প্রত্যাশা ডেস্ক: পবিত্র রমজান মাসের আজ ১৪তম দিবস। ইসলামের পঞ্চ স্তম্ভের মধ্যে মাহে রমজানের সিয়াম সাধনা অন্যতম স্তম্ভ। বছর ঘুরে এ মাসের আগমন হলে অত্যন্ত উৎসবমুখর পরিবেশে মুমিন মুসলমানরা সিয়াম সাধনায় আত্মনিয়োগ করে। এ মাসের ব্যাপক ইবাদত-বন্দেগি ও পুণ্য অর্জনের সাধনায় উজ্জীবিত হয়ে তারা বাকি এগারো মাস ইহ-পরকালীন সুন্দর জীবনের প্রত্যয়ে কাজ করে থাকে। যে কোনো ধর্মীয় ইবাদত মানুষকে কর্মমুখী করে ।
ইবাদতে অভ্যস্ত ব্যক্তিগণ কখনও অলস হতে পারে না। কারণ তাকে চব্বিশ ঘণ্টার দিনটিতে সুনির্দিষ্ট কিছু বিধিনিষেধ মেনে চলতে হয়। নামায রোযা হজ প্রভৃতি ইবাদতে অলস, সময়ের প্রতি অশ্রদ্ধা প্রদর্শনকারীর কোন স্থান নেই। এগুলো আমাদের শিক্ষা দেয় ইবাদতে যেমন সময়কে গুরুত্ব প্রদান করতে হয়, তেমনি দুনিয়াবী অন্যান্য কর্মে ও দায়িত্বে হতে হবে সময়ের প্রতি যত্নশীল, নিয়মের প্রতি পূর্ণ আনুগত্যপরায়ণ।
নামায একজন মুসল্লিকে নিয়মানুবর্তিতার শিক্ষায় উজ্জবিত করে সবচেয়ে বেশি। যারা নামায আদায় করে অথচ নিয়মের প্রতি সময়ের প্রতি শ্রদ্ধাপ্রদর্শন করে না তাদের ব্যাপারে তীব্র নিন্দা বাণী কুরআন-হাদীসে বিবৃত হয়েছে।
সূরা বাকারার ২৩৮ নং আয়াতে বলা হয়েছে: তোমরা সব সালাত এবং বিশেষত : মধ্যবর্তী সালাতের হিফাযত কর আর আল্লাহর সামনে বিনয়াবনত অবস্থায় দাঁড়াও।
সূরা মা-উনে রয়েছে : ঐসব মুসল্লিদের জন্য রয়েছে ধ্বংস, যারা তাদের নামাযের ব্যাপারে ভুলে থাকে। অর্থাৎ যেসব নামাযী নামাযের প্রতি কিংবা সময়ের প্রতি উদাসীন এবং অবহেলাপ্রবণ তাদের জন্য অন্তহীন দুর্ভোগ আর শাস্তি নির্ধারিত রয়েছে। একইভাবে নিয়মানুবর্তিতা এবং সময়ানুবর্তিতার প্রতি অবহেলা প্রদর্শনকে ইসলাম ‘মুনাফেকী’ চরিত্র বলে চিহ্নিত করেছে। নিশ্চয় মুনাফিকরা আল্লাহর সঙ্গে চালবাজি করে। অথচ আল্লাহ্ তাদের চালবাজির প্রতিদান দেবেন। এরা যখন সালাতে দাঁড়ায় অত্যন্ত অলস ভঙ্গিতে দাঁড়ায়, লোক দেখানোই সার। খুব কমই এরা আল্লাহকে স্মরণ করে । (নিসা-১৪২)। ইসলাম ইবাদত-বন্দেগিতে যেমন সময় ও নিয়মের প্রতি জোর দিয়েছে তেমনি কর্মজীবনেও দায়িত্ব নিষ্ঠতার পরিচয় দেয়ার জন্য তাগিদ করেছে। নামায একজন মানুষকে প্রতিনিয়ত আধ্যাত্মিকতার বলে বলিয়ান করে একাগ্রচিত্ততায় উজ্জীবিত করে। নামাযের প্রতিটি রাকাতে সূরা ফাতিহা পাঠে অন্তর হয় আল্লাহ্ প্রেম ও ভক্তিতে বিগলিত। মুসল্লিদের মধ্যে আস্থা আর বিশ্বাস হয় সুদৃঢ়। আবার প্রতিটি রাকাতে পঠিত হয় অন্য এক একটি সূরা বা আয়াত। এগুলো একজন নামাযীর মনের অনেক জিজ্ঞাসার জবাব হয়। নামাযের অন্যান্য দোয়া-দরুদসমূহ পাঠের মধ্য দিয়ে ব্যক্তি মানুষের অন্তরে ইহতিসাব বা আত্মসমালোচনার তীব্র মনোভাব জাগ্রত হয়। এতে সে নিজেকে দীনহীন মনে করে সব কিছুর লোভ লালসা পরিহার পূর্বক খোদাতায়ালার সন্তুষ্টির জন্য মাতোয়ারা হয়ে পড়ে। এমন আমিত্ব বিলোপ অনাবিল চরিত্রের মানুষই হয় সমাজ জীবনের অহঙ্কার। যেমন নামায শেষান্তে একজন মুসল্লি সে আকুতি ভরা দোয়াটিই পড়ে যা আল্লাহর আখেরী নবী হযরত মুহাম্মদ (স) তার শ্রেষ্ঠ উম্মত আবুকে (রাদি) শিক্ষা দিয়েছেন অন্তর বিনয়াদ্র, লাজ-নম্র ও অনুতাপদগ্ধ হওয়ার জন্য।
ইসলামের শিক্ষা হলো : যখন তোমরা নামায সমাপন করবে তখন পৃথিবীর আনাচে কানাচে (কর্মক্ষেত্রে) ছড়িয়ে পড় এবং (কর্ম-শ্রমের মধ্য দিয়ে) আল্লাহর অনুগ্রহ তালাশ করতে থাক আর (এ সময়ও) বেশি বেশি করে আল্লাহকে ইয়াদ কর। অবশ্যই তোমরা সাফল্যমন্ডিত হবে।’ -(সূরাতুল জুমুআ)।