়মতো ঘুরে দাঁড়াতে না পারে, তাহলে বাছাইপর্বে খেলেই বিশ্বকাপে জায়গা করে নিতে হবে। যা দেশের ক্রিকেটের মর্যাদার জন্য এক বড় ধাক্কা হবে নিঃসন্দেহে।

এখনই প্রয়োজন পরিবর্তনের ছাপ

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই সংকটময় মুহূর্তে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড ও টিম ম্যানেজমেন্টকে হতে হবে দূরদর্শী। তরুণদের ওপর আস্থা রাখতে হবে, তাদের প্রস্তুত করতে হবে এখন থেকেই। পাশাপাশি সিনিয়রদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে একটি ভারসাম্যপূর্ণ দল গঠন জরুরি। ওয়ানডে ফরম্যাটে আরও মনোযোগ দিতে হবে, সিরিজগুলোকে নিতে হবে ‘ডু অর ডাই’ হিসেবে।

অন্যথায়, শুধু বিশ্বকাপ নয়—আগামী দিনগুলোতেও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশকে পিছিয়ে পড়তেই হতে পারে।