ক্যাম্পাস ও ক্যারিয়ার ডেস্ক: বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ উদযাপন উপলক্ষে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নানা আয়োজনে মুখরিত হয়ে ওঠে ক্যাম্পাসগুলো। বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখকে ঘিরে শিক্ষার্থীরা রঙে-আলোয়, গান-নৃত্যে ও সাংস্কৃতিক নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে নতুন বছরকে বরণ করে নেয়।
ঐতিহ্যবাহী আনন্দ শোভাযাত্রা, পান্তা-ইলিশের ভোজন আয়োজন, লোকজ মেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানগুলো বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণকে পরিণত করে উৎসবমুখর মিলনমেলায়। দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা নববর্ষ উদযাপনের ঝলমলে চিত্র ও শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের উচ্ছ্বাস এই প্রতিবেদনে তুলে ধরা হলো-
সুরে-গানে-তালে বৈশাখকে বরণ করল রাবি
বাংলা বছরের প্রথম দিনকে স্বাগত জানাতে বাঙালি মেতে উঠেছে নানা আয়োজনে। বাঙালি জাতিসত্তার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার অন্যতম দিনটিকে কেন্দ্র করে সর্বত্রই বইছে উৎসবের আমেজ। জাতি-গোত্র-বর্ণ সব ভেদাভেদ ভুলে সকলে একযোগে দিনটি উদযাপন করেছে। বৈশাখের আগমনকে নতুন সুরে, গানে, তালে বরণ করে নিয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষক শিক্ষার্থীরা। সোমবার (১৪ এপ্রিল) সকাল ৯টায় চারুকলা চত্বরে মুক্তমঞ্চে বর্ষবরণের কর্মসূচি উদ্বোধন করেন উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব। পরে বেলা ১০টায় চারুকলা চত্বর থেকে শুরু হওয়া বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে।
শোভাযাত্রায় উপাচার্য, উপ-উপাচার্যসহ বিপুল সংখ্যক শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা অংশ নেন। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনও নিজ নিজ কর্মসূচির মাধ্যমে বর্ষবরণ উদযাপন করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, লোক প্রশাসন বিভাগ, ফলিত গণিত বিভাগ, মার্কেটিং বিভাগসহ একাধিক বিভাগ নতুন বছরকে বরণ করে নিতে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।
এবারের আয়োজনে ছিলো নানা ধরনের ব্যানার আর ফেস্টুন। শোভাযাত্রায় ২৪ এর গণঅভ্যুত্থান, বাঙালির ঐতিহ্য, কৃষ্টি-কালচার তুলে ধরতে তৈরি করা হচ্ছে বিভিন্ন মোটিফ। তবে আগের বছরগুলোর তুলনায় এবার আয়োজনের ব্যাপ্তি কিছুটা কমেছে বলে মনে করছেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীরা কেউ শখের হাড়ির ভাস্কর্য, আবার কেউ বাঙালির ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে রঙ তুলিতে ফুটিয়ে তুলেছেন। কেউ ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের চেতনাকে ধারণ করে এঁকেছেন নানা চিত্র। মাঠজুড়ে বিরাজ করছে বাঁশের ফালি দিয়ে শখের হাঁড়ি ও পালকি। আবার কেউ কেউ মধ্যপ্রাচ্যের মানবতার বিপর্যয়কে প্রতীকী করে শলাকা দিয়ে মিসাইল বোমা ও ড্রোন বানিয়েছেন।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী ফারিহা সাঈদ নিশা বলেন, “এটা আমার জীবনের প্রথম বৈশাখ পালন। আগে কখনো এত বড় করে পালন করা হয়নি। সবার সঙ্গে অনেক আনন্দ করলাম, অনেক ভালো লাগলো। বৈশাখের আনন্দ সবার মধ্যে ছড়িয়ে পড়ুক, এই কামনা করছি।” রাবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক সাজ্জাদ হোসেন বকুল বলেন, “শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে নতুন বর্ষকে আমরা বরণ করে নিলাম। আমার শিক্ষার্থীরা গত এক সপ্তাহ ধরে অক্লান্ত পরিশ্রম করে ব্যানার ফেস্টুন তৈরি করেছে। সেসব নিয়ে সবাই উল্লাসে মেতেছে আজ। নববর্ষে এমন আয়োজন করতে সত্যি খুশি লাগছে। এর জন্য আমার শিক্ষার্থীদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি। তারা অনেক পরিশ্রম করেছে।” বর্ষবরণের কর্মসূচিতে ক্যাম্পাস জুড়ে বিভিন্ন বিভাগ ও সংগঠনের উদ্যোগে দিনব্যাপী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও বৈশাখী মেলার আয়োজন করা হয়েছে।
পহেলা বৈশাখে ঢাবিতে ‘ভালো কাজের হালখাতা’
পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে ভালো কাজের হালখাতা কর্মসূচির আয়োজন করেছে সেন্ট্রার ফর বাংলা স্ট্যাডিজ (সিবিএস) নামের একটি সংগঠন। বাংলার ঐতিহ্য সর্বসাধারণের মধ্যে পৌঁছে দিতে এই ধরনের আয়োজন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা। সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি সংলগ্ন গেটে এই আয়োজন করা হয়। আয়োজনের মধ্যে ছিল সকাল থেকে ‘ভালো কাজের হালখাতা’, দুপুরে ‘ফ্যাসিস্ট প্রতিকৃতিতে জুতা নিক্ষেপ’, বিকেলে ‘ঢাকা গেট অভিমুখে লুঙ্গি মিছিল’ ও ‘মাইম অ্যাকশান’। সরেজমিন দেখা গেছে, ভালো কাজের হালখাতা নামের দুটি বড় ব্যানারে আলাদা আলাদা দুটি অংশে রয়েছে।
প্রথম ব্যানারটির দুই পাশে লেখা রয়েছে ‘যাহা পাইলাম’ এবং ‘যাহা হারাইলাম’। ‘যা পাইলাম’ অংশে ‘ইউসুফ সরকার’, ‘আফসোস লীগ’, ‘আনন্দ শোভাযাত্রা’, ‘গণভবন জয় করিলাম’ ইত্যাদি লেখা। ‘যাহা হারাইলাম’ অংশে ‘আপা’, ‘হেলমেট লীগ’, ‘রাজাকার ট্যাগ’, ‘মধুর প্রোটোকল’ ইত্যাদি লেখা।
সিবিএসের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য আনাস ইবনে আরিফ জাগো নিউজকে বলেন, অভ্যুত্থান পরবর্তী আমরা রাজনৈতিকভাবে ফ্যাসিজম থেকে যেমন মুক্ত হয়েছি তেমনি কালাচারাল ফ্যাসিজম থেকে মুক্ত হতে ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে ঘৃণার উপলক্ষ বানিয়ে আমাদের এই আয়োজন। বর্তমান পুঁজিবাদী অর্থনীতিতে হালখাতার গুরুত্ব অনেকটাই কমে গেছে।
আমরা সেই বিষয়কে মাথায় রেখে এটির আয়োজন করেছি। আমরা চেষ্টা করছি একটি রাজনীতি সচেতন জনগোষ্ঠী তৈরি করতে। আরমান হোসেন নামের এক দর্শক বলেন, সেন্টার ফর বেঙ্গল স্টাডিজ, দিনব্যাপী ভালো কাজের হালখাতা, যেখানে সাধারণ মানুষ তাদের কথা মার্কারের মাধ্যমে লিখেছেন। ১৪৩১ সালে কি হারালাম আর কি পেলাম নামে কিছু কোটেশন ছিল। আরমান বলেন, তারা বিকেলে মাইম একশনের আয়োজন করেছে দেখলাম। সেখানে ইভটিজিং এর বিরুদ্ধে অবস্থান এবং ফিলিস্তিনে চলমান অবস্থার একটা চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
অনেক মানুষের সমাগম দেখা গেছে। সবাই ছবি তুলে নিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া সুলতানি আমলের মানচিত্রসহ আরও দুটি মানচিত্র দেখছি।
পুরনো ঐতিহ্যে ফিরেছে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়
কেউ সেজেছে বর, কেউ কনে, আবার কেউ রাখালী রূপে। কেউ চেপেছে ঘোড়ার গাড়িতে, কেউবা উঠেছে গরুর গাড়িতে। পুরো ক্যাম্পাস এসেছে নতুন আমেজ। বাঙালির ঐতিহ্য বৈশাখ যেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) ফিরে এসেছে এক নতুন ছন্দে।
এভাবেই সোমবার (১৪ এপ্রিল) বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ উদযাপন করেছে বেরোবি শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। সাড়ে ৯টায় প্রশাসনিক ভবনের দক্ষিণ গেটে বর্ণাঢ্য বর্ষবরণ শোভাযাত্রার উদ্বোধন করেন উপাচার্য অধ্যাপক মো. শওকাত আলী। বাঁশি, বৈশাখী গানের সুরে শোভাযাত্রা ঘুরে বেড়ায় ক্যাম্পাসের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে থামে একাডেমিক ভবনের সামনে। শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে মুখরিত হয়ে ওঠে চারপাশ। বাঙালির লোকজ সংস্কৃতি, পোশাক আর আবহ পুরো শোভাযাত্রায় মেলে ধরে তার আপন রূপ। শোভাযাত্রা শেষে একাডেমিক ভবনের সামনে বৈশাখী মেলায় সাজানো স্টল ঘুরে দেখেন উপাচার্য। সবার সঙ্গে নববর্ষের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন তিনি। এ সময় তিনি বলেন, ‘বাংলা নববর্ষ আমাদের চিরায়ত ঐতিহ্য আর আত্মপরিচয়ের উৎসব। বাঙালির ইতিহাস আর সংস্কৃতিকে ধারণ করে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় যেভাবে নববর্ষ উদযাপন করছে, তা প্রশংসনীয়। আমাদের উচিত এই ঐতিহ্যকে ধরে রেখে একটি মানবিক, সাংস্কৃতিক বাংলাদেশ গড়া।”
পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মিডিয়া চত্বরে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। গান, নৃত্য আর আবৃত্তিতে মুখরিত হয়ে ওঠে চারদিক। আবাসিক হলগুলোর শিক্ষার্থীদের জন্য আয়োজন করা হয় বিশেষ খাবারেরও। বাংলা নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজিন করা হয়েছিল। আগের দিন রবিবার (১৩ এপ্রিল) বিকেলে চৈত্র সংক্রান্তি উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুটবল মাঠে আয়োজন করা হয়েছিল ঘুড়ি উৎসব। এদিকে, বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ উদযাপনের শোভাযাত্রায় ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে ফিলিস্তিনি পতাকা বহন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী। শোভাযাত্রায় তাদের হাতে ফিলিস্তিনের পতাকা দেখা যায়। তারা জানান, ফিলিস্তিনে চলমান গণহত্যার প্রতিবাদ এবং সেখানে নিপীড়িত মানুষের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করতেই এই পতাকা তারা সঙ্গে এনেছেন। ফিলিস্তিনে যে মানবতা-বিরোধী পরিস্থিতি চলছে, তারা তার প্রতিবাদ জানান। তারা চান বিশ্ব বিবেক জাগ্রত হোক এবং ফিলিস্তিনে শান্তি ফিরে আসুক।
ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি জানিয়ে জাবিতে এক অন্যরকম বর্ষবরণ
নতুন বছরকে বরণ করে নিতে বহুমুখী আয়োজনে দিনটি উদযাপন করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। তবে এ দিনটিকে একটু অন্যভাবে বরণ করে নেন জাবির একদল শিক্ষার্থী। বর্ষবরণের কর্মসূচি থেকে গাজার মানচিত্র এঁকে ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি এবং ইসরায়েলের বর্বর গণহত্যার প্রতিবাদ জানান তারা। সোমবার (১৪ এপ্রিল) বাংলা বছরের প্রথম দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) সামনের মাঠে কংক্রিট দিয়ে এ মানচিত্র অঙ্কন করেন শিক্ষার্থীরা। মানচিত্রে ব্যবহার করা হয়েছে নিমার্ণাধীন ভবনের পরিত্যক্ত কংক্রিট। সীমানা চিহ্নিত করা হয়েছে সাদা রঙে। এছাড়া লাল রঙে চিহ্নিত করা হয়েছে সেইসব অঞ্চল, যেখানে ইসরায়েলি বাহিনী গণহত্যা চালিয়েছে। মানচিত্রের মাঝখানে স্থাপন করা হয়েছে ফিলিস্তিনের পতাকা। এছাড়া শান্তির প্রতীক হিসেবে রোপণ করা হয়েছে একটি জলপাই গাছ, যেটি বার্তা দিচ্ছে গাজা আবার উর্বর ভূমিতে পরিণত হবে। এদিন দুপুর ১টায় এই প্রতীকী মানচিত্র উদ্বোধন ও ফিলিস্তিনের পতাকা উত্তোলন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল আহসান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সোহেল আহমেদসহ প্রক্টর, বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
মানচিত্র অঙ্কনকারীদের একজন সরকার ও রাজনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম বলেন, জাবিতে অনেকদিন পর আজ আনন্দঘন পরিবেশে পহেলা বৈশাখ উদযাপিত হয়েছে। এই আনন্দঘন পরিবেশে আমরা একইসঙ্গে ফিলিস্তিনের দুর্দশাগ্রস্ত মানুষদেরও স্মরণ করতে চেয়েছিলাম। তারই অংশ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থীরা পহেলা বৈশাখে ফিলিস্তিনকে স্মরণ করেছেন। বিশ্বের মানচিত্র থেকে গাজাকে মুছে ফেলার চেষ্টা চলছে, তাই পুরো গাজা অঞ্চলকেই আমাদের চোখের সামনে জারি রেখে গাজাকে হৃদয়ে ধারণ করার প্রয়াস থেকে আমরা এই মানচিত্র আঙ্কন করেছি। উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল আহসান বলেন, এই আয়োজন আমাদের শিক্ষার্থীদের মানবিক বোধ, সামাজিক দায়বদ্ধতা এবং রাজনৈতিক সচেতনতার অনন্য দৃষ্টান্ত। একটি রাষ্ট্রের নিরীহ জনগণের ওপর যখন নির্বিচারে হামলা চলছে, তখন একজন শিক্ষার্থী হিসেবে নীরব থাকা নয়, বরং প্রতিবাদ জানানোই দায়িত্বশীলতার পরিচয়। এই প্রতীকী মানচিত্র নির্মাণের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীরা ন্যায় ও মানবতার পক্ষে তাদের স্পষ্ট অবস্থান তুলে ধরেছেন।
৫ বছর পর বর্ণাঢ্য আয়োজনে শাবিতে নববর্ষ উদযাপন
দীর্ঘ ৫ বছর পর বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে উদযাপিত হয়েছে বাংলা নববর্ষ ১৪৩২। এদিন সকাল থেকেই নববর্ষের আমেজে মুখর ছিল পুরো ক্যাম্পাস। বাঙালির সংস্কৃতির অংশ হিসেবে মাছ, তরমুজ, ডাকটিকিটের বক্স, হাতপাখাসহ বিভিন্ন ঐতিহ্যের প্রতীক নিয়ে শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এর আগে সর্বশেষ ২০১৯ সালে এমন বর্ণাঢ্য আয়োজনে উদযাপিত হয় পয়লা বৈশাখ। এরপর করোনা মহামারি এবং মাহে রমজানের কারণে স্বল্প পরিসরে আয়োজিত হয় নববর্ষের অনুষ্ঠান। এরপর এবার বড় পরিসরে আয়োজিত হয় এ অনুষ্ঠান।
দিবসটি উপলক্ষ্যে সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাভবন-ই এর সামনে থেকে আনন্দ শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রাটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুনরায় একই জায়গা গিয়ে শেষ হয়। শোভাযাত্রা শেষে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে লোকজ আয়োজনের ব্যবস্থা করা হয়। শোভাযাত্রা শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. সাজেদুল করিম বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম বড় সমস্যা হলো ঋণখেলাপি সংস্কৃতি।
নববর্ষের সূচনা হয়েছিল ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গি ও খাজনা আদায়ের উদ্দেশ্যে, তাই আজকের এই দিনে আমাদের উচিত নতুন প্রত্যাশা গড়ে তোলা-যাতে নতুন করে আর কেউ ঋণখেলাপি না হয়। আমাদের শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যতে রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকবে। তারা যেন এই বিষয়ে সচেতন ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করে, সেটাই কাম্য। এছাড়াও, তিনি পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে জুলাই বিপ্লবের শহীদদের গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ. এম. সরওয়ার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, আমরা আজ শ্রদ্ধার সঙ্গে জুলাই বিপ্লবের শহীদদের স্মরণ করছি। যারা এই নির্মম হত্যাকাণ্ডে জড়িত, আমি আশা করি সরকার তাদের বিচার নিশ্চিত করবে। আমাদের প্রিয় শিক্ষার্থীরা যেন নববর্ষে শপথ নিয়ে মনোযোগ সহকারে পড়াশোনা করে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা। বড়রা ছোটদের স্নেহ করবে, আর ছোটরা বড়দের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবে। শিক্ষাজীবনে সবাই একে অন্যকে সহযোগিতা করবে, পড়ালেখা ও খেলাধুলা-উভয় ক্ষেত্রেই পারস্পরিক সহযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ। পরবর্তীতে বিকেল ৩টায় মুক্তমঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বৈশাখী মেলা ১৪৩২’
নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি সোশ্যাল সার্ভিস ক্লাবের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘বৈশাখী মেলা ১৪৩২’, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অন্যতম বৃহৎ এবং সফল সাংস্কৃতিক আয়োজন। বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন খেলার মাঠে অনুষ্ঠিত এই আয়োজনে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী, ফ্যাকাল্টি ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছিল। মেলার উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল হান্নান চৌধুরী ও বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপ-উপাচার্য ও কোষাধক্ষ্য অধ্যাপক আবদুর রব খান। রঙিন ও ঐতিহ্যবাহী সাজসজ্জায়, আনন্দঘন পরিবেশে মেতে উঠেছিল পুরো বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও স্টাফ সদস্যরা মেলায় নিজস্ব স্টল স্থাপন করেন এবং সেখানে বর্ণিল ও ঐতিহ্যবাহী পণ্যের প্রদর্শনী করেন। যার মধ্যে ছিল বিভিন্ন ধরনের বাঙালি খাবার এবং বাংলার লোকজ সাজসজ্জার উপকরণ।
এতে ফুটে ওঠে বাঙালির সংস্কৃতির রঙ, বৈচিত্র্য ও সৌন্দর্য।
ক্লাবের প্রেসিডেন্ট মৌরিন ইসলাম বলেন, আমাদের বৈশাখী মেলা শুধু একটি অনুষ্ঠান নয়, বরং আমাদের শিকড়কে ছুঁয়ে দেখার এক উপলক্ষ্য, যেখানে ঐতিহ্য, প্রাণবন্ত আড্ডা আর একতার আনন্দ আমাদের মনে করিয়ে দেয় আমরা শুধু শিক্ষার্থীই নই, আমরা এক সংস্কৃতির বাহক। প্রতিবছরের মতো এবারও ক্লাবের সদস্যরা প্রমাণ করেছে যে, তারা শুধু একটি সামাজিক সচেতন ক্লাব নয়। বরং তারা নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক আবহ গঠনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ।