ঢাকা ১১:০০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৭ মার্চ ২০২৫

বড় সাজ্জাদের প্রশ্রয়ে চট্টগ্রামে অপরাধ কর্মে ছোট সাজ্জাদ

  • আপডেট সময় : ০৮:০৮:২০ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৬ মার্চ ২০২৫
  • ২০ বার পড়া হয়েছে

গত শনিবার রাতে ঢাকায় ছোট সাজ্জাদ ধরা পড়ার পর রোববার ডিএমপিতে হাজির করা হয়- ছবি সংগৃহীত

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি: প্রবাসে অবস্থান করা ‘বড়’ সাজ্জাদের প্রশ্রয়ে ছোট সাজ্জাদ চট্টগ্রামের বায়েজিদ, চান্দগাঁও এলাকায় চাঁদাবাজি ও ঝুট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ করত বলে ভাষ্য পুলিশের।

আগের রাতে ঢাকায় ছোট সাজ্জাদ ধরা পড়ার পর রোববার (১৬ মার্চ) সিএমপির মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে আসেন চট্টগ্রাম নগর পুলিশ কমিশনার হাসিব আজিজ। তিনি বলেন, ছোট সাজ্জাদকে ধরার জন্য পুলিশ সদর দপ্তরের সঙ্গে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের গোয়েন্দা তথ্যের সমন্বয় করা হচ্ছিল। পাশাপাশি তাকে ধরার জন্য চট্টগ্রাম পুলিশের একটি দল কয়েকদিন ধরে ঢাকায় অবস্থান করছিল।

পুলিশ সদর দপ্তরের গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে শনিবার রাতে সাজ্জাদকে ঢাকার বসুন্ধরা সিটি শপিংমল থেকে গ্রেফতার করা হয় বলে জানান পুলিশ কর্মকর্তা আজিজ।

গ্রেফতার সাজ্জাদকে চট্টগ্রাম জেলার শীর্ষ সন্ত্রাসী বর্ণনা করে তিনি বলেন, গত আগস্টে অক্সিজেন এলাকায় জোড়া খুন এবং পরবর্তীতে চান্দগাঁও এলাকায় প্রকাশ্যে একজনকে গুলি করে হত্যা করেছে সে। পাশাপাশি প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে চাঁদাবাজি, গার্মেন্টেসের ঝুট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ এবং অপরাধী কার্যক্রম করত। দুবাই প্রবাসী সাজ্জাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে থেকে সে চাঁদাবাজি, বিভিন্ন ধরনের হত্যাকাণ্ডসহ নানা ধরনের অপরাধী কার্যক্রমগুলো পরিচালনা করত।

চট্টগ্রামে সাজ্জাদকে বেশ কয়েকবার গ্রেফতারের চেষ্টা করা হয়েছিল জানিয়ে পুলিশ কমিশনার বলেন, সে দুর্র্ধষ প্রকৃতির সন্ত্রাসী। তাকে যখন ধরতে যাওয়া হয়েছিল, সে গুলি ছুড়ে পাঁচতলা একটি ভবন থেকে আরেকটি ভবনে পালিয়ে চলে যায়। এসময় দুজন লোক আহত হয়েছিল।

হাসিব আজিজ বলেন, বায়েজিদ বোস্তামী থানার ওসি তাকে গ্রেফতারের উদ্যোগ নেওয়ার পরই সে (সাজ্জাদ) প্রকাশ্যে তাকে লাঞ্ছিত করার হুমকি দিয়েছিল। এরপরই মূলত তাকে ধরার জন্য পুরস্কার ঘোষণা করা হয়।

ঢাকাতেও পালানোর চেষ্টা করেছিল: সিএমপি কমিশনার বলেন, শনিবার সাজ্জাদ বসুন্ধরা শপিংমলে গিয়েছিল। খবর পেয়ে ঢাকায় অবস্থান করা সিএমপির সাদা পোশাকের একটি দল সেখানে যায়। এসময় সে পালানোর চেষ্টা করে। তখন পুলিশ আশপাশের লোকজনের সহায়তা নেয়। পরে তেজগাঁও থানা পুলিশের সহায়তায় সাজ্জাদকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। এদিকে শনিবার রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ছবি ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে সাজ্জাদকে ছেড়া শার্টে দেখা গেছে। সাজ্জাদ পালানোর চেষ্টা করায় পুলিশের সাথে ধস্তাধস্তিতে তার শার্ট ছিড়ে যেতে পারে বলে ধারণা কমিশনার হাসিব আজিজের।

থাকত গহীন এলাকায়: এক প্রশ্নের জবাবে সিএমপি কমিশনার বলেন, পুলিশের কাছে তথ্য ছিল গ্রেফতার এড়াতে সাজ্জাদ রাউজান, রাঙ্গুনিয়ার গহিন এলাকায় অবস্থান করতেন। যেখানে অভিযান করাটা ছিল অনেক দুরূহ। মাঝে দুই-একবার শহরে এলেও অল্প সময়ের মধ্যেই চলে যেতেন। তাকে প্রতিনিয়ত নজরদারিতে রাখার কারণে সে ধরা পড়েছে।

৭ দিনের রিমান্ডে শীর্ষ সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদ: চট্টগ্রামের তালিকাভুক্ত এই শীর্ষ সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদকে ৭ দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছেন আদালত।

রোববার (১৬ মার্চ) চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আবু বক্কর সিদ্দিকের আদালত এ আদেশ দেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (প্রসিকিউশন) মো. মফিজ উদ্দিন। তিনি বলেন, চান্দগাঁও থানার একটি হত্যা মামলায় সাজ্জাদকে ১৪ দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। শুনানি শেষে আদালত ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।

নগরীর চান্দগাঁও থানার অদুরপাড়ায় গত বছরের ২১ অক্টোবর বিকেলে একদল যুবক প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করে তাহসিনকে। এলাকার আধিপত্য নিয়ে দুই সন্ত্রাসী গোষ্ঠী-সারোয়ার হোসেন ওরফে বাবলা ও ছোট সাজ্জাদের বিরোধে খুন হন তাহসিন। তিনি বাবলার অনুসারী ছিলেন।

শনিবার (১৫ মার্চ) দিবাগত রাতে রাজধানীর বসুন্ধরা সিটি থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। পরে রাতেই তাকে নিয়ে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দেয় পুলিশের একটি টিম। ‘বুড়ির নাতি’ নামে পরিচিত সাজ্জাদকে ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করেছিল পুলিশ। গত ২৮ জানুয়ারি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে চট্টগ্রাম নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) হুমকি দিয়েছিলেন সাজ্জাদ। পরবর্তী সময়ে গত ৩০ জানুয়ারি সাজ্জাদকে ধরতে তথ্যদানকারী কিংবা সহায়তাকারীকে নগদ অর্থ পুরষ্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়।

লাইভে সাজ্জাদ বলেন, ওসি আরিফ দেশের যে প্রান্তেই থাকেন না কেন, তাকে নগরের অক্সিজেনে ধরে এনে পেটাবেন। প্রয়োজনে তিনি মরে যাবেন। কিন্তু হার মানবেন না। ফেসবুক লাইভে ওসিকে হুমকি, ‘তুকে ল্যাংটা করে পেটাবো’। এছাড়া পুলিশ কমিশনারকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ওসি আরিফ চাঁদাবাজিসহ তার সন্তান হত্যায় জড়িত। তাকে যাতে বদলি করা হয়। পরবর্তী সময়ে এ ঘটনায় জিডি করেন ওই বায়েজিদ বোস্তামী থানার ওসি আরিফুর রহমান।

সর্বশেষ গত বছরের ৫ ডিসেম্বর নগরের অক্সিজেন মোড়ে তাকে ধরতে অভিযান চালায় পুলিশ। এসময় পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে ছুড়তে পালায় সে। গুলিতে পুলিশের দুই সদস্যসহ মোট চারজন গুলিবিদ্ধ হয়।

অপরাধজগতে পা রেখে দিন দিন বেপরোয়া হয়ে ওঠেন সাজ্জাদ। গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর বিএনপি চট্টগ্রাম বিভাগের এক তরুণ নেতার আশ্রয়ে চলে যান সাজ্জাদ। নগরের বায়েজিদ বোস্তামী, চান্দগাঁও, পাঁচলাইশ ও হাটহাজারী থানার প্রায় তিন লাখ বাসিন্দা তার আতঙ্কে দিনাতিপাত করেন। তার চাঁদা দাবির বিষয়টি অনেকটা প্রকাশ্যেই চলে। মূলত নির্মাণাধীন ভবন ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে চাঁদা তোলেন এই সন্ত্রাসী। সাজ্জাদের বিরুদ্ধে হত্যা, অস্ত্র, চাঁদাবাজির ১০টি মামলা রয়েছে। গত বছরের ১৭ জুলাই চান্দগাঁও থানা-পুলিশ অস্ত্রসহ সাজ্জাদকে গ্রেফতার করে। পরের মাসে তিনি জামিনে বেরিয়ে আসেন। বায়েজিদ বোস্তামী থানাসংলগ্ন হাটহাজারীর শিকারপুরের মো. জামালের ছেলে তিনি।

জানা গেছে, ২১ সেপ্টেম্বর বিকেলে নগরের চান্দগাঁও থানার অদূরপাড়া জাগরনী সংঘ ক্লাব সংলগ্ন একটি চায়ের দোকানে মাইক্রোবাস থেকে নেমেই স্থানীয় ব্যবসায়ী আফতাব উদ্দিন তাহসীনকে (২৭) গুলি করে হত্যা করে সাজ্জাদ বাহিনী। তারও আগে ১৮ সেপ্টেম্বর বিকেল চারটার দিকে নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানার কালারপুল এলাকায় শটগান হাতে সাজ্জাদ হোসেনসহ আরো দুজনকে গুলি করতে করতে একটি নির্মাণাধীন ভবনে প্রবেশ করেন। এরপর ওই ভবন মালিকের কাছে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন।

গত বছর ২৯ আগস্ট নগরের বায়েজিদ বোস্তামি থানার অক্সিজেন-কুয়াইশ সড়কে প্রকাশ্যে গুলি করে মাসুদ কায়সার (৩২) ও মোহাম্মদ আনিস (৩৮) নামে দুজনকে হত্যা করা হয়। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, ব্যবসা ও রাজনৈতিক মতাদর্শ নিয়ে দুপক্ষের দ্বন্দ্বের জেরেই এ খুন হয়। এই চাঞ্চল্যকর ডাবল মার্ডারের ঘটনার দুই মামলায় সাজ্জাদ ও তার সহযোগীদের আসামি করা হয়।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

নির্বাচনে দেরি হলে জঙ্গি ও উগ্রপন্থিরাও সুযোগ নেবে: ফখরুল

বড় সাজ্জাদের প্রশ্রয়ে চট্টগ্রামে অপরাধ কর্মে ছোট সাজ্জাদ

আপডেট সময় : ০৮:০৮:২০ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৬ মার্চ ২০২৫

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি: প্রবাসে অবস্থান করা ‘বড়’ সাজ্জাদের প্রশ্রয়ে ছোট সাজ্জাদ চট্টগ্রামের বায়েজিদ, চান্দগাঁও এলাকায় চাঁদাবাজি ও ঝুট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ করত বলে ভাষ্য পুলিশের।

আগের রাতে ঢাকায় ছোট সাজ্জাদ ধরা পড়ার পর রোববার (১৬ মার্চ) সিএমপির মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে আসেন চট্টগ্রাম নগর পুলিশ কমিশনার হাসিব আজিজ। তিনি বলেন, ছোট সাজ্জাদকে ধরার জন্য পুলিশ সদর দপ্তরের সঙ্গে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের গোয়েন্দা তথ্যের সমন্বয় করা হচ্ছিল। পাশাপাশি তাকে ধরার জন্য চট্টগ্রাম পুলিশের একটি দল কয়েকদিন ধরে ঢাকায় অবস্থান করছিল।

পুলিশ সদর দপ্তরের গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে শনিবার রাতে সাজ্জাদকে ঢাকার বসুন্ধরা সিটি শপিংমল থেকে গ্রেফতার করা হয় বলে জানান পুলিশ কর্মকর্তা আজিজ।

গ্রেফতার সাজ্জাদকে চট্টগ্রাম জেলার শীর্ষ সন্ত্রাসী বর্ণনা করে তিনি বলেন, গত আগস্টে অক্সিজেন এলাকায় জোড়া খুন এবং পরবর্তীতে চান্দগাঁও এলাকায় প্রকাশ্যে একজনকে গুলি করে হত্যা করেছে সে। পাশাপাশি প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে চাঁদাবাজি, গার্মেন্টেসের ঝুট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ এবং অপরাধী কার্যক্রম করত। দুবাই প্রবাসী সাজ্জাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে থেকে সে চাঁদাবাজি, বিভিন্ন ধরনের হত্যাকাণ্ডসহ নানা ধরনের অপরাধী কার্যক্রমগুলো পরিচালনা করত।

চট্টগ্রামে সাজ্জাদকে বেশ কয়েকবার গ্রেফতারের চেষ্টা করা হয়েছিল জানিয়ে পুলিশ কমিশনার বলেন, সে দুর্র্ধষ প্রকৃতির সন্ত্রাসী। তাকে যখন ধরতে যাওয়া হয়েছিল, সে গুলি ছুড়ে পাঁচতলা একটি ভবন থেকে আরেকটি ভবনে পালিয়ে চলে যায়। এসময় দুজন লোক আহত হয়েছিল।

হাসিব আজিজ বলেন, বায়েজিদ বোস্তামী থানার ওসি তাকে গ্রেফতারের উদ্যোগ নেওয়ার পরই সে (সাজ্জাদ) প্রকাশ্যে তাকে লাঞ্ছিত করার হুমকি দিয়েছিল। এরপরই মূলত তাকে ধরার জন্য পুরস্কার ঘোষণা করা হয়।

ঢাকাতেও পালানোর চেষ্টা করেছিল: সিএমপি কমিশনার বলেন, শনিবার সাজ্জাদ বসুন্ধরা শপিংমলে গিয়েছিল। খবর পেয়ে ঢাকায় অবস্থান করা সিএমপির সাদা পোশাকের একটি দল সেখানে যায়। এসময় সে পালানোর চেষ্টা করে। তখন পুলিশ আশপাশের লোকজনের সহায়তা নেয়। পরে তেজগাঁও থানা পুলিশের সহায়তায় সাজ্জাদকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। এদিকে শনিবার রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ছবি ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে সাজ্জাদকে ছেড়া শার্টে দেখা গেছে। সাজ্জাদ পালানোর চেষ্টা করায় পুলিশের সাথে ধস্তাধস্তিতে তার শার্ট ছিড়ে যেতে পারে বলে ধারণা কমিশনার হাসিব আজিজের।

থাকত গহীন এলাকায়: এক প্রশ্নের জবাবে সিএমপি কমিশনার বলেন, পুলিশের কাছে তথ্য ছিল গ্রেফতার এড়াতে সাজ্জাদ রাউজান, রাঙ্গুনিয়ার গহিন এলাকায় অবস্থান করতেন। যেখানে অভিযান করাটা ছিল অনেক দুরূহ। মাঝে দুই-একবার শহরে এলেও অল্প সময়ের মধ্যেই চলে যেতেন। তাকে প্রতিনিয়ত নজরদারিতে রাখার কারণে সে ধরা পড়েছে।

৭ দিনের রিমান্ডে শীর্ষ সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদ: চট্টগ্রামের তালিকাভুক্ত এই শীর্ষ সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদকে ৭ দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছেন আদালত।

রোববার (১৬ মার্চ) চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আবু বক্কর সিদ্দিকের আদালত এ আদেশ দেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (প্রসিকিউশন) মো. মফিজ উদ্দিন। তিনি বলেন, চান্দগাঁও থানার একটি হত্যা মামলায় সাজ্জাদকে ১৪ দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। শুনানি শেষে আদালত ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।

নগরীর চান্দগাঁও থানার অদুরপাড়ায় গত বছরের ২১ অক্টোবর বিকেলে একদল যুবক প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করে তাহসিনকে। এলাকার আধিপত্য নিয়ে দুই সন্ত্রাসী গোষ্ঠী-সারোয়ার হোসেন ওরফে বাবলা ও ছোট সাজ্জাদের বিরোধে খুন হন তাহসিন। তিনি বাবলার অনুসারী ছিলেন।

শনিবার (১৫ মার্চ) দিবাগত রাতে রাজধানীর বসুন্ধরা সিটি থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। পরে রাতেই তাকে নিয়ে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দেয় পুলিশের একটি টিম। ‘বুড়ির নাতি’ নামে পরিচিত সাজ্জাদকে ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করেছিল পুলিশ। গত ২৮ জানুয়ারি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে চট্টগ্রাম নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) হুমকি দিয়েছিলেন সাজ্জাদ। পরবর্তী সময়ে গত ৩০ জানুয়ারি সাজ্জাদকে ধরতে তথ্যদানকারী কিংবা সহায়তাকারীকে নগদ অর্থ পুরষ্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়।

লাইভে সাজ্জাদ বলেন, ওসি আরিফ দেশের যে প্রান্তেই থাকেন না কেন, তাকে নগরের অক্সিজেনে ধরে এনে পেটাবেন। প্রয়োজনে তিনি মরে যাবেন। কিন্তু হার মানবেন না। ফেসবুক লাইভে ওসিকে হুমকি, ‘তুকে ল্যাংটা করে পেটাবো’। এছাড়া পুলিশ কমিশনারকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ওসি আরিফ চাঁদাবাজিসহ তার সন্তান হত্যায় জড়িত। তাকে যাতে বদলি করা হয়। পরবর্তী সময়ে এ ঘটনায় জিডি করেন ওই বায়েজিদ বোস্তামী থানার ওসি আরিফুর রহমান।

সর্বশেষ গত বছরের ৫ ডিসেম্বর নগরের অক্সিজেন মোড়ে তাকে ধরতে অভিযান চালায় পুলিশ। এসময় পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে ছুড়তে পালায় সে। গুলিতে পুলিশের দুই সদস্যসহ মোট চারজন গুলিবিদ্ধ হয়।

অপরাধজগতে পা রেখে দিন দিন বেপরোয়া হয়ে ওঠেন সাজ্জাদ। গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর বিএনপি চট্টগ্রাম বিভাগের এক তরুণ নেতার আশ্রয়ে চলে যান সাজ্জাদ। নগরের বায়েজিদ বোস্তামী, চান্দগাঁও, পাঁচলাইশ ও হাটহাজারী থানার প্রায় তিন লাখ বাসিন্দা তার আতঙ্কে দিনাতিপাত করেন। তার চাঁদা দাবির বিষয়টি অনেকটা প্রকাশ্যেই চলে। মূলত নির্মাণাধীন ভবন ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে চাঁদা তোলেন এই সন্ত্রাসী। সাজ্জাদের বিরুদ্ধে হত্যা, অস্ত্র, চাঁদাবাজির ১০টি মামলা রয়েছে। গত বছরের ১৭ জুলাই চান্দগাঁও থানা-পুলিশ অস্ত্রসহ সাজ্জাদকে গ্রেফতার করে। পরের মাসে তিনি জামিনে বেরিয়ে আসেন। বায়েজিদ বোস্তামী থানাসংলগ্ন হাটহাজারীর শিকারপুরের মো. জামালের ছেলে তিনি।

জানা গেছে, ২১ সেপ্টেম্বর বিকেলে নগরের চান্দগাঁও থানার অদূরপাড়া জাগরনী সংঘ ক্লাব সংলগ্ন একটি চায়ের দোকানে মাইক্রোবাস থেকে নেমেই স্থানীয় ব্যবসায়ী আফতাব উদ্দিন তাহসীনকে (২৭) গুলি করে হত্যা করে সাজ্জাদ বাহিনী। তারও আগে ১৮ সেপ্টেম্বর বিকেল চারটার দিকে নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানার কালারপুল এলাকায় শটগান হাতে সাজ্জাদ হোসেনসহ আরো দুজনকে গুলি করতে করতে একটি নির্মাণাধীন ভবনে প্রবেশ করেন। এরপর ওই ভবন মালিকের কাছে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন।

গত বছর ২৯ আগস্ট নগরের বায়েজিদ বোস্তামি থানার অক্সিজেন-কুয়াইশ সড়কে প্রকাশ্যে গুলি করে মাসুদ কায়সার (৩২) ও মোহাম্মদ আনিস (৩৮) নামে দুজনকে হত্যা করা হয়। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, ব্যবসা ও রাজনৈতিক মতাদর্শ নিয়ে দুপক্ষের দ্বন্দ্বের জেরেই এ খুন হয়। এই চাঞ্চল্যকর ডাবল মার্ডারের ঘটনার দুই মামলায় সাজ্জাদ ও তার সহযোগীদের আসামি করা হয়।