ঢাকা ০৪:৫৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৬ মে ২০২৫

বিদেশে নির্মিত চলচ্চিত্রে শতভাগ শুল্কারোপের নির্দেশ ট্রাম্পের

  • আপডেট সময় : ০৬:৪২:০০ অপরাহ্ন, সোমবার, ৫ মে ২০২৫
  • ৬ বার পড়া হয়েছে

প্রত্যাশা ডেস্ক: বিদেশে নির্মিত চলচ্চিত্রের ওপর ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করার নির্দেশ দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
গত রোববার (৪ মে) নতুন এই শুল্কারোপের নির্দেশ দেওয়ার কথা জানান তিনি। এমন এক সময় এই ঘোষণা এল, যখন আগ্রাসী বাণিজ্যনীতির কারণে দেশে-বিদেশে তুমুল সমালোচনার মুখে রয়েছেন ট্রাম্প। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।

ট্রাম্প বলেন, আমেরিকার চলচ্চিত্র শিল্প ‘অত্যন্ত দ্রুতগতিতে মৃত্যুর দিকে এগোচ্ছে।’ এ কারণে তিনি মার্কিন বাণিজ্য বিভাগ ও বাণিজ্য প্রতিনিধিকে এই শুল্ক আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার অনুমতি দিয়েছেন।

ট্রাম্পের দাবি, মার্কিন চলচ্চিত্র নির্মাতা ও স্টুডিওগুলোর বিদেশে চলচ্চিত্র নির্মাণের প্রবণতায় হলিউড ‘ধ্বংস’ হয়ে যাচ্ছে।

আর এর জন্য তিনি দায়ী করেন অন্যান্য দেশগুলোর একটি ‘সমন্বিত প্রচেষ্টাকে’- যারা চলচ্চিত্র নির্মাতা ও প্রযোজনা সংস্থাগুলোকে আকৃষ্ট করতে বিভিন্ন প্রণোদনা দিয়ে থাকে। ট্রাম্প এই ঘটনাকে ‘জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি’ হিসেবে অভিহিত করেন।

নিজের ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে তিনি বলেন, ‘এটি শুধু একটি অর্থনৈতিক বিষয় নয়। এটি বার্তা ছড়ানো এবং প্রচারমূলক বিষয়ও! আমরা আবার আমেরিকাতেই চলচ্চিত্র নির্মাণ চাই!’

মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লাটনিক এই ঘোষণা সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, আমরা কাজ শুরু করেছি।

গত মাসে চীন বলেছিল, তারা আমদানি করা মার্কিন চলচ্চিত্রের সংখ্যা কমাবে। চীনের এমন ঘোষণার প্রেক্ষাপটে ট্রাম্প এখন বিদেশে নির্মিত চলচ্চিত্রের ওপর শতভাগ শুল্ক আরোপের নির্দেশ দিলেন।

তবে এই ঘোষণার সুনির্দিষ্ট বিবরণ স্পষ্ট নয়। ট্রাম্পের বক্তব্যে উল্লেখ নেই, এই শুল্ক কি সেই মার্কিন প্রযোজনা সংস্থাগুলোর ওপরও প্রযোজ্য হবে যারা বিদেশে চলচ্চিত্র নির্মাণ করে। সম্প্রতি তৈরি হওয়া বেশ কয়েকটি বড় বাজেটের চলচ্চিত্রও আমেরিকার বাইরে চিত্রায়িত হয়েছে।

এছাড়াও স্পষ্ট নয়, এই শুল্ক কী শুধু সিনেমা হলে মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্রের ওপর প্রযোজ্য হবে, নাকি স্ট্রিমিং সার্ভিসগুলো, যেমন: নেটফ্লিক্স চলচ্চিত্রগুলোর ওপরও তা প্রযোজ্য হবে – কিংবা কীভাবে এই শুল্ক নির্ধারণ করা হবে।

যুক্তরাজ্যের চলচ্চিত্র সংস্থা ব্রিটিশ ফিল্ম ইনস্টিটিউট এবং মার্কিন পাঁচটি প্রধান চলচ্চিত্র স্টুডিওর প্রতিনিধিত্বকারী মোশন পিকচার অ্যাসোসিয়েশন তাৎক্ষণিকভাবে বিবিসির অনুরোধে কোনো মন্তব্য করেনি।

অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড সরকারের পক্ষ থেকে তাদের চলচ্চিত্র শিল্পের পক্ষে স্পষ্টভাবে অবস্থান নেওয়া হয়েছে।

ক্ষমতায় আসার আগে ট্রাম্প তিনজন চলচ্চিত্র তারকা – জন ভয়েট, মেল গিবসন এবং সিলভেস্টার স্ট্যালোনকে বিশেষ দূত হিসেবে নিয়োগ দেন, যারা হলিউডে ব্যবসায়িক সুযোগ সম্প্রসারণের কাজ করবেন। তিনি হলিউডকে ‘একটি মহান কিন্তু খুব সমস্যাগ্রস্ত স্থান’ বলে অভিহিত করেন।

চলচ্চিত্র শিল্প গবেষণা সংস্থা প্রডপ্রো বলছে, বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্র এখনও বিশ্ব চলচ্চিত্র নির্মাণে একটি প্রধান কেন্দ্র।

তাদের সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে চলচ্চিত্র নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১৪.৫৪ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২২ সালের তুলনায় ২৬ শতাংশ কম। অথচ একই সময়ে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, কানাডা ও যুক্তরাজ্যে নির্মাণ ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে।

জানুয়ারিতে হোয়াইট হাউজে ফিরে আসার পর ট্রাম্প বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন দেশের ওপর শুল্ক আরোপ শুরু করেছেন। তার যুক্তি, এই শুল্ক মার্কিন উৎপাদন খাতকে চাঙ্গা করবে এবং চাকরি রক্ষা করবে – যদিও এতে বৈশ্বিক অর্থনীতি বিশৃঙ্খলার মুখে পড়েছে এবং বিশ্বব্যাপী পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

 

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

বিদেশে নির্মিত চলচ্চিত্রে শতভাগ শুল্কারোপের নির্দেশ ট্রাম্পের

আপডেট সময় : ০৬:৪২:০০ অপরাহ্ন, সোমবার, ৫ মে ২০২৫

প্রত্যাশা ডেস্ক: বিদেশে নির্মিত চলচ্চিত্রের ওপর ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করার নির্দেশ দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
গত রোববার (৪ মে) নতুন এই শুল্কারোপের নির্দেশ দেওয়ার কথা জানান তিনি। এমন এক সময় এই ঘোষণা এল, যখন আগ্রাসী বাণিজ্যনীতির কারণে দেশে-বিদেশে তুমুল সমালোচনার মুখে রয়েছেন ট্রাম্প। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।

ট্রাম্প বলেন, আমেরিকার চলচ্চিত্র শিল্প ‘অত্যন্ত দ্রুতগতিতে মৃত্যুর দিকে এগোচ্ছে।’ এ কারণে তিনি মার্কিন বাণিজ্য বিভাগ ও বাণিজ্য প্রতিনিধিকে এই শুল্ক আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার অনুমতি দিয়েছেন।

ট্রাম্পের দাবি, মার্কিন চলচ্চিত্র নির্মাতা ও স্টুডিওগুলোর বিদেশে চলচ্চিত্র নির্মাণের প্রবণতায় হলিউড ‘ধ্বংস’ হয়ে যাচ্ছে।

আর এর জন্য তিনি দায়ী করেন অন্যান্য দেশগুলোর একটি ‘সমন্বিত প্রচেষ্টাকে’- যারা চলচ্চিত্র নির্মাতা ও প্রযোজনা সংস্থাগুলোকে আকৃষ্ট করতে বিভিন্ন প্রণোদনা দিয়ে থাকে। ট্রাম্প এই ঘটনাকে ‘জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি’ হিসেবে অভিহিত করেন।

নিজের ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে তিনি বলেন, ‘এটি শুধু একটি অর্থনৈতিক বিষয় নয়। এটি বার্তা ছড়ানো এবং প্রচারমূলক বিষয়ও! আমরা আবার আমেরিকাতেই চলচ্চিত্র নির্মাণ চাই!’

মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লাটনিক এই ঘোষণা সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, আমরা কাজ শুরু করেছি।

গত মাসে চীন বলেছিল, তারা আমদানি করা মার্কিন চলচ্চিত্রের সংখ্যা কমাবে। চীনের এমন ঘোষণার প্রেক্ষাপটে ট্রাম্প এখন বিদেশে নির্মিত চলচ্চিত্রের ওপর শতভাগ শুল্ক আরোপের নির্দেশ দিলেন।

তবে এই ঘোষণার সুনির্দিষ্ট বিবরণ স্পষ্ট নয়। ট্রাম্পের বক্তব্যে উল্লেখ নেই, এই শুল্ক কি সেই মার্কিন প্রযোজনা সংস্থাগুলোর ওপরও প্রযোজ্য হবে যারা বিদেশে চলচ্চিত্র নির্মাণ করে। সম্প্রতি তৈরি হওয়া বেশ কয়েকটি বড় বাজেটের চলচ্চিত্রও আমেরিকার বাইরে চিত্রায়িত হয়েছে।

এছাড়াও স্পষ্ট নয়, এই শুল্ক কী শুধু সিনেমা হলে মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্রের ওপর প্রযোজ্য হবে, নাকি স্ট্রিমিং সার্ভিসগুলো, যেমন: নেটফ্লিক্স চলচ্চিত্রগুলোর ওপরও তা প্রযোজ্য হবে – কিংবা কীভাবে এই শুল্ক নির্ধারণ করা হবে।

যুক্তরাজ্যের চলচ্চিত্র সংস্থা ব্রিটিশ ফিল্ম ইনস্টিটিউট এবং মার্কিন পাঁচটি প্রধান চলচ্চিত্র স্টুডিওর প্রতিনিধিত্বকারী মোশন পিকচার অ্যাসোসিয়েশন তাৎক্ষণিকভাবে বিবিসির অনুরোধে কোনো মন্তব্য করেনি।

অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড সরকারের পক্ষ থেকে তাদের চলচ্চিত্র শিল্পের পক্ষে স্পষ্টভাবে অবস্থান নেওয়া হয়েছে।

ক্ষমতায় আসার আগে ট্রাম্প তিনজন চলচ্চিত্র তারকা – জন ভয়েট, মেল গিবসন এবং সিলভেস্টার স্ট্যালোনকে বিশেষ দূত হিসেবে নিয়োগ দেন, যারা হলিউডে ব্যবসায়িক সুযোগ সম্প্রসারণের কাজ করবেন। তিনি হলিউডকে ‘একটি মহান কিন্তু খুব সমস্যাগ্রস্ত স্থান’ বলে অভিহিত করেন।

চলচ্চিত্র শিল্প গবেষণা সংস্থা প্রডপ্রো বলছে, বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্র এখনও বিশ্ব চলচ্চিত্র নির্মাণে একটি প্রধান কেন্দ্র।

তাদের সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে চলচ্চিত্র নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১৪.৫৪ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২২ সালের তুলনায় ২৬ শতাংশ কম। অথচ একই সময়ে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, কানাডা ও যুক্তরাজ্যে নির্মাণ ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে।

জানুয়ারিতে হোয়াইট হাউজে ফিরে আসার পর ট্রাম্প বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন দেশের ওপর শুল্ক আরোপ শুরু করেছেন। তার যুক্তি, এই শুল্ক মার্কিন উৎপাদন খাতকে চাঙ্গা করবে এবং চাকরি রক্ষা করবে – যদিও এতে বৈশ্বিক অর্থনীতি বিশৃঙ্খলার মুখে পড়েছে এবং বিশ্বব্যাপী পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।