ক্রীড়া ডেস্ক: ‘বর্ণবাদী মন্তব্যের’ দায়ে ফেনারবাচের কোচ জোসে মরিনিয়োর বিরুদ্ধে উয়েফা ও ফিফার কাছে অভিযোগ দায়ের করার কথা জানিয়েছে গালাতাসারাই। পাশাপাশি পর্তুগিজ এই কোচের বিরুদ্ধে ফৌজদারি কার্যক্রম শুরুর ঘোষণাও দিয়েছে পর্তুগিজ সুপার লিগের শীর্ষে থাকা দলটি। এই ধরনের বিতর্ক বা নানা কারণে আলোচনায় থাকা অবশ্য ক্যারিয়ারজুড়েই মরিনিয়োর নিত্যসঙ্গী। রেয়াল মাদ্রিদে হোক বা ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে, ইন্টার মিলানে কিংবা চেলসি বা টটেনহ্যাম হটস্পারে, সব জয়গায় সব ক্লাবেই ফুটবলীয় কারণের বাইরে নানা কারণে নানা সময়ে কম-বেশি আলোচনায় ছিলেন তিনি। ফেনারবাচের দায়িত্ব নিয়ে তুরস্কে পাড়ি জমানোর পরও ব্যতিক্রম কিছু নয়। রেফারিদের নিয়ে মন্তব্য করে শাস্তিও পেতে হয়েছে তাকে। এবার মরিনিয়োর কোন বক্তব্যটি নিয়ে গালাতাসারাইয়ের অভিযোগ, তা অবশ্য সুনির্দিষ্ট করে জানায়নি তারা। তবে সুপার লিগের ম্যাচ শেষে ফেনারবাচে কোচ প্রতিক্রিয়ার এক পর্যায়ে বলেছিলেন, গালাতাসারাইয়ের বেঞ্চে থাকা ফুটবলাররা ‘বানরের মতো লাফালাফি করছিল।’
এছাড়া তুরস্কের কোনো রেফারি এই ম্যাচে থাকলে ‘বিপর্যয়’ হতো বলেও মন্তব্য করেছিলেন তিনি। তুরস্কের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দুই ক্লাবের ম্যাচটি সোমবার ড্র হয় ০-০ গোলে। ২৪ ম্যাচে ৬৪ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে গালাতাসারাই, ৫৮ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে ফেনারবাচে। দুই ক্লাবের অনুরোধে এই ম্যাচে বিদেশি রেফারি আনা হয়। ম্যাচটি পরিচালনা করেন স্লোভেনিয়ার রেফারি স্লাভকো ভিনচিচ। ২০২২ বিশ্বকাপ, ২০২০ ও ২০২৪ ইউরোতে ম্যাচ পরিচালনা করার অভিজ্ঞতা আছে তার। ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনে মরিনিয়ো বলেন, রেফারিদের কক্ষে গিয়ে তিনি তাদের সঙ্গে দেখা করে এসেছেন।
“ম্যাচ শেষে রেফারিদের ড্রেসিং রুমে গিয়েছিলাম আমি। চতুর্থ রেফারিও সেখানে ছিল, যিনি তুরস্কের রেফারি। মূল রেফারিকে (ভিনচিচ) আমি বলেছি, ‘এখানে আসার জন্য ধন্যবাদ। কারণ বড় একটি ম্যাচে আপনি এসেছেন এবং দায়িত্ব পালন করেছেন।’ এরপর চতুর্থ রেফারির দিকে ঘুরে বলেছি, ‘এই ম্যাচে আপনি রেফারি থাকলে বিপর্যয় হয়ে যেত।’ তাকে যখন এটা বলেছি, আমি আসলে (তুরস্কের) সবাইকেই বুঝিয়েছি, তাদের সহজাত প্রবণতা।” ম্যাচের শুরুর দিকে ফেনারবাচের ১৯ বছর বয়সী ডিফেন্ডার ইউসুফ আকচিচেকের একটি চ্যালেঞ্জ নিয়ে বেশ উত্তেজনা ছড়িয়েছিল। গালাতাসারাইয়ের ডাগ আউটের ফুটবলাররা বেশ উত্তেজিত দেখা গিয়েছিল তখন। সেই ঘটনায় আকচিচেককে হলুদ কার্ড না দেখানোয় রেফারি ভিনচিচের প্রশংসা করেন মরিনিয়ো। “এই ঘটনায় রেফারিকে ধন্যবাদ জানিয়েছি আমি। কারণ, এখানে যদি তুরস্কের কোনো রেফারি থাকত, প্রথম মিনিটেই ওদের এক ফুটবলার যেভাবে ডাইভ দিয়েছে, ওদের বেঞ্চের ফুটবলাররা বাচ্চা ছেলেটির (আকচিচেক) ওপর যেভাবে বানরের মতো লাফালাফি করছিৃ তুর্কি রেফারি থাকলে এসব দেখেই হলুদ কার্ড দিয়ে দিত এক মিনিটেই এবং পাঁচ মিনিট পর তার বদলি কাউকে নামাতে হতো আমাকে।”
মরিনিয়োর এসব মন্তব্যের পর সামাজিক মাধ্যমে কড়া প্রতিক্রিয়া জানায় গালাতাসারাই। “তুরস্কে কোচের দায়িত্ব পালনের এই সময়টায় ফেনারবাচের কোচ জোসে মরিনিয়ো তুরস্কের মানুষদের নিয়ে ক্রমাগত অপমানজনক কথা বলে গেছেন। আজকে তার বক্তব্য নিছক অনৈতিক মন্তব্যের সীমানা ছাড়িয়ে নিশ্চিতভাবেই নিষ্ঠুর অলঙ্করণে পৌঁছে গেছে।” “আমরা এখানে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করছি যে, জোসে মরিনিয়োর বর্ণবাদী বিবৃতি নিয়ে ফৌজদারি কার্যক্রম শুরু করব এবং একইসঙ্গে উয়েফা ও ফিফার কাছে আনুষ্ঠানিক অভিযাগ জানাব। পাশাপাশি কোচের প্রদর্শিত নিন্দনীয় এই আচরণ নিয়ে ফেনারবাচের অবস্থান আমরা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করব- যে ক্লাবটি বরাবরই অনুকরণীয় নৈতিক মূল্যবোধ তুলে ধরেছে।” এসব অভিযোগ নিয়ে মন্তব্যের অনুরোধে ফেনারবাচে ও মরিনিয়োর কাছ থেকে তাৎক্ষণিক সাড়া পায়নি বার্তা সংস্থা রয়টার্স। তুরস্কের রেফারিদের নিয়ে আপত্তিজনক মন্তব্যের দায়ে আগে এক দফায় জরিমানা করার পাশাপাশি নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল মরিনিয়োকে।