কৃষি ও কৃষক ডেস্ক: খরাপ্রবণ বরেন্দ্র অঞ্চলে কৃষিতে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলেছে নেদারল্যান্ডসের উচ্চফলনশীল আলু জাত ‘ভ্যালেন্সিয়া’। স্মার্ট কৃষি প্রযুক্তির প্রয়োগে রাজশাহীর গোদাগাড়ী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলায় পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করা হচ্ছে এই বিদেশি জাতের আলু। কৃষকরা জানান, প্রচলিত জাতের তুলনায় এই আলুর ফলন প্রায় ৪০ শতাংশ বেশি; যা কৃষি উৎপাদনে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশে খরা ও লবণাক্ততার মতো চ্যালেঞ্জ দিন দিন তীব্র হচ্ছে। বরেন্দ্র অঞ্চলে খরার কারণে কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে; যা খাদ্য নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনজন গবেষক— প্রফেসর ড. জুবায়ের আল মাহমুদ (কৃষি বনায়ন ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ), প্রফেসর ড. মুহাম্মদ মাহবুব ইসলাম (এগ্রিকালচারাল বোটানি বিভাগ) ও প্রফেসর ড. মো. হাসানুজ্জামান (কৃষি তত্ত্ব বিভাগ)— স্মার্ট কৃষি প্রযুক্তির উন্নয়ন ও বাস্তবায়নে কাজ করছেন। তাদের গবেষণার আওতায়, ঢাকা ব্যাংক পিএলসির সহায়তায় রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের পাঁচটি গ্রামে ৩০টি প্রদর্শনী প্লটে স্মার্ট কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহার করে চাষাবাদ করা হচ্ছে। এই প্রযুক্তির মধ্যে রয়েছে খরা সহনশীল, স্বল্প মেয়াদি ও অধিক উৎপাদনশীল জাতের ফসল চাষ। যেমন- ভ্যালেন্সিয়া আলু, বিনা সরিষা-৯, বিনা মসুর-৬ ও উন্নত জাতের খিরা।
উৎপাদন বাড়াতে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির প্রয়োগ প্রদর্শনী প্লটগুলোতে শুধু উন্নত জাতের ফসল নয়, মাটির স্বাস্থ্য ও উর্বরতা বৃদ্ধির জন্য কেঁচো সার, হিউমিক অ্যাসিড ইত্যাদি ব্যবহার করা হচ্ছে। এছাড়া মালচিং ও মাচা পদ্ধতিতে সবজি চাষ করা হচ্ছে; যা মাটির আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করছে। কৃষকদের জন্য বিনামূল্যে বীজ, সার ও কৃষি উপকরণ সরবরাহের পাশাপাশি মাঠ পর্যায়ে প্রশিক্ষণ ও কারিগরি সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে।
গোদাগাড়ীর মোহনপুরের কাজীপাড়া মাঠে আলু হারভেস্টিং (সংগ্রহ) করা হচ্ছে। প্রদর্শনী প্লটের কৃষক জসিম উদ্দিন ও গোলাম মোস্তফার জমির ফলন পরীক্ষা করে দেখা গেছে, প্রচলিত জাতের তুলনায় ভ্যালেন্সিয়া আলুর উৎপাদন প্রায় ১০০ বস্তা প্রতি বিঘা, যা সাধারণ জাতের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি।
গোদাগাড়ীর কৃষক জসিম উদ্দিন ও গোলাম মোস্তফা জানান, দেশি জাতের তুলনায় ভ্যালেন্সিয়া আলু চাষে কম সময় লাগে এবং ফলনও বেশি হয়। ফলে তারা এই চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। এছাড়া খরা সহনশীল হওয়ায় বরেন্দ্র অঞ্চলের জন্য এই জাতের আলু অত্যন্ত উপযোগী বলে মত দিয়েছেন কৃষি বিশেষজ্ঞরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনায় ঢাকা ব্যাংক পিএলসি-এর সিএসআর ফান্ড যদি ধারাবাহিকভাবে কৃষি উন্নয়নে কাজ করে, তবে এটি কৃষকদের জন্য একটি টেকসই সমাধান হয়ে উঠতে পারে। খরা ও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতি মোকাবিলা করে কৃষি উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হবে, যা সরাসরি খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে এবং কৃষকের জীবনমান উন্নত করবে।
বরেন্দ্র অঞ্চলে স্মার্ট কৃষি প্রযুক্তির সফল প্রয়োগ যদি বৃহৎ পরিসরে ছড়িয়ে দেওয়া যায়, তাহলে বাংলাদেশের কৃষি খাতে একটি নতুন বিপ্লব আসতে পারে, যেখানে কৃষকরা আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে কম পরিশ্রমে বেশি ফলন নিশ্চিত করতে পারবেন।