ঢাকা ১০:৩৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৮ মে ২০২৫

একসঙ্গে ইফতার করেন ৬ হাজার রোজাদার

  • আপডেট সময় : ০৭:১৭:১৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ মার্চ ২০২৫
  • ৪০ বার পড়া হয়েছে

একসঙ্গে ইফতার করেন ৬ হাজার রোজাদার

সাতক্ষীরা সংবাদদাতা : সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার নলতা আহছানিয়া মিশনে প্রায় ৯০ বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে ইফতার মাহফিল। খান বাহাদুর আহছানউল্লাহ (রা.) ১৯৩৫ সালে মিশন প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এখানে রমজান মাসে ইফতারের আয়োজন শুরু হয়, যা সময়ের পরিক্রমায় দেশের অন্যতম বৃহৎ ও ঐতিহ্যবাহী মাহফিলে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন ৬ হাজার রোজাদার একত্রে বসে ইফতার করেন, যা ধর্মীয় সম্প্রীতি, ভ্রাতৃত্ববোধ ও মানবিকতার অনন্য নিদর্শন হিসেবে বিবেচিত হয়। দেশ-বিদেশ থেকে আগত ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা এই ঐতিহাসিক ইফতার আয়োজনে অংশগ্রহণ করে এক আত্মিক প্রশান্তি অনুভব করেন।

কেন্দ্রীয় আহছানিয়া মিশনের (ভারপ্রাপ্ত) সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, প্রতিবছর প্রথম রমজান থেকে ৩০ রমজান পর্যন্ত ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়। বর্তমানে এখানে প্রতিদিন ছয় হাজার মানুষ একসঙ্গে বসে ইফতার করেন। হযরত খান বাহাদুর আহছানউল্লাহ (রা.) এই আয়োজন চালু করেন, যা সময়ের সঙ্গে আরও প্রসারিত হয়েছে। শুরুতে ইফতারের আয়োজন সীমিত ছিল, কিন্তু এখন এটি দেশের সবচেয়ে বড় ইফতার মাহফিলে পরিণত হয়েছে। তিনি আরও বলেন, প্রতিদিন ইফতারের জন্য সাত রকমের খাবার পরিবেশন করা হয় খেজুর, ছোলা, শিঙ্গাড়া, ফিরনি, চিঁড়া, কলা ও ডিম। পুরো আয়োজনের ব্যয় প্রতিদিন প্রায় ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা, যা আমাদের পীর কেবলার আশেক বিন্দু ও ভক্তরা বহন করেন। অতীতে আমরা আশপাশের এতিমখানা ও মসজিদে আরও চার হাজার ইফতার সরবরাহ করতাম, তবে বিভিন্ন পরিস্থিতির কারণে সেটি আপাতত বন্ধ রয়েছে।

এই বিশাল ইফতার আয়োজন সফল করতে প্রতিদিন সকাল থেকে রান্নার কাজ শুরু হয়। দীর্ঘ ৪৫ বছর ধরে রান্নার দায়িত্বে থাকা বাবুর্চি মোকতার হোসেন বলেন, প্রতিদিন ভোর থেকে কাজ শুরু করি, রান্না শেষ করতে বিকেল ৫টা পর্যন্ত সময় লাগে। এখানে আমাদের কোনো কষ্ট হয় না, কারণ কাজ ভাগ করে দেওয়া থাকে। এত বড় আয়োজন করতে পারাটা আমাদের জন্য গর্বের বিষয়। এই আয়োজনে কাজ করেন প্রায় ৩০০ স্বেচ্ছাসেবক, যারা বিনা পারিশ্রমিকে প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পরিশ্রম করেন। স্বেচ্ছাসেবক আরিফুল ইসলাম, যিনি দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে এই কাজে যুক্ত। তিনি বলেন, আমি চাকরি করি, কিন্তু চাকরির পর এখানে এসে কাজ না করলে আত্মতৃপ্তি পাই না। আমাদের স্বেচ্ছাসেবকরা বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করেন, শুধুমাত্র এই পবিত্র আয়োজনের অংশ হতে। প্রতি বছর ৩ শতাধিক স্বেচ্ছাসেবক সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রোজাদারদের সম্মানার্থে কাজ করেন। কোনোরকম বিশৃঙ্খলা ছাড়াই ইফতার বণ্টন করা হয়, যাতে সবাই শান্তিপূর্ণভাবে ইফতার করতে পারেন।

 

 

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

একসঙ্গে ইফতার করেন ৬ হাজার রোজাদার

আপডেট সময় : ০৭:১৭:১৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ মার্চ ২০২৫

সাতক্ষীরা সংবাদদাতা : সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার নলতা আহছানিয়া মিশনে প্রায় ৯০ বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে ইফতার মাহফিল। খান বাহাদুর আহছানউল্লাহ (রা.) ১৯৩৫ সালে মিশন প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এখানে রমজান মাসে ইফতারের আয়োজন শুরু হয়, যা সময়ের পরিক্রমায় দেশের অন্যতম বৃহৎ ও ঐতিহ্যবাহী মাহফিলে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন ৬ হাজার রোজাদার একত্রে বসে ইফতার করেন, যা ধর্মীয় সম্প্রীতি, ভ্রাতৃত্ববোধ ও মানবিকতার অনন্য নিদর্শন হিসেবে বিবেচিত হয়। দেশ-বিদেশ থেকে আগত ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা এই ঐতিহাসিক ইফতার আয়োজনে অংশগ্রহণ করে এক আত্মিক প্রশান্তি অনুভব করেন।

কেন্দ্রীয় আহছানিয়া মিশনের (ভারপ্রাপ্ত) সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, প্রতিবছর প্রথম রমজান থেকে ৩০ রমজান পর্যন্ত ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়। বর্তমানে এখানে প্রতিদিন ছয় হাজার মানুষ একসঙ্গে বসে ইফতার করেন। হযরত খান বাহাদুর আহছানউল্লাহ (রা.) এই আয়োজন চালু করেন, যা সময়ের সঙ্গে আরও প্রসারিত হয়েছে। শুরুতে ইফতারের আয়োজন সীমিত ছিল, কিন্তু এখন এটি দেশের সবচেয়ে বড় ইফতার মাহফিলে পরিণত হয়েছে। তিনি আরও বলেন, প্রতিদিন ইফতারের জন্য সাত রকমের খাবার পরিবেশন করা হয় খেজুর, ছোলা, শিঙ্গাড়া, ফিরনি, চিঁড়া, কলা ও ডিম। পুরো আয়োজনের ব্যয় প্রতিদিন প্রায় ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা, যা আমাদের পীর কেবলার আশেক বিন্দু ও ভক্তরা বহন করেন। অতীতে আমরা আশপাশের এতিমখানা ও মসজিদে আরও চার হাজার ইফতার সরবরাহ করতাম, তবে বিভিন্ন পরিস্থিতির কারণে সেটি আপাতত বন্ধ রয়েছে।

এই বিশাল ইফতার আয়োজন সফল করতে প্রতিদিন সকাল থেকে রান্নার কাজ শুরু হয়। দীর্ঘ ৪৫ বছর ধরে রান্নার দায়িত্বে থাকা বাবুর্চি মোকতার হোসেন বলেন, প্রতিদিন ভোর থেকে কাজ শুরু করি, রান্না শেষ করতে বিকেল ৫টা পর্যন্ত সময় লাগে। এখানে আমাদের কোনো কষ্ট হয় না, কারণ কাজ ভাগ করে দেওয়া থাকে। এত বড় আয়োজন করতে পারাটা আমাদের জন্য গর্বের বিষয়। এই আয়োজনে কাজ করেন প্রায় ৩০০ স্বেচ্ছাসেবক, যারা বিনা পারিশ্রমিকে প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পরিশ্রম করেন। স্বেচ্ছাসেবক আরিফুল ইসলাম, যিনি দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে এই কাজে যুক্ত। তিনি বলেন, আমি চাকরি করি, কিন্তু চাকরির পর এখানে এসে কাজ না করলে আত্মতৃপ্তি পাই না। আমাদের স্বেচ্ছাসেবকরা বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করেন, শুধুমাত্র এই পবিত্র আয়োজনের অংশ হতে। প্রতি বছর ৩ শতাধিক স্বেচ্ছাসেবক সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রোজাদারদের সম্মানার্থে কাজ করেন। কোনোরকম বিশৃঙ্খলা ছাড়াই ইফতার বণ্টন করা হয়, যাতে সবাই শান্তিপূর্ণভাবে ইফতার করতে পারেন।