ক্রীড়া ডেস্ক: মাঠে বল গড়ানোর অনেক আগে অ্যানফিল্ডের বাইরে ভিড় করলেন হাজারো ‘অল রেড’ সমর্থক। শিরোপার হাতছানিতে সে কী উচ্ছ্বাস সবার চোখেমুখে। ম্যাচ শুরু হতেই অবশ্য সেই উল্লাসে কিছুটা ভাটা পড়ল। তবে এই লিভারপুল দলটি তো ভিন্ন ধাঁচে গড়া, যাদের আটকানোর সাধ্য হয়নি টটেনহ্যাম হটস্পারের। দাপুটে ফুটবলে ঘুরে দাঁড়িয়ে, পুরোটা সময় আধিপত্য করেই উৎসব শুরু করে চ্যাম্পিয়ন হলো লিভারপুল। চার ম্যাচ হাতে রেখে মুকুট পুনরুদ্ধার নিশ্চিত করতে একটি পয়েন্ট হলেই চলতো লিভারপুলের। তবে সেই ভাবনাকে যেন প্রশ্রয়ই দিল না দলটি। প্রিমিয়ার লিগে রোববারের ম্যাচটি ৫-১ গোলে জিতল তারা।
দমিনিক সোলাঙ্কির গোলে পিছিয়ে পড়ে যেন তেতে ওঠে লিভারপুল। শুরু করে একের পর এক গোল; একে একে টটেনহ্যামের জালে বল পাঠান লুইস দিয়াস, আলেক্সিস মাক আলিস্তের, কোডি হাকপো ও মোহামেদ সালাহ।
ইংলিশ ফুটবলের শীর্ষ লিগে কয়েক দশক ধরে লিভারপুল আধিপত্য করলেও, প্রিমিয়ার লিগ নামকরণের পর থেকে এর শিরোপা খরা শুরু হয় দলটির। ৩০ বছরের অপেক্ষা ঘুচিয়ে অবশেষে ২০১৯-২০ মৌসুমে প্রথমবারের মতো প্রিমিয়ার লিগ সংস্করণে চ্যাম্পিয়ন হয় তারা। পরের চার মৌসুমে টানা জিতে প্রথম দল হিসেবে টানা চারবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ইতিহাস গড়ে ম্যানচেস্টার সিটি। এবার তাদের আধিপত্যের ইতি টানল আর্না স্লটের দল।
ইংলিশ ফুটবলের শীর্ষ প্রতিযোগিতায় এই নিয়ে মোট ২০ বার চ্যাম্পিয়ন হলো লিভারপুল। স্পর্শ করল আগে থেকে রেকর্ড চ্যাম্পিয়ন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে। চার ম্যাচ বাকি থাকতে চ্যাম্পিয়ন হয়ে যাওয়া লিভারপুলের ২৫ জয় ও ৭ ড্রয়ে পয়েন্ট ৮২। সমান ৩৪ ম্যাচে ৬৭ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে আর্সেনাল। ঘরের মাঠে প্রথম ১০ মিনিটেই কয়েকটি আক্রমণ শাণায় লিভারপুল। যদিও গোলের জন্য চারটি শট নিয়ে একটিও লক্ষ্যে রাখতে পারেনি তারা। এরপরই, দ্বাদশ মিনিটে প্রথম প্রচেষ্টাতেই এগিয়ে যায় টটেনহ্যাম। কর্নারে নিখুঁত হেডে অ্যানফিল্ডকে স্তব্ধ করে দেন সোলাঙ্কি। পাল্টা জবাব দিতে অবশ্য একদমই দেরি করেনি লিভারপুল।
দোমিনিক সোবোসলাইয়ের পাস গোলমুখে পেয়ে জালে ঠেলে দেন কলম্বিয়ার ফরোয়ার্ড দিয়াস। শুরতে অবশ্য অফসাইডের পতাকা তুলেছিলেন লাইন্সম্যান, তবে ভিএআরে সিদ্ধান্ত পাল্টালে আবার জেগে ওঠে অ্যানফিল্ড। দুই মিনিট পর এবার কাছ থেকে জালে বল পাঠান কোডি হাকপো, তবে তার আগে পরিষ্কার অফসাইডে ছিলেন সালাহ। লিভারপুলের এগিয়ে যেতে অবশ্য দেরি হয়নি। ২৪তম মিনিটে টটেনহ্যাম নিজেদের সীমানায় পজেশন হারালে, ডি-বক্সের বাইরে থেকে জোরাল শটে দলকে এগিয়ে নেন আর্জেন্টাইন মিডফিল্ডার মাক আলিস্তের। ৩৪তম মিনিটে ব্যবধান বাড়িয়ে শিরোপার পথে আরও এগিয়ে যায় লিভারপুল। এবার কর্নারের পর প্রতিপক্ষের থেকে আসা বল পেয়ে ডি-বক্সে অনেকের ভিড়ের মধ্য দিয়ে শটে গোলটি করেন ডাচ ফরোয়ার্ড হাকপো।
দ্বিতীয়ার্ধেও একইরকম চাপ ধরে রাখা লিভারপুল ৬৩তম মিনিটে ব্যবধান আরও বাড়ায়। প্রতিপক্ষের একটি আক্রমণ রুখে দিয়ে ওঠা পাল্টা আক্রমণে; সোবোসলাইয়ের পাস ধরে ডি-বক্সে জায়গা বানিয়ে নিচু শটে কাছের পোস্ট দিয়ে গোলটি করেন সালাহ। চলতি আসরে মিশরের স্ট্রাইকারের গোল হলো ২৮টি, তার চেয়ে পাঁচ গোল কম নিয়ে তালিকার দুইয়ে আলেকসান্দার ইসাক। ৬৯তম মিনিটে প্রতিপক্ষের আরেকটি আক্রমণ ঠেকাতে গিয়ে আত্মঘাতী হয়ে পড়েন টটেনহ্যামের ইতালিয়ান ডিফেন্ডার ডেস্টিনি উডোগে। এরপর কেবলই যেন শেষের অপেক্ষা।
এবং শেষের বাঁশি বাজতেই শুরু হয়ে যায় সালাহ-ফন ডাইক-মাক আলিস্তেরদের নেচেগেয়ে উৎসব, সবার গায়ে তখন চ্যাম্পিয়ন ২০২৪-২৫ লেখা জার্সি। ইয়ুর্গেন ক্লপের উত্তরসূরি হিসেবে গত জুনে লিভারপুলের দায়িত্ব নিয়ে, প্রথম মৌসুমেই প্রিমিয়ার লিগ শিরোপার স্বাদ পেলেন ডাচ কোচ আর্না স্লট। খেলোয়াড়দের সঙ্গে তার উদযাপনও ছিল দেখার মতো।