ঢাকা ০২:১৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৮ মে ২০২৫
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন

বায়ুদূষণে টানা তিনবার শীর্ষস্থানে বাংলাদেশ

  • আপডেট সময় : ০৫:১০:৪২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ মার্চ ২০২৫
  • ৫২ বার পড়া হয়েছে

বায়ু দূষণের কবলে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার জনজীবন বিপর্যস্ত- ফাইল ছবি

প্রত্যাশা ডেস্ক: ২০২৪ সালে বায়ুদূষণে যৌথভাবে শীর্ষে ছিল বাংলাদেশ এবং উত্তর আফ্রিকার দেশ চাদ। জাতিসংঘের বৈশ্বিক স্বাস্থ্য নিরাপত্তা বিষয়ক অঙ্গসংগঠন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) গতকাল এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে এ তথ্য।

এই নিয়ে তৃতীয়বার এই তকমা পেল বাংলাদেশ। এর আগে ২০২২ এবং ‘২৩ সালেও বায়ুদূষণে শীর্ষে ছিল দেশটি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডব্লিউএইচও’র বায়ুমান অনুসারে বাতাসে সর্বোচ্চ দূষণের যে মাত্রা নির্ধারণ করে দিয়েছে এই সংস্থা, তার তুলনায় ২০২৪ সালে বছরজুড়ে বাংলাদেশ ও চাদের বাতাস ছিল ১৫ গুণেরও বেশি দূষিত।

আরো বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের পুরো বছর ডব্লিউএইচও’র মান অনুসরণ করে বাতাসকে স্বাস্থ্যকর রাখতে সক্ষম হয়েছে মাত্র ৭টি দেশ— অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, বাহামা, বার্বাডোজ, গ্রেনাডা, এস্তোনিয়া এবং আইসল্যান্ড।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চাদে বায়ুদূষণের প্রধান কারণ সাহারা মরুভূমি থেকে উড়ে আসা ধূলোবালি। আর বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, কঙ্গোসহ বেশিরভাগ দেশের বায়ুদূষণের প্রধান কারণ বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা পিএম ২ পয়েন্ট ৫-এর অতিমাত্রায় উপস্থিতি।

বায়ুদূষণ কবলিত দেশের তালিকায় পঞ্চম স্থানে রয়েছে ভারত। তবে ডব্লিউএইচও দূষণের কবলে থাকা শীর্ষ যে ২০টি শহরের তালিকা করেছে, সেই তালিকার ১২টি শহরই ভারতীয়।

ডব্লিউএইচও অবশ্য স্বীকার করেছে যে বায়ুদূষণের বাৎসরিক বৈশ্বিক পরিস্থিতি সংক্রান্ত প্রতিবেদন তৈরির জন্য যে বিপুল তথ্য-উপাত্ত প্রয়োজন—সেসবের একটি অংশ পায়নি সংস্থাটি। বিশেষ করে এশিয়া এবং আফ্রিকার অনেক দেশ তাদের বায়ুদূষণ পরিস্থিতি সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত প্রদান করেনি। ফলে বৃহস্পতিবার যে প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে, সেটি পরিপূর্ণ বা সম্পূর্ণ নয়।

তথ্য না আসার একটি কারণ হলো, অনেক উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত দেশ তাদের বায়ুদূষণের মাত্রা পরীক্ষা করার জন্য মার্কিন দূতাবাস ও কনস্যুলেট ভবনে সংযুক্ত বায়ুমান সেন্সরের ওপর নির্ভর করে।

সম্প্রতি দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক নির্বাহী আদেশে দূতাবাস ও কনস্যুলেট ভবনে বায়ুমান সেন্সরের ব্যবহার বন্ধের আদেশ দিয়েছে। ফলে অনেক দেশই আসলে জানে না যে তাদের বায়ুর স্বাস্থগত মান এখন কেমন।

বায়ু দূষণের কবলে বাংলাদেশের অনেক শহরাঞ্চলের জনজীবন বিপর্যস্ত- ফাইল ছবি

বিভিন্ন দেশের বায়ুমান পর্যবেক্ষণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহায়ক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক সংগঠন আইকিউ এয়ার। সংগঠনের ব্যবস্থাপক ক্রিস্টি চেস্টার শ্রোয়েডার রয়টার্সকে বলেন, “অনেক দরিদ্র দেশে বায়ুমান পর্যবেক্ষণ করার মতো সেন্সর বা আনুষাঙ্গিক সরঞ্জাম নেই। আফ্রিকা মহাদেশে এমন দেশের সংখ্যা বেশি। ফলে ইচ্ছে থাকলেও তারা আমাদেরকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করতে পারেনি।”

যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন প্রতিষ্ঠান এনার্জি পলিসি ইনস্টিটিউটের (এপিক) ক্লিন এয়ার প্রকল্পের পরিচালক ক্রিস্টা হ্যাসেনকোফ রয়টার্সকে জানিয়েছেন, মার্কিন দূতাবাস ও কনস্যুলেট ভবনে বায়ুমান সেন্সর বন্ধ থাকায় দূষণ সংক্রান্ত তথ্য পাঠাতে পারেনি অন্তত ৩৪টি দেশ। সূত্র: রয়টার্স

২০টি দূষিত শহরের ১৩টিই ভারতে, দিল্লি সবচেয়ে দূষিত রাজধানী: বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত ২০টি শহরের ১৩টিই অবস্থিত ভারতে। এছাড়া বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত রাজধানীর তালিকায় সবার ওপরে নাম রয়েছে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লির। সুইজারল্যান্ডভিত্তিক সংস্থা আইকিউএয়ার-এর রিপোর্টে এই তথ্য সামনে এসেছে।

দূষণের জেরে ভারতীয়দের গড় আয়ু কমে যাচ্ছে বলেও রিপোর্টে বলা হয়েছে। ভারতীয় বার্তাসংস্থা পিটিআইয়ের বরাত দিয়ে মঙ্গলবার (১১ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।

বায়ু দূষণের কবলে ভারতের রাজধানী দিল্লির জনজীবন মারাত্মক বিপর্যস্ত- সংগৃহীত ফাইল ছবি

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, মঙ্গলবার প্রকাশিত একটি নতুন প্রতিবেদন অনুসারে, বিশ্বের শীর্ষ ২০টি দূষিত শহরের মধ্যে ১৩টি ভারতে অবস্থিত। দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামের বাইরনিহাট এই তালিকার শীর্ষে রয়েছে।

সুইস বায়ু মান প্রযুক্তি সংস্থা আইকিউএয়ারের ২০২৪ সালের বিশ্ব বায়ু মান প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দিল্লি এখনও বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে দূষিত রাজধানী শহর হিসাবে রয়ে গেছে। আর ভারত ২০২৪ সালে বিশ্বের পঞ্চম সর্বাধিক দূষিত দেশ হিসাবে তালিকায় স্থান পেয়েছে। যদিও ২০২৩ সালে এই তালিকায় ভারতের অবস্থান ছিল তৃতীয়।

সংবাদমাধ্যম বলছে, মঙ্গলবার শহরের বাতাসের দূষণের মান নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে আইকিউএয়ার। ২০২৪ সালের বিশ্বের সব থেকে দূষিত ২০টি শহরের মধ্যে ভারতের ১৩টি শহর আছে। এই তালিকায় দিল্লির সঙ্গেই স্থান পেয়েছে আসামের বাইরনিহাট।

ওই তালিকায় রয়েছে ভারতীয় পাঞ্জাবের মুলানপুর, ফরিদাবাদ, লোনি, নয়াদিল্লি, গুরুগ্রাম, গঙ্গানগর, গ্রেটার নয়ডা, মুজাফফনগর, হনুমানগড় এবং নয়ডা। ওই প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২৩ সালে সব থেকে বেশি দূষিত দেশের তালিকায় ভারত ছিল তৃতীয় স্থানে। এখন বিশ্বের দূষিত দেশগুলোর তালিকায় ভারতের স্থান পঞ্চম।

অবশ্য কী কারণে ভারতে বাতাসের মান এত খারাপ হচ্ছে তার কারণও তুলে ধরা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে। তাতে বলা হয়েছে, গত বছরে ভারতে বাতাসে পিএম২.৫-এর ঘনত্ব ৭ শতাংশ কমেছে। ২০২৩ সালে এর পরিমাণ প্রতি কিউবিক মিটারে ছিল ৫৪.৪ মাইক্রোগ্রাম। এখন এই পরিমাণ ৫০.৬ মাইকোগ্রাম। তবে দিল্লির বাতাসে পিএম২.৫-এর পরিমাণ প্রতি কিউবিকমিটারে ৯১.৬ মাইক্রোগ্রাম। এই কারণেই দিল্লির বাতাসের দূষণের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মানদণ্ড অনুসারে, প্রতি কিউবিক মিটারে পিএম ২.৫-এর পরিমাণ ৫ মাইক্রোগ্রাম হওয়া উচিত। কিন্তু ভারতের প্রায় ৩৫ শতাংশ শহরেই এই মান তার ১০ গুনের বেশি। এর ফলে ভারতীয়দের গড় আয়ু ৫.২ বছর কমে যাচ্ছে। একইসঙ্গে ভারতে স্বাস্থ্য ঝুঁকিও বাড়ছে মারাত্মাক হারে। এমনকি শুধুমাত্র বাতাসের দূষণের কারণে ভারতে প্রতি বছর প্রায় ১৫ লাখ মানুষ মারা যান বলেও একটি রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।

এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক বিজ্ঞানী সৌম্য স্বামীনাথন। তার মতে, ভারত বাতাসের মানের তথ্য সংগ্রহে অগ্রগতি করেছে কিন্তু পর্যাপ্ত পদক্ষেপের অভাব রয়েছে। এখন স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটাতে দূষণ কমানোর দিকে নজর দিয়ে জরুরিভিত্তিতে কাজ করার পরামর্শও দিয়েছেন তিনি।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন

বায়ুদূষণে টানা তিনবার শীর্ষস্থানে বাংলাদেশ

আপডেট সময় : ০৫:১০:৪২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ মার্চ ২০২৫

প্রত্যাশা ডেস্ক: ২০২৪ সালে বায়ুদূষণে যৌথভাবে শীর্ষে ছিল বাংলাদেশ এবং উত্তর আফ্রিকার দেশ চাদ। জাতিসংঘের বৈশ্বিক স্বাস্থ্য নিরাপত্তা বিষয়ক অঙ্গসংগঠন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) গতকাল এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে এ তথ্য।

এই নিয়ে তৃতীয়বার এই তকমা পেল বাংলাদেশ। এর আগে ২০২২ এবং ‘২৩ সালেও বায়ুদূষণে শীর্ষে ছিল দেশটি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডব্লিউএইচও’র বায়ুমান অনুসারে বাতাসে সর্বোচ্চ দূষণের যে মাত্রা নির্ধারণ করে দিয়েছে এই সংস্থা, তার তুলনায় ২০২৪ সালে বছরজুড়ে বাংলাদেশ ও চাদের বাতাস ছিল ১৫ গুণেরও বেশি দূষিত।

আরো বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের পুরো বছর ডব্লিউএইচও’র মান অনুসরণ করে বাতাসকে স্বাস্থ্যকর রাখতে সক্ষম হয়েছে মাত্র ৭টি দেশ— অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, বাহামা, বার্বাডোজ, গ্রেনাডা, এস্তোনিয়া এবং আইসল্যান্ড।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চাদে বায়ুদূষণের প্রধান কারণ সাহারা মরুভূমি থেকে উড়ে আসা ধূলোবালি। আর বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, কঙ্গোসহ বেশিরভাগ দেশের বায়ুদূষণের প্রধান কারণ বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা পিএম ২ পয়েন্ট ৫-এর অতিমাত্রায় উপস্থিতি।

বায়ুদূষণ কবলিত দেশের তালিকায় পঞ্চম স্থানে রয়েছে ভারত। তবে ডব্লিউএইচও দূষণের কবলে থাকা শীর্ষ যে ২০টি শহরের তালিকা করেছে, সেই তালিকার ১২টি শহরই ভারতীয়।

ডব্লিউএইচও অবশ্য স্বীকার করেছে যে বায়ুদূষণের বাৎসরিক বৈশ্বিক পরিস্থিতি সংক্রান্ত প্রতিবেদন তৈরির জন্য যে বিপুল তথ্য-উপাত্ত প্রয়োজন—সেসবের একটি অংশ পায়নি সংস্থাটি। বিশেষ করে এশিয়া এবং আফ্রিকার অনেক দেশ তাদের বায়ুদূষণ পরিস্থিতি সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত প্রদান করেনি। ফলে বৃহস্পতিবার যে প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে, সেটি পরিপূর্ণ বা সম্পূর্ণ নয়।

তথ্য না আসার একটি কারণ হলো, অনেক উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত দেশ তাদের বায়ুদূষণের মাত্রা পরীক্ষা করার জন্য মার্কিন দূতাবাস ও কনস্যুলেট ভবনে সংযুক্ত বায়ুমান সেন্সরের ওপর নির্ভর করে।

সম্প্রতি দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক নির্বাহী আদেশে দূতাবাস ও কনস্যুলেট ভবনে বায়ুমান সেন্সরের ব্যবহার বন্ধের আদেশ দিয়েছে। ফলে অনেক দেশই আসলে জানে না যে তাদের বায়ুর স্বাস্থগত মান এখন কেমন।

বায়ু দূষণের কবলে বাংলাদেশের অনেক শহরাঞ্চলের জনজীবন বিপর্যস্ত- ফাইল ছবি

বিভিন্ন দেশের বায়ুমান পর্যবেক্ষণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহায়ক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক সংগঠন আইকিউ এয়ার। সংগঠনের ব্যবস্থাপক ক্রিস্টি চেস্টার শ্রোয়েডার রয়টার্সকে বলেন, “অনেক দরিদ্র দেশে বায়ুমান পর্যবেক্ষণ করার মতো সেন্সর বা আনুষাঙ্গিক সরঞ্জাম নেই। আফ্রিকা মহাদেশে এমন দেশের সংখ্যা বেশি। ফলে ইচ্ছে থাকলেও তারা আমাদেরকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করতে পারেনি।”

যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন প্রতিষ্ঠান এনার্জি পলিসি ইনস্টিটিউটের (এপিক) ক্লিন এয়ার প্রকল্পের পরিচালক ক্রিস্টা হ্যাসেনকোফ রয়টার্সকে জানিয়েছেন, মার্কিন দূতাবাস ও কনস্যুলেট ভবনে বায়ুমান সেন্সর বন্ধ থাকায় দূষণ সংক্রান্ত তথ্য পাঠাতে পারেনি অন্তত ৩৪টি দেশ। সূত্র: রয়টার্স

২০টি দূষিত শহরের ১৩টিই ভারতে, দিল্লি সবচেয়ে দূষিত রাজধানী: বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত ২০টি শহরের ১৩টিই অবস্থিত ভারতে। এছাড়া বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত রাজধানীর তালিকায় সবার ওপরে নাম রয়েছে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লির। সুইজারল্যান্ডভিত্তিক সংস্থা আইকিউএয়ার-এর রিপোর্টে এই তথ্য সামনে এসেছে।

দূষণের জেরে ভারতীয়দের গড় আয়ু কমে যাচ্ছে বলেও রিপোর্টে বলা হয়েছে। ভারতীয় বার্তাসংস্থা পিটিআইয়ের বরাত দিয়ে মঙ্গলবার (১১ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।

বায়ু দূষণের কবলে ভারতের রাজধানী দিল্লির জনজীবন মারাত্মক বিপর্যস্ত- সংগৃহীত ফাইল ছবি

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, মঙ্গলবার প্রকাশিত একটি নতুন প্রতিবেদন অনুসারে, বিশ্বের শীর্ষ ২০টি দূষিত শহরের মধ্যে ১৩টি ভারতে অবস্থিত। দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামের বাইরনিহাট এই তালিকার শীর্ষে রয়েছে।

সুইস বায়ু মান প্রযুক্তি সংস্থা আইকিউএয়ারের ২০২৪ সালের বিশ্ব বায়ু মান প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দিল্লি এখনও বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে দূষিত রাজধানী শহর হিসাবে রয়ে গেছে। আর ভারত ২০২৪ সালে বিশ্বের পঞ্চম সর্বাধিক দূষিত দেশ হিসাবে তালিকায় স্থান পেয়েছে। যদিও ২০২৩ সালে এই তালিকায় ভারতের অবস্থান ছিল তৃতীয়।

সংবাদমাধ্যম বলছে, মঙ্গলবার শহরের বাতাসের দূষণের মান নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে আইকিউএয়ার। ২০২৪ সালের বিশ্বের সব থেকে দূষিত ২০টি শহরের মধ্যে ভারতের ১৩টি শহর আছে। এই তালিকায় দিল্লির সঙ্গেই স্থান পেয়েছে আসামের বাইরনিহাট।

ওই তালিকায় রয়েছে ভারতীয় পাঞ্জাবের মুলানপুর, ফরিদাবাদ, লোনি, নয়াদিল্লি, গুরুগ্রাম, গঙ্গানগর, গ্রেটার নয়ডা, মুজাফফনগর, হনুমানগড় এবং নয়ডা। ওই প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২৩ সালে সব থেকে বেশি দূষিত দেশের তালিকায় ভারত ছিল তৃতীয় স্থানে। এখন বিশ্বের দূষিত দেশগুলোর তালিকায় ভারতের স্থান পঞ্চম।

অবশ্য কী কারণে ভারতে বাতাসের মান এত খারাপ হচ্ছে তার কারণও তুলে ধরা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে। তাতে বলা হয়েছে, গত বছরে ভারতে বাতাসে পিএম২.৫-এর ঘনত্ব ৭ শতাংশ কমেছে। ২০২৩ সালে এর পরিমাণ প্রতি কিউবিক মিটারে ছিল ৫৪.৪ মাইক্রোগ্রাম। এখন এই পরিমাণ ৫০.৬ মাইকোগ্রাম। তবে দিল্লির বাতাসে পিএম২.৫-এর পরিমাণ প্রতি কিউবিকমিটারে ৯১.৬ মাইক্রোগ্রাম। এই কারণেই দিল্লির বাতাসের দূষণের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মানদণ্ড অনুসারে, প্রতি কিউবিক মিটারে পিএম ২.৫-এর পরিমাণ ৫ মাইক্রোগ্রাম হওয়া উচিত। কিন্তু ভারতের প্রায় ৩৫ শতাংশ শহরেই এই মান তার ১০ গুনের বেশি। এর ফলে ভারতীয়দের গড় আয়ু ৫.২ বছর কমে যাচ্ছে। একইসঙ্গে ভারতে স্বাস্থ্য ঝুঁকিও বাড়ছে মারাত্মাক হারে। এমনকি শুধুমাত্র বাতাসের দূষণের কারণে ভারতে প্রতি বছর প্রায় ১৫ লাখ মানুষ মারা যান বলেও একটি রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।

এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক বিজ্ঞানী সৌম্য স্বামীনাথন। তার মতে, ভারত বাতাসের মানের তথ্য সংগ্রহে অগ্রগতি করেছে কিন্তু পর্যাপ্ত পদক্ষেপের অভাব রয়েছে। এখন স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটাতে দূষণ কমানোর দিকে নজর দিয়ে জরুরিভিত্তিতে কাজ করার পরামর্শও দিয়েছেন তিনি।