ঢাকা ১২:৪৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৪ মে ২০২৫

পত্রিকা বিক্রি ও রেস্তোরাঁয় কাজ করা অ্যালবানিজ অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী

  • আপডেট সময় : ০৯:১৫:২৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২ মে ২০২৫
  • ২১ বার পড়া হয়েছে

প্রত্যাশা ডেস্ক: অস্ট্রেলিয়ার রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তাপ ছড়াচ্ছে আসন্ন কেন্দ্রীয় সরকারের নির্বাচন। শনিবার (৩ মে) নির্বাচনকে সামনে রেখে লেবার পার্টি ও লিবারেল-ন্যাশনাল জোটের প্রতিদ্বন্দ্বিতা এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি অ্যালবানিজের নেতৃত্বাধীন লেবার সরকারের প্রথম মেয়াদে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য অর্জন রয়েছে।
সাম্প্রতিক জরিপে লেবার কিছতা এগিয়ে আছে। তবে শেষ মুহূর্তের ভোটারদের সিদ্ধান্তই নির্ধারণ করবে, কে বসবেন ক্ষমতার মসনদে। দিন যত গড়াচ্ছে, অ্যান্থনি অ্যালবানিজের সম্ভাবনা ততই বাড়ছে। বাড়ছে তার বেড়ে উঠা, রাজনীতি ঘিরে মানুষের কৌতূহলও। সরকারি অনুদানের ফ্ল্যাটে শৈশব কেটেছে তার। সেখান থেকে কীভাবে তিনি পৌঁছালেন অস্ট্রেলিয়ার সর্বোচ্চ পদে, জীবনের সেই ঘটনা আলোচনায় এসেছে আবার।
একেবারে সাদামাটা এক পরিবারে জন্ম অ্যান্থনি অ্যালবানিজের। ১৯৬৩ সালের এক শীতের সকালে সিডনির ডার্লিংহার্স্ট এলাকার একটি সরকারি অনুদানের ফ্ল্যাটে জন্ম নেন তিনি। টিনের ছাউনির নিচে টয়লেট, সংকুচিত জীবনযাপন। মা ম্যারিয়ান এলিরি, যিনি ছিলেন শারীরিক প্রতিবন্ধী, একাই ছেলেকে বড় করেছেন। কারণ, মা অস্ট্রেলীয় হলেও বাবা ছিলেন ইতালীয় বংশোদ্ভূত। তিনি অস্ট্রেলিয়া থেকে যাওয়ার পর আর এ দেশে ফিরে আসেননি। ফলে বেশ অভাব-অনটনে চলত সংসার। খরচ চলত প্রতিবন্ধী ভাতা ও সীমিত সরকারি সহায়তায়।
অ্যালবানিজের মায়ের একটিই স্বপ্ন ছিল—ছেলে যেন তার চেয়ে ভালো জীবনযাপন করতে পারে। সেই স্বপ্নই হয়ে ওঠে অ্যালবানিজের জীবনের সবচেয়ে বড় প্রেরণা।
প্রাথমিক শিক্ষা ক্যাম্পারডাউনের স্কুলে, পরে সেন্ট মেরিজ ক্যাথলিক কলেজে পড়াশোনা করেন। পড়ালেখার পাশাপাশি খবরের কাগজ বিক্রি এবং হোটেল-রেস্তোরাঁয় খণ্ডকালীন কাজ করে চালাতে হয়েছে পড়ালেখার খরচ। পরিবারে তিনিই প্রথম, যিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পান। ১৯৮৪ সালে সিডনি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি।
রাজনীতিতে অ্যালবানিজের অবস্থান মধ্য-বামপন্থায়। ১৯৯৬ সালে নিজের এলাকায়, গ্রেইন্ডলার আসন থেকে প্রথমবারের মতো পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। প্রথম বক্তৃতাতেই বলেছিলেন, ‘আমি শুধু আমার এলাকার মানুষের নয়, সব শ্রমজীবী মানুষের উন্নয়নের জন্য কাজ করব।’ সেই লক্ষ্যেই তিনি এগিয়ে যান নিরন্তর।
সমকামী দম্পতিদের অবসর সুবিধা নিশ্চিতকরণ, প্রতিবন্ধীদের জন্য জাতীয় বিমা প্রকল্প প্রবর্তনসহ বিভিন্ন সামাজিক পরিবর্তনে অ্যালবানিজের অবদান উল্লেখযোগ্য। ২০০৭ সালে অবকাঠামো মন্ত্রী হিসেবে ‘ইনফ্রাস্ট্রাকচার অস্ট্রেলিয়া’ গঠনের মাধ্যমে দেশের দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন পরিকল্পনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
২০২২ সালের ২৩ মে একদা সরকারি অনুদানের ফ্ল্যাটে বেড়ে ওঠা ছেলেটিই শপথ নেন অস্ট্রেলিয়ার ৩১তম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে। তার সরকার এখন জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা, নাগরিকদের জীবনমান উন্নয়ন ও আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অধিকারের উন্নয়নে নিরলস কাজ করছে।
অ্যালবানিজের ব্যক্তিগত জীবনেও এসেছে পরিবর্তন। ২০১৯ সালে ১৯ বছরের বৈবাহিক জীবনের ইতি টানার পর ২০২০ সালে এক নৈশভোজে পরিচয় হয় জোডি হেডেনের সঙ্গে। গত বছরের ভালোবাসা দিবসে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে বাগদান সম্পন্ন করেন তারা। ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় বাগদানের ঘোষণা দেওয়া অস্ট্রেলিয়ার ইতিহাসে প্রথম প্রধানমন্ত্রী এখন অ্যান্থনি অ্যালবানিজ।
শৈশবে বাবার অনুপস্থিতি ও সামাজিক কুসংস্কারের ভার নিয়ে বড় হওয়া অ্যান্থনি অ্যালবানিজ একসময় নিজে খুঁজে বের করেন তার হারিয়ে যাওয়া ইতালীয় বাবাকে। বাবার সঙ্গে সেই পুনর্মিলন তার জীবনবোধে নতুন মাত্রা যোগ করে।
নিজের গল্প বলতে গিয়ে অ্যালবানিজ প্রায়ই বলেন, ‘আমি চাই অস্ট্রেলিয়া এমন এক দেশ হোক, যেখানে কোনো শিশুর জন্মপরিস্থিতি, ধর্মবিশ্বাস বা নামের শেষাংশ তার সামনে বাধা হয়ে না দাঁড়ায়।’
অন্যদিকে, অ্যালবানিজের নির্বাচনি এলাকার আশপাশের অঞ্চলগুলোয় বাংলাদেশি কমিউনিটির ব্যাপক উপস্থিতি। এই অঞ্চলে বসবাসকারী বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত অস্ট্রেলীয়দের সঙ্গে অ্যালবানিজের দীর্ঘদিনের সুসম্পর্ক রয়েছে। ২০২২ সালে অস্ট্রেলিয়ার সাধারণ নির্বাচনে তিনি ও তার দল জয়ী হওয়ার পর বাংলাদেশি কমিউনিটির মধ্যে ব্যাপক উচ্ছ্বাস দেখা গেছে। এবারের নির্বাচনেও অ্যালবানিজ ও তার দল লেবার পার্টির হয়ে বহু বাংলাদেশি কাজ করছেন।

 

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

পত্রিকা বিক্রি ও রেস্তোরাঁয় কাজ করা অ্যালবানিজ অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী

আপডেট সময় : ০৯:১৫:২৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২ মে ২০২৫

প্রত্যাশা ডেস্ক: অস্ট্রেলিয়ার রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তাপ ছড়াচ্ছে আসন্ন কেন্দ্রীয় সরকারের নির্বাচন। শনিবার (৩ মে) নির্বাচনকে সামনে রেখে লেবার পার্টি ও লিবারেল-ন্যাশনাল জোটের প্রতিদ্বন্দ্বিতা এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি অ্যালবানিজের নেতৃত্বাধীন লেবার সরকারের প্রথম মেয়াদে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য অর্জন রয়েছে।
সাম্প্রতিক জরিপে লেবার কিছতা এগিয়ে আছে। তবে শেষ মুহূর্তের ভোটারদের সিদ্ধান্তই নির্ধারণ করবে, কে বসবেন ক্ষমতার মসনদে। দিন যত গড়াচ্ছে, অ্যান্থনি অ্যালবানিজের সম্ভাবনা ততই বাড়ছে। বাড়ছে তার বেড়ে উঠা, রাজনীতি ঘিরে মানুষের কৌতূহলও। সরকারি অনুদানের ফ্ল্যাটে শৈশব কেটেছে তার। সেখান থেকে কীভাবে তিনি পৌঁছালেন অস্ট্রেলিয়ার সর্বোচ্চ পদে, জীবনের সেই ঘটনা আলোচনায় এসেছে আবার।
একেবারে সাদামাটা এক পরিবারে জন্ম অ্যান্থনি অ্যালবানিজের। ১৯৬৩ সালের এক শীতের সকালে সিডনির ডার্লিংহার্স্ট এলাকার একটি সরকারি অনুদানের ফ্ল্যাটে জন্ম নেন তিনি। টিনের ছাউনির নিচে টয়লেট, সংকুচিত জীবনযাপন। মা ম্যারিয়ান এলিরি, যিনি ছিলেন শারীরিক প্রতিবন্ধী, একাই ছেলেকে বড় করেছেন। কারণ, মা অস্ট্রেলীয় হলেও বাবা ছিলেন ইতালীয় বংশোদ্ভূত। তিনি অস্ট্রেলিয়া থেকে যাওয়ার পর আর এ দেশে ফিরে আসেননি। ফলে বেশ অভাব-অনটনে চলত সংসার। খরচ চলত প্রতিবন্ধী ভাতা ও সীমিত সরকারি সহায়তায়।
অ্যালবানিজের মায়ের একটিই স্বপ্ন ছিল—ছেলে যেন তার চেয়ে ভালো জীবনযাপন করতে পারে। সেই স্বপ্নই হয়ে ওঠে অ্যালবানিজের জীবনের সবচেয়ে বড় প্রেরণা।
প্রাথমিক শিক্ষা ক্যাম্পারডাউনের স্কুলে, পরে সেন্ট মেরিজ ক্যাথলিক কলেজে পড়াশোনা করেন। পড়ালেখার পাশাপাশি খবরের কাগজ বিক্রি এবং হোটেল-রেস্তোরাঁয় খণ্ডকালীন কাজ করে চালাতে হয়েছে পড়ালেখার খরচ। পরিবারে তিনিই প্রথম, যিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পান। ১৯৮৪ সালে সিডনি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি।
রাজনীতিতে অ্যালবানিজের অবস্থান মধ্য-বামপন্থায়। ১৯৯৬ সালে নিজের এলাকায়, গ্রেইন্ডলার আসন থেকে প্রথমবারের মতো পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। প্রথম বক্তৃতাতেই বলেছিলেন, ‘আমি শুধু আমার এলাকার মানুষের নয়, সব শ্রমজীবী মানুষের উন্নয়নের জন্য কাজ করব।’ সেই লক্ষ্যেই তিনি এগিয়ে যান নিরন্তর।
সমকামী দম্পতিদের অবসর সুবিধা নিশ্চিতকরণ, প্রতিবন্ধীদের জন্য জাতীয় বিমা প্রকল্প প্রবর্তনসহ বিভিন্ন সামাজিক পরিবর্তনে অ্যালবানিজের অবদান উল্লেখযোগ্য। ২০০৭ সালে অবকাঠামো মন্ত্রী হিসেবে ‘ইনফ্রাস্ট্রাকচার অস্ট্রেলিয়া’ গঠনের মাধ্যমে দেশের দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন পরিকল্পনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
২০২২ সালের ২৩ মে একদা সরকারি অনুদানের ফ্ল্যাটে বেড়ে ওঠা ছেলেটিই শপথ নেন অস্ট্রেলিয়ার ৩১তম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে। তার সরকার এখন জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা, নাগরিকদের জীবনমান উন্নয়ন ও আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অধিকারের উন্নয়নে নিরলস কাজ করছে।
অ্যালবানিজের ব্যক্তিগত জীবনেও এসেছে পরিবর্তন। ২০১৯ সালে ১৯ বছরের বৈবাহিক জীবনের ইতি টানার পর ২০২০ সালে এক নৈশভোজে পরিচয় হয় জোডি হেডেনের সঙ্গে। গত বছরের ভালোবাসা দিবসে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে বাগদান সম্পন্ন করেন তারা। ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় বাগদানের ঘোষণা দেওয়া অস্ট্রেলিয়ার ইতিহাসে প্রথম প্রধানমন্ত্রী এখন অ্যান্থনি অ্যালবানিজ।
শৈশবে বাবার অনুপস্থিতি ও সামাজিক কুসংস্কারের ভার নিয়ে বড় হওয়া অ্যান্থনি অ্যালবানিজ একসময় নিজে খুঁজে বের করেন তার হারিয়ে যাওয়া ইতালীয় বাবাকে। বাবার সঙ্গে সেই পুনর্মিলন তার জীবনবোধে নতুন মাত্রা যোগ করে।
নিজের গল্প বলতে গিয়ে অ্যালবানিজ প্রায়ই বলেন, ‘আমি চাই অস্ট্রেলিয়া এমন এক দেশ হোক, যেখানে কোনো শিশুর জন্মপরিস্থিতি, ধর্মবিশ্বাস বা নামের শেষাংশ তার সামনে বাধা হয়ে না দাঁড়ায়।’
অন্যদিকে, অ্যালবানিজের নির্বাচনি এলাকার আশপাশের অঞ্চলগুলোয় বাংলাদেশি কমিউনিটির ব্যাপক উপস্থিতি। এই অঞ্চলে বসবাসকারী বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত অস্ট্রেলীয়দের সঙ্গে অ্যালবানিজের দীর্ঘদিনের সুসম্পর্ক রয়েছে। ২০২২ সালে অস্ট্রেলিয়ার সাধারণ নির্বাচনে তিনি ও তার দল জয়ী হওয়ার পর বাংলাদেশি কমিউনিটির মধ্যে ব্যাপক উচ্ছ্বাস দেখা গেছে। এবারের নির্বাচনেও অ্যালবানিজ ও তার দল লেবার পার্টির হয়ে বহু বাংলাদেশি কাজ করছেন।