ক্রীড়া ডেস্ক: ম্যাচের শুরুতে নিউক্যাসল ইউনাইটেড গ্রেট অ্যালান শিয়েরার বলছিলেন, আমি হয়তো পক্ষপাতিত্ব করছি; কিন্তু কোনো দলের সমর্থকদের যদি একটি শিরোপা প্রাপ্য হয়, সেটা নিউক্যাসল ইউনাইটেডের। প্রজন্মের পর প্রজন্ম যাচ্ছে দলটি বড় কোনো শিরোপা জিতছে না, তবুও অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন ভক্তরা।
তাদের খুশির জোয়ারে ভাসিয়ে, স্বপ্নের রাত উপহার দিয়ে লিভারপুলকে হারিয়ে প্রথমবার লিগ কাপ জিতল ক্লাবটি। ওয়েম্বলিতে রোববার ফাইনালে ২-১ গোলে জিতেছে এডি হাউয়ের দল। ড্যান বার্ন প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে দলকে এগিয়ে নেওয়ার পর দ্বিতীয়ার্ধে ব্যবধান বাড়ান আলেকসান্দার ইসাক। যোগ করা সময়ে ব্যবধান কমিয়ে ম্যাচ জমিয়ে দিয়েছিলেন ফেদেরিকো চিয়েসা। তবে স্নায়ুক্ষয়ী শেষ সময়টুকু দারুণ দৃঢ়তায় কাটিয়ে শিরোপার উৎসবে মাতে নিউক্যাসল
চিয়েসার গোল বাদ দিয়ে সেভাবে নিউক্যাসলকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারেনি লিভারপুল। ৬৫ শতাংশের বেশি সময় বল দখলে রেখেও গোলের জন্য নিতে পারে কেবল সাতটি শট, এর দুটি ছিল লক্ষ্যে। অন্যদিকে নিউক্যাসলের ১৭ শটের ছয়টি ছিল লক্ষ্যে। ১৯৫৫ সালে এফএ কাপ জেতার পর ইল্যান্ডের ঘরোয়া ফুটবলে এটাই নিউক্যাসলের প্রথম শিরোপা।
১৯৬৯ সালে ফেয়ার্স কাপ (বর্তমানের ইউরোপা লিগ) জেতার পর তাদের বড় কোনো শিরোপা। ২০২২-২৩ আসরের রানার্সআপ নিউক্যাসলের দারুণ প্রাপ্তির দিনে আরেকটি টুর্নামেন্টে হতাশা নিয়ে ফিরল লিভারপুল। প্রিমিয়ার লিগ শিরোপা জয়ের পথে এগিয়ে যাওয়া দলটি গত সপ্তাহে বিদায় নিয়েছে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ ষোলো থেকে, পিএসজির বিপক্ষে টাইব্রেকারে হেরে। অসংখ্য ফাউলে বারবার ছন্দ হারানো ম্যাচে শুরুর দিকে পরিষ্কার সুযোগ তৈরি করতে ভুগছিল দুই দলই। ২৪তম মিনিটে ডি-বক্সের বাইরে থেকে আচমকা শটে সফল প্রায় হয়েই যাচ্ছিলেন সান্দ্রো তোনালি। এই ইতালিয়ান মিডফিল্ডারের শট বেরিয়ে যায় পোস্টের খুব কাছ দিয়ে।
৩৪তম মিনিটে আবার দুই দফায় হতাশ হতে হয় নিউক্যাসলকে, এবার লিভারপুলকে বাঁচানোর কৃতিত্ব ডিফেন্ডার অ্যান্ড্রু রবার্টসনের। ইসাকের হেড ঠেকানোর পর কিয়েরান ট্রিপিয়ারের বুলেট গতির শটের সামনে নিজেকে একরকম ছুঁড়ে দেন তিনি। পরের মিনিটে বার্নের হেডে বল পেয়ে খুব কাছ থেকে হেড করেন নিউক্যাসল অধিনায়ক ব্রুনো গিমারাইস। কিন্তু তৎপর লিভারপুল গোলরক্ষককে এড়াতে পারেননি ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার। লিভারপুলকে বেশ চাপে রেখে নিউক্যাসল এগিয়ে যায় প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ের প্রথম মিনিটে। ট্রিপিয়ারের কর্নারে প্রায় ১০ গজ দূর থেকে গতিময় হেডে দূরের পোস্ট দিয়ে জাল খুঁজে নেন বার্ন। একেতো অরক্ষিত ছিলেন দীর্ঘদেহী এই ইংলিশ ডিফেন্ডার, আবার তার হেডের আগে বা পরে তেমন প্রতিক্রিয়া দেখাননি লিভারপুল গোলরক্ষকও!
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে ফের লিভারপুলের জালে বল পাঠান ইসাক। কিন্তু অফসাইডের জন্য মেলেনি গোল। তবে বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি তাকে। জ্যাকব মার্ফির হেডে পেনাল্টি স্পটের কাছে বল পেয়ে অনায়াসে জাল খুঁজে নেন সুইডিশ ফরোয়ার্ড। দুই গোলে পিছিয়ে পড়ার পর কিছুক্ষণের জন্য যেন জেগে ওঠে লিভারপুল।
৫৯তম মিনিটে ব্যবধান কমানোর আশা জাগায় তারা। তবে কার্টিস জোন্সের শট ঠেকিয়ে দেন গোলরক্ষক। পাঁচ মিনিট পর দলকে তিন গোলে এগিয়ে নেওয়ার দারুণ সুযোগ হাতছাড়া করেন ইসাক। খুব কাছ থেকে হার্ভি বার্নসের কাছ থেকে বল পেয়ে অনেকটা গোলরক্ষক বরাবর শট নেন তিনি। গোলের চেষ্টার চেয়ে বরং রক্ষণ সামলানোতেই বেশি মনোযোগ দিতে হয় আর্না স্লটের দলকে। ৮২ থেকে ৮৪ মিনিটের মধ্যে গোলের জন্য চারটি শট নেয় নিউক্যাসল। এর মধ্যে কেবল তোনালির শট ছিল লক্ষ্যে, যেটি ঠেকান লিভারপুল গোলরক্ষক।
আট মিনিট যোগ করা সময়ের চতুর্থ মিনিটে নিউক্যাসলের জালে বল পাঠান চিয়েসা। শুরুতে অফসাইড দিলেও ভিএআরের সাহায্যে গোলের বাঁশি বাজান রেফারি। জেগে ওঠে লিভারপুলের আশা। কিন্তু রুদ্ধশ্বাস উত্তেজনার বাকি সময়টায় গোলের আর তেমন কোনো সুযোগ তৈরি করতে পারেনি তারা। নিজেদের উজাড় করে দিয়ে ব্যবধান ধরে রাখে নিউক্যাসল। চোখে জল, মুখে হাসি নিয়ে ৫৬ বছরের মধ্যে প্রথম শিরোপা উদযাপনে মেতে উঠে তারা।