ক্রীড়া প্রতিবেদক: প্রথমার্ধে গোল, হাতাহাতি-ধাক্কাধাক্কি সবই হলো। হঠাৎ ঝড় আর ভারি বৃষ্টিতে মাঠ কর্দমাক্ত ও পিচ্ছিল হয়ে যাওয়ার পর আবাহনী, বসুন্ধরা কিংস দুই দলের স্বাভাবিক খেলা হলো বিঘিœত। অন্যরকম নাটকীয়তার তখনও ঢের বাকি। অতিরিক্ত সময়ের প্রথম অর্ধের খেলা শেষের পর আলোক স্বল্পতায় ফাইনাল ‘স্থগিত’ হওয়ার ঘোষণা এল! ময়মনসিংহের রফিক উদ্দিন ভুঁইয়া স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার ফেডারেশন কাপের ফাইনালে দুই দলের নির্ধারিত ৯০ মিনিট ও অতিরিক্ত সময়ের প্রথম অর্ধের ১৫ মিনিটের খেলা ১-১ সমতায় শেষ হয়। কিন্তু অতিরিক্ত সময়ের দ্বিতীয় অর্ধ শুরুর আগে দুই দলের অধিনায়ক, কর্মকর্তা, ম্যাচ কমিশনারদের সাথে রেফারি আলোচনার পর ম্যাচ ‘স্থগিতের’ ঘোষণা দেওয়া হয়। স্বাভাবিকভাবেই এই ঘোষণায় অসন্তোষ জানায় গ্যালারিতে আসা দর্শকেরা। আবাহনীর টিম ম্যানেজার সত্যজিৎ দাস রুপুকে হতাশা প্রকাশ করতে দেখা যায়, কেননা, ফয়সাল আহমেদ ফাহিম লাল কার্ড দেখায় অতিরিক্ত সময়ের দ্বিতীয় অর্ধে কিংসকে খেলতে হতো দশ জনকে নিয়ে। শিরোপা লড়াই অবশ্য কবে ফের মাঠে গড়াবে, সে ব্যাপারে অবশ্য কোনো ঘোষণা দেওয়া হয়নি।
শুধু বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) পরবর্তীতে জানাবে তাদের সিদ্ধান্ত। ফাইনালে ওঠার প্রথম কোয়ালিফায়ারে নির্ধারিত ও অতিরিক্ত সময়ের খেলা ১-১ সমতায় শেষের পর বসুন্ধরা কিংসকে টাইব্রেকারে ৪-২ ব্যবধানে হারিয়েছিল আবাহনী। ময়মসিংহে শুরুতে কিংস ছিল দাপুট, নড়বড়ে আবাহনী। কিক অফের পরই হুয়ান লেসকানো ভীতি ছড়ান আবাহনীর রক্ষণে। চতুর্থ মিনিটে কিংসে সাদউদ্দিনের দূরপাল্লার প্রচেষ্টায় যায় পোস্টের বাইরে।
গ্যালারিতে আসা কিংস সমর্থকেরা আনন্দের উপলক্ষ্য পেয়ে যায় পরের মিনিটেই। সাদের ফ্রি কিকে লেসকানোর হেড দূরের পোস্ট দিয়ে জালে জড়ায়, বলের নাগাল পাওয়ার কোনো সুযোগই ছিল না মিতুল মারমার সামনে। কিংসের হয়ে প্রথম গোল পেলেন এই আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড। এই ধাক্কাতেই যেন জড়তা কাটিয়ে জেগে ওঠে আবাহনী। পঞ্চদশ মিনিটে তপু-সাদ-দেসিয়েলদের ঢিলেঢালা রক্ষণের সুযোগ কাজে লাগিয়ে সমতায় ফিরে আকাশি-নীল জার্সিধারীরা। বাঁ দিক দিয়ে আক্রমণে ওঠা এমেকা ওগবাহকে আটকাতে পারেনি কেউ। তার দারুণ কাটব্যাক গোলমুখ থেকে নিখুঁত প্লেসিংয়ে জাল খুঁজে নেন ইব্রাহিম। নিজের সাবেক ক্লাবের বিপক্ষে গোলের উদযাপন এই ফরোয়ার্ড সারেন সাদামাটাভাবে, দুই হাত উঁচিয়ে, দুঃখিত বলার ভঙ্গিতে! ৩৮মিনিটে মাহাদি ইউসুফ ও সোহেল রানা জুনিয়রের মধ্যের বল দখল নিয়ে মেজাজ হারায় দুই পক্ষ। রেফারি ফাউলের বাঁশি বাজানোর পর শাকিল আহাদ তপু শটে বল গিয়ে লাগে কিংস কোচ ভ্যালিরে তিতের গায়ে। শুরু হয়ে যায় হাতাহাতি, ধাক্কাধাক্কি। সহকারীদের সাথে কথা বলে কিংসের রিমন হোসেন ও রিজার্ভ গোলকিপার মেহেদী হাসান, আবাহনীর মিরাজুল ইসলাম শাকিলকে হলুদ কার্ড দেখান রেফারি সাইমন হোসেন।
দ্বিতীয়ার্ধে খেলা শুরুর মিনিট দুয়েক পরই ভারি বৃষ্টি শুরু হলে খেলা বন্ধ করে দেন রেফারি। গ্যালারি থেকে অবিশ্বাস্যভাবে দর্শকরা ঢুকে পড়েন মাঠে, মেতে ওঠেন জলকেলিতে! মাঠের নিরাপত্তাকর্মীরা অনেক চেষ্টার পর মাঠ ছাড়েন দর্শকরা। ততক্ষণে মাঠের অবস্থা হয়ে পড়ে যাচ্ছেতাই। ঝড়ো বাতাসে গ্যালারির এককোণে গণমাধ্যম কর্মীদের জন্য সাজানো সামিয়ান ছিড়ে যায়। চলে যায় বিদ্যুৎ।
প্রায় ৫০ মিনিট পর ফের শুরু হয় খেলা। ৭২তম মিনিটে এমেকাকে কড়া চার্জ করে কিংসের সোহেল রানা সিনিয়র দেখেন হলুদ কার্ড। আবাহনীর ডাগআউটের সামনে এই কা- হলেও পরিস্থিতি শান্তই থাকে। চার মিনিট পর লেসকানোকে তুলে ইনসান আলিকে নামান কিংস কোচ। দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে কিংসের জয়ের নায়ক ছিলেন ইনসান। দারুণ সুযোগ কিংস পেয়েছিল ৮১তম মিনিটে। ফয়সাল আহমেদ ফাহিমের ক্রসে রাকিব হোসেনের হেড পাসে বক্সের ভেতরে মাঝামাঝি পেয়ে যান সোহেল, কিন্তু ক্রসবারের উপর দিয়ে মেরে হতাশায় মুখ ঢাকেন এই মিডফিল্ডার। একটু পর সাদের শট সহজেই আটকান বলের লাইনে থাকা মিতুল। ৮৮তম মিনিটে অন্যরকম দূর্ভাগ্যের শিকার আবাহনীর। রাফায়েল অগাস্তোর কাট ব্যাক পৌঁছানোর কথা ছিল ছোট বক্সের ঠিক উপরে ভালো অবস্থানে থাকা সুমন রেজার কাছে।
কিন্তু বল মাঝপথে আটকে যায় জমে থাকা পানিতে, তাতে সুমন শট নিলেও বলের সাথে সংযোগ করতে পারেননি। সংযোগ হলে গোল হতেও পারত। ১০২তম মিনিটে অযথা সুমনকে পেছন থেকে ফাউল করে সরাসরি লালকার্ড দেখেন ফাহিম। দশ জনের দলে পরিণত হয় কিংস। অতিরিক্ত সময়ের প্রথমার্ধ শেষে মাঠ ছেড়ে যাওয়া রেফারির উদ্দেশে কিছু একটা বলে হলুদ কার্ড দেখেন কিংস কোচ তিতে। এরপর আলোক স্বল্পতা নিয়ে দুই ক্লাবের অফিসিয়াল, অধিনায়ক, ম্যাচ কমিশনারের সাথে বসেন রেফারি। তাদের মধ্যে আলোচনা চলে বেশ খানিকটা সময়, এরপরই আসে ফাইনাল স্থগিতের ঘোষণা।