ঢাকা ০৩:৩৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০৫ মার্চ ২০২৫

ভারত সীমান্তে তুরস্কের তৈরি নজরদারি ড্রোন ওড়াচ্ছে বাংলাদেশ : এএনআইয়ের রিপোর্ট

  • আপডেট সময় : ০৭:৪৩:২২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ মার্চ ২০২৫
  • ৭ বার পড়া হয়েছে

বিদেশের খবর ডেস্ক : বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার আন্তর্জাতিক সীমান্তের কাছে নজরদারি ড্রোন ওড়াচ্ছে বাংলাদেশ। প্রতিরক্ষা সূত্রের বরাত দিয়ে গতকাল মঙ্গলবার (৪ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এমনটাই দাবি করেছে ভারতীয় বার্তা সংস্থা এএনআই। তুরস্কের তৈরি এসব ড্রোন ভারত সীমান্তের খুব কাছাকাছি অঞ্চলে পরিচালনা করা হচ্ছে বলেও প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে এএনআই বলেছে, বাংলাদেশ তুরস্কের তৈরি টিবি-টু বায়রাক্টার ড্রোনগুলো হাতে পেয়েছে এবং নজরদারি কর্মকাণ্ডের জন্য ভারতীয় সীমান্তের কাছাকাছি সেগুলো পরিচালনা করছে। বার্তা সংস্থাটির দাবি, ভারতীয় প্রতিরক্ষা সূত্রগুলো এএনআইকে জানিয়েছে—ভারতীয় সংস্থাগুলো এসব ড্রোন উড্ডয়ন করতে দেখেছে এবং সেগুলোকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।

সূত্র জানিয়েছে, এসব ড্রোনকে গত কয়েক মাস ধরে নজরদারি অভিযান পরিচালনা করতে দেখা গেছে এবং ভারতের সীমান্ত বরাবর তাদের (বাংলাদেশের) নিজস্ব অঞ্চলের ভেতরে উড়ছে। ভারত এই এলাকায় তাদের কার্যকলাপের ওপর নিবিড় নজর রাখার জন্য রাডার স্থাপনসহ অন্যান্য সকল ব্যবস্থা নিয়েছে বলেও জানিয়েছে তারা। এমনকি মাঝে মাঝে বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর টিবি-২ ড্রোনগুলো নজরদারি মিশনে ২০ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে উড়েছে বলেও সূত্রগুলো দাবি করেছে। বায়রাক্টার টিবি-টু ড্রোনগুলো খুবই অত্যাধুনিক এবং এটি তুরস্কের প্রতিরক্ষা শিল্পের সবচেয়ে বড় সাফল্য। মনুষ্যবিহীন এই আকাশযানটি আকাশ থেকে স্থল লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালাতে সক্ষম এবং বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন যুদ্ধ ও সংঘাতে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়েছে। মূলত তুরস্কের বাইকার টেকনোলজি কোম্পানি ২০১৪ সাল থেকে বাণিজ্যিকভাবে বায়রাক্টার টিবি-টু ড্রোন উৎপাদন ও বিক্রি করতে শুরু করলেও রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধে এই ড্রোন বিশেষ নজর কেড়েছে।

বায়রাক্টার টিবি-টু ড্রোন হচ্ছে এমন এক ধরনের যুদ্ধাস্ত্র যা গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের পাশাপাশি নজরদারি এবং হামলায়ও অংশ নিতে পারে। এই ড্রোনে একটি অত্যন্ত উন্নত প্রযুক্তির ইলেকট্রো-অপটিক্যাল ক্যামেরা আছে। তার সাথে আছে ডাটা-লিংক সিস্টেম এবং দুই থেকে চারটি পর্যন্ত বিস্ফোরক— যা প্রিসিশন-গাইডেড অর্থাৎ উড়ে গিয়ে নির্ভুল নিশানায় আঘাত হানতে পারে। এর ফলে এটা দিয়ে আগে থেকে লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণ করা যায় এবং তারপর দিক-নির্ণয় করে চলতে সক্ষম বোমা দিয়ে তাদের ওপর আঘাত হানা যায়। এটি জনপ্রিয় হওয়ার আরেকটি কারণ হলো— মূল কমান্ড সেন্টার থেকে দূরে কোথাও একটি কন্টেইনার বা ট্রাকে মোবাইল বেজ স্থাপন করে সহজে ড্রোনটি পরিচালনা করা যায়। ফলে মিশনের প্রয়োজনে যেকোনও স্থানে নিয়ে গিয়ে ড্রোন উড্ডয়ন বা হামলা চালানো যায়।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বায়রাক্টার টিবি-টু ড্রোনে চারটি লেজার গাইডেড স্মার্ট রকেট সংযুক্ত করা যায়, যা লক্ষ্যবস্তুতে নির্ভুলভাবে আঘাত করতে পারে। ড্রোনটি ঘণ্টায় ১২৯ কিলোমিটার থেকে শুরু করে ২২২ কিলোমিটার গতিতে উড়তে পারে। এছাড়া বেজ স্টেশন থেকে তিনশ কিলোমিটার দূর পর্যন্ত ড্রোনটি চালানো যায়। এর ভেতরে এমন কিছু সেন্সর রয়েছে, যার ফলে জিপিএসের ওপর পুরোপুরি নির্ভর না করে ন্যাভিগেশন করতে পারে। সর্বোচ্চ ৭০০ কেজি ওজন নিয়ে ড্রোনটি উড়তে পারে। মোট জ্বালানি ধরে ৩০০ লিটার। ড্রোনটি টেক-অফ, ল্যান্ডিংসহ পুরোপুরি স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিচালিত হতে পারে। এর কম্পিউরাইজড সিস্টেমে তিনটি অটো পাইলট প্রোগ্রাম রয়েছে। বায়রাক্টার টিবি-টু ড্রোনটি ১৮ হাজার ফিট উচ্চতায় থেকে কার্যক্রম চালাতে পারে। তবে আকাশে সর্বোচ্চ ২৫ হাজার ফুট পর্যন্ত উঁচুতে ওঠার ও সর্বোচ্চ ২৭ ঘণ্টা তিন মিনিট ওড়ার রেকর্ড রয়েছে।
ড্রোনে থাকা রিয়েল ইমাজেরি টাইম ট্রান্সমিশন সিস্টেমের ফলে একাধিক ব্যবহারকারী একইসঙ্গে তাৎক্ষণিকভাবে উচ্চমানের ভিডিও দেখতে পারেন। ওয়েবভিত্তিক অ্যাপ্লিকেশন হওয়ার কারণে ইন্টারনেট ব্যবহার করে ট্যাবলেট বা মোবাইলেও নজরদারি করা সম্ভব।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

ভারত সীমান্তে তুরস্কের তৈরি নজরদারি ড্রোন ওড়াচ্ছে বাংলাদেশ : এএনআইয়ের রিপোর্ট

আপডেট সময় : ০৭:৪৩:২২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ মার্চ ২০২৫

বিদেশের খবর ডেস্ক : বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার আন্তর্জাতিক সীমান্তের কাছে নজরদারি ড্রোন ওড়াচ্ছে বাংলাদেশ। প্রতিরক্ষা সূত্রের বরাত দিয়ে গতকাল মঙ্গলবার (৪ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এমনটাই দাবি করেছে ভারতীয় বার্তা সংস্থা এএনআই। তুরস্কের তৈরি এসব ড্রোন ভারত সীমান্তের খুব কাছাকাছি অঞ্চলে পরিচালনা করা হচ্ছে বলেও প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে এএনআই বলেছে, বাংলাদেশ তুরস্কের তৈরি টিবি-টু বায়রাক্টার ড্রোনগুলো হাতে পেয়েছে এবং নজরদারি কর্মকাণ্ডের জন্য ভারতীয় সীমান্তের কাছাকাছি সেগুলো পরিচালনা করছে। বার্তা সংস্থাটির দাবি, ভারতীয় প্রতিরক্ষা সূত্রগুলো এএনআইকে জানিয়েছে—ভারতীয় সংস্থাগুলো এসব ড্রোন উড্ডয়ন করতে দেখেছে এবং সেগুলোকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।

সূত্র জানিয়েছে, এসব ড্রোনকে গত কয়েক মাস ধরে নজরদারি অভিযান পরিচালনা করতে দেখা গেছে এবং ভারতের সীমান্ত বরাবর তাদের (বাংলাদেশের) নিজস্ব অঞ্চলের ভেতরে উড়ছে। ভারত এই এলাকায় তাদের কার্যকলাপের ওপর নিবিড় নজর রাখার জন্য রাডার স্থাপনসহ অন্যান্য সকল ব্যবস্থা নিয়েছে বলেও জানিয়েছে তারা। এমনকি মাঝে মাঝে বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর টিবি-২ ড্রোনগুলো নজরদারি মিশনে ২০ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে উড়েছে বলেও সূত্রগুলো দাবি করেছে। বায়রাক্টার টিবি-টু ড্রোনগুলো খুবই অত্যাধুনিক এবং এটি তুরস্কের প্রতিরক্ষা শিল্পের সবচেয়ে বড় সাফল্য। মনুষ্যবিহীন এই আকাশযানটি আকাশ থেকে স্থল লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালাতে সক্ষম এবং বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন যুদ্ধ ও সংঘাতে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়েছে। মূলত তুরস্কের বাইকার টেকনোলজি কোম্পানি ২০১৪ সাল থেকে বাণিজ্যিকভাবে বায়রাক্টার টিবি-টু ড্রোন উৎপাদন ও বিক্রি করতে শুরু করলেও রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধে এই ড্রোন বিশেষ নজর কেড়েছে।

বায়রাক্টার টিবি-টু ড্রোন হচ্ছে এমন এক ধরনের যুদ্ধাস্ত্র যা গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের পাশাপাশি নজরদারি এবং হামলায়ও অংশ নিতে পারে। এই ড্রোনে একটি অত্যন্ত উন্নত প্রযুক্তির ইলেকট্রো-অপটিক্যাল ক্যামেরা আছে। তার সাথে আছে ডাটা-লিংক সিস্টেম এবং দুই থেকে চারটি পর্যন্ত বিস্ফোরক— যা প্রিসিশন-গাইডেড অর্থাৎ উড়ে গিয়ে নির্ভুল নিশানায় আঘাত হানতে পারে। এর ফলে এটা দিয়ে আগে থেকে লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণ করা যায় এবং তারপর দিক-নির্ণয় করে চলতে সক্ষম বোমা দিয়ে তাদের ওপর আঘাত হানা যায়। এটি জনপ্রিয় হওয়ার আরেকটি কারণ হলো— মূল কমান্ড সেন্টার থেকে দূরে কোথাও একটি কন্টেইনার বা ট্রাকে মোবাইল বেজ স্থাপন করে সহজে ড্রোনটি পরিচালনা করা যায়। ফলে মিশনের প্রয়োজনে যেকোনও স্থানে নিয়ে গিয়ে ড্রোন উড্ডয়ন বা হামলা চালানো যায়।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বায়রাক্টার টিবি-টু ড্রোনে চারটি লেজার গাইডেড স্মার্ট রকেট সংযুক্ত করা যায়, যা লক্ষ্যবস্তুতে নির্ভুলভাবে আঘাত করতে পারে। ড্রোনটি ঘণ্টায় ১২৯ কিলোমিটার থেকে শুরু করে ২২২ কিলোমিটার গতিতে উড়তে পারে। এছাড়া বেজ স্টেশন থেকে তিনশ কিলোমিটার দূর পর্যন্ত ড্রোনটি চালানো যায়। এর ভেতরে এমন কিছু সেন্সর রয়েছে, যার ফলে জিপিএসের ওপর পুরোপুরি নির্ভর না করে ন্যাভিগেশন করতে পারে। সর্বোচ্চ ৭০০ কেজি ওজন নিয়ে ড্রোনটি উড়তে পারে। মোট জ্বালানি ধরে ৩০০ লিটার। ড্রোনটি টেক-অফ, ল্যান্ডিংসহ পুরোপুরি স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিচালিত হতে পারে। এর কম্পিউরাইজড সিস্টেমে তিনটি অটো পাইলট প্রোগ্রাম রয়েছে। বায়রাক্টার টিবি-টু ড্রোনটি ১৮ হাজার ফিট উচ্চতায় থেকে কার্যক্রম চালাতে পারে। তবে আকাশে সর্বোচ্চ ২৫ হাজার ফুট পর্যন্ত উঁচুতে ওঠার ও সর্বোচ্চ ২৭ ঘণ্টা তিন মিনিট ওড়ার রেকর্ড রয়েছে।
ড্রোনে থাকা রিয়েল ইমাজেরি টাইম ট্রান্সমিশন সিস্টেমের ফলে একাধিক ব্যবহারকারী একইসঙ্গে তাৎক্ষণিকভাবে উচ্চমানের ভিডিও দেখতে পারেন। ওয়েবভিত্তিক অ্যাপ্লিকেশন হওয়ার কারণে ইন্টারনেট ব্যবহার করে ট্যাবলেট বা মোবাইলেও নজরদারি করা সম্ভব।