ঢাকা ০৭:০৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৫

কাশ্মির হামলায় মোদি সরকারের পাশে দাঁড়ালো বিরোধীদলগুলো

  • আপডেট সময় : ০৮:৫৮:৫৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫
  • ১৮ বার পড়া হয়েছে

ভারতে সর্বদলীয় বৈঠকে সরকার ও বিরোধী দলগুলোর নেতারা -ছবি পিটিআই

প্রত্যাশা ডেস্ক: পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর হামলা নিয়ে মোদি সরকারের পাশে দাঁড়ালো ভারতের বিরোধীদলগুলো। দুই ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলা সর্বদলীয় বৈঠকের পর বিরোধী নেতা রাহুল গান্ধী বলেন, সরকার যে কোনো অ্যাকশন নিতে পারে। বিরোধীরা সরকারকে সম্পূর্ণভাবে সমর্থন করবে।

রাহুল বলেছেন, সব দলের নেতারা ঘটনার নিন্দা করেছেন। বিরোধীরা সরকারকে পুরো সমর্থন করে বলেছে, তারা যে কোনো পদক্ষেপ নিতে পারে, আমরা পাশে থাকবো।

কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে বলেছেন, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। সব দল সমানভাবে পেহেলগামের হামলার নিন্দা করেছে। সব দল বলেছে, কাশ্মিরে শান্তি বজায় রাখা দরকার। সরকার জানিয়েছে, তারা শান্তি বজায় রাখতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেবে।

জম্মু ও কাশ্মিরের পেহেলগামে এক হামলায় ২৬ পর্যটক নিহত হওয়ার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। এরই মধ্যে দেশ দুইটি একে ওপরের ওপর পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপ নিয়েছে।

ভারত শুরুতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একগুচ্ছ ব্যবস্থা গ্রহণের ঘোষণা দেয়, যার মধ্যে রয়েছে পাকিস্তানি দক্ষ কর্মী ও কূটনীতিকদের জন্য বিশেষ ভিসা স্থগিত করা।

বৃহস্পতিবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, রোববার থেকে পাকিস্তানি নাগরিকদের জন্য জারি করা মেডিকেল ভিসাসহ সকল ভিসা বাতিল করা হবে।

ভারত আরো জানিয়েছে, সংশোধিত সময়সীমারভিত্তিতে বর্তমানে ভারতে থাকা পাকিস্তানিদের ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই দেশ ত্যাগ করতে হবে। ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিস্রি বলেছেন, হামলার উৎস যে সীমান্তের ওপারে তা একটি বিশেষ নিরাপত্তা বৈঠকে নিশ্চিত করা হয়েছে।

ভারত আরো কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে কূটনৈতিক কর্মীদের সংখ্যা কমানো এবং বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় সই হওয়া সিন্ধু নদীর ঐতিহাসিক পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত করা।

এর প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তান বৃহস্পতিবার সব ভারতীয় মালিকানাধীন বা ভারত-পরিচালিত বিমান সংস্থার জন্য তার আকাশসীমা বন্ধ করে দেয় এবং ভারতের সঙ্গে সমস্ত বাণিজ্য স্থগিত করে। তৃতীয় যে কোনো দেশ থেকে ভারতে আসা এবং বা পাকিস্তান হয়ে ভারতে যাওয়া বিমানের জন্যও এই ব্যবস্থা কার্যকর হবে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, নয়াদিল্লি সব পাকিস্তানি সামরিক কূটনীতিকদের জন্য পারসনা নন গ্রাটা (অবাঞ্ছিত) নোট দূতাবাসের কাছে হস্তান্তর করেছে।

এর প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তানও ইসলামাবাদে ভারতীয় দূতাবাসের প্রতিরক্ষা, নৌ ও বিমান উপদেষ্টাদের অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে।

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, এই উপদেষ্টাদের অবিলম্বে পাকিস্তান ত্যাগের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। সূত্র: এনডিটিভি

নিরাপত্তা ত্রুটির কথা স্বীকার বিজেপি সরকারের: ভারতের বিজেপি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার বিরোধীদের কাছে পেহেলগামে জঙ্গি হামলায় নিরাপত্তা ত্রুটি থাকার কথা স্বীকার করে নিয়েছে বলে জানিয়েছে একাধিক সূত্র।

বৃহস্পতিবার রুদ্ধদ্বার সর্বদলীয় বৈঠকে কেন্দ্রীয় সরকার নিরাপত্তা ত্রুটির বিষয়টি স্বীকার করে নেয়, সূত্রের বরাত দিয়ে এ খবর দিয়েছে ইন্ডিয়া টুডে।

‘যদি কিছুই ভুল না হয়, তাহলে আমরা এখানে বসেছি কেন? কোথাও না কোথাও ত্রুটি হয়েছেই, আর সেটাই আমাদের খুঁজে বের করতে হবে,’ বৈঠকে ক্ষমতাসীন দলের এক নেতা বিরোধীদলের নেতাদের উদ্দেশ্যে এ কথা বলেছেন বলে জানা গেছে। বৈঠকে বিরোধী দলগুলোর একাধিক নেতা নিরাপত্তা ব্যবস্থার দৃশ্যমান ব্যর্থতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। ‘কোথায় ছিল নিরাপত্তা বাহিনী? সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ বাহিনী কোথায় ছিল?’ সরকারের কাছে তারা এসব জানতে চান বলে জানিয়েছে সূত্রগুলো।

এর জবাবে সরকারের ঊর্ধ্বতনরা বলেছেন, অনন্তনাগ জেলার পেহেলগামের কাছে বৈসরণ এলাকাটি পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়ার আগে স্থানীয় প্রশাসন নিরাপত্তা সংস্থাগুলোকে কিছু জানায়নি। সাধারণত, জুনের অমরনাথ যাত্রা পর্যন্ত বৈসরণে যাতায়াতে বিধিনিষেধ থাকে। ঘটনার পর নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের ঘটনাস্থলে দেরিতে পৌঁছানোর নিয়েও বৈঠকে উদ্বেগ জানানো হয়।

প্রত্যুত্তরে সরকারি কর্মকর্তারা জানান, ঘটনাস্থলটি এমন জায়গায় যেখানে পৌঁছাতে উঁচু পাহাড়ি পথে ৪৫ মিনিট হেঁটে যেতে হয়, এবং এই ধরনের জরুরি পরিস্থিতিতে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়ার মতো প্রস্তুতিও ছিল না।

বৈঠকের পর কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কিরেন রিজ্জু সাংবাদিকদের জানান, ভারতকে ঐক্যবদ্ধভাবে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই চালাতে হবে-এ ব্যাপারে সব দল একমত হয়েছে।

 

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

কাশ্মির হামলায় মোদি সরকারের পাশে দাঁড়ালো বিরোধীদলগুলো

আপডেট সময় : ০৮:৫৮:৫৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫

প্রত্যাশা ডেস্ক: পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর হামলা নিয়ে মোদি সরকারের পাশে দাঁড়ালো ভারতের বিরোধীদলগুলো। দুই ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলা সর্বদলীয় বৈঠকের পর বিরোধী নেতা রাহুল গান্ধী বলেন, সরকার যে কোনো অ্যাকশন নিতে পারে। বিরোধীরা সরকারকে সম্পূর্ণভাবে সমর্থন করবে।

রাহুল বলেছেন, সব দলের নেতারা ঘটনার নিন্দা করেছেন। বিরোধীরা সরকারকে পুরো সমর্থন করে বলেছে, তারা যে কোনো পদক্ষেপ নিতে পারে, আমরা পাশে থাকবো।

কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে বলেছেন, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। সব দল সমানভাবে পেহেলগামের হামলার নিন্দা করেছে। সব দল বলেছে, কাশ্মিরে শান্তি বজায় রাখা দরকার। সরকার জানিয়েছে, তারা শান্তি বজায় রাখতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেবে।

জম্মু ও কাশ্মিরের পেহেলগামে এক হামলায় ২৬ পর্যটক নিহত হওয়ার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। এরই মধ্যে দেশ দুইটি একে ওপরের ওপর পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপ নিয়েছে।

ভারত শুরুতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একগুচ্ছ ব্যবস্থা গ্রহণের ঘোষণা দেয়, যার মধ্যে রয়েছে পাকিস্তানি দক্ষ কর্মী ও কূটনীতিকদের জন্য বিশেষ ভিসা স্থগিত করা।

বৃহস্পতিবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, রোববার থেকে পাকিস্তানি নাগরিকদের জন্য জারি করা মেডিকেল ভিসাসহ সকল ভিসা বাতিল করা হবে।

ভারত আরো জানিয়েছে, সংশোধিত সময়সীমারভিত্তিতে বর্তমানে ভারতে থাকা পাকিস্তানিদের ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই দেশ ত্যাগ করতে হবে। ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিস্রি বলেছেন, হামলার উৎস যে সীমান্তের ওপারে তা একটি বিশেষ নিরাপত্তা বৈঠকে নিশ্চিত করা হয়েছে।

ভারত আরো কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে কূটনৈতিক কর্মীদের সংখ্যা কমানো এবং বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় সই হওয়া সিন্ধু নদীর ঐতিহাসিক পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত করা।

এর প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তান বৃহস্পতিবার সব ভারতীয় মালিকানাধীন বা ভারত-পরিচালিত বিমান সংস্থার জন্য তার আকাশসীমা বন্ধ করে দেয় এবং ভারতের সঙ্গে সমস্ত বাণিজ্য স্থগিত করে। তৃতীয় যে কোনো দেশ থেকে ভারতে আসা এবং বা পাকিস্তান হয়ে ভারতে যাওয়া বিমানের জন্যও এই ব্যবস্থা কার্যকর হবে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, নয়াদিল্লি সব পাকিস্তানি সামরিক কূটনীতিকদের জন্য পারসনা নন গ্রাটা (অবাঞ্ছিত) নোট দূতাবাসের কাছে হস্তান্তর করেছে।

এর প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তানও ইসলামাবাদে ভারতীয় দূতাবাসের প্রতিরক্ষা, নৌ ও বিমান উপদেষ্টাদের অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে।

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, এই উপদেষ্টাদের অবিলম্বে পাকিস্তান ত্যাগের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। সূত্র: এনডিটিভি

নিরাপত্তা ত্রুটির কথা স্বীকার বিজেপি সরকারের: ভারতের বিজেপি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার বিরোধীদের কাছে পেহেলগামে জঙ্গি হামলায় নিরাপত্তা ত্রুটি থাকার কথা স্বীকার করে নিয়েছে বলে জানিয়েছে একাধিক সূত্র।

বৃহস্পতিবার রুদ্ধদ্বার সর্বদলীয় বৈঠকে কেন্দ্রীয় সরকার নিরাপত্তা ত্রুটির বিষয়টি স্বীকার করে নেয়, সূত্রের বরাত দিয়ে এ খবর দিয়েছে ইন্ডিয়া টুডে।

‘যদি কিছুই ভুল না হয়, তাহলে আমরা এখানে বসেছি কেন? কোথাও না কোথাও ত্রুটি হয়েছেই, আর সেটাই আমাদের খুঁজে বের করতে হবে,’ বৈঠকে ক্ষমতাসীন দলের এক নেতা বিরোধীদলের নেতাদের উদ্দেশ্যে এ কথা বলেছেন বলে জানা গেছে। বৈঠকে বিরোধী দলগুলোর একাধিক নেতা নিরাপত্তা ব্যবস্থার দৃশ্যমান ব্যর্থতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। ‘কোথায় ছিল নিরাপত্তা বাহিনী? সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ বাহিনী কোথায় ছিল?’ সরকারের কাছে তারা এসব জানতে চান বলে জানিয়েছে সূত্রগুলো।

এর জবাবে সরকারের ঊর্ধ্বতনরা বলেছেন, অনন্তনাগ জেলার পেহেলগামের কাছে বৈসরণ এলাকাটি পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়ার আগে স্থানীয় প্রশাসন নিরাপত্তা সংস্থাগুলোকে কিছু জানায়নি। সাধারণত, জুনের অমরনাথ যাত্রা পর্যন্ত বৈসরণে যাতায়াতে বিধিনিষেধ থাকে। ঘটনার পর নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের ঘটনাস্থলে দেরিতে পৌঁছানোর নিয়েও বৈঠকে উদ্বেগ জানানো হয়।

প্রত্যুত্তরে সরকারি কর্মকর্তারা জানান, ঘটনাস্থলটি এমন জায়গায় যেখানে পৌঁছাতে উঁচু পাহাড়ি পথে ৪৫ মিনিট হেঁটে যেতে হয়, এবং এই ধরনের জরুরি পরিস্থিতিতে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়ার মতো প্রস্তুতিও ছিল না।

বৈঠকের পর কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কিরেন রিজ্জু সাংবাদিকদের জানান, ভারতকে ঐক্যবদ্ধভাবে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই চালাতে হবে-এ ব্যাপারে সব দল একমত হয়েছে।