আজাদুর রহমান, বগুড়া: দেশে গুমের শিকার হয়ে দীর্ঘদিন ধরে নিখোঁজ থাকা ৩৩০ জনের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ক্ষীণ বলে জানিয়েছেন গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত বিচারক মইনুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘গুমের শিকার হয়ে ফিরে না আসা ৩৩০ জন ব্যক্তির অবস্থান বা ভাগ্য সম্পর্কে অনুসন্ধান চলমান আছে। যেখানে বিভিন্ন জায়গা থেকে বন্দিদের জিজ্ঞাসাবাদের নামে নির্যাতন করা হতো। রাজধানীর গুলশানে কমিশনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান তিনি। পরবর্তীতে অনুসন্ধানে উঠে আসে বগুড়া পুলিশ লাইন্সের গোপন বন্দীশালার অন্যতম দায়িত্বে ছিলেন তৎকালীন জেলা গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) ইনচার্জ নূর-ই আলম সিদ্দিকী। বর্তমানে তিনি বগুড়া পুলিশ হাসপাতালের ইনচার্জ হিসেবে কর্মরত আছেন।
তৎকালীন বিভিন্ন নিরপরাধ মানুষকে তুলে এনে গোপন বন্দিশালায় পাশবিক নির্যাতনের মাধ্যমে ইনকাউন্টারের হুমকি দিতেন, কোন পথ খুঁজে না পেয়ে ভিকটিমের পরিবার থেকে সয়সম্বল বিক্রিসহ সুদের বিনিময়ে টাকা নিয়ে এসে নুর ই আলমের হাতে দিতেন।
জন্ম সিরাজগঞ্জ জেলায় হলেও পাশের জেলা বগুড়ায় বিভিন্ন সোর্স তৈরি করেছিলেন। শহরের বিভিন্ন হোটেল, কলকারখানা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিতেন। হাতিয়া নেওয়া এই টাকা থেকেই জায়গা কিনেছেন শহরের সূত্রাপুর এলাকায়, সেখানে করেছেন বহুতল বিলাসবহুল ভবন। ইতোমধ্যেই গুমের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে বগুড়ার সাবেক ও বর্তমান চার পুলিশ কর্মকর্তাসহ ১৭ জনের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সরকার।
বগুড়ার সাবেক ও বর্তমান অভিযুক্তরা হলেন বগুড়ার সাবেক এসপি মো. আলী আশরাফ ভূঁইয়া। সাবেক অ্যাডিশনাল এসপি মো. আরিফুর রহমান মন্ডল, ডিবির সাবেক ওসি নুর ই আলম সিদ্দিকী, ডিবির সাবেক সাব-ইন্সপেক্টর মো. জুলহাস উদ্দিন।
অনুসন্ধানের পাওয়া যায়, জেলা গোয়েন্দা শাখার সাবেক ইনচার্জ নূর ই আলম সিদ্দিকী তৎকালীন সময়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করে শহরের সূত্রাপুর এলাকায় পৌর আইনের নিয়ম নীতি তোয়াক্কা না করে রাজনৈতিক ব্যাক্তিদের সাথে সক্ষতা তৈরি করে ৯তলা বহুতল ভবন নির্মাণ করেছেন। স্থানীয়রা পৌরসভায় অভিযোগ করেও কোন ফলাফল পাননি। উল্টো হুমকি ধামকি দিয়ে তাদের থামিয়ে অভিযোগ গায়ের করেছেন।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, বাসাটা নূর-ই আলম সিদ্দিকীর। পরে বাসার কেয়ারটেকার জানান, ভবনটি নূর-ই আলম সিদ্দিকীর ভাইয়ের বলে স্বীকার করেন।
নূর-ই আলম সিদ্দিকীর মুঠোফোন বন্ধ থাকায় তার স্ত্রীর সাথে দেখা করার চেষ্টা করলে প্রথমে দেখা করতে চাইলেও পরে ব্যাস্ততা দেখিয়ে ফিরে আসার কথা জানান। এ বিষয়ে ইন্সপেক্টর নূর ই আলম সিদ্দিকীর মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দিলেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
জোড়া খুন ও ধর্ষণচেষ্টা মামলায় একজনের ফাঁসি
বরগুনায় এক নারীকে ধর্ষণের চেষ্টাকালে দুই শিশু সন্তান বাধা দেওয়ায় তাদের হত্যা করার অভিযোগে আসামি মো. ইলিয়াচ পহলানকে (৩৪) ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত। এর পাশাপাশি তাকে দুই ধাপে ১০ বছর করে ২০ বছরের সশ্রম কারাদন্ড ও দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। রবিবার (২৭ এপ্রিল) দুপুরে বরগুনা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল এর বিচারক বেগম লায়লাতুল ফেরদৌস এ আদেশ দেন। রায় ঘোষণার সময় আসামি আদালতের কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন। বিষয়টি নিশ্চিত করে বরগুনা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল এর রাষ্ট্র পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট রঞ্জু আরা শিপু।
২০২৩ সালের ০৪ আগস্ট বরগুনা সদর উপজেলার পূর্ব গুদিঘাটা এলাকার ভিকটিমের বসত ঘরে আসামি ইলিয়াচ পহলান ভিকটিম এর ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধর্ষণ করার চেষ্ট করিলে রাত্র অনুমান ১.২০ মিনিট হইতে একই তারিখ রাত্র অনুমান ৪.০০ ঘটিকার মধ্যে যে কোন সময় আসামী মোঃ ইলিয়াস পহলান (৩৪), ভিকটিমের বসত ঘরে কৌশলে প্রবেশ করিয়া যৌন কামনা চরিতার্থ করার নিমিত্তে ভিকটিম কে বাপটাইয়া ধরলে সে ডাকচিৎকার দিয়ে জোরালো বাধার সৃষ্টি করে। তখন বসত ঘুমে থাকা তাইফা (৩) ও হাফিজুল (১০) এর ঘুম ভেঙে গেলে তারাও ডাকচিৎকার করতে থাকে ।আসামী ইলিয়াস উত্তেজিত হয়ে বসত ঘরে থাকা বাংলা দাও দিয়ে সকলকে হত্যার উদ্দেশ্যে এলোপাথাড়ি ভাবে কোপায়। হাফিজুল (১০) এর মাথায় ও খাঁড়ে এবং হাতের কজিতে একাধিক কোপ দিয়ে হত্যা করে। ভিকটিম রিগান (৩০) এর মাথায় ও ঘাড়ে একাধিক এবং তাইফা (৩) এর মাথায়, গালে ও হাতে একাধিক কোপ দেয়।
পরবর্তীতে ভিকটিম রিগান ও তাইফা (৩) কে মুমুর্ষ অবস্থায় স্থানীয় লোকজন অটোরিক্সা যোগে বরগুনা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে বরগুনা সদর হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বরিশাল রেফার্ড করে। বরিশালে যাওয়ার পথে তাইফা (৩) মারা যায়। ভিকটিম মুমূর্ষু অবস্থায় সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীনকালে এসআই(নি:) মনিরুজ্জামানের কাছে পুরো ঘটনাটার বর্ননা দেন। তৎপ্রেক্ষিতে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে মোঃ ইলিয়াস পহলান (৩৪), কে গ্রেফতার করে। তদন্ত শেষে পুলিশ আদালতে আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে। বরগুনা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাব্যুনাল সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ ও জেরা শেষে আসামি মোঃ ইলয়াচ পহলানের বিরুদ্ধে অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় আদালত দোষী সাব্যস্ত করে ফাঁসির আদেশ দেন। একই সঙ্গে দুই লাখ টাকা জরিমানার আদেশ দেন আদালত। এছাড়াও ভিকটিমকে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ এবং কোপানোর অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ১০ বছর করে আরো ২০ বছরের সাজা দেওয়া হয়েছে। নিহত শিশু তাইফা ভিকটিম মেয়ে,অন্য শিশুটি তার নিকটাত্মীয়। ইলিয়াস বরগুনা সদর উপজেলার পূর্ব কেওড়াবুনিয়া গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে। মামলা পরিচালনায় রাষ্ট্র পক্ষের আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট রঞ্জু আরা শিপু, আসামী পক্ষের আইনজীবী ছিলেন, অ্যাডভোকেট আহসান হাবীব স্বপন প্রমুখ।