ঢাকা ১২:৫৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০২ মে ২০২৫

সাইবার বুলিংয়ে হয়রানির শিকার ছাত্রীরা

  • আপডেট সময় : ০৬:২৪:৩৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫
  • ৭ বার পড়া হয়েছে

বরগুনা সংবাদদাতা : বরগুনায় একের পর এক সাইবার বুলিংয়ের শিকার হচ্ছেন নারীরা। এসব ভুক্তভোগীদের মধ্যে স্কুল-কলেজে পড়ুয়া মেয়ে শিক্ষার্থীদের সংখ্যাই বেশি। তাদের ব্যক্তিগত ফেসবুক প্রোফাইল থেকে অথবা দূর থেকে গোপনে ছবি তুলে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য লিখে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে প্রোফাইল, পেজ ও গ্রুপে। এতে একদিকে যেমন সামাজিকভাবে সম্মানহানি হচ্ছে ভুক্তভোগীদের, অপরদিকে পরিবারের সদস্য, সহপাঠী ও বিভিন্নজনের নানা মন্তব্যেরও শিকার হচ্ছেন তারা। সম্প্রতি সাইবার বুলিংয়ের শিকার হওয়া বিভিন্ন শিক্ষার্থীদের অভিযোগের ভিত্তিতে ফেসবুকে সার্চ করে দেখা যায়, বরগুনা উল্লেখ করে বিভিন্ন নামে অসংখ্য পেজ এবং প্রোফাইল রয়েছে। এর মধ্যে ‘শুভ মৃধা’, ‘বরগুনা ছাপরি’, ‘কট খাবি মামা’, ‘মামা বরগুনার কট ধরছি’, ‘বরগুনার ভাইরাল’, ‘বরগুনার ভাইরাল ২’, ‘বরগুনার দুষ্ট আপু গুলা’, ‘বরগুনার মধু গুলা ঔ, এমন অসংখ্য পেজ এবং প্রোফাইলে নারীদের ছবি পোস্টসহ একের পর এক কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করা হচ্ছে।

এগুলোর মধ্যে আবার অনেক পেজ থেকে মেয়েদের সঙ্গে মেসেঞ্জারে যোগাযোগ করে বিভিন্ন অনৈতিক প্রস্তাব দেওয়ারও অভিযোগ জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। এ ছাড়া কোনো একটি প্রোফাইল অথবা পেজ যদি বন্ধও হয়ে যায়, আবারও কয়েকদিনের মধ্যে নতুন নাম দিয়ে পেজ খুলে শুরু হয় একই কর্মকাণ্ড। বরগুনা সরকারি মহিলা কলেজে অধ্যয়নরত এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে ঘটেছে এমন ঘটনা। তার ব্যক্তিগত ফেসবুক প্রোফাইল থেকে ছবি সংগ্রহ করে আপত্তিকর মন্তব্য লিখে ওই ছবি ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের একাধিক প্রোফাইল ও পেজে। ওই শিক্ষার্থীর অভিযোগ, তিনি ছাড়াও বরগুনায় আরও একাধিক স্কুল-কলেজে পড়ুয়া তরুণীর সঙ্গেও ঘটেছে একই ঘটনা। শুধু ফেসবুক পোস্টই নয়, অনৈতিক প্রস্তাব দিয়ে অনেকের মেসেঞ্জারে নক করা হয় বলেও জানান ওই ভুক্তভোগী।

সাইবার বুলিংয়ের শিকার ওই শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের ব্যক্তিগত প্রোফাইলে আপলোড করা সিঙ্গেল ছবিগুলো গোপনে সংগ্রহ করে একটি চক্র। পরে বিভিন্ন নামে ফেক আইডি এবং পেজে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য লিখে ওই ছবিগুলো পোস্ট করা হয়। পরবর্তীতে আবার ওই পোস্টগুলোই শেয়ার করা হয় বিভিন্ন গ্রুপে। আমার প্রোফাইল থেকে ছবি নিয়ে তারা একইভাবে পোস্ট করেন। পরে আমার বাবা এবং ফুপিসহ বিভিন্ন স্বজনদের কাছে বাজে মন্তব্যসহ পোস্ট করা লিংক এবং ছবিগুলো পাঠানো হয়। এতে বাবা ও স্বজনদের প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে আমাকে। সত্যিই কি আমি ওই ধরনের কর্মকাণ্ড করেছি? এমন প্রশ্ন সবার। এ ছাড়া পোস্টগুলো অপরিচিত অনেকের সামনে পড়ছে, তারা না জেনেই আমাকে বাজে চোখে দেখেন। অনেক সময় কেউ কেউ বাজে মন্তব্যও করেন। বরগুনা সরকারি কলেজের ভুক্তভোগী আরেক শিক্ষার্থী বলেন, বিগত ছয় থেকে আট মাস ধরেই বরগুনায় বিভিন্ন নামে অসংখ্য পেজ এবং প্রোফাইল দিয়ে মেয়েদের ছবিতে খারাপ মন্তব্য লিখে পোস্ট করা হচ্ছে। ফেসবুকে বেশি ভিউ পাওয়ার জন্যও অনেকে এমন অনৈতিক পোস্ট করছেন। অনেকে আবার তাদের এসব কর্মকাণ্ডকে উৎসাহ দিয়ে তাদের প্রোফাইলেও শেয়ার করছেন।

এ ছাড়া কোনো মেয়ের ব্যক্তিগত ছবি তাদের হাতে গেলেই তারা ভুক্তভোগীর সঙ্গে ম্যাসেঞ্জারে যোগাযোগ করেন। ছবি পোস্ট না করার শর্তে অনৈতিক আবদারসহ অন্য কারো গোপন মুহূর্তের ছবি অথবা ভিডিও থাকলে তা দিতে বলেন। পরে তাদের চাওয়া পূরণ করতে না পারলে খারাপ মন্তব্য লিখে ছবিগুলো বিভিন্ন পেজে পোস্ট করা হয়।
এ বিষয়ে বরগুনা সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আব্দুল হালিম বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম একটি ওপেন প্লাটফর্ম। এগুলো ব্যবহারে সবার জন্যই কিছু বিধিনিষেধ মানার প্রয়োজন রয়েছে। ব্যক্তিগত তথ্য এবং সেনসেটিভ কোনো ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করলে পরবর্তীতে বিভিন্ন দুষ্কৃতকারীরা ওই তথ্য সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্টদের হেনস্তা করার সুযোগ পায়। বর্তমানে বিভিন্ন প্লাটফর্মে আর্নিংয়ের সুযোগ পেয়ে পেজ বা প্রোফাইলকে ভাইরাল করতে সত্য-মিথ্যা মিলিয়ে অনেকেই বিভিন্ন ধরনের পোস্ট করেন। আর এমন প্রবণতা থেকেই অনেক সময় অপরাধ সংঘটিত হয়ে থাকে। তবে যেকোনো সাইবার অপরাধ প্রতিরোধে পুলিশের একটি ইউনিট কাজ করছে। যদি কেউ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাইবার অপরাধের শিকার হয়, তাহলে দ্রুত পুলিশকে অবহিত করে লিখিত অভিযোগ দিতে আহ্বান করছি।

 

 

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

সাইবার বুলিংয়ে হয়রানির শিকার ছাত্রীরা

আপডেট সময় : ০৬:২৪:৩৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫

বরগুনা সংবাদদাতা : বরগুনায় একের পর এক সাইবার বুলিংয়ের শিকার হচ্ছেন নারীরা। এসব ভুক্তভোগীদের মধ্যে স্কুল-কলেজে পড়ুয়া মেয়ে শিক্ষার্থীদের সংখ্যাই বেশি। তাদের ব্যক্তিগত ফেসবুক প্রোফাইল থেকে অথবা দূর থেকে গোপনে ছবি তুলে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য লিখে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে প্রোফাইল, পেজ ও গ্রুপে। এতে একদিকে যেমন সামাজিকভাবে সম্মানহানি হচ্ছে ভুক্তভোগীদের, অপরদিকে পরিবারের সদস্য, সহপাঠী ও বিভিন্নজনের নানা মন্তব্যেরও শিকার হচ্ছেন তারা। সম্প্রতি সাইবার বুলিংয়ের শিকার হওয়া বিভিন্ন শিক্ষার্থীদের অভিযোগের ভিত্তিতে ফেসবুকে সার্চ করে দেখা যায়, বরগুনা উল্লেখ করে বিভিন্ন নামে অসংখ্য পেজ এবং প্রোফাইল রয়েছে। এর মধ্যে ‘শুভ মৃধা’, ‘বরগুনা ছাপরি’, ‘কট খাবি মামা’, ‘মামা বরগুনার কট ধরছি’, ‘বরগুনার ভাইরাল’, ‘বরগুনার ভাইরাল ২’, ‘বরগুনার দুষ্ট আপু গুলা’, ‘বরগুনার মধু গুলা ঔ, এমন অসংখ্য পেজ এবং প্রোফাইলে নারীদের ছবি পোস্টসহ একের পর এক কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করা হচ্ছে।

এগুলোর মধ্যে আবার অনেক পেজ থেকে মেয়েদের সঙ্গে মেসেঞ্জারে যোগাযোগ করে বিভিন্ন অনৈতিক প্রস্তাব দেওয়ারও অভিযোগ জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। এ ছাড়া কোনো একটি প্রোফাইল অথবা পেজ যদি বন্ধও হয়ে যায়, আবারও কয়েকদিনের মধ্যে নতুন নাম দিয়ে পেজ খুলে শুরু হয় একই কর্মকাণ্ড। বরগুনা সরকারি মহিলা কলেজে অধ্যয়নরত এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে ঘটেছে এমন ঘটনা। তার ব্যক্তিগত ফেসবুক প্রোফাইল থেকে ছবি সংগ্রহ করে আপত্তিকর মন্তব্য লিখে ওই ছবি ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের একাধিক প্রোফাইল ও পেজে। ওই শিক্ষার্থীর অভিযোগ, তিনি ছাড়াও বরগুনায় আরও একাধিক স্কুল-কলেজে পড়ুয়া তরুণীর সঙ্গেও ঘটেছে একই ঘটনা। শুধু ফেসবুক পোস্টই নয়, অনৈতিক প্রস্তাব দিয়ে অনেকের মেসেঞ্জারে নক করা হয় বলেও জানান ওই ভুক্তভোগী।

সাইবার বুলিংয়ের শিকার ওই শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের ব্যক্তিগত প্রোফাইলে আপলোড করা সিঙ্গেল ছবিগুলো গোপনে সংগ্রহ করে একটি চক্র। পরে বিভিন্ন নামে ফেক আইডি এবং পেজে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য লিখে ওই ছবিগুলো পোস্ট করা হয়। পরবর্তীতে আবার ওই পোস্টগুলোই শেয়ার করা হয় বিভিন্ন গ্রুপে। আমার প্রোফাইল থেকে ছবি নিয়ে তারা একইভাবে পোস্ট করেন। পরে আমার বাবা এবং ফুপিসহ বিভিন্ন স্বজনদের কাছে বাজে মন্তব্যসহ পোস্ট করা লিংক এবং ছবিগুলো পাঠানো হয়। এতে বাবা ও স্বজনদের প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে আমাকে। সত্যিই কি আমি ওই ধরনের কর্মকাণ্ড করেছি? এমন প্রশ্ন সবার। এ ছাড়া পোস্টগুলো অপরিচিত অনেকের সামনে পড়ছে, তারা না জেনেই আমাকে বাজে চোখে দেখেন। অনেক সময় কেউ কেউ বাজে মন্তব্যও করেন। বরগুনা সরকারি কলেজের ভুক্তভোগী আরেক শিক্ষার্থী বলেন, বিগত ছয় থেকে আট মাস ধরেই বরগুনায় বিভিন্ন নামে অসংখ্য পেজ এবং প্রোফাইল দিয়ে মেয়েদের ছবিতে খারাপ মন্তব্য লিখে পোস্ট করা হচ্ছে। ফেসবুকে বেশি ভিউ পাওয়ার জন্যও অনেকে এমন অনৈতিক পোস্ট করছেন। অনেকে আবার তাদের এসব কর্মকাণ্ডকে উৎসাহ দিয়ে তাদের প্রোফাইলেও শেয়ার করছেন।

এ ছাড়া কোনো মেয়ের ব্যক্তিগত ছবি তাদের হাতে গেলেই তারা ভুক্তভোগীর সঙ্গে ম্যাসেঞ্জারে যোগাযোগ করেন। ছবি পোস্ট না করার শর্তে অনৈতিক আবদারসহ অন্য কারো গোপন মুহূর্তের ছবি অথবা ভিডিও থাকলে তা দিতে বলেন। পরে তাদের চাওয়া পূরণ করতে না পারলে খারাপ মন্তব্য লিখে ছবিগুলো বিভিন্ন পেজে পোস্ট করা হয়।
এ বিষয়ে বরগুনা সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আব্দুল হালিম বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম একটি ওপেন প্লাটফর্ম। এগুলো ব্যবহারে সবার জন্যই কিছু বিধিনিষেধ মানার প্রয়োজন রয়েছে। ব্যক্তিগত তথ্য এবং সেনসেটিভ কোনো ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করলে পরবর্তীতে বিভিন্ন দুষ্কৃতকারীরা ওই তথ্য সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্টদের হেনস্তা করার সুযোগ পায়। বর্তমানে বিভিন্ন প্লাটফর্মে আর্নিংয়ের সুযোগ পেয়ে পেজ বা প্রোফাইলকে ভাইরাল করতে সত্য-মিথ্যা মিলিয়ে অনেকেই বিভিন্ন ধরনের পোস্ট করেন। আর এমন প্রবণতা থেকেই অনেক সময় অপরাধ সংঘটিত হয়ে থাকে। তবে যেকোনো সাইবার অপরাধ প্রতিরোধে পুলিশের একটি ইউনিট কাজ করছে। যদি কেউ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাইবার অপরাধের শিকার হয়, তাহলে দ্রুত পুলিশকে অবহিত করে লিখিত অভিযোগ দিতে আহ্বান করছি।