ক্রীড়া ডেস্ক: পিএসজির টানা আক্রমণের তোড়ে ম্যাচের প্রায় পুরোটা সময় কোণঠাসা হয়ে রইল লিভারপুল। আলিসনের দুর্দান্ত কয়েকটি সেভে কোনোমতে তারা আগলে রাখতে পারল জাল। সেই তারাই শেষ দিকে উল্টো বল পাঠিয়ে দিল পিএসজির জালে! বদলি নামার পরের মিনিটেই গোল করে দলকে অবিশ্বাস্য এক জয় এনে দিলেন হার্ভে এলিয়ট। প্যারিসে বুধবার রাতে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ ষোলোর প্রথম লেগে ১-০ গোলে জিতেছে ইংলিশ দলটি। বদলি নামার ৪৭ সেকেন্ড পরই, ম্যাচে নিজের প্রথম স্পর্শে, ৮৭তম মিনিটে গোলটি করেন ২১ বছর বয়সী ইংলিশ উইঙ্গার এলিয়ট।
বিস্ময়করভাবে, গোটা ম্যাচে লক্ষ্যে লিভারপুলের প্রথম ও একমাত্র শট এটিই! গোলের জন্য তারা শট নিতেই পারে মাত্র দুটি। যেখানে প্রায় ৭১ শতাংশ সময় বল দখলে রেখে গোলের জন্য ২৭টি শট নিয়ে ১০টি লক্ষ্যে রাখতে পারে পিএসজি, ব্যর্থ হয় তাদের সব প্রচেষ্টা। এলিয়ট শেষের নায়ক হলেও লিভারপুলকে ম্যাচে রাখার পুরো কৃতিত্ব আলিসনের। ৫-৬টি দুর্দান্ত সেভ করেন এই ব্রাজিলিয়ান গোলরক্ষক। ম্যাচে তার মোট সেভ ৯টি। নাটকীয় এই জয়ে কোয়ার্টার-ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে কিছুটা এগিয়ে রইল লিভারপুল। আগামী মঙ্গলবার অ্যানফিল্ডে হবে ফিরতি লেগ। এই হারে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে পিএসজির টানা ২০ ম্যাচের (১৮ জয়, ২ ড্র) অপরাজেয় যাত্রায় ছেদ পড়ল। শুরু থেকে আক্রমণে ছড়ি ঘোরায় পিএসজি। ষোড়শ মিনিটে প্রথম উল্লেখযোগ্য সুযোগ পায় তারা। লিভারপুলের দুই খেলোয়াড়কে কাটিয়ে বক্সে ঢুকে কাট-ব্যাক করেন উসমান দেম্বেলে, কিন্তু শট লক্ষ্যে রাখতে পারেননি জোয়াও নেভেস। চার মিনিট পর বক্সে দারুণ নৈপুণ্যে লিভারপুলের জালে বল পাঠিয়ে উল্লাসে মাতেন খাভিচা কাভারাৎস্খেলিয়া, তবে ভিএআরের সাহায্যে অফসাইডের বাঁশি বাজান রেফারি। ২৬তম মিনিটে লিভারপুলের ডিফেন্ডার ইব্রাহিমা কোনাতে নিজেদের বক্সে বার্কোলাকে ফেলে দিলে পেনাল্টির আবেদন করে পিএসজি। তবে রেফারির সাড়া মেলেনি। ২৯তম মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে কাভারাৎস্খেলিয়ার বুলেট গতির শট ঠেকান আলিসন।
পরের মিনিটে এই ব্রাজিলিয়ান গোলরক্ষকের দৃঢ়তায় আরেক দফা বেঁচে যায় লিভারপুল। ওয়ান-অন-ওয়ানে এগিয়ে এসে দেম্বেলের শট পা দিয়ে ঠেকান তিনি। বল যদিও বিপদমুক্ত হয়নি। বার্কোলার শট এক ডিফেন্ডার আটকে দেওয়ার পর ফিরতি বল উড়িয়ে মারেন তরুণ এই ফরাসি ফরোয়ার্ড। ৩৭তম মিনিটে আবার দলকে রক্ষা করেন আলিসন। এবার কাছ থেকে কাভারাৎস্খেলিয়ার নিচু শট এক হাতে ঠেকান তিনি। প্রথমার্ধের নির্ধারিত সময়ের শেষ মিনিটে কর্নারে লুইস দিয়াসের হেড লক্ষ্যে থাকেনি। গোলের জন্য লিভারপুলের প্রথম প্রচেষ্টা এটি।
৫৪তম মিনিটে ২২ গজ দূর থেকে কাভারাৎস্খেলিয়ার ফ্রি-কিক ঝাঁপিয়ে ব্যর্থ করে দেন আলিসন। ৬৭তম মিনিটে আক্রমণভাগে দিয়োগো জটা ও লুইস দিয়াসকে তুলে দারউইন নুনেস ও কার্টিস জোন্সকে নামান লিভারপুল কোচ আর্না স্লট। ৮০তম মিনিটে আরেকটি দুর্দান্ত সেভে পিএসজিকে হতাশ করেন আলিসন। বক্সের বাইরে থেকে দিজিরে দুয়ের শট ঝাঁপিয়ে কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন তিনি। ৮৬তম মিনিটে মোহামেদ সালাহর বদলি হিসেবে নামেন এলিয়ট। এরপরই তার গোল, যেখানে বড় অবদান আছে আলিসনেরও। উঁচু করে শট নেন তিনি। নুনেস বল নিয়ন্ত্রণে নিয়ে পাস দেন বক্সে, ছুটে গিয়ে শট নেন এলিয়ট, বল গোলরক্ষক জানলুইজি দোন্নারুম্মার হাতে লেগে জালে জড়ায়। উল্লাসে মেতে ওঠে লিভারপুল শিবির।