প্রযুক্তি ডেস্ক: বিশ্বে প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিকভাবে জৈবিক কম্পিউটার উন্মোচন করেছে অস্ট্রেলিয়ার একটি স্টার্টআপ। তাদের দাবি, মানুষের মস্তিষ্কের জ্যান্ত কোষের ওপর নির্ভর করে চলবে এটি।
এ সপ্তাহে স্পেনের বার্সেলোনায় অনুষ্ঠিত মোবাইল ওয়ার্ল্ড কংগ্রেসে এ কম্পিউটারটি উন্মোচন করেছে মেলবোর্নভিত্তিক স্টার্টআপ ‘কর্টিকাল ল্যাবস’।
এ বায়োলজিকেল বা জৈবিক কম্পিউটারকে ‘একটি বাক্সের মধ্যে থাকা শরীর’ হিসাবে বর্ণনা করেছে স্টার্টআপটি, যার এআই ও রোবোটিক্স শিল্পে বিপ্লব ঘটানোর সম্ভাবনা রয়েছে বলে দাবি তাদের।
ল্যাবে তৈরি নিউরন চিপ ব্যবহার করে কম্পিউটারটিকে তৈরি করেছেন গবেষকরা, যেটিকে বসানো হয়েছে একটি সিলিকন চিপের ওপর। ডিভাইসটিকে এই চিপ বৈদ্যুতিক স্পন্দন পাঠাতে ও গ্রহণ করতে সাহায্য করে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ব্রিটিশ দৈনিক ইন্ডিপেনডেন্ট।
গবেষকরা বলছেন, কম্পিউটারের ভেতরে থাকা পাম্প, গ্যাস ও তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের এক লাইফ সাপোর্ট সিস্টেম এসব নিউরনকে ছয় মাস পর্যন্ত বাঁচিয়ে রাখে।
জৈবিক কম্পিউটারটিকে বর্ণনা করার সহজ উপায় হচ্ছে, বাক্সের মধ্যে থাকা একটি শরীরের মতো বিষয় এটি, বলেছেন কর্টিকাল ল্যাবসের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ব্রেট কাগান।
প্রচলিত সিলিকনভিত্তিক কম্পিউটারের চেয়ে আরো সক্ষমতার সঙ্গে শিখতে ও অভিযোজিত হতে পারে জৈবিক সিস্টেমে তৈরি এই কম্পিউটার। একইসঙ্গে শক্তি বা বিদ্যুতের ব্যবহারও কম করে এরা।
জৈবিক কম্পিউটারের প্রাথমিক সংস্করণে ছিল মানুষ ও ইঁদুরের আট লাখ নিউরন দিয়ে তৈরি একটি চিপ, যা ভিডিও গেইম ‘পং’ কীভাবে খেলতে হয় তা নিজেই নিজেকে শেখাতে পেরেছিল বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ইন্ডিপেনডেন্ট।
গবেষণাটি প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘সেল’-এ। গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, জৈবিক কম্পিউটারের এসব নিউরন সিমুলেটেড গেইমের জগতে মূর্ত হয়ে ওঠার সময়ই এরা সংবেদনশীলতা শিখেছে ও তা দেখিয়েছে।
কোম্পানিটির দাবি, কম্পিউটারটির ‘চেতনা ও অনুভূতি’ সম্পর্কিত বিভিন্ন নৈতিক উদ্বেগ ঠেকানোর জন্য গার্ডরেল বা রেলিং স্থাপন করেছে তারা। তবে এর বেশি তথ্য দেয়নি কর্টিকাল ল্যাবস।
কম্পিউটারের এ নিউরনটি স্ব-প্রোগ্রামিং, নমনীয় ও চারশ কোটি বছরের বিবর্তনের ফলাফল, বলে নিজেদের ওয়েবসাইটে বলেছে স্টার্টআপটি। গতানুগতিক বুদ্ধিমত্তার বাইরে গিয়ে চূড়ান্ত পর্যায়ের লার্নিং মেশিন তৈরির জন্য প্রচলিত কম্পিউটিংয়ের সঙ্গে জীববিজ্ঞানকে একসঙ্গে করেছে আমাদের এই প্রযুক্তি। আমাদের নিউরাল কম্পিউটার সিস্টেমের এসব জটিল কাজ আয়ত্ত করার জন্য ন্যূনতম বিদ্যুৎ ও প্রশিক্ষণ ডেটার প্রয়োজন।
কর্টিকাল ল্যাবস আরো বলেছে, এসব কম্পিউটার বিক্রির জন্য বাজারে আসবে এ বছরের জুনে এবং প্রতিটি ইউনিটের দাম হবে প্রায় ৩৫ হাজার ডলার।
স্টার্টআপটির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী ড. হোন ওয়েং চং বলেছেন, ছয় বছর ধরে কর্টিকাল ল্যাবসকে চালিয়ে আসছে এমন এক দৃষ্টিভঙ্গির সমাপ্তি ঘটল আজ। আমাদের দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য হচ্ছে, এ প্রযুক্তিকে ব্যবহারের জন্য সবার হাতের নাগালে আনা। যাতে বিশেষভাবে তৈরি কোনো হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার ছাড়াই গবেষকদের কাছে এ ধরনের কম্পিউটার সহজলভ্য হতে পারে।