ঢাকা ০৬:২৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ ২০২৫

ভারতের জিও-এয়ারটেলের সঙ্গে স্টারলিংকের চুক্তি

  • আপডেট সময় : ০৮:১৪:৫০ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ মার্চ ২০২৫
  • ৭ বার পড়া হয়েছে

বিদেশের খবর ডেস্ক : ভারতের শীর্ষস্থানীয় টেলিকম কোম্পানি রিলায়েন্স জিও এবং তার প্রতিদ্বন্দ্বী ভারতী এয়ারটেল আলাদাভাবে ইলন মাস্কের স্পেসএক্সের সঙ্গে চুক্তি করেছে, যার মাধ্যমে দেশটিতে স্টারলিংকের স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবা চালু করা হবে। এই চুক্তি বিশ্লেষকদের অনেকটাই অবাক করেছে, কারণ মাস্ক সম্প্রতি এই দুই কোম্পানির সঙ্গে প্রকাশ্যে বিরোধে জড়িয়েছিলেন।

এই সমঝোতা এমন এক সময়ে হলো যখন ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা একটি বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা করছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হুমকি দিয়েছেন, আগামী ২ এপ্রিল থেকে তিনি ভারতের বিরুদ্ধে পাল্টা শুল্ক আরোপ করবেন। তবে স্টারলিংক ইন্টারনেট চালুর বিষয়টি এখনো ভারত সরকারের অনুমোদনের ওপর নির্ভর করছে। ২০২৪ সালের তথ্য অনুযায়ী, স্টারলিংকের বিশ্বব্যাপী ৪৬ লাখ গ্রাহক রয়েছে। ২০২১ সাল থেকেই স্পেসএক্স ভারতে সেবা চালুর চেষ্টা করছে, কিন্তু বিভিন্ন নিয়ম-কানুনের জটিলতায় বিষয়টি বিলম্বিত হয়।

জিও এবং এয়ারটেল জানিয়েছে, তারা তাদের মোবাইল নেটওয়ার্ক এবং স্টারলিংকের প্রযুক্তি একত্রিত করে গ্রামীণ ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে ব্রডব্যান্ড সেবা পৌঁছে দেবে। জিও তার দোকান ও অনলাইন প্ল্যাটফর্মে স্টারলিংক ডিভাইস বিক্রি করবে এবং ইনস্টলেশনের সুবিধা দেবে। এয়ারটেলও একই ধরনের পরিকল্পনা করছে। এছাড়া, এয়ারটেল এরই মধ্যে স্টারলিংকের প্রতিদ্বন্দ্বী ইউটেলস্যাট ওয়ানওয়েবের সঙ্গেও চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। স্টারলিংক ও জিওর একসঙ্গে কাজ করা অনেকের কাছেই অপ্রত্যাশিত ছিল। কারণ এতদিন জিওকে স্টারলিংকের সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখা হচ্ছিল।

রিলায়েন্স জিওর মালিক মুকেশ আম্বানি এবং এয়ারটেলের মালিক সুনীল ভারতী মিত্তল ইলন মাস্কের দাবির বিরোধিতা করেছিলেন যে, স্যাটেলাইট স্পেকট্রাম প্রশাসনিকভাবে বরাদ্দ করা উচিত। তবে, গত অক্টোবর মাসে ভারত সরকার ঘোষণা দেয়, স্পেকট্রাম নিলামের মাধ্যমে নয়, প্রশাসনিকভাবে বরাদ্দ করা হবে। এই সিদ্ধান্ত মাস্কের জন্য বড় জয় হিসেবে দেখা হয়। এই নীতির ফলে স্টারলিংকের পথ সহজ হয় এবং মাস্কের সাম্প্রতিক ওয়াশিংটনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বৈঠকের পরেই চুক্তির আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। প্রযুক্তি বিশ্লেষক প্রসান্ত কে রায় বলেন, মার্কিন প্রশাসনে মাস্কের বিশাল প্রভাব রয়েছে।

সম্ভবত এ কারণেই ভারত সরকার জিওর নিলাম-প্রস্তাবের বিপরীতে গিয়ে মাস্কের দাবিকে সমর্থন করেছে। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ইন্টারনেট বাজার ভারতের ১৪০ কোটি জনগণের মধ্যে ৬৭ কোটি মানুষের এখনো ইন্টারনেট সংযোগ নেই। স্যাটেলাইট ব্রডব্যান্ড প্রযুক্তি যেকোনো স্থানে ইন্টারনেট সুবিধা দিতে পারে, যা প্রত্যন্ত এলাকায় সংযোগের ক্ষেত্রেও কার্যকর হবে। বিশ্লেষক তরুণ পাঠক বলেন, স্টারলিংক এখানে স্পষ্ট বিজয়ী। অনুমোদন পেলে এটি ভারতের মোট মোবাইল ব্যবহারকারীর ৭০ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারবে। তবে ভারতের মতো দেশে দাম গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হবে।

সাধারণ মোবাইল ইন্টারনেট খরচ যেখানে প্রতি মাসে ১৫০ রুপি (প্রায় ২ ডলার), সেখানে স্যাটেলাইট ব্রডব্যান্ডের বর্তমান দাম ১৫০ ডলার (প্রায় ১২ হাজার ৫০০ রুপি)। বিশ্লেষকদের মতে, জিও ও এয়ারটেলের অংশীদারত্বের ফলে স্টারলিংকের দাম কমিয়ে তিন হাজার রুপি করা সম্ভব হতে পারে।
সূত্র: বিবিসি

 

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

ভারতের জিও-এয়ারটেলের সঙ্গে স্টারলিংকের চুক্তি

আপডেট সময় : ০৮:১৪:৫০ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ মার্চ ২০২৫

বিদেশের খবর ডেস্ক : ভারতের শীর্ষস্থানীয় টেলিকম কোম্পানি রিলায়েন্স জিও এবং তার প্রতিদ্বন্দ্বী ভারতী এয়ারটেল আলাদাভাবে ইলন মাস্কের স্পেসএক্সের সঙ্গে চুক্তি করেছে, যার মাধ্যমে দেশটিতে স্টারলিংকের স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবা চালু করা হবে। এই চুক্তি বিশ্লেষকদের অনেকটাই অবাক করেছে, কারণ মাস্ক সম্প্রতি এই দুই কোম্পানির সঙ্গে প্রকাশ্যে বিরোধে জড়িয়েছিলেন।

এই সমঝোতা এমন এক সময়ে হলো যখন ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা একটি বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা করছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হুমকি দিয়েছেন, আগামী ২ এপ্রিল থেকে তিনি ভারতের বিরুদ্ধে পাল্টা শুল্ক আরোপ করবেন। তবে স্টারলিংক ইন্টারনেট চালুর বিষয়টি এখনো ভারত সরকারের অনুমোদনের ওপর নির্ভর করছে। ২০২৪ সালের তথ্য অনুযায়ী, স্টারলিংকের বিশ্বব্যাপী ৪৬ লাখ গ্রাহক রয়েছে। ২০২১ সাল থেকেই স্পেসএক্স ভারতে সেবা চালুর চেষ্টা করছে, কিন্তু বিভিন্ন নিয়ম-কানুনের জটিলতায় বিষয়টি বিলম্বিত হয়।

জিও এবং এয়ারটেল জানিয়েছে, তারা তাদের মোবাইল নেটওয়ার্ক এবং স্টারলিংকের প্রযুক্তি একত্রিত করে গ্রামীণ ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে ব্রডব্যান্ড সেবা পৌঁছে দেবে। জিও তার দোকান ও অনলাইন প্ল্যাটফর্মে স্টারলিংক ডিভাইস বিক্রি করবে এবং ইনস্টলেশনের সুবিধা দেবে। এয়ারটেলও একই ধরনের পরিকল্পনা করছে। এছাড়া, এয়ারটেল এরই মধ্যে স্টারলিংকের প্রতিদ্বন্দ্বী ইউটেলস্যাট ওয়ানওয়েবের সঙ্গেও চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। স্টারলিংক ও জিওর একসঙ্গে কাজ করা অনেকের কাছেই অপ্রত্যাশিত ছিল। কারণ এতদিন জিওকে স্টারলিংকের সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখা হচ্ছিল।

রিলায়েন্স জিওর মালিক মুকেশ আম্বানি এবং এয়ারটেলের মালিক সুনীল ভারতী মিত্তল ইলন মাস্কের দাবির বিরোধিতা করেছিলেন যে, স্যাটেলাইট স্পেকট্রাম প্রশাসনিকভাবে বরাদ্দ করা উচিত। তবে, গত অক্টোবর মাসে ভারত সরকার ঘোষণা দেয়, স্পেকট্রাম নিলামের মাধ্যমে নয়, প্রশাসনিকভাবে বরাদ্দ করা হবে। এই সিদ্ধান্ত মাস্কের জন্য বড় জয় হিসেবে দেখা হয়। এই নীতির ফলে স্টারলিংকের পথ সহজ হয় এবং মাস্কের সাম্প্রতিক ওয়াশিংটনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বৈঠকের পরেই চুক্তির আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। প্রযুক্তি বিশ্লেষক প্রসান্ত কে রায় বলেন, মার্কিন প্রশাসনে মাস্কের বিশাল প্রভাব রয়েছে।

সম্ভবত এ কারণেই ভারত সরকার জিওর নিলাম-প্রস্তাবের বিপরীতে গিয়ে মাস্কের দাবিকে সমর্থন করেছে। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ইন্টারনেট বাজার ভারতের ১৪০ কোটি জনগণের মধ্যে ৬৭ কোটি মানুষের এখনো ইন্টারনেট সংযোগ নেই। স্যাটেলাইট ব্রডব্যান্ড প্রযুক্তি যেকোনো স্থানে ইন্টারনেট সুবিধা দিতে পারে, যা প্রত্যন্ত এলাকায় সংযোগের ক্ষেত্রেও কার্যকর হবে। বিশ্লেষক তরুণ পাঠক বলেন, স্টারলিংক এখানে স্পষ্ট বিজয়ী। অনুমোদন পেলে এটি ভারতের মোট মোবাইল ব্যবহারকারীর ৭০ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারবে। তবে ভারতের মতো দেশে দাম গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হবে।

সাধারণ মোবাইল ইন্টারনেট খরচ যেখানে প্রতি মাসে ১৫০ রুপি (প্রায় ২ ডলার), সেখানে স্যাটেলাইট ব্রডব্যান্ডের বর্তমান দাম ১৫০ ডলার (প্রায় ১২ হাজার ৫০০ রুপি)। বিশ্লেষকদের মতে, জিও ও এয়ারটেলের অংশীদারত্বের ফলে স্টারলিংকের দাম কমিয়ে তিন হাজার রুপি করা সম্ভব হতে পারে।
সূত্র: বিবিসি