বিদেশের খবর ডেস্ক : দখলদার ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাতজ জানিয়েছেন, গাজা, লেবানন এবং সিরিয়ার কথিত ‘নিরাপত্তা অঞ্চলে’ অনির্দিষ্টকালের জন্য তাদের সেনা মোতায়েন থাকবে। তার এ ঘোষণার কারণে হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির চুক্তির আলোচনা আরও কঠিন হয়ে যেতে পারে। গত মাসে চুক্তি লঙ্ঘন করে গাজায় ফের তীব্র হামলা শুরু করে ইসরায়েল। এরপর গাজার বিস্তৃত অঞ্চল (প্রায় অর্ধেক) দখল করে নেয় ইসরায়েলি সেনারা। এছাড়া গত বছর লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর সঙ্গে চুক্তির অংশ হিসেবে লেবানন থেকে ইসরায়েলি সেনাদের সরে যাওয়ার কথা থাকলেও; দখলদার ইসরায়েল তাদের সেনাদের প্রত্যাহার করে নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
এরসঙ্গে গত বছরের ডিসেম্বরে সিরিয়ার সাবেক স্বৈরাচার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের পতনের পর সিরিয়ার গোলান মালভূমির আরও বড় একটি দখল করে নেয় এই দখলদাররা। গতকাল বুধবার (১৬ এপ্রিল) এক বিবৃতিতে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেছেন, “অতীতের মতো ইসরায়েলি সেনারা যেসব অঞ্চল পরিষ্কার অথবা দখল করেছে সেসব অঞ্চল থেকে সরে যাচ্ছে না। সেনাবাহিনী গাজা— একইসঙ্গে লেবানন এবং সিরিয়ার এসব নিরাপত্তা অঞ্চলে, যেগুলো ইসরায়েল এবং শত্রুদের অঞ্চল থেকে ইসরায়েলি কমিউনিটিকে ভাগ করেছে, সেখানে অস্থায়ী অথবা স্থায়ীভাবে থাকবে।” ফিলিস্তিন এবং তাদের প্রতিবেশী দেশগুলো ইসরায়েলি সেনাদের তাদের ভূমিতে অবস্থানকে সামরিক দখলদারিত্ব হিসেবে বিবেচনা করে। যা আন্তর্জাতিক আইনে অবৈধ। হামাস জানিয়েছে, যতক্ষণ ইসরায়েলি সেনারা গাজা থেকে পুরোপুরি সরে না যাবে এবং স্থায়ী যুদ্ধবিরতিতে রাজি না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত কোনো জিম্মিকে তারা মুক্তি দেবে না। প্রতিরক্ষামন্ত্রীর এমন বিবৃতির পর ইসরায়েলি জিম্মিদের পরিবার একটি বিবৃতি দিয়েছে। এতে তারা বলেছেন, “সরকার কথা দিয়েছিল জিম্মিরা সবার আগে মুক্তি পাবে। কিন্তু জিম্মিদের আগে ইসরায়েল এখন ভূমি দখলকে প্রাধান্য দিচ্ছে। এই সমস্যার একমাত্র সমাধান হলো চুক্তির মাধ্যমে সব জিম্মিকে একসঙ্গে মুক্ত করে আনা। যদি এটি স্থায়ীভাবে যুদ্ধ বন্ধের মাধ্যমেও হয়।” সূত্র: এপি
মানবিক সহায়তা প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না
এদিকে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় কোনও ধরনের মানবিক সহায়তা প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে ইসরায়েল। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর নির্বিচার হামলায় গণকবরে পরিণত হওয়া গাজায় মানবিক কার্যক্রম পরিচালনাকারী এক দাতব্য সংস্থা এই তথ্য জানিয়েছে। গাজা উপত্যকার ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে দুই মাসের যুদ্ধবিরতি চুক্তির অবসান ঘটিয়ে গত ১৮ মার্চ গাজায় নতুন করে অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী। ইসরায়েল গত ২ মার্চ থেকে গাজায় মানবিক সহায়তার প্রবেশ বন্ধ করে দিয়েছে। চলমান ইসরায়েলি সামরিক অভিযানের মাঝে এই উপত্যকায় ভয়াবহ মানবিক সংকট বৃদ্ধি পেয়েছে। বুধবারও ইসরায়েলের হামলায় কমপক্ষে ১১ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন উদ্ধারকারীরা। গতকাল বুধবার ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ বলেছেন, ২৪ লাখ মানুষের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় মানবিক সহায়তা প্রবেশে বাধা দেওয়ার কাজ অব্যাহত রাখবে ইসরায়েল।
এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, ইসরায়েলের নীতি পরিষ্কার : কোনও মানবিক সহায়তা গাজায় প্রবেশ করবে না এবং হামাসকে গাজার জনগণের কাছে সহায়তাকে হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করতে বাধা দেওয়াই এই পদক্ষেপের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। ইসরায়েল কাৎজ বলেছেন, বর্তমানে কেউ গাজায় কোনও মানবিক সহায়তা প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার পরিকল্পনা করছে না এবং এ জাতীয় সহায়তার কোনও প্রস্তুতিও নেই। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু-সহ তার সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তারা গাজায় হামাসের হাতে বন্দি থাকা বাকি ৫৮ জিম্মির মুক্তির একমাত্র উপায় হিসাবে বারবার সামরিক চাপ প্রয়োগের কথা বলছেন। আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস (এমএসএফ) বলেছে, ইসরায়েলি সামরিক অভিযান ও মানবিক সহায়তায় বাধাদান গাজাকে ফিলিস্তিনিদের এবং যারা সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনা করে, তাদের জন্য কবরস্থানে পরিণত করেছে। এমএসএফের সমন্বয়কারী আমান্ডে বাজেরোল বলেছেন, ফিলিস্তিনিদের এবং তাদের সহায়তায় যারা আসছেন, তাদের জন্য গণকবরে পরিণত হয়েছে গাজা। সূত্র: এএফপি।