নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের আরোপ করা বাড়তি শুল্ক কমাতে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনার চেষ্টার কথা বলেছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন।
সেই লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রের আরো ১০০ পণ্যকে শুল্কমুক্ত তালিকায় যুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনকে চিঠি দেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেছেন, এই চিঠির ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশা করি। আমাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে ট্রেড গ্যাপটা কমিয়ে আনা।
মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) সচিবালয়ে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা।
বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে ৮ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে এদেশে আসে ২ বিলিয়ন ডলারের পণ্য। আমদানি রপ্তানির ব্যবধান ঘোচাতে বিশ্বের শতাধিক দেশে বড় অংকের শুল্ক আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ডনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন।
বাংলাদেশের পণ্যের ওপর আগে থেকেই ১৫ শতাংশ শুল্ক ছিল। এখন আরো ৩৭ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করায় যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ঢুকতে সব মিলিয়ে ৫২ শতাংশ শুল্কের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশের পণ্য।
বাংলাদেশি তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র। নতুন করে সম্পূরক শুল্ক আরোপের ফলে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত বড় ধাক্কা খেতে পারে বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
উপদেষ্টা বলেন, আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে বাণিজ্য ঘাটতি কমানো। এখন কী কী পণ্য দিয়ে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে পারি সেটাই আমরা দেখছি।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য বৈষম্য কমাতে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে ১৯০টি পণ্যের শুল্কহার শূন্য রেখেছে। এবার আরো ১০০ পণ্য যুক্ত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির দপ্তরে (ইউএসটিআর) বাণিজ্য উপদেষ্টার পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশি পণ্যের অগ্রাধিকারমূলক বাজার সুবিধা প্রত্যাহারের পর যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের সব রপ্তানি পণ্যের ওপর গড়ে ১৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ আছে। অথচ বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা পণ্যে গড়ে ৬.১০ শতাংশ শুল্ক নেয়।
বাংলাদেশ বেশি আমদানি করে কাঁচা তুলা ও স্ক্র্যাপ লোহা। এ দুটি পণ্যে শুল্ক হার যথাক্রমে শূন্য ও ১ শতাংশ। চিঠিতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অন্যতম প্রধান তুলা রপ্তানিকারক দেশ। সেই তুলা দিয়েই বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প পরিচালিত হয়। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক খাতসহ অন্যান্য পণ্যের ওপর বাড়তি শুল্ক আরোপ করায় বাংলাদেশের রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে অশুল্ক বাধা দূর করা, শুল্কায়ন প্রক্রিয়া সহজী করা, মেধাস্বত্বের সুরক্ষা এবং ট্রেডমার্ক ও পেটেন্ট সংরক্ষণসহ বিভিন্ন সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার কথা চিঠিতে তুলে ধরা হয়।
বর্তমান পরিস্থিতিকে ‘অতি পরিবর্তনশীল’ হিসেবে বর্ণনা করে তিনি বলেন, গতকাল আমেরিকান প্রশাসন বলেছে চীন যে পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে ট্যারিফ ঘোষণা করেছে, তার প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র আরো ৫০ শতাংশ দিতে পারে। এ ধরনের পরিবর্তনশীল অবস্থায় যে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া একটু জটিল। তাহলে এখন পরিস্থিতি কোন দিকে যায় তা দেখে আমরা আমাদের পদক্ষেপ ঠিক করব।
শুল্ক নিয়ে ব্যবসায়ীদের উদ্বেগের মধ্যে শনিবার সরকারের উপদেষ্টা, বিশেষজ্ঞসহ অংশীজনদের নিয়ে জরুরি বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টা, প্রধান উপদেষ্টা কার্যালয়ের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের নিয়ে রোববার অর্থমন্ত্রণালয়ে আরেকটি জরুরি সভা হয়।
ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, বাংলাদেশের অবস্থান ব্যাখ্যা করে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বাংলাদেশ থেকে দুটো চঠি পাঠানো হবে। এর মধ্যে স্বয়ং প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পকে একটি চিঠি পাঠানো হবে। আরেকটি চিঠি বাণিজ্য উপদেষ্টার পক্ষ থেকে পাঠানো হবে যুক্তরাষ্ট্রের অফিস অফ ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ-ইউএসটিআর কার্যালয়ে।
সে অনুযায়ী প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস সম্পূরক শুল্ক পুনর্বিবেচনা করতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পকে সোমবার চিঠি পাঠান। বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনতে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা তুলে ধরে শুল্কারোপের সিদ্ধান্ত তিন মাস স্থগিত রাখার অনুরোধ করেন। সে কথা তুলে ধরে মঙ্গলবার ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে অর্থ উপদেষ্টা সালেহ উদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, আমরা রেসপন্স করেছি, আমরা পজেটিভ কিছু প্রত্যাশা করছি। আমরাও সহযোগিতা করব, তারাও সহযোগিতা করবে। একটা উইন উইন অবস্থা হবে।
তিনি বলেন, একদিকে উনারা করে ফেলল, আমরা অ্যাডজাস্ট করব বিষয়টা সেটা না। আমরা আমাদের ইস্যুটা তুলে ধরব। আমি বিশ্বাস করি এ বিষয়টার সমাধান হবে। একটা পজেটিভ কিছু হবে, পজেটিভ বলতে তাদেরও লাভ হবে আমাদেরও লাভ হবে।
উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানিয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আজকে আমরা মসুর ডাল, চাল এলএনজি ও তেল আমদানির অনুমোদন দিয়েছি। আজকে যে ক্রয়ের অর্ডারগুলো দিয়েছি, সেগুলো আগের তুলনায় কম মূল্যে। এটার কারণ হচ্ছে আমরা একটু প্রতিযোগিতা করতে চাচ্ছি। আগে গুটিকয়েক সাপ্লায়ার দিত, এখন ওপেন করাতে প্রতিযোগিতা বেড়েছে। ফলে আমরা কম দামে পাচ্ছি। আমাদের অনেক সাশ্রয় হচ্ছে।