ঢাকা ০৪:১৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫

গাজার গণহত্যা, কাশ্মিরের কান্না: রাজনৈতিক দাবার ছক

  • আপডেট সময় : ০৪:৪৭:২২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫
  • ৪ বার পড়া হয়েছে

পেহেলগাম হামলার সন্দেহভাজন হামলাকারীদের বাড়িঘর গুঁড়িয়ে দিচ্ছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। ছবি: রয়টার্স

আলমগীর খান : ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যাকে কেন্দ্র করে যখন বিশ্বপরিস্থিতি উত্তপ্ত, ঠিক তখনই ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু বৈশ্বিক জনমনে উদ্বেগ ও অশুভ সংকেতের জাল তৈরি করেছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের আক্রমণের পর এটি আরেক বড় সন্ত্রাসী হামলা। তবে ৭ অক্টোবর ও ২২ এপ্রিলের মাঝে যে মিল আছে, তারচেয়েও বড় মিল আছে তাদের প্রেক্ষাপটে। দুটি ক্ষেত্রেই নিরীহ মানুষের ওপর এই হামলা গভীরভাবে নিন্দনীয়।

এই নিন্দনীয় ঘটনার শিকড় আরো বেশি নিন্দনীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থায় নিহিত- যে রাজনৈতিক ব্যবস্থা স্বাধীনতা হরণের সঙ্গে সম্পর্কিত, যার রাজনৈতিক নাম দখলদারিত্বমূলক উপনিবেশ। আর এখানেই মিল কেবল ৭ অক্টোবর ও ২২ এপ্রিলের হামলায় নয়, আরো বেশি মিল গাজায় ও কাশ্মিরে, ইসরায়েলে ও ভারতে এবং নেতানিয়াহু ও মোদীতে।

ফিলিস্তিন ও কাশ্মিরের অধিবাসী উভয়েরই ভাগ্য বিপর্যয়ের শুরু ১৯৪৭-৪৮ থেকে। উভয়েই বিশ্বাসঘাতকতার শিকার- একদিকে ইসরায়েল ও অন্যদিকে ভারত কর্তৃক। অথচ শুরুতে ইসরায়েল ও ভারতের মাঝে পার্থক্য ছিল বিপরীত দুই মেরুর মতো- ইসরায়েল পতনোন্মুখ সাম্রাজ্যবাদের একটি সহিংস প্রকল্প, অন্যদিকে ভারত ঔপনিবেশিকতার বিরুদ্ধে দীর্ঘ সংগ্রামের পর একটি স্বাধীন রাষ্ট্র। কিন্তু দখলদারিত্বমূলক ঔপনিবেশিকতার স্বার্থ ধীরে ধীরে তাদেরকে যেভাবে ঘনিষ্ঠ ও আত্মার আত্মীয় করে তুলছে তা অবিশ্বাস্য হলেও সত্য।

১৯৪৭-এ যখন জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিদের জন্য পাশাপাশি দুটি রাষ্ট্র সৃষ্টির প্রস্তাব পাশ হয়, ভারত তখন অল্প কিছু অমুসলিম দেশের মধ্যে একটি ছিল যে এই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভোট দেয়। প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী তার আমলে ইসরায়েলকে বলেছিলেন ‘আক্রমণকারী জাতিরাষ্ট্র’ ও তাদের ‘দখলকৃত এলাকা ছেড়ে দেয়ার’ দাবি করেছিলেন।

স্বাধীন ভারতের ইতিহাস ছিল অধিকৃত ফিলিস্তিনের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান গ্রহণের। কিন্তু ভারতের নিজেরই ছিল ফিলিস্তিনের মতো আরেক অধিকৃত অঞ্চল- কাশ্মির। স্বাধীনতা লাভে ইচ্ছুক কাশ্মিরকে পাকাপোক্তভাবে দখলে রাখার উদ্দেশ্য থেকেই ইসরায়েলের সঙ্গে গোপনে তার সখ্য গড়ে উঠতে থাকে। ১৯৯৯ সালে কাশ্মিরকে কেন্দ্র করে পাকিস্তানের সঙ্গে তার যুদ্ধপরিস্থিতিতে ইসরায়েল অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে ভারতকে সহায়তা করে।

২০১৪ সালে নরেদ্র মোদী ভারতের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর ভারত-ইসরায়েলের সখ্য প্রকাশ্য ও নাটকীয় রূপ নিতে শুরু করে।

‘ভারতীয় আমেরিকান মুসলিম কাউন্সিল’-এর গণমাধ্যম ও যোগাযোগ বিভাগের সহযোগী পরিচালক সাফা আহমেদ ‘জ্যাকোবিন’ সাময়িকীতে একটি প্রবন্ধে (হোয়াই ফার-রাইট হিন্দুস লাভ ডেমোনাইজিং প্যালেস্টিনিয়ানস, ১৫ নভেম্বর ২০২৩) লিখেছেন, “প্রতিপক্ষকে দমন করতে হিন্দুত্ববাদও জায়নবাদের খেলার কৌশল আয়ত্ত করতে শুরু করেছে …।”

টাইম সাময়িকীতে (নভেম্বর ১৭, ২০২৩) ‘হাউ ইন্ডিয়া বিকেইম প্রো-ইসরায়েল’ শীর্ষক লেখায় নিকোলাস ব্ল্যারেল প্রকাশ করেছেন, বর্তমানে ভারত ইসরায়েলি অস্ত্রশস্ত্রের সবচেয়ে বড় বিদেশি খদ্দের।

তবে এরচেয়েও বেশি আশ্চর্যজনক বিষয়ের উন্মোচন ঘটেছে লন্ডনের প্লুটো প্রেস কর্তৃক প্রকাশিত আজাদ এশার সাম্প্রতিক ‘হোস্টাইল হোমল্যান্ডস: দ্য নিউ অ্যালায়ান্স বিটুইন ইন্ডিয়া অ্যান্ড ইসরায়েল’ বইটিতে। এ বিষয়ে প্লুটো প্রেস আয়োজিত একটি পডকাস্টের সূচনায় বলা হয়েছে, “ভারত একসময় প্রকাশ্যে বর্ণবাদ হিসেবে জায়নবাদের বিরোধিতা করলেও সময় বদলে গেছে এবং ইসরায়েল রাষ্ট্র পরিণত হয়েছে ভারতের পররাষ্ট্রনীতির দিকনির্দেশকে। নীতিতে ও কর্মে ইসরায়েলকে অনুকরণ করে ভারতের সাম্প্রতিক কাশ্মির-সংযুক্তি বেশি বেশি করে পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের দখলবাদী ঔপনিবেশিক প্রকল্পের অনুসরণ। এ দুই রাষ্ট্রের এই আদর্শিক ও রাজনৈতিক সংযোগ আশঙ্কাজনক, তাদের জাতিরাষ্ট্রীয় আদর্শিক মিল গভীরভাবে সংযুক্ত।”

ভারত ও ইসরায়েলের এই ক্রমাগত আদর্শিক সমাপতন নিয়ে পঙ্কজ মিশ্র ২০১৭ সালে ‘ইন্ডিয়া অ্যান্ড ইসরায়েল: অ্যান আইডিওলোজিক্যাল কনভারজেন্স’ শীর্ষক প্রবন্ধে লিখেছেন, “১৯৭৭ থেকে ১৯৮৯ সালের এক দশকে ইসরায়েলে লিকুদ এবং ভারতে বিজেপি দেশ দুটির রাজনৈতিক সংস্কৃতি পাল্টে দেয়।”

তিনি লিখেছেন, “১৯৯০ সালে উভয় দেশই আরো গভীর অর্থনৈতিক ও মতাদর্শিক সখ্যতা তৈরি করে- ব্যক্তিগত সম্পত্তি অর্জনের নয়া উদারনৈতিক ধারণাকে আঁকড়ে ধরার মাধ্যমে অন্তর্ভুক্তিমূলক সমৃদ্ধি ও সমতার আদর্শকে বিসর্জন দিয়ে। এই প্রক্রিয়া এখন সম্পূর্ণ। নরেন্দ্র মোদী এখন ভারতের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী প্রধানমন্ত্রী যখন তার গুজরাট হামলার শিকার হাজার হাজার মুসলমান শরণার্থী এখনও বাড়ি ফিরতে ভয় পাচ্ছে। হিন্দু জাতীয়তাবাদীদের সর্দার সাভারকারের ছবি এখন ভারতের সংসদে ঝুলছে যে সাভারকার ১৯৪৮-এ গান্ধী হত্যার ষড়যন্ত্রকারীদের একজন। ২০১৫ সালে নেতানিয়াহু যখন পুনরায় প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন, মোদী তখন হিব্রু ভাষায় তার বন্ধুকে অভিনন্দন জানিয়ে টুইট করেন।”

২০২৩ সালে ইসরায়েলে হামাসের আক্রমণের পরপরই নরেন্দ্র মোদী বার্তা দেন যে, তিনি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইসরায়েলের পাশে আছেন। আবার প্রায় ১৯ মাস পর এই বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু তার বন্ধুকে তেমন বার্তাই ফেরত দিলেন এভাবে, “আমার প্রিয় বন্ধু নরেন্দ্র মোদী, জম্মু ও কাশ্মিরের পেহেলগামে এই বর্বরোচিত সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় কয়েক ডজন নিরীহ মানুষের মৃত্যুতে ও আহত হওয়ার ঘটনায় আমি গভীরভাবে শোকাহত। আমাদের ভাবনা ও প্রার্থনা তাদের ও তাদের পরিবারের প্রতি। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইসরায়েল ভারতের সঙ্গে আছে।”

শেষ বাক্যটি বাদে খুবই মানবিক এই বার্তা। গাজায় খুন করে চলা অর্ধলক্ষ মানুষের জন্য এই গভীর শোকের ছাব্বিশ ভাগ দূরে থাক, এক হাজার ভাগের এক ভাগও যদি নেতানিয়াহু অনুভব করতেন! আর নরেন্দ্র মোদী যদি খানিকটা অনুভব করতেন, ২০০২-এ গুজরাটে খুন হওয়া দুই হাজার নিরীহ মানুষের প্রতি! অরুন্ধতী রায় মোদীর উত্থান সম্পর্কে লিখেছেন, “মোদীর রাজনৈতিক জীবনের উলম্ফন ঘটে ২০০১ সালের অক্টোবরে, যুক্তরাষ্ট্রে ৯/১১-এর হামলার কয়েক সপ্তাহ পরই, যখন বিজেপি গুজরাট রাজ্যে তাদের নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রীকে সরিয়ে মোদীকে ক্ষমতায় বসায়।” তার ৫ মাসের মধ্যেই ঘটে এক ঘৃণ্য ও রহস্যময় অগ্নিসংযোগের ঘটনা যাতে ৫৯ জন হিন্দু তীর্থযাত্রীকে ট্রেনে পুড়িয়ে মারা হয়। তারই প্রতিশোধ হিসেবে ঘটানো হয় গুজরাট গণহত্যা।” (ইন্ডিয়া: ইন্টিমেশনস অব অ্যান এন্ডিং, দ্য নেশন, জানুয়ারি ১৩/২০, ২০২০)

ট্রাম্প ও ইলন মাস্কের একাধিপত্যের যুগে মোদী ও নেতানিয়াহুর বার্তা বিনিময় বিশ্বজুড়ে এক ভয়ঙ্কর ভবিষ্যতের ইঙ্গিত বহন করছে। এখন কমবেশি সবাই জানে, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ- এই শব্দগুচ্ছ এক ভয়ঙ্কর নীলনকশার সারসংক্ষেপ। যা ধ্বংস করেছে আফগানিস্তান, ইরাক, লিবিয়া, মিশর ও সিরিয়াকে। যার ফল চলমান গাজার গণহত্যায় এবং যা থাবা বাড়িয়ে রেখেছে ইরানের দিকে।সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের নামে পাতা রাজনৈতিক দাবার ছক বিস্তৃত হচ্ছে কাশ্মিরের।

পেহেলগামে সংঘটিত সন্ত্রাসী হামলা নিয়ে বেশকিছু প্রশ্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে উঠে এসেছে। তার মধ্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি হচ্ছে এই হামলার তথ্য ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর কাছে ছিল। তবুও তারা নির্বিকার ছিল কেন? অতএব, লক্ষণীয় যে, মোদীর নেতৃত্বে ভারতের বিজেপি সরকার এই হামলাকে কীভাবে ও কতখানি পুঁজি করে, কাশ্মিরের স্বাধীনতাকামী জনগণের ওপর কী নীলনকশা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়।

এখন ভরসা কেবল জাতিসংঘ। যে প্রসঙ্গে নিউ ইয়র্ক টাইমস পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বক্তব্যের বরাত দিয়ে ২০১৯-এর ২ অক্টোবর প্রকাশ করেছিল, জাতিসংঘ কাশ্মিরকে আর ফেলে রাখতে পারে না।

অরুন্ধতী রায়ের কথায়-তারা যদি স্বাধীনতা চায় স্বাধীনতাই প্রাপ্য। কাশ্মিরের জনগণকে প্রতারিত করতে না চাইলে ভারত ও পাকিস্তান-বিবাদমান এই দুই রাষ্ট্রের কাছে আর কোনো বিকল্প নেই।

পেহেলগাম হামলার সন্দেহভাজন হামলাকারীদের বাড়িঘর গুঁড়িয়ে দিচ্ছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। ছবি: রয়টার্স
গাজার গণহত্যা, কাশ্মিরের কান্না: রাজনৈতিক দাবার ছক
আলমগীর খান :
ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যাকে কেন্দ্র করে যখন বিশ্বপরিস্থিতি উত্তপ্ত, ঠিক তখনই ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু বৈশ্বিক জনমনে উদ্বেগ ও অশুভ সংকেতের জাল তৈরি করেছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের আক্রমণের পর এটি আরেক বড় সন্ত্রাসী হামলা। তবে ৭ অক্টোবর ও ২২ এপ্রিলের মাঝে যে মিল আছে, তারচেয়েও বড় মিল আছে তাদের প্রেক্ষাপটে। দুটি ক্ষেত্রেই নিরীহ মানুষের ওপর এই হামলা গভীরভাবে নিন্দনীয়।

এই নিন্দনীয় ঘটনার শিকড় আরো বেশি নিন্দনীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থায় নিহিত- যে রাজনৈতিক ব্যবস্থা স্বাধীনতা হরণের সঙ্গে সম্পর্কিত, যার রাজনৈতিক নাম দখলদারিত্বমূলক উপনিবেশ। আর এখানেই মিল কেবল ৭ অক্টোবর ও ২২ এপ্রিলের হামলায় নয়, আরো বেশি মিল গাজায় ও কাশ্মিরে, ইসরায়েলে ও ভারতে এবং নেতানিয়াহু ও মোদীতে।

ফিলিস্তিন ও কাশ্মিরের অধিবাসী উভয়েরই ভাগ্য বিপর্যয়ের শুরু ১৯৪৭-৪৮ থেকে। উভয়েই বিশ্বাসঘাতকতার শিকার- একদিকে ইসরায়েল ও অন্যদিকে ভারত কর্তৃক। অথচ শুরুতে ইসরায়েল ও ভারতের মাঝে পার্থক্য ছিল বিপরীত দুই মেরুর মতো- ইসরায়েল পতনোন্মুখ সাম্রাজ্যবাদের একটি সহিংস প্রকল্প, অন্যদিকে ভারত ঔপনিবেশিকতার বিরুদ্ধে দীর্ঘ সংগ্রামের পর একটি স্বাধীন রাষ্ট্র। কিন্তু দখলদারিত্বমূলক ঔপনিবেশিকতার স্বার্থ ধীরে ধীরে তাদেরকে যেভাবে ঘনিষ্ঠ ও আত্মার আত্মীয় করে তুলছে তা অবিশ্বাস্য হলেও সত্য।

১৯৪৭-এ যখন জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিদের জন্য পাশাপাশি দুটি রাষ্ট্র সৃষ্টির প্রস্তাব পাশ হয়, ভারত তখন অল্প কিছু অমুসলিম দেশের মধ্যে একটি ছিল যে এই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভোট দেয়। প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী তার আমলে ইসরায়েলকে বলেছিলেন ‘আক্রমণকারী জাতিরাষ্ট্র’ ও তাদের ‘দখলকৃত এলাকা ছেড়ে দেয়ার’ দাবি করেছিলেন।

স্বাধীন ভারতের ইতিহাস ছিল অধিকৃত ফিলিস্তিনের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান গ্রহণের। কিন্তু ভারতের নিজেরই ছিল ফিলিস্তিনের মতো আরেক অধিকৃত অঞ্চল- কাশ্মির। স্বাধীনতা লাভে ইচ্ছুক কাশ্মিরকে পাকাপোক্তভাবে দখলে রাখার উদ্দেশ্য থেকেই ইসরায়েলের সঙ্গে গোপনে তার সখ্য গড়ে উঠতে থাকে। ১৯৯৯ সালে কাশ্মিরকে কেন্দ্র করে পাকিস্তানের সঙ্গে তার যুদ্ধপরিস্থিতিতে ইসরায়েল অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে ভারতকে সহায়তা করে।

২০১৪ সালে নরেদ্র মোদী ভারতের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর ভারত-ইসরায়েলের সখ্য প্রকাশ্য ও নাটকীয় রূপ নিতে শুরু করে।

‘ভারতীয় আমেরিকান মুসলিম কাউন্সিল’-এর গণমাধ্যম ও যোগাযোগ বিভাগের সহযোগী পরিচালক সাফা আহমেদ ‘জ্যাকোবিন’ সাময়িকীতে একটি প্রবন্ধে (হোয়াই ফার-রাইট হিন্দুস লাভ ডেমোনাইজিং প্যালেস্টিনিয়ানস, ১৫ নভেম্বর ২০২৩) লিখেছেন, “প্রতিপক্ষকে দমন করতে হিন্দুত্ববাদও জায়নবাদের খেলার কৌশল আয়ত্ত করতে শুরু করেছে …।”

টাইম সাময়িকীতে (নভেম্বর ১৭, ২০২৩) ‘হাউ ইন্ডিয়া বিকেইম প্রো-ইসরায়েল’ শীর্ষক লেখায় নিকোলাস ব্ল্যারেল প্রকাশ করেছেন, বর্তমানে ভারত ইসরায়েলি অস্ত্রশস্ত্রের সবচেয়ে বড় বিদেশি খদ্দের।

তবে এরচেয়েও বেশি আশ্চর্যজনক বিষয়ের উন্মোচন ঘটেছে লন্ডনের প্লুটো প্রেস কর্তৃক প্রকাশিত আজাদ এশার সাম্প্রতিক ‘হোস্টাইল হোমল্যান্ডস: দ্য নিউ অ্যালায়ান্স বিটুইন ইন্ডিয়া অ্যান্ড ইসরায়েল’ বইটিতে। এ বিষয়ে প্লুটো প্রেস আয়োজিত একটি পডকাস্টের সূচনায় বলা হয়েছে, “ভারত একসময় প্রকাশ্যে বর্ণবাদ হিসেবে জায়নবাদের বিরোধিতা করলেও সময় বদলে গেছে এবং ইসরায়েল রাষ্ট্র পরিণত হয়েছে ভারতের পররাষ্ট্রনীতির দিকনির্দেশকে। নীতিতে ও কর্মে ইসরায়েলকে অনুকরণ করে ভারতের সাম্প্রতিক কাশ্মির-সংযুক্তি বেশি বেশি করে পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের দখলবাদী ঔপনিবেশিক প্রকল্পের অনুসরণ। এ দুই রাষ্ট্রের এই আদর্শিক ও রাজনৈতিক সংযোগ আশঙ্কাজনক, তাদের জাতিরাষ্ট্রীয় আদর্শিক মিল গভীরভাবে সংযুক্ত।”

ভারত ও ইসরায়েলের এই ক্রমাগত আদর্শিক সমাপতন নিয়ে পঙ্কজ মিশ্র ২০১৭ সালে ‘ইন্ডিয়া অ্যান্ড ইসরায়েল: অ্যান আইডিওলোজিক্যাল কনভারজেন্স’ শীর্ষক প্রবন্ধে লিখেছেন, “১৯৭৭ থেকে ১৯৮৯ সালের এক দশকে ইসরায়েলে লিকুদ এবং ভারতে বিজেপি দেশ দুটির রাজনৈতিক সংস্কৃতি পাল্টে দেয়।”

তিনি লিখেছেন, “১৯৯০ সালে উভয় দেশই আরো গভীর অর্থনৈতিক ও মতাদর্শিক সখ্যতা তৈরি করে- ব্যক্তিগত সম্পত্তি অর্জনের নয়া উদারনৈতিক ধারণাকে আঁকড়ে ধরার মাধ্যমে অন্তর্ভুক্তিমূলক সমৃদ্ধি ও সমতার আদর্শকে বিসর্জন দিয়ে। এই প্রক্রিয়া এখন সম্পূর্ণ। নরেন্দ্র মোদী এখন ভারতের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী প্রধানমন্ত্রী যখন তার গুজরাট হামলার শিকার হাজার হাজার মুসলমান শরণার্থী এখনও বাড়ি ফিরতে ভয় পাচ্ছে। হিন্দু জাতীয়তাবাদীদের সর্দার সাভারকারের ছবি এখন ভারতের সংসদে ঝুলছে যে সাভারকার ১৯৪৮-এ গান্ধী হত্যার ষড়যন্ত্রকারীদের একজন। ২০১৫ সালে নেতানিয়াহু যখন পুনরায় প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন, মোদী তখন হিব্রু ভাষায় তার বন্ধুকে অভিনন্দন জানিয়ে টুইট করেন।”

২০২৩ সালে ইসরায়েলে হামাসের আক্রমণের পরপরই নরেন্দ্র মোদী বার্তা দেন যে, তিনি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইসরায়েলের পাশে আছেন। আবার প্রায় ১৯ মাস পর এই বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু তার বন্ধুকে তেমন বার্তাই ফেরত দিলেন এভাবে, “আমার প্রিয় বন্ধু নরেন্দ্র মোদী, জম্মু ও কাশ্মিরের পেহেলগামে এই বর্বরোচিত সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় কয়েক ডজন নিরীহ মানুষের মৃত্যুতে ও আহত হওয়ার ঘটনায় আমি গভীরভাবে শোকাহত। আমাদের ভাবনা ও প্রার্থনা তাদের ও তাদের পরিবারের প্রতি। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইসরায়েল ভারতের সঙ্গে আছে।”

শেষ বাক্যটি বাদে খুবই মানবিক এই বার্তা। গাজায় খুন করে চলা অর্ধলক্ষ মানুষের জন্য এই গভীর শোকের ছাব্বিশ ভাগ দূরে থাক, এক হাজার ভাগের এক ভাগও যদি নেতানিয়াহু অনুভব করতেন! আর নরেন্দ্র মোদী যদি খানিকটা অনুভব করতেন, ২০০২-এ গুজরাটে খুন হওয়া দুই হাজার নিরীহ মানুষের প্রতি! অরুন্ধতী রায় মোদীর উত্থান সম্পর্কে লিখেছেন, “মোদীর রাজনৈতিক জীবনের উলম্ফন ঘটে ২০০১ সালের অক্টোবরে, যুক্তরাষ্ট্রে ৯/১১-এর হামলার কয়েক সপ্তাহ পরই, যখন বিজেপি গুজরাট রাজ্যে তাদের নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রীকে সরিয়ে মোদীকে ক্ষমতায় বসায়।” তার ৫ মাসের মধ্যেই ঘটে এক ঘৃণ্য ও রহস্যময় অগ্নিসংযোগের ঘটনা যাতে ৫৯ জন হিন্দু তীর্থযাত্রীকে ট্রেনে পুড়িয়ে মারা হয়। তারই প্রতিশোধ হিসেবে ঘটানো হয় গুজরাট গণহত্যা।” (ইন্ডিয়া: ইন্টিমেশনস অব অ্যান এন্ডিং, দ্য নেশন, জানুয়ারি ১৩/২০, ২০২০)

ট্রাম্প ও ইলন মাস্কের একাধিপত্যের যুগে মোদী ও নেতানিয়াহুর বার্তা বিনিময় বিশ্বজুড়ে এক ভয়ঙ্কর ভবিষ্যতের ইঙ্গিত বহন করছে। এখন কমবেশি সবাই জানে, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ- এই শব্দগুচ্ছ এক ভয়ঙ্কর নীলনকশার সারসংক্ষেপ। যা ধ্বংস করেছে আফগানিস্তান, ইরাক, লিবিয়া, মিশর ও সিরিয়াকে। যার ফল চলমান গাজার গণহত্যায় এবং যা থাবা বাড়িয়ে রেখেছে ইরানের দিকে।সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের নামে পাতা রাজনৈতিক দাবার ছক বিস্তৃত হচ্ছে কাশ্মিরের।

পেহেলগামে সংঘটিত সন্ত্রাসী হামলা নিয়ে বেশকিছু প্রশ্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে উঠে এসেছে। তার মধ্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি হচ্ছে এই হামলার তথ্য ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর কাছে ছিল। তবুও তারা নির্বিকার ছিল কেন? অতএব, লক্ষণীয় যে, মোদীর নেতৃত্বে ভারতের বিজেপি সরকার এই হামলাকে কীভাবে ও কতখানি পুঁজি করে, কাশ্মিরের স্বাধীনতাকামী জনগণের ওপর কী নীলনকশা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়।

এখন ভরসা কেবল জাতিসংঘ। যে প্রসঙ্গে নিউ ইয়র্ক টাইমস পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বক্তব্যের বরাত দিয়ে ২০১৯-এর ২ অক্টোবর প্রকাশ করেছিল, জাতিসংঘ কাশ্মিরকে আর ফেলে রাখতে পারে না।

অরুন্ধতী রায়ের কথায়-তারা যদি স্বাধীনতা চায় স্বাধীনতাই প্রাপ্য। কাশ্মিরের জনগণকে প্রতারিত করতে না চাইলে ভারত ও পাকিস্তান-বিবাদমান এই দুই রাষ্ট্রের কাছে আর কোনো বিকল্প নেই।

 

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

গাজার গণহত্যা, কাশ্মিরের কান্না: রাজনৈতিক দাবার ছক

আপডেট সময় : ০৪:৪৭:২২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫

আলমগীর খান : ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যাকে কেন্দ্র করে যখন বিশ্বপরিস্থিতি উত্তপ্ত, ঠিক তখনই ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু বৈশ্বিক জনমনে উদ্বেগ ও অশুভ সংকেতের জাল তৈরি করেছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের আক্রমণের পর এটি আরেক বড় সন্ত্রাসী হামলা। তবে ৭ অক্টোবর ও ২২ এপ্রিলের মাঝে যে মিল আছে, তারচেয়েও বড় মিল আছে তাদের প্রেক্ষাপটে। দুটি ক্ষেত্রেই নিরীহ মানুষের ওপর এই হামলা গভীরভাবে নিন্দনীয়।

এই নিন্দনীয় ঘটনার শিকড় আরো বেশি নিন্দনীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থায় নিহিত- যে রাজনৈতিক ব্যবস্থা স্বাধীনতা হরণের সঙ্গে সম্পর্কিত, যার রাজনৈতিক নাম দখলদারিত্বমূলক উপনিবেশ। আর এখানেই মিল কেবল ৭ অক্টোবর ও ২২ এপ্রিলের হামলায় নয়, আরো বেশি মিল গাজায় ও কাশ্মিরে, ইসরায়েলে ও ভারতে এবং নেতানিয়াহু ও মোদীতে।

ফিলিস্তিন ও কাশ্মিরের অধিবাসী উভয়েরই ভাগ্য বিপর্যয়ের শুরু ১৯৪৭-৪৮ থেকে। উভয়েই বিশ্বাসঘাতকতার শিকার- একদিকে ইসরায়েল ও অন্যদিকে ভারত কর্তৃক। অথচ শুরুতে ইসরায়েল ও ভারতের মাঝে পার্থক্য ছিল বিপরীত দুই মেরুর মতো- ইসরায়েল পতনোন্মুখ সাম্রাজ্যবাদের একটি সহিংস প্রকল্প, অন্যদিকে ভারত ঔপনিবেশিকতার বিরুদ্ধে দীর্ঘ সংগ্রামের পর একটি স্বাধীন রাষ্ট্র। কিন্তু দখলদারিত্বমূলক ঔপনিবেশিকতার স্বার্থ ধীরে ধীরে তাদেরকে যেভাবে ঘনিষ্ঠ ও আত্মার আত্মীয় করে তুলছে তা অবিশ্বাস্য হলেও সত্য।

১৯৪৭-এ যখন জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিদের জন্য পাশাপাশি দুটি রাষ্ট্র সৃষ্টির প্রস্তাব পাশ হয়, ভারত তখন অল্প কিছু অমুসলিম দেশের মধ্যে একটি ছিল যে এই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভোট দেয়। প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী তার আমলে ইসরায়েলকে বলেছিলেন ‘আক্রমণকারী জাতিরাষ্ট্র’ ও তাদের ‘দখলকৃত এলাকা ছেড়ে দেয়ার’ দাবি করেছিলেন।

স্বাধীন ভারতের ইতিহাস ছিল অধিকৃত ফিলিস্তিনের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান গ্রহণের। কিন্তু ভারতের নিজেরই ছিল ফিলিস্তিনের মতো আরেক অধিকৃত অঞ্চল- কাশ্মির। স্বাধীনতা লাভে ইচ্ছুক কাশ্মিরকে পাকাপোক্তভাবে দখলে রাখার উদ্দেশ্য থেকেই ইসরায়েলের সঙ্গে গোপনে তার সখ্য গড়ে উঠতে থাকে। ১৯৯৯ সালে কাশ্মিরকে কেন্দ্র করে পাকিস্তানের সঙ্গে তার যুদ্ধপরিস্থিতিতে ইসরায়েল অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে ভারতকে সহায়তা করে।

২০১৪ সালে নরেদ্র মোদী ভারতের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর ভারত-ইসরায়েলের সখ্য প্রকাশ্য ও নাটকীয় রূপ নিতে শুরু করে।

‘ভারতীয় আমেরিকান মুসলিম কাউন্সিল’-এর গণমাধ্যম ও যোগাযোগ বিভাগের সহযোগী পরিচালক সাফা আহমেদ ‘জ্যাকোবিন’ সাময়িকীতে একটি প্রবন্ধে (হোয়াই ফার-রাইট হিন্দুস লাভ ডেমোনাইজিং প্যালেস্টিনিয়ানস, ১৫ নভেম্বর ২০২৩) লিখেছেন, “প্রতিপক্ষকে দমন করতে হিন্দুত্ববাদও জায়নবাদের খেলার কৌশল আয়ত্ত করতে শুরু করেছে …।”

টাইম সাময়িকীতে (নভেম্বর ১৭, ২০২৩) ‘হাউ ইন্ডিয়া বিকেইম প্রো-ইসরায়েল’ শীর্ষক লেখায় নিকোলাস ব্ল্যারেল প্রকাশ করেছেন, বর্তমানে ভারত ইসরায়েলি অস্ত্রশস্ত্রের সবচেয়ে বড় বিদেশি খদ্দের।

তবে এরচেয়েও বেশি আশ্চর্যজনক বিষয়ের উন্মোচন ঘটেছে লন্ডনের প্লুটো প্রেস কর্তৃক প্রকাশিত আজাদ এশার সাম্প্রতিক ‘হোস্টাইল হোমল্যান্ডস: দ্য নিউ অ্যালায়ান্স বিটুইন ইন্ডিয়া অ্যান্ড ইসরায়েল’ বইটিতে। এ বিষয়ে প্লুটো প্রেস আয়োজিত একটি পডকাস্টের সূচনায় বলা হয়েছে, “ভারত একসময় প্রকাশ্যে বর্ণবাদ হিসেবে জায়নবাদের বিরোধিতা করলেও সময় বদলে গেছে এবং ইসরায়েল রাষ্ট্র পরিণত হয়েছে ভারতের পররাষ্ট্রনীতির দিকনির্দেশকে। নীতিতে ও কর্মে ইসরায়েলকে অনুকরণ করে ভারতের সাম্প্রতিক কাশ্মির-সংযুক্তি বেশি বেশি করে পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের দখলবাদী ঔপনিবেশিক প্রকল্পের অনুসরণ। এ দুই রাষ্ট্রের এই আদর্শিক ও রাজনৈতিক সংযোগ আশঙ্কাজনক, তাদের জাতিরাষ্ট্রীয় আদর্শিক মিল গভীরভাবে সংযুক্ত।”

ভারত ও ইসরায়েলের এই ক্রমাগত আদর্শিক সমাপতন নিয়ে পঙ্কজ মিশ্র ২০১৭ সালে ‘ইন্ডিয়া অ্যান্ড ইসরায়েল: অ্যান আইডিওলোজিক্যাল কনভারজেন্স’ শীর্ষক প্রবন্ধে লিখেছেন, “১৯৭৭ থেকে ১৯৮৯ সালের এক দশকে ইসরায়েলে লিকুদ এবং ভারতে বিজেপি দেশ দুটির রাজনৈতিক সংস্কৃতি পাল্টে দেয়।”

তিনি লিখেছেন, “১৯৯০ সালে উভয় দেশই আরো গভীর অর্থনৈতিক ও মতাদর্শিক সখ্যতা তৈরি করে- ব্যক্তিগত সম্পত্তি অর্জনের নয়া উদারনৈতিক ধারণাকে আঁকড়ে ধরার মাধ্যমে অন্তর্ভুক্তিমূলক সমৃদ্ধি ও সমতার আদর্শকে বিসর্জন দিয়ে। এই প্রক্রিয়া এখন সম্পূর্ণ। নরেন্দ্র মোদী এখন ভারতের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী প্রধানমন্ত্রী যখন তার গুজরাট হামলার শিকার হাজার হাজার মুসলমান শরণার্থী এখনও বাড়ি ফিরতে ভয় পাচ্ছে। হিন্দু জাতীয়তাবাদীদের সর্দার সাভারকারের ছবি এখন ভারতের সংসদে ঝুলছে যে সাভারকার ১৯৪৮-এ গান্ধী হত্যার ষড়যন্ত্রকারীদের একজন। ২০১৫ সালে নেতানিয়াহু যখন পুনরায় প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন, মোদী তখন হিব্রু ভাষায় তার বন্ধুকে অভিনন্দন জানিয়ে টুইট করেন।”

২০২৩ সালে ইসরায়েলে হামাসের আক্রমণের পরপরই নরেন্দ্র মোদী বার্তা দেন যে, তিনি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইসরায়েলের পাশে আছেন। আবার প্রায় ১৯ মাস পর এই বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু তার বন্ধুকে তেমন বার্তাই ফেরত দিলেন এভাবে, “আমার প্রিয় বন্ধু নরেন্দ্র মোদী, জম্মু ও কাশ্মিরের পেহেলগামে এই বর্বরোচিত সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় কয়েক ডজন নিরীহ মানুষের মৃত্যুতে ও আহত হওয়ার ঘটনায় আমি গভীরভাবে শোকাহত। আমাদের ভাবনা ও প্রার্থনা তাদের ও তাদের পরিবারের প্রতি। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইসরায়েল ভারতের সঙ্গে আছে।”

শেষ বাক্যটি বাদে খুবই মানবিক এই বার্তা। গাজায় খুন করে চলা অর্ধলক্ষ মানুষের জন্য এই গভীর শোকের ছাব্বিশ ভাগ দূরে থাক, এক হাজার ভাগের এক ভাগও যদি নেতানিয়াহু অনুভব করতেন! আর নরেন্দ্র মোদী যদি খানিকটা অনুভব করতেন, ২০০২-এ গুজরাটে খুন হওয়া দুই হাজার নিরীহ মানুষের প্রতি! অরুন্ধতী রায় মোদীর উত্থান সম্পর্কে লিখেছেন, “মোদীর রাজনৈতিক জীবনের উলম্ফন ঘটে ২০০১ সালের অক্টোবরে, যুক্তরাষ্ট্রে ৯/১১-এর হামলার কয়েক সপ্তাহ পরই, যখন বিজেপি গুজরাট রাজ্যে তাদের নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রীকে সরিয়ে মোদীকে ক্ষমতায় বসায়।” তার ৫ মাসের মধ্যেই ঘটে এক ঘৃণ্য ও রহস্যময় অগ্নিসংযোগের ঘটনা যাতে ৫৯ জন হিন্দু তীর্থযাত্রীকে ট্রেনে পুড়িয়ে মারা হয়। তারই প্রতিশোধ হিসেবে ঘটানো হয় গুজরাট গণহত্যা।” (ইন্ডিয়া: ইন্টিমেশনস অব অ্যান এন্ডিং, দ্য নেশন, জানুয়ারি ১৩/২০, ২০২০)

ট্রাম্প ও ইলন মাস্কের একাধিপত্যের যুগে মোদী ও নেতানিয়াহুর বার্তা বিনিময় বিশ্বজুড়ে এক ভয়ঙ্কর ভবিষ্যতের ইঙ্গিত বহন করছে। এখন কমবেশি সবাই জানে, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ- এই শব্দগুচ্ছ এক ভয়ঙ্কর নীলনকশার সারসংক্ষেপ। যা ধ্বংস করেছে আফগানিস্তান, ইরাক, লিবিয়া, মিশর ও সিরিয়াকে। যার ফল চলমান গাজার গণহত্যায় এবং যা থাবা বাড়িয়ে রেখেছে ইরানের দিকে।সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের নামে পাতা রাজনৈতিক দাবার ছক বিস্তৃত হচ্ছে কাশ্মিরের।

পেহেলগামে সংঘটিত সন্ত্রাসী হামলা নিয়ে বেশকিছু প্রশ্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে উঠে এসেছে। তার মধ্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি হচ্ছে এই হামলার তথ্য ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর কাছে ছিল। তবুও তারা নির্বিকার ছিল কেন? অতএব, লক্ষণীয় যে, মোদীর নেতৃত্বে ভারতের বিজেপি সরকার এই হামলাকে কীভাবে ও কতখানি পুঁজি করে, কাশ্মিরের স্বাধীনতাকামী জনগণের ওপর কী নীলনকশা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়।

এখন ভরসা কেবল জাতিসংঘ। যে প্রসঙ্গে নিউ ইয়র্ক টাইমস পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বক্তব্যের বরাত দিয়ে ২০১৯-এর ২ অক্টোবর প্রকাশ করেছিল, জাতিসংঘ কাশ্মিরকে আর ফেলে রাখতে পারে না।

অরুন্ধতী রায়ের কথায়-তারা যদি স্বাধীনতা চায় স্বাধীনতাই প্রাপ্য। কাশ্মিরের জনগণকে প্রতারিত করতে না চাইলে ভারত ও পাকিস্তান-বিবাদমান এই দুই রাষ্ট্রের কাছে আর কোনো বিকল্প নেই।

পেহেলগাম হামলার সন্দেহভাজন হামলাকারীদের বাড়িঘর গুঁড়িয়ে দিচ্ছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। ছবি: রয়টার্স
গাজার গণহত্যা, কাশ্মিরের কান্না: রাজনৈতিক দাবার ছক
আলমগীর খান :
ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যাকে কেন্দ্র করে যখন বিশ্বপরিস্থিতি উত্তপ্ত, ঠিক তখনই ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু বৈশ্বিক জনমনে উদ্বেগ ও অশুভ সংকেতের জাল তৈরি করেছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের আক্রমণের পর এটি আরেক বড় সন্ত্রাসী হামলা। তবে ৭ অক্টোবর ও ২২ এপ্রিলের মাঝে যে মিল আছে, তারচেয়েও বড় মিল আছে তাদের প্রেক্ষাপটে। দুটি ক্ষেত্রেই নিরীহ মানুষের ওপর এই হামলা গভীরভাবে নিন্দনীয়।

এই নিন্দনীয় ঘটনার শিকড় আরো বেশি নিন্দনীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থায় নিহিত- যে রাজনৈতিক ব্যবস্থা স্বাধীনতা হরণের সঙ্গে সম্পর্কিত, যার রাজনৈতিক নাম দখলদারিত্বমূলক উপনিবেশ। আর এখানেই মিল কেবল ৭ অক্টোবর ও ২২ এপ্রিলের হামলায় নয়, আরো বেশি মিল গাজায় ও কাশ্মিরে, ইসরায়েলে ও ভারতে এবং নেতানিয়াহু ও মোদীতে।

ফিলিস্তিন ও কাশ্মিরের অধিবাসী উভয়েরই ভাগ্য বিপর্যয়ের শুরু ১৯৪৭-৪৮ থেকে। উভয়েই বিশ্বাসঘাতকতার শিকার- একদিকে ইসরায়েল ও অন্যদিকে ভারত কর্তৃক। অথচ শুরুতে ইসরায়েল ও ভারতের মাঝে পার্থক্য ছিল বিপরীত দুই মেরুর মতো- ইসরায়েল পতনোন্মুখ সাম্রাজ্যবাদের একটি সহিংস প্রকল্প, অন্যদিকে ভারত ঔপনিবেশিকতার বিরুদ্ধে দীর্ঘ সংগ্রামের পর একটি স্বাধীন রাষ্ট্র। কিন্তু দখলদারিত্বমূলক ঔপনিবেশিকতার স্বার্থ ধীরে ধীরে তাদেরকে যেভাবে ঘনিষ্ঠ ও আত্মার আত্মীয় করে তুলছে তা অবিশ্বাস্য হলেও সত্য।

১৯৪৭-এ যখন জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিদের জন্য পাশাপাশি দুটি রাষ্ট্র সৃষ্টির প্রস্তাব পাশ হয়, ভারত তখন অল্প কিছু অমুসলিম দেশের মধ্যে একটি ছিল যে এই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভোট দেয়। প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী তার আমলে ইসরায়েলকে বলেছিলেন ‘আক্রমণকারী জাতিরাষ্ট্র’ ও তাদের ‘দখলকৃত এলাকা ছেড়ে দেয়ার’ দাবি করেছিলেন।

স্বাধীন ভারতের ইতিহাস ছিল অধিকৃত ফিলিস্তিনের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান গ্রহণের। কিন্তু ভারতের নিজেরই ছিল ফিলিস্তিনের মতো আরেক অধিকৃত অঞ্চল- কাশ্মির। স্বাধীনতা লাভে ইচ্ছুক কাশ্মিরকে পাকাপোক্তভাবে দখলে রাখার উদ্দেশ্য থেকেই ইসরায়েলের সঙ্গে গোপনে তার সখ্য গড়ে উঠতে থাকে। ১৯৯৯ সালে কাশ্মিরকে কেন্দ্র করে পাকিস্তানের সঙ্গে তার যুদ্ধপরিস্থিতিতে ইসরায়েল অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে ভারতকে সহায়তা করে।

২০১৪ সালে নরেদ্র মোদী ভারতের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর ভারত-ইসরায়েলের সখ্য প্রকাশ্য ও নাটকীয় রূপ নিতে শুরু করে।

‘ভারতীয় আমেরিকান মুসলিম কাউন্সিল’-এর গণমাধ্যম ও যোগাযোগ বিভাগের সহযোগী পরিচালক সাফা আহমেদ ‘জ্যাকোবিন’ সাময়িকীতে একটি প্রবন্ধে (হোয়াই ফার-রাইট হিন্দুস লাভ ডেমোনাইজিং প্যালেস্টিনিয়ানস, ১৫ নভেম্বর ২০২৩) লিখেছেন, “প্রতিপক্ষকে দমন করতে হিন্দুত্ববাদও জায়নবাদের খেলার কৌশল আয়ত্ত করতে শুরু করেছে …।”

টাইম সাময়িকীতে (নভেম্বর ১৭, ২০২৩) ‘হাউ ইন্ডিয়া বিকেইম প্রো-ইসরায়েল’ শীর্ষক লেখায় নিকোলাস ব্ল্যারেল প্রকাশ করেছেন, বর্তমানে ভারত ইসরায়েলি অস্ত্রশস্ত্রের সবচেয়ে বড় বিদেশি খদ্দের।

তবে এরচেয়েও বেশি আশ্চর্যজনক বিষয়ের উন্মোচন ঘটেছে লন্ডনের প্লুটো প্রেস কর্তৃক প্রকাশিত আজাদ এশার সাম্প্রতিক ‘হোস্টাইল হোমল্যান্ডস: দ্য নিউ অ্যালায়ান্স বিটুইন ইন্ডিয়া অ্যান্ড ইসরায়েল’ বইটিতে। এ বিষয়ে প্লুটো প্রেস আয়োজিত একটি পডকাস্টের সূচনায় বলা হয়েছে, “ভারত একসময় প্রকাশ্যে বর্ণবাদ হিসেবে জায়নবাদের বিরোধিতা করলেও সময় বদলে গেছে এবং ইসরায়েল রাষ্ট্র পরিণত হয়েছে ভারতের পররাষ্ট্রনীতির দিকনির্দেশকে। নীতিতে ও কর্মে ইসরায়েলকে অনুকরণ করে ভারতের সাম্প্রতিক কাশ্মির-সংযুক্তি বেশি বেশি করে পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের দখলবাদী ঔপনিবেশিক প্রকল্পের অনুসরণ। এ দুই রাষ্ট্রের এই আদর্শিক ও রাজনৈতিক সংযোগ আশঙ্কাজনক, তাদের জাতিরাষ্ট্রীয় আদর্শিক মিল গভীরভাবে সংযুক্ত।”

ভারত ও ইসরায়েলের এই ক্রমাগত আদর্শিক সমাপতন নিয়ে পঙ্কজ মিশ্র ২০১৭ সালে ‘ইন্ডিয়া অ্যান্ড ইসরায়েল: অ্যান আইডিওলোজিক্যাল কনভারজেন্স’ শীর্ষক প্রবন্ধে লিখেছেন, “১৯৭৭ থেকে ১৯৮৯ সালের এক দশকে ইসরায়েলে লিকুদ এবং ভারতে বিজেপি দেশ দুটির রাজনৈতিক সংস্কৃতি পাল্টে দেয়।”

তিনি লিখেছেন, “১৯৯০ সালে উভয় দেশই আরো গভীর অর্থনৈতিক ও মতাদর্শিক সখ্যতা তৈরি করে- ব্যক্তিগত সম্পত্তি অর্জনের নয়া উদারনৈতিক ধারণাকে আঁকড়ে ধরার মাধ্যমে অন্তর্ভুক্তিমূলক সমৃদ্ধি ও সমতার আদর্শকে বিসর্জন দিয়ে। এই প্রক্রিয়া এখন সম্পূর্ণ। নরেন্দ্র মোদী এখন ভারতের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী প্রধানমন্ত্রী যখন তার গুজরাট হামলার শিকার হাজার হাজার মুসলমান শরণার্থী এখনও বাড়ি ফিরতে ভয় পাচ্ছে। হিন্দু জাতীয়তাবাদীদের সর্দার সাভারকারের ছবি এখন ভারতের সংসদে ঝুলছে যে সাভারকার ১৯৪৮-এ গান্ধী হত্যার ষড়যন্ত্রকারীদের একজন। ২০১৫ সালে নেতানিয়াহু যখন পুনরায় প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন, মোদী তখন হিব্রু ভাষায় তার বন্ধুকে অভিনন্দন জানিয়ে টুইট করেন।”

২০২৩ সালে ইসরায়েলে হামাসের আক্রমণের পরপরই নরেন্দ্র মোদী বার্তা দেন যে, তিনি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইসরায়েলের পাশে আছেন। আবার প্রায় ১৯ মাস পর এই বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু তার বন্ধুকে তেমন বার্তাই ফেরত দিলেন এভাবে, “আমার প্রিয় বন্ধু নরেন্দ্র মোদী, জম্মু ও কাশ্মিরের পেহেলগামে এই বর্বরোচিত সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় কয়েক ডজন নিরীহ মানুষের মৃত্যুতে ও আহত হওয়ার ঘটনায় আমি গভীরভাবে শোকাহত। আমাদের ভাবনা ও প্রার্থনা তাদের ও তাদের পরিবারের প্রতি। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইসরায়েল ভারতের সঙ্গে আছে।”

শেষ বাক্যটি বাদে খুবই মানবিক এই বার্তা। গাজায় খুন করে চলা অর্ধলক্ষ মানুষের জন্য এই গভীর শোকের ছাব্বিশ ভাগ দূরে থাক, এক হাজার ভাগের এক ভাগও যদি নেতানিয়াহু অনুভব করতেন! আর নরেন্দ্র মোদী যদি খানিকটা অনুভব করতেন, ২০০২-এ গুজরাটে খুন হওয়া দুই হাজার নিরীহ মানুষের প্রতি! অরুন্ধতী রায় মোদীর উত্থান সম্পর্কে লিখেছেন, “মোদীর রাজনৈতিক জীবনের উলম্ফন ঘটে ২০০১ সালের অক্টোবরে, যুক্তরাষ্ট্রে ৯/১১-এর হামলার কয়েক সপ্তাহ পরই, যখন বিজেপি গুজরাট রাজ্যে তাদের নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রীকে সরিয়ে মোদীকে ক্ষমতায় বসায়।” তার ৫ মাসের মধ্যেই ঘটে এক ঘৃণ্য ও রহস্যময় অগ্নিসংযোগের ঘটনা যাতে ৫৯ জন হিন্দু তীর্থযাত্রীকে ট্রেনে পুড়িয়ে মারা হয়। তারই প্রতিশোধ হিসেবে ঘটানো হয় গুজরাট গণহত্যা।” (ইন্ডিয়া: ইন্টিমেশনস অব অ্যান এন্ডিং, দ্য নেশন, জানুয়ারি ১৩/২০, ২০২০)

ট্রাম্প ও ইলন মাস্কের একাধিপত্যের যুগে মোদী ও নেতানিয়াহুর বার্তা বিনিময় বিশ্বজুড়ে এক ভয়ঙ্কর ভবিষ্যতের ইঙ্গিত বহন করছে। এখন কমবেশি সবাই জানে, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ- এই শব্দগুচ্ছ এক ভয়ঙ্কর নীলনকশার সারসংক্ষেপ। যা ধ্বংস করেছে আফগানিস্তান, ইরাক, লিবিয়া, মিশর ও সিরিয়াকে। যার ফল চলমান গাজার গণহত্যায় এবং যা থাবা বাড়িয়ে রেখেছে ইরানের দিকে।সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের নামে পাতা রাজনৈতিক দাবার ছক বিস্তৃত হচ্ছে কাশ্মিরের।

পেহেলগামে সংঘটিত সন্ত্রাসী হামলা নিয়ে বেশকিছু প্রশ্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে উঠে এসেছে। তার মধ্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি হচ্ছে এই হামলার তথ্য ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর কাছে ছিল। তবুও তারা নির্বিকার ছিল কেন? অতএব, লক্ষণীয় যে, মোদীর নেতৃত্বে ভারতের বিজেপি সরকার এই হামলাকে কীভাবে ও কতখানি পুঁজি করে, কাশ্মিরের স্বাধীনতাকামী জনগণের ওপর কী নীলনকশা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়।

এখন ভরসা কেবল জাতিসংঘ। যে প্রসঙ্গে নিউ ইয়র্ক টাইমস পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বক্তব্যের বরাত দিয়ে ২০১৯-এর ২ অক্টোবর প্রকাশ করেছিল, জাতিসংঘ কাশ্মিরকে আর ফেলে রাখতে পারে না।

অরুন্ধতী রায়ের কথায়-তারা যদি স্বাধীনতা চায় স্বাধীনতাই প্রাপ্য। কাশ্মিরের জনগণকে প্রতারিত করতে না চাইলে ভারত ও পাকিস্তান-বিবাদমান এই দুই রাষ্ট্রের কাছে আর কোনো বিকল্প নেই।