নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকার আইনশৃঙ্খলা সামলাতে পুলিশের পাশাপাশি কোস্ট গার্ড, বিজিবি ও আনসার সদস্যরাও যাতে অলিগলিতে টহল দিতে পারে, সেজন্য মোটরসাইকেল কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
সে কারণে কোস্টগার্ড, বিজিবি ও আনসার সদস্যদের জন্য মোটরসাইকেল কেনার সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।
রোববার (২ মার্চ) ওই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রাজধানী ঢাকাসহ দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একগুচ্ছ গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে এবং সেগুলো বাস্তবায়নে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে নিয়মিত মনিটরিং করা হচ্ছে।
পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনী, বিজিবি, র্যাব, আনসার, কোস্ট গার্ড সদস্যদের নিয়ে গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে চলছে অপারেশন ‘ডেভিল হান্ট’।
তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে ‘ডেভিল হান্ট’ শব্দটি ব্যবহার না করে বলা হয়েছে, চিহ্নিত অপরাধী, সন্ত্রাসী এবং মাদক ও চোরাকারবারিদের ধরতে গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে সারাদেশে এই ‘বিশেষ অপারেশন’ চলছে।
সেখানে বলা হয়, ঢাকা শহরের আশপাশে বিশেষ করে টঙ্গী, বসিলা, কেরানীগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল বাড়ানো হয়েছে।
ডিএমপির পুলিশ সদস্য, বিজিবি, আনসার ও বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের সদস্যদের জন্য মোটরসাইকেল ক্রয়ের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে যাতে করে তাৎক্ষণিকভাবে অলিগলিতে টহল দিয়ে অপরাধীদের ধরা সম্ভব হয়।
আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে সরকার কী কী করছে, তার একটি খতিয়ান তুলে ধরা হয়েছে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।
১। পুলিশসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মনোবল বাড়ানো ও দক্ষতার সঙ্গে নিজেদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনের জন্য পুলিশ, প্রশাসন, বিচার বিভাগ ও পাবলিক প্রসিকিউটরদের অংশগ্রহণে সারাদেশে ‘দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মানবাধিকার ও পরিবেশের উপর গুরুত্বসহ আইন প্রয়োগ’ বিষয়ে ওয়ার্কশপ হয়েছে।
২। পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট প্রধান, উপপুলিশ কমিশনার, সেনাবাহিনীর মাঠে নিয়োজিত ব্রিগেড প্রধান ও অন্যান্য দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা প্রতিটি ঘটনার বিষয়ে গৃহীত সিদ্ধান্তের বিষয়ে গণমাধ্যমে ব্রিফ করছেন।
৩। রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে তল্লাশি চৌকি/ চেকপোস্ট ও অপরাধপ্রবণ এলাকায় টহল সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। সেনাবাহিনী, পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট ও বিজিবির সমন্বয়ে যৌথবাহিনী টার্গেট এলাকাসমূহে জোরদার অপারেশন পরিচালনা করছে।
৪। রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কে নিয়মিত পেট্রোলের পাশাপাশি নৌবাহিনী এবং কোস্ট গার্ডের অতিরিক্ত পেট্রোল নিয়োজিত করা হয়েছে।
৫। ছিনতাইকারী, ডাকাত, কিশোর গ্যাং ও অন্যান্য অপরাধপ্রবণ স্থানগুলোতে কম্বাইন্ড অভিযান পরিচালনা করে অপরাধীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে।
৬। থানাভিত্তিক সন্ত্রাসীদের তালিকা হালনাগাদ করে ত্বরিৎ পদক্ষেপ নিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
৭। মিথ্যা, গুজব ও প্রপাগান্ডার বিপরীতে সত্য তথ্য প্রচারে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
৮। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী, স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশের আইজিপি, ডিএমপি কমিশনারসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ভোর ও গভীর রাতে ঝটিকা সফরে থানা, চেকপোস্ট ও টহল কার্যক্রম পরিদর্শন ও মনিটরিং করছেন।
৯। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ইতোমধ্যে দেশের সকল প্রশাসনিক বিভাগে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিভাগীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিয়েছেন।
১০। ঢাকা মহানগর এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কার্যকর উন্নয়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন বাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত বিভিন্ন চেকপোস্ট এবং টহল দলের রাত্রিকালীন কার্যক্রম মনিটর করার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদেরকে নিয়মিত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
১১। মামলা যাচাই-বাছাই করে প্রকৃত অপরাধীদের শনাক্তকরণে জেলা ও মেট্রোপলিটন পর্যায়ে মামলা মনিটরিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতে করে নিরপরাধ ব্যক্তিরা মামলার হয়রানি থেকে ‘রেহাই’ পাচ্ছেন।
১২। জুলাই বিপ্লবের শহীদ পরিবারের মামলাগুলো নিয়মিতভাবে গুরুত্বের সঙ্গে মনিটর করা হচ্ছে, যাতে প্রকৃত অপরাধীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা যায়।
১৩। আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত প্রতিটি ঘটনা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে গুরুত্বের সঙ্গে পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।