নিজস্ব প্রতিবেদক: আসন্ন ঈদুল আজহায় সর্বমোট কোরবানিযোগ্য মোট গবাদিপশুর সংখ্যা এক কোটি ২৪ লাখ ৪৭ হাজার ৩৩৭টি। এবার প্রায় ২০ লাখ ৬৮ হাজার ১৩৫টি গবাদিপশু উদ্বৃত্ত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
রোববার (৪ মে) সচিবালয়ে আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপন উপলক্ষে কোরবানির পশুর চাহিদা নিরূপণ, সরবরাহ এবং দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে কোরবানির পশুর অবাধ চলাচল বা পরিবহন নিশ্চিতে সংবাদ সম্মেলনে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার এ তথ্য জানান।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ৭ জুন দেশে মুসলমানদের দ্বিতীয় বড় ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপিত হবে।
তিনি বলেন, প্রতি বছরের মতো এ বছরও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় দেশে কোরবানিযোগ্য গবাদিপশুর সংখ্যা নিরূপণ করেছে। এ বছর কোরবানিযোগ্য হৃষ্টপুষ্ট গবাদিপশুর মধ্যে ৫৬ লাখ ২ হাজার ৯০৫টি গরু-মহিষ, ৬৮ লাখ ৩৮ হাজার ৯২০টি ছাগল-ভেড়া এবং ৫ হাজার ৫১২টি অন্য প্রজাতিসহ মোট এক কোটি ২৪ লাখ ৪৭ হাজার ৩৩৭টি গবাদিপশুর প্রাপ্যতা আশা করা যাচ্ছে। এ বছর প্রায় ২০ লাখ ৬৮ হাজার ১৩৫টি গবাদিপশু উদ্বৃত্ত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা যে চাহিদা নির্ধারণ করেছি, সেটা যদি বেড়েও যায় সেটা পূরণ করার মতো সক্ষমতা আমাদের রয়েছে।’
তিনি বলেন, ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে আমরা মোটামুটি অনেক প্রস্তুতি নিচ্ছি। সতর্কতার সঙ্গে প্রস্তুতি নিচ্ছি যে, গবাদি পশুর যে বাজার সেটা যেন স্থিতিশীল থাকে। খামারিরা বছরের একটা সময় ইনকামের জন্য যে কাজটা করে সেটা যেন ঠিক থাকে।
অন্যদিকে যারা কোরবানি দেবেন পশুর দাম যেন তাদের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে থাকে। আমদানির প্রয়োজন নেই, নিয়ন্ত্রণ করা হবে চাঁদাবাজি।
উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা বলেছি এ বছর গবাদিপশু আমদানি করার প্রয়োজন নেই। অবৈধ পথে ও যেন কোনো পশু বাংলাদেশ থেকে আসতে না পারে সেই ব্যবস্থা আমরা করব। আমাদের দেশীয় উৎপাদিত যে গবাদিপশু খামারিরা করেন, তা যথেষ্ট। প্রয়োজনের তুলনায় আমাদের আয়োজন ও ব্যবস্থাপনা ঠিক আছে।’
আগামী কোরবানির ঈদে বাজার যেন কেউ অস্থিতিশীল করতে না পারে, সেজন্য সাংবাদিকদের সহযোগিতা চেয়ে ফরিদা আখতার বলেন, চাঁদাবাজির কারণে পশুর দাম যেন না বাড়ে সেজন্য সরকার কাজ করে যাচ্ছে। আমরা আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক করেছি, সেখানে এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
স্টেরয়েড ব্যবহার রোধে হবে মোবাইল কোর্ট: উপদেষ্টা বলেন, সারাদেশে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে কোরবানিযোগ্য গবাদিপশু হৃষ্টপুষ্টকরণ প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলমান। গবাদি পশু হৃষ্টপুষ্টকরণ ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে লালন-পালন বিষয়ে ৮৩ হাজার ৬৫৬ জন খামারিকে প্রশিক্ষণ, ৬ হাজার ৬০০টি উঠান বৈঠক, ২ লাখ ৭৪ হাজার ৩৭৮টি লিফলেট ও পোস্টার বিতরণ করা হয়েছে।
‘স্টেরয়েড ও হরমোন ব্যবহার রোধে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে খামারিদের প্রশিক্ষণ চলমান এবং জেলা প্রশাসন ও জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের যৌথ সহযোগিতায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা অব্যাহত থাকবে।’ এরই মধ্যে ৫৩ হাজার ২৬৩টি খামার পরিদর্শন করে খামারিদের স্টেরয়েড বা হরমোনের কুফল সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
কোরবানির পশু পরিবহন: ফরিদা আখতার বলেন, বাসে বা পরিবহনে বাসের লকআপে ছাগল ও ভেড়া পরিবহন না করে সে বিষয়ে সচেতনতাসহ প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হবে। ‘প্রাণিকল্যাণ আইন, ২০১৯’ অনুযায়ী কোরবানিযোগ্য গবাদিপশুর প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ পরিহার করতে হবে এবং যথাযথ পরিবহনের মাধ্যমে পরিবহন নিশ্চিত করতে হবে। তা ব্যত্যয় হলে প্রাণিকল্যাণ আইন অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, সিটি করপোরেশন/পৌরসভার উদ্যোগে প্রতিটি হাটে উপযুক্ত ও নির্দিষ্ট স্থান নির্ধারণপূর্বক ভেটেরিনারি মেডিকেল দলের ক্যাম্প স্থাপন করাসহ দায়িত্ব পালনকালীন প্রয়োজনীয় লজিস্টিক সাপোর্ট থাকবে। ভেটেরিনারি মেডিকেল টিমের সেবা কর্মীদের জন্য এপ্রোন, মাস্ক, চেয়ার-টেবিল, বালতি, মগ ইত্যাদি সরবরাহ করা হবে।
তিনি বলেন, গত বছরের মতো এবারও ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতায় ১৯টি পশুর হাটে পশুর প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদানের জন্য ২০টি ভেটেরিনারি মেডিকেল দল গঠন করা হবে। ভেটেরিনারি মেডিকেল দলের কার্যক্রম মনিটরিং এর জন্য ৫টি কেন্দ্রীয় মনিটরিং দল এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে দুটি বিশেষজ্ঞ মেডিকেল দল গঠন করা হবে। কেন্দ্রীয় সমন্বয়, ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা, কন্ট্রোল রুম পরিচালনাসহ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য পৃথক টিম গঠন করা হবে।
‘মন্ত্রণালয়ের গঠিত মনিটরিং দল ঢাকা শহরে ভেটেরিনারি মেডিকেল দলের কার্যক্রম মনিটরিং করবেন। বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে গঠিত মনিটরিং দল সংশ্লিষ্ট উপজেলার ভেটেরিনারি মেডিকেল দলের কার্যক্রম মনিটরিং করবেন।’
স্বাস্থ্যসম্মতভাবে গবাদিপশু কোরবানির জন্য কোরবানির পশুর চামড়া ছাড়ানো ও সংরক্ষণ বিষয়ে ১৫ হাজার ৩৬৯ জন পেশাদার ও ২১ হাজার ২০৮ জন অপেশাদার মাংস প্রক্রিয়াজাতকারীকে (কসাই) প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে বলেও মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা।