প্রত্যাশা ডেস্ক: ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনার দিকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ। তিনি বলেছেন, পারমাণবিক শক্তিধর দুই দেশের মধ্যে পূর্ণ মাত্রার সংঘাতের আশঙ্কা নিয়ে বিশ্বকে ভাবতে হবে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম স্কাই নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মন্ত্রী সতর্ক করে বলেছেন, জম্মু ও কাশ্মিরে হামলার ঘটনায় ভারতের সঙ্গে উত্তেজনা সর্বাত্মক যুদ্ধে রূপ নিতে পারে।
ভারতশাসিত কাশ্মিরে চালানো ওই হামলায় ২৬ জন পর্যটক নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে একজন নেপালি নাগরিকও রয়েছে।
ভারত সরকার এই হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করেছে। যদিও এই দাবি ইসলামাবাদ দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করেছে এবং এটিকে ফলস ফ্ল্যাগ অপারেশন হিসেবেও অভিহিত করেছে।
খাজা আসিফ জোর দিয়ে বলেছেন, ক্রমবর্ধমান কূটনৈতিক উত্তেজনার মধ্যে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী যে কোনো পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত। ভারত যা কিছু শুরু করবে তার প্রতি আমরা আমাদের প্রতিক্রিয়া দেখাবো। যদি কোনো সর্বাত্মক আক্রমণ বা এই জাতীয় কিছু হয়, তাহলে অবশ্যই একটি সর্বাত্মক যুদ্ধ হবে। তবে, তিনি আশা প্রকাশ করেছেন যে পরিস্থিতি এখনো আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা যেতে পারে।
বিশ্ব সম্প্রদায়ের উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত কিনা জানতে চাইলে প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইতিবাচক উত্তর দেন। বলেন, দুইটি পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মধ্যে সংঘর্ষ সর্বদা উদ্বেগজনক। যদি পরিস্থিতি সেই রকম কিছু হয়, তাহলে দুঃখজনক পরিণতি আসতে পারে।
এদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি হামলার পেছনের লোকদের যে কোনো মূল্যে শাস্তি দেওয়ার কথা জানিয়েছেন। এর আগে আসিফ বলেছিলেন যে এর সঙ্গে পাকিস্তানের কোনো সম্পর্ক নেই। কারণ পাকিস্তান সব ধরণের এবং সর্বত্র সন্ত্রাসবাদকে প্রত্যাখ্যান করে। তিনি বলেছিলেন যে ভারতের উচিত পেহেলগাম ঘটনার তদন্ত করা।
পশ্চিমাদের হয়ে সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন দিয়েছিল পাকিস্তান: সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীকে মদত দেওয়ার অভিযোগ পরোক্ষভাবে স্বীকার করে নিলেনও পাকিস্তানি প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ। স্কাই নিউজকে বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, পাকিস্তান সরকার পশ্চিমাদের কথামতো সন্ত্রাসবাদী দলকে সমর্থন দেওয়ার মতো ভুল একসময় করেছিল।
সাক্ষাৎকারের শুরুতে প্রশ্নকারী কাশ্মির হামলার প্রেক্ষাপট সংক্ষেপে বর্ণনা করেন। ১৫ মিনিটের ওই সাক্ষাৎকারে মাঝের দিকে স্কাই নিউজের প্রতিনিধি জানতে চান, সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীকে মদত ও প্রশিক্ষণ দেওয়ার এক দীর্ঘ ইতিহাস পাকিস্তানের রয়েছে। আপনি কি এই বক্তব্যকে সমর্থন করেন?
এই বক্তব্যকে পরোক্ষভাবে স্বীকার করে খাজা আসিফ বলেন, আমরা দীর্ঘ তিন দশক যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যসহ পশ্চিমাদের হয়ে এসব নোংরা কাজ করেছি। তবে আমাদের সরকারের সেই ভুলের কারণেই এখনও এই অপবাদ বইতে হচ্ছে।
সন্ত্রাসবাদে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার মদত দেওয়ার ইতিহাস রয়েছে- এই অভিযোগে জবাবে আসিফ বলেন, পাকিস্তানকে দোষারোপ করা অনেক সহজ। এখনকার সন্ত্রাসীরা একসময় ওয়াশিংটনে দাওয়াত খেতে যেত। আমি মনে করি আমাদের সরকার সে সময় ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।
তিনি দাবি করেন, সোভিয়েত-আফগান যুদ্ধ এবং ৯/১১-পরবর্তী তালেবানবিরোধী যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের পাশে না দাঁড়ালে পাকিস্তানের রেকর্ড নিষ্কলুষ থাকত।
উল্লেখ্য, সোভিয়েত-আফগান যুদ্ধকালে যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে আফগান সীমান্ত দিয়ে সশস্ত্র জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ ও সহায়তা দিয়েছিল পাকিস্তান।
জড়িত থাকার অভিযোগের প্রমাণ চেয়েছে পাকিস্তান: ভারত-নিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মিরের পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলায় পাকিস্তানের জড়িত থাকার অভিযোগ নিয়ে যদি ভারতের হাতে কোনো প্রমাণ থাকে, তবে তা দেখাতে বলেছেন পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার।
গত বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের ন্যাশনাল সিকিউরিটি কমিটির সঙ্গে একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক। ইসহাক বলেন, ‘যদি পেহেলগামের ঘটনায় পাকিস্তানের জড়িত থাকার কোনো প্রমাণ থাকে, তবে দয়া করে তা আমাদের এবং পুরো বিশ্বকে দেখান।’
সংবাদ সম্মেলনে ইসহাক দারের সঙ্গে ছিলেন পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ। তিনি বলেন, পেহেলগামের ঘটনার জন্য ভারত সরাসরি পাকিস্তানের নাম নেয়নি। কিন্তু ভারতের গণমাধ্যম ও সংশ্লিষ্ট অনেকেই এ ঘটনায় পাকিস্তানকে দুষছে।