নিজস্ব প্রতিবেদক: মাগুরায় ধর্ষণের শিকার শিশুটির শারীরিক অবস্থা অবনতির দিকে। তাকে শুক্রবার রাতেই লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়েছে বলে সংবাদমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান।
তার শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক উল্লেখ করে শনিবার (৮ মার্চ) দুপুরে বলেন, ‘এখনও শিশুটির জ্ঞান ফেরেনি। তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।’
আট বছরের এই শিশুটি বুধবার (৫ মার্চ) গভীর রাতে বোনের বাড়ি বেড়াতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। শিশুটিকে প্রথমে মাগুরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে সেখান থেকে স্থানান্তর করা হয় ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানেও তার অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। বৃহস্পতিবার রাতে অচেতন অবস্থায় শিশুটিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অবস্থার অবনতি হলে গতকাল শুক্রবার রাতে শিশুটিকে লাইফ সাপোর্ট দেওয়া হয়।
শনিবার সকালের দিকে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, পেড্রিয়াটিক আইসিইউ’র বাইরে অবস্থান করছেন শিশুটির আত্মীয়রা। অনবরত কেঁদেই চলছেন শিশুটির মা, বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন তিনি। কখনও বসে বিলাপ করছেন, কখনও আবার চিৎকার করে জানতে চাইছেন, তার মেয়ে কেন কথা বলছে না?
শিশুটির ধর্ষণের ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত বোনের শ্বশুর হিটু শেখ (৪৭) ও বোনের স্বামী সজিব শেখকে (১৮) আটক করেছে পুলিশ। পরে বোনের ভাসুরকেও আটক করে পুলিশ।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘শিশুটির শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক। শিশুটিকে শুক্রবার রাতে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়েছে।’
‘ধর্ষণের শিকার শিশুটির শারীরিক অবস্থা খুবই ক্রিটিক্যাল’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তাকে হত্যা চেষ্টার সময়ে গলায় যে ইঞ্জুরি হয়েছে, সেটার জন্য তার শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা হচ্ছে। শরীরে জ্বর আছে এবং নিউমোনিয়ার আশঙ্কাও রয়েছে। তাকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আপনারা সবাই তার জন্য দোয়া করুন।’
এদিকে শিশুটির জন্য উন্নত চিকিৎসার জন্য চার সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে বলেও জানান পরিচালক মো. আসাদুজ্জামান। তিনি জানান, শিশুটির উন্নত চিকিৎসার জন্য পেডিয়াট্রিক, সার্জারি, অ্যানেস্থেশিয়া ও গাইনি বিভাগের চার চিকিৎসককে নিয়ে মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে।
শিশুটির স্বজনরা জানিয়েছেন, তার বাবা ভ্যানচালক। তাদের বাড়ি মাগুরায়। মাস চারেক আগে শিশুর বড় বোনের বিয়ে হয় মাগুরা সদরের নিজনান্দুয়ালী গ্রামের রাজমিস্ত্রি হিটু শেখের ছেলে সজিব শেখের সঙ্গে। সজিবও রাজমিস্ত্রি। কিছুদিন আগে শিশুটির বোনের বাড়িতে বেড়াতে যায়। সে স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী।
শিশুটির চাচা বলেন, আমার ভাতিজি স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে লেখাপড়া করতো। শনিবার নিজ বাড়ি শ্রীপুর থেকে সে বোনের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল। গত বৃহস্পতিবার সকালে বড় বোনের শ্বশুর হিটু মিয়া তাকে একটি ঘরের মধ্যে নিয়ে ধর্ষণ করে। মারাত্মক অসুস্থ অবস্থায় মেয়েটিকে মাগুরা সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। এরপর গুরুতর অবস্থায় ঢামেকে নেওয়া হয়।
স্বজনরা জানান, বিয়ের মাসখানেক পরে শিশুটির বড় বোনকেও পাশবিক নির্যাতনের চেষ্টা করেছিলেন তার শ্বশুর হিটু শেখ। কিন্তু মেয়ের বাবা দরিদ্র হওয়ায় বিষয়টি জানার পরও চুপ ছিলেন। বড় বোনও শুক্রবার ঢামেক হাসপাতালে এসেছিলেন। তবে বিকালে তাকে বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
এদিকে মাগুরা শহরে শিশু ধর্ষণের ঘটনায় থানা ঘেরাও করে প্রতিবাদ জানিয়েছেন স্থানীয়রা। শুক্রবার (৭ মার্চ) বিকালে ধর্ষণের প্রতিবাদ ও বিচারের দাবিতে তারা মিছিল নিয়ে মাগুরা সদর থানা ঘেরাও করে বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিতে থাকেন। পরে সেনাবাহিনী এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।
মাগুরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মিরাজুল ইসলাম বলেন, শিশু ধর্ষণের ঘটনায় তিন জনকে আটক করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে।