ঢাকা ০১:৫০ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ মার্চ ২০২৫

নারীদের আটকে রাখলে সমাজ এগোবে না: রিজভী

  • আপডেট সময় : ০৭:১৭:৩৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ৮ মার্চ ২০২৫
  • ৩১ বার পড়া হয়েছে

বিশ্ব নারী দিবস উপলক্ষে শনিবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির অঙ্গসংগঠন জাতীয়তাবাদী মহিলা দল শোভাযাত্রার আগে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন রুহুল কবির রিজভী-ছবি সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক: সারাদেশে নারী হেনস্তার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে এসব ঘটনায় উগ্রবাদী গোষ্ঠীর মদদ থাকতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, দেশের অগ্রগতি ও উন্নয়নের পথে জঙ্গিবাদ যেন মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে। নারীদের পোশাক নিয়ে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর বক্তব্য গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
‘মায়ের কাছ থেকে আমরা প্রথম নৈতিকতার বাণী শুনি। সুতরাং সেই নারীকে যদি আমরা খোয়াড়ের মধ্যে আবদ্ধ রাখি, সেই বন্দিশালায় রাখি আজকের উন্নতির যুগে, আজকের অগ্রগতির যুগে-যখন মানব আত্মার বিকাশের পথ, সেখানে এই বন্দি করে রাখার কোনো মানে হয় না।’

আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষ্যে শনিবার (৮ মার্চ) সকালে নয়া পল্টনে জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের শোভাযাত্রা পূর্ব সমাবেশে রুহুল কবির রিজভী এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, কোনো উগ্র গোষ্ঠী যদি তার প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী চালাতে চায়; তাহলে সমাজ অগ্রগতি লাভ করবে না, সমাজ এগিয়ে যাবে না। কী খেলাধুলা, কী সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড, কী লেখাপড়ায়- প্রত্যেকটি জায়গায় মেধায় মননে পুরুষের চাইতে মেয়েরা কম নয়। তাদেরকে যদি আমরা আটকে রাখি, বন্দি রাখি-তাহলে সমাজ কোনোদিন এগোবে না।

নিপীড়নের ঘটনা সামনে আসে অল্প: রুহুল কবির রিজভী বলেন, জুলাই-আগস্টের বিপ্লবের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার…এখন কেন সমাজের মধ্যে অস্থিরতা থাকবে। এখন একটি কথা বেরিয়েছে আপনারা জানেন, মব কালচার।

এই মব কালচার তৈরি হলো কেন? আজকের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তো সকল গণতন্ত্রকামী রাজনৈতিক দলের সমর্থিত সরকার।

তিনি বলেন, এই মব কালচারে সমাজে কত যে নিপীড়ন-নির্যাতন হচ্ছে, তার কোনো ইয়ত্তা নাই। কত নারী ও কন্যা শিশু নিপীড়িত হচ্ছে- এর পরিসংখ্যান যা আসে, তা অল্প। মহিলা পরিষদ তার মাসিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে যে, জানুয়ারি মাসেই কন্যা নির্যাতিত হয়েছেন প্রায় ৮৫ জন, নারী নির্যাতিত হয়েছেন ১২০ জন।

এর মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৬৭ জন, হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন ১৪ জনৃএতো ভয়ংকর পরিস্থিতি। মহিলা পরিষদ তার মাসিক প্রতিবেদনে দিয়েছে; কিন্তু এটাই শেষ নন, সংখ্যা হয়ত আরো বাড়বে। কেন এই পরিস্থিতি চলছে?

রিজভী বলেন, একটি জনগণের সমর্থিত সরকারের সমাজের মধ্যে শান্তি-স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা প্রধান দায়িত্ব; আর সেখানে যদি নারী ও কন্যারা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। আমার-আপনার কন্যা সন্তান স্কুলে গিয়ে সে নিপীড়িত হয়ে ফিরে আসে- এই লজ্জা এই জাতির, এই লজ্জা এই দেশের, এই লজ্জা যারা একাত্তরে শহীদ হয়েছেন, যারা জুলাই বিপ্লবে শহীদ হয়েছেন, যারা গণতান্ত্রিক আন্দোলনে শহীদ হয়েছেন- সেই শহীদদেরকে অপমান করা।

কেন দুষ্কৃতকারীরা আধিপত্য বজায় রাখবে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। তাহলে সরকার কীসের জন্য?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন স্টাফ কীভাবে সাহস পায়? রুহুল কবির রিজভী বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন স্টাফ রিকশা থামিয়ে এক মেয়েকে বলছে যে-তোমার এই পোশাক পরা ঠিক হয়নি। তাহলে বলুন, তার মুরুব্বি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ সেটা যদি অশ্লীলও হয়- বলতে পারতো। আমরা শুনছি এখন- ওড়নাকাণ্ড, পোশাককাণ্ড। একটা তো মব কালচার, আরেকটা কোথায় যেন উগ্রবাদী গোষ্ঠী কাজ করছে।

তিনি বলেন, পুরুষ এবং মেয়ে আমরা হলাম মানব সম্প্রদায়। যিনি প্রথম ইসলামে দীক্ষিত হয়েছেন তিনি তো একজন মহিলা-বিবি খাদিজা (রা.)। তাহলে নিজেকে কেমন করে চলতে হবে, সন্তানকে কীভাবে মানুষ করতে হবে- এই ইন্সটিটিউশন তো হচ্ছে মা।

আর মা তো একজন নারী…বাবা সত্য কথা বলিস, মিথ্যা কথা বলিস না, শিক্ষকদেরকে সম্মান করিস, মুরব্বিদেরকে সম্মান করিস- এটা কে শেখায় সন্তানকে? সেটা হলো মা।

রিজভী বলেন, তাহলে নারীদের কীভাবে চলতে হবে, সেটা পুরুষরা যদি প্রতিদিন বাতিয়ে দেয়-তাহলে তো আমি মা-বোন-স্ত্রী তার স্বাধীনতায়, আমি তো তার চলাফেরায়, আমি তো তার চিন্তায়, তার লেখাপড়ায়, তার মূল্যবোধে হস্তক্ষেপ করছি।

সে (মা-বোন-স্ত্রী) কীভাবে চলবে, তাকে সেই স্বাধীনতা দিতে হবে। এই স্বাধীনতায় কোনো গোষ্ঠী ও কোনো দলের কারো হস্তক্ষেপ করার কোনো অধিকার নাই। কারণ ধর্মীয় মূল্যবোধ বলুন, সমাজ নৈতিকতা বলুন- এটা সবচেয়ে বেশি প্রথিত থাকে, ধারণ করে নারীরা।

জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাসের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদের সঞ্চালনায় এই সংক্ষিপ্ত সমাবেশ হয়। সমাবেশের পর একটি শোভাযাত্রা লী কাকরাইলের নাইটেঙ্গল রেস্তোরাঁর মোড় হয়ে আবার নয়া পল্টনে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে গিয়ে শেষ হয়।

দেশে নারী-শিশু নির্যাতন উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে: সালাহউদ্দিন আহমেদ: বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, বর্তমানে নারী ও শিশুদের প্রতি নির্যাতন উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। সরকারকে এটি কঠোর হাতে দমন করতে হবে। অন্যথায় দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে। তিনি বলেন, বিএনপি এসব ঘটনায় দলীয়ভাবে প্রতিবাদ করেছে। আমিও ব্যক্তিগতভাবে প্রতিবাদ করছি।

শনিবার (৮ মার্চ) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির মাঠে বিশ্ব নারী দিবস উপলক্ষে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

নারী নির্যাতন বৃদ্ধি পাওয়ারজন্য বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারকেও দায়ী করে সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, কারণ সে সময় বিচারহীনতার সংস্কৃতি ছিল। দেশের সাম্প্রতিক অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির অপচেষ্টায় আওয়ামী ফ্যাসীবাদের হাত রয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে হবে। আমাদের আন্দোলন সংগ্রামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সর্বত্রই নারীদের গৌরবোজ্জ্বল অংশগ্রহণ ছিল। বিগত জুলাইয়ের আন্দোলনও তারা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। তাই সংসদীয় ব্যবস্থাসহ সবক্ষেত্রে নারীদের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান নারী, শিশু ও যুব সমাজের উন্নয়নে যেসব প্রাতিষ্ঠানিক ও সাংবিধানিক পদক্ষেপ নিয়েছিলেন, এর মাধ্যমে জাতি অনেক দূর এগিয়েছে।

নারী দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার সংগ্রামী নারী এবং জুলাই নারী শহীদ ও আন্দোলনকারীদের বিশেষ ট্রিবিউট প্রদানে বইমেলা, নারী উদ্যোক্তাদের স্টল ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। শুরুতেই এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান। ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিবের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছিরের সঞ্চালনা বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল, সাবেক এমপি শিরীন সুলতানা, অ্যাডভোকেট নেওয়াজ হালিমা আর্নি, কেন্দ্রীয় স্থানীয় সরকার বিষয়ক সহ-সম্পাদক শাম্মী আক্তার, সাবেক এমপি ও বিএনপির স্বনির্ভর বিষয়ক সহ-সম্পাদক নিলুফার চৌধুরী মনি, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সহসম্পাদক রেহানা আক্তার রানুসহ প্রমুখ। এসময় উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোভিসি সায়মা হক বিদিশা, অধ্যাপক তাজমেরী তাজমেরী এস ইসলামসহ অন্যরা।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সেলিমা রহমান বলেন, জুলাই বিপ্লবে ছাত্রীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। কিন্তু তাদেরকে সেভাবে মূল্যায়ন করা হয়নি। সবক্ষেত্রে নারীদের নির্যাতন করা হচ্ছে। মব জাস্টিস হচ্ছে। তিনি সরকারের কাছে প্রশ্ন রেখে বলেন, এসব ঘটনায় কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তিনি এ ব্যাপারে স্পষ্ট ব্যাখ্যা দাবি করেন। সেলিমা রহমান বলেন, বিএনপি সব সময় নারীবান্ধব দল। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও বেগম খালেদা জিয়া নারীদের বিষয়ে নানা পদক্ষেপ নিয়েছেন। তিনি নারীদেরকে সরাসরি নির্বাচনে বেশি অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়ার আহ্বান জানান।

প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন বিগত সরকারের সময়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ১৫ মাস কারাবরণকারী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কোবরা। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা ভিন্নমত সহ্য করতে পারতেন না। একটি টকশোতে অংশগ্রহণ করায় তাকে বিনা বিচারে কারাগারে নিয়েছে। তিনি বলেন, নারীরা কখনও নিরাপদে ছিল না এখনও নেই। বিশেষ করে মাগুরার ছোট্ট শিশুটির ওপর পাশবিক নির্যাতনকারীদের বিষয়ে এখনও জোরালো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।

অনুষ্ঠানে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কোবরাকে ছাত্রদলের পক্ষ থেকে বই, কোরআন শরিফ ও জায়নামাজ উপহার প্রদান করা হয়।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

ধর্ষণের বিরুদ্ধে ফুঁসছে দেশ

নারীদের আটকে রাখলে সমাজ এগোবে না: রিজভী

আপডেট সময় : ০৭:১৭:৩৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ৮ মার্চ ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক: সারাদেশে নারী হেনস্তার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে এসব ঘটনায় উগ্রবাদী গোষ্ঠীর মদদ থাকতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, দেশের অগ্রগতি ও উন্নয়নের পথে জঙ্গিবাদ যেন মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে। নারীদের পোশাক নিয়ে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর বক্তব্য গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
‘মায়ের কাছ থেকে আমরা প্রথম নৈতিকতার বাণী শুনি। সুতরাং সেই নারীকে যদি আমরা খোয়াড়ের মধ্যে আবদ্ধ রাখি, সেই বন্দিশালায় রাখি আজকের উন্নতির যুগে, আজকের অগ্রগতির যুগে-যখন মানব আত্মার বিকাশের পথ, সেখানে এই বন্দি করে রাখার কোনো মানে হয় না।’

আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষ্যে শনিবার (৮ মার্চ) সকালে নয়া পল্টনে জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের শোভাযাত্রা পূর্ব সমাবেশে রুহুল কবির রিজভী এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, কোনো উগ্র গোষ্ঠী যদি তার প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী চালাতে চায়; তাহলে সমাজ অগ্রগতি লাভ করবে না, সমাজ এগিয়ে যাবে না। কী খেলাধুলা, কী সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড, কী লেখাপড়ায়- প্রত্যেকটি জায়গায় মেধায় মননে পুরুষের চাইতে মেয়েরা কম নয়। তাদেরকে যদি আমরা আটকে রাখি, বন্দি রাখি-তাহলে সমাজ কোনোদিন এগোবে না।

নিপীড়নের ঘটনা সামনে আসে অল্প: রুহুল কবির রিজভী বলেন, জুলাই-আগস্টের বিপ্লবের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার…এখন কেন সমাজের মধ্যে অস্থিরতা থাকবে। এখন একটি কথা বেরিয়েছে আপনারা জানেন, মব কালচার।

এই মব কালচার তৈরি হলো কেন? আজকের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তো সকল গণতন্ত্রকামী রাজনৈতিক দলের সমর্থিত সরকার।

তিনি বলেন, এই মব কালচারে সমাজে কত যে নিপীড়ন-নির্যাতন হচ্ছে, তার কোনো ইয়ত্তা নাই। কত নারী ও কন্যা শিশু নিপীড়িত হচ্ছে- এর পরিসংখ্যান যা আসে, তা অল্প। মহিলা পরিষদ তার মাসিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে যে, জানুয়ারি মাসেই কন্যা নির্যাতিত হয়েছেন প্রায় ৮৫ জন, নারী নির্যাতিত হয়েছেন ১২০ জন।

এর মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৬৭ জন, হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন ১৪ জনৃএতো ভয়ংকর পরিস্থিতি। মহিলা পরিষদ তার মাসিক প্রতিবেদনে দিয়েছে; কিন্তু এটাই শেষ নন, সংখ্যা হয়ত আরো বাড়বে। কেন এই পরিস্থিতি চলছে?

রিজভী বলেন, একটি জনগণের সমর্থিত সরকারের সমাজের মধ্যে শান্তি-স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা প্রধান দায়িত্ব; আর সেখানে যদি নারী ও কন্যারা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। আমার-আপনার কন্যা সন্তান স্কুলে গিয়ে সে নিপীড়িত হয়ে ফিরে আসে- এই লজ্জা এই জাতির, এই লজ্জা এই দেশের, এই লজ্জা যারা একাত্তরে শহীদ হয়েছেন, যারা জুলাই বিপ্লবে শহীদ হয়েছেন, যারা গণতান্ত্রিক আন্দোলনে শহীদ হয়েছেন- সেই শহীদদেরকে অপমান করা।

কেন দুষ্কৃতকারীরা আধিপত্য বজায় রাখবে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। তাহলে সরকার কীসের জন্য?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন স্টাফ কীভাবে সাহস পায়? রুহুল কবির রিজভী বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন স্টাফ রিকশা থামিয়ে এক মেয়েকে বলছে যে-তোমার এই পোশাক পরা ঠিক হয়নি। তাহলে বলুন, তার মুরুব্বি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ সেটা যদি অশ্লীলও হয়- বলতে পারতো। আমরা শুনছি এখন- ওড়নাকাণ্ড, পোশাককাণ্ড। একটা তো মব কালচার, আরেকটা কোথায় যেন উগ্রবাদী গোষ্ঠী কাজ করছে।

তিনি বলেন, পুরুষ এবং মেয়ে আমরা হলাম মানব সম্প্রদায়। যিনি প্রথম ইসলামে দীক্ষিত হয়েছেন তিনি তো একজন মহিলা-বিবি খাদিজা (রা.)। তাহলে নিজেকে কেমন করে চলতে হবে, সন্তানকে কীভাবে মানুষ করতে হবে- এই ইন্সটিটিউশন তো হচ্ছে মা।

আর মা তো একজন নারী…বাবা সত্য কথা বলিস, মিথ্যা কথা বলিস না, শিক্ষকদেরকে সম্মান করিস, মুরব্বিদেরকে সম্মান করিস- এটা কে শেখায় সন্তানকে? সেটা হলো মা।

রিজভী বলেন, তাহলে নারীদের কীভাবে চলতে হবে, সেটা পুরুষরা যদি প্রতিদিন বাতিয়ে দেয়-তাহলে তো আমি মা-বোন-স্ত্রী তার স্বাধীনতায়, আমি তো তার চলাফেরায়, আমি তো তার চিন্তায়, তার লেখাপড়ায়, তার মূল্যবোধে হস্তক্ষেপ করছি।

সে (মা-বোন-স্ত্রী) কীভাবে চলবে, তাকে সেই স্বাধীনতা দিতে হবে। এই স্বাধীনতায় কোনো গোষ্ঠী ও কোনো দলের কারো হস্তক্ষেপ করার কোনো অধিকার নাই। কারণ ধর্মীয় মূল্যবোধ বলুন, সমাজ নৈতিকতা বলুন- এটা সবচেয়ে বেশি প্রথিত থাকে, ধারণ করে নারীরা।

জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাসের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদের সঞ্চালনায় এই সংক্ষিপ্ত সমাবেশ হয়। সমাবেশের পর একটি শোভাযাত্রা লী কাকরাইলের নাইটেঙ্গল রেস্তোরাঁর মোড় হয়ে আবার নয়া পল্টনে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে গিয়ে শেষ হয়।

দেশে নারী-শিশু নির্যাতন উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে: সালাহউদ্দিন আহমেদ: বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, বর্তমানে নারী ও শিশুদের প্রতি নির্যাতন উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। সরকারকে এটি কঠোর হাতে দমন করতে হবে। অন্যথায় দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে। তিনি বলেন, বিএনপি এসব ঘটনায় দলীয়ভাবে প্রতিবাদ করেছে। আমিও ব্যক্তিগতভাবে প্রতিবাদ করছি।

শনিবার (৮ মার্চ) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির মাঠে বিশ্ব নারী দিবস উপলক্ষে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

নারী নির্যাতন বৃদ্ধি পাওয়ারজন্য বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারকেও দায়ী করে সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, কারণ সে সময় বিচারহীনতার সংস্কৃতি ছিল। দেশের সাম্প্রতিক অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির অপচেষ্টায় আওয়ামী ফ্যাসীবাদের হাত রয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে হবে। আমাদের আন্দোলন সংগ্রামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সর্বত্রই নারীদের গৌরবোজ্জ্বল অংশগ্রহণ ছিল। বিগত জুলাইয়ের আন্দোলনও তারা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। তাই সংসদীয় ব্যবস্থাসহ সবক্ষেত্রে নারীদের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান নারী, শিশু ও যুব সমাজের উন্নয়নে যেসব প্রাতিষ্ঠানিক ও সাংবিধানিক পদক্ষেপ নিয়েছিলেন, এর মাধ্যমে জাতি অনেক দূর এগিয়েছে।

নারী দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার সংগ্রামী নারী এবং জুলাই নারী শহীদ ও আন্দোলনকারীদের বিশেষ ট্রিবিউট প্রদানে বইমেলা, নারী উদ্যোক্তাদের স্টল ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। শুরুতেই এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান। ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিবের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছিরের সঞ্চালনা বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল, সাবেক এমপি শিরীন সুলতানা, অ্যাডভোকেট নেওয়াজ হালিমা আর্নি, কেন্দ্রীয় স্থানীয় সরকার বিষয়ক সহ-সম্পাদক শাম্মী আক্তার, সাবেক এমপি ও বিএনপির স্বনির্ভর বিষয়ক সহ-সম্পাদক নিলুফার চৌধুরী মনি, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সহসম্পাদক রেহানা আক্তার রানুসহ প্রমুখ। এসময় উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোভিসি সায়মা হক বিদিশা, অধ্যাপক তাজমেরী তাজমেরী এস ইসলামসহ অন্যরা।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সেলিমা রহমান বলেন, জুলাই বিপ্লবে ছাত্রীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। কিন্তু তাদেরকে সেভাবে মূল্যায়ন করা হয়নি। সবক্ষেত্রে নারীদের নির্যাতন করা হচ্ছে। মব জাস্টিস হচ্ছে। তিনি সরকারের কাছে প্রশ্ন রেখে বলেন, এসব ঘটনায় কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তিনি এ ব্যাপারে স্পষ্ট ব্যাখ্যা দাবি করেন। সেলিমা রহমান বলেন, বিএনপি সব সময় নারীবান্ধব দল। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও বেগম খালেদা জিয়া নারীদের বিষয়ে নানা পদক্ষেপ নিয়েছেন। তিনি নারীদেরকে সরাসরি নির্বাচনে বেশি অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়ার আহ্বান জানান।

প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন বিগত সরকারের সময়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ১৫ মাস কারাবরণকারী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কোবরা। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা ভিন্নমত সহ্য করতে পারতেন না। একটি টকশোতে অংশগ্রহণ করায় তাকে বিনা বিচারে কারাগারে নিয়েছে। তিনি বলেন, নারীরা কখনও নিরাপদে ছিল না এখনও নেই। বিশেষ করে মাগুরার ছোট্ট শিশুটির ওপর পাশবিক নির্যাতনকারীদের বিষয়ে এখনও জোরালো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।

অনুষ্ঠানে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কোবরাকে ছাত্রদলের পক্ষ থেকে বই, কোরআন শরিফ ও জায়নামাজ উপহার প্রদান করা হয়।