ঢাকা ১০:৫৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
গুলি করে, কুপিয়ে ১৬০ ভরি স্বর্ণ ও নগদ টাকা লুট

বনশ্রীতে দুর্ধর্ষ ছিনতাই মামলায় অজ্ঞাত আসামি ৭

  • আপডেট সময় : ০৫:৩৪:৩৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • ৩০ বার পড়া হয়েছে

রোববার রাত সাড়ে ১০টার দিকে বনশ্রী ডি ব্লকে ছিনতাইয়ের এ ঘটনার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ছবি সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর রামপুরার বনশ্রী এলাকায় স্বর্ণ ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেনকে গুলি করে ১৬০ ভরি সোনা ও এক লাখ টাকা ডাকাতির ঘটনায় মামলা করেছেন ভুক্তভোগীর স্ত্রী। মামলায় ৬ থেকে ৭ জনকে অজ্ঞাতপরিচয় আসামি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) রামপুরা থানায় বাদী হয়ে মামলাটি করেন ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেনের স্ত্রী হোসনেয়ারা।

সন্ধ্যায় রামপুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আতাউর রহমান আকন্দ মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, গুলিবিদ্ধ ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেনের স্ত্রী হোসনেয়ারা বাদী হয়ে অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগটি এজাহার হিসেবে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। এজাহারে ৬ থেকে ৭ জনকে অজ্ঞাত হিসেবে আসামি করা হয়েছে। এছাড়া ১৬০ ভরি স্বর্ণ ও নগদ এক লাখ টাকা ডাকাতি হয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে এজাহারে। আসামি গ্রেফতারের বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি বলেন, ঘটনাস্থলের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ ও ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি পর্যালোচনা করা হচ্ছে। জড়িতদের শনাক্তের পর আইনের আওতায় আনতে কাজ করছে পুলিশ।

রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ১০টার দিকে বনশ্রী ডি ব্লকের ৭ নম্বর রোডের ২০ নম্বর বাড়ির সামনে স্বর্ণ-ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেনকে (৪৩) গুলি ও ছুরিকাঘাত করে প্রায় ১৬০ ভরি স্বর্ণ ও নগদ এক লাখ টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।

রাত ১২টার দিকে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়। ভিডিওটিতে দেখা যায়, বনশ্রী ডি ব্লক ৭ নম্বর রোডের ২০ নম্বর বাড়ির সামনে তিনটি মোটরসাইকেলে করে মোট সাতজন দুর্বৃত্ত ওই ব্যবসায়ীকে ঘিরে ধরে। ব্যবসায়ীকে একটি বাড়ির গেটের সামনের রাস্তায় ফেলে দিয়ে একজন তার কাছ থেকে একটি ব্যাগ ছিনিয়ে নেয়।

অন্যদিকে আরেকজন আনোয়ারকে ধারালো ছুরি দিয়ে আঘাত করে যাচ্ছিল। এই সময় ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী মাগো মাগো করে চিৎকার করছিলেন। ছিনতাইকারীদের যখন ব্যাগ ছিনিয়ে নিতে বাধা দিচ্ছিলেন ওই ভুক্তভোগী তখন পাশে দাঁড়ানো আরেকজন তাকে লক্ষ্য করে কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়ে। এর কিছুক্ষণ পর মোটরসাইকেলে আসা দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রামপুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আতাউর রহমান আকন্দ বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ফুটেজ ও ঘটনাস্থলের আশপাশে থাকা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে জড়িতদের ধরার চেষ্টা চলছে। ব্যবসায়ীরা ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়ে মানববন্ধন করেছেন। রাস্তা অবরোধ করেছিলেন, তাদের অনুরোধ করে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। অপরাধীদের ধরার চেষ্টা চলছে।

মুহুর্মুহু গুলি আর ছিনতাইয়ের লোমহর্ষক বর্ণনা দিলেন ব্যবসায়ী আনোয়ার: রাজধানীর বনশ্রীতে আনোয়ার হোসেন (৪৩) নামে এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে গুলি করে তার সঙ্গে থাকা বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ ও নগদ এক লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয় দুর্বৃত্তরা। রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ১০টার দিকে ডি ব্লকের ২০ নম্বর বাসার সামনে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আহত ব্যবসায়ী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, দারোয়ানের স্ত্রী যদি গেট খুলে দিত তাহলে আজকে আমার এই গুলির ঘটনা ঘটতো না।

গুলিবিদ্ধ ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন। ছবি সংগৃহীত

রোববার রাতের মুহুর্মুহু গুলি আর ছিনতাইয়ের লোমহর্ষক ঘটনা সম্পর্কে একটি সংবাদসংস্থাকে দেওয়া এক বক্তব্যে তিনি এ আক্ষেপের কথা বলেন।

স্বর্ণ ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন বলেন, রাতে দোকান বন্ধ করে বাসায় ফেরার পথে আমার বন্ধুর দোকানে দাঁড়াই। সেখানে ৫ মিনিট তার সঙ্গে কথা বলে বাসার উদ্দেশে রওনা করি। আমার বাসার সামনে গিয়ে মোটরসাইকেলটি দাঁড় করাই। আমি দারোয়ানকে গেট খুলতে বলি। এর মধ্যে তিনটা হোন্ডা এসে আমাকে ঘেরাও করে ফেলে। এটি দেখে দারোয়ানের বউ গেট লাগিয়ে দেয়। তখনও তারা আমাকে গুলি বা কুপিয়ে আহত করেনি। আমি দারোয়ানকে বারবার গেট খুলতে বলি কিন্তু সে গেট খুলেনি। আপনারাতো ভিডিওতে দেখছেন তখন তারা আমার ব্যাগ নিয়ে টানাটানি করছিল। পরে আমাকে কুপিয়ে এবং গুলি করে আমার ব্যাগে থাকা ১৪০ ভরির মতো স্বর্ণ ও নগদ এক লাখ টাকা নিয়ে যায়।

তিনি বলেন, দারোয়ানের স্ত্রী গেট খুলে দিলে আমি কিন্তু বাসার ভেতরে ঢুকে যেতে পারতাম। তাহলে তারা আমার ব্যাগ এবং টাকা কিছুই নিতে পারত না। আমাকে গুলি ও কুপিয়ে জখমও করতে পারত না।

আহত স্বর্ণ ব্যবসায়ী আরও বলেন, ব্যাক দিতে না চাওয়ায় তারা আমাকে কুপিয়ে জখম করে। ৩টি গুলি করে। আমার দুই পায়ে দুটি গুলি করে। অন্ডকোষের নিচে একটি গুলি লাগে। তবে এখন পর্যন্ত চিকিৎসক জানিয়েছেন- আমার শরীরে কোনো গুলি নেই এবং অণ্ডকোষের একটি অপারেশন হবে। শরীরের যে কয়েকটি ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে সেগুলোর অপারেশন করা হয়েছে।

আনোয়ার হোসেন বলেন, এক সপ্তাহ আগে ডিবি পরিচয় দিয়ে আমাকে নানাভাবে ভয় ভীতি দেখায় দুর্বৃত্তরা। আমাকে বলেছিল আমি নাকি অবৈধ স্বর্ণ কিনি। আমার নামে নাকি মামলা আছে। এসব কথা বলে তারা আমার কাছ থেকে বিকাশের মাধ্যমে ৩০ হাজার টাকা নেয়। পরে তাদের আরও ১০ হাজার টাকা দেওয়ার কথা ছিল। তখন আমি তাদের ফোন দিই যে ভাই, সরাসরি এসে ১০ হাজার টাকা নিয়ে যান। তখন ওই ব্যক্তি ফোনের ওপার থেকে জানায়- ‘আমি ঢাকার বাইরে আছি, পরে এসে দেখা করব।’ এরপর আমি আবার ফোন দিলে অপর প্রান্ত থেকে বলেছিল- ‘ভাই আমার সিমটি হারিয়ে গিয়েছিল ওই লোকটি প্রতারক ছিল’।

তিনি বলেন, আমাকে তিনটি নম্বর থেকে ফোন দিয়েছিল সে নম্বরগুলো হলো-০১৯৪১৮৯৫৫২০, ০১৭০৭২২৯০৯৫, ০১৮৪৬৭৪০৭৪৭।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জরুরি বিভাগের আবাসিক সার্জন ডা. মোস্তাক আহমেদ বলেন, আমি কিছুক্ষণ আগে ওই রোগীকে দেখে আসলাম। বর্তমানে সে হাসপাতালের ১০২ নম্বর ওয়ার্ডের দুই নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন আছে। তার কাঁধে একটি ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। যার কারণে তিনি ওই হাতটি এখন নড়াচড়া করতে পারছেন না। তবে সেখানে অপারেশন করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত এক্স-রে করে আমরা তার শরীরের ভেতরে গুলি আছে সেটি এখনো দেখতে পাইনি। ধারণা করছি, তার অণ্ডকোষে একটি গুলি লেগেছে। সেটির অপারেশন করা হবে। আবারও তার অণ্ডকোষ ও কোমরে এক্স-রে করা হবে। তাহলে বলা যাবে সম্পূর্ণভাবে যে তার শরীরে কোনো গুলি এখনো আছে কি নাই। তবে তিনি এখন সুস্থ আছেন। আশঙ্কার কোনো কিছু নেই।

রোববার মধ্যরাতে যা ঘটেছিল: রামপুরা থানা পুলিশ ও স্থানীয়দের বরাতে জানা যায়, রোববার রাত সাড়ে ১০টার দিকে বনশ্রী ডি ব্লকের ৭ নম্বর রোডের ২০ নম্বর বাড়ির সামনে স্বর্ণ ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেনকে (৪৩) গুলি ও ছুরিকাঘাত করে প্রায় ১৬০ ভরি স্বর্ণ ও নগদ এক লাখ টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায় ছিনতাইকারীরা। রাত ১২টার দিকে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়।
ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। রাত ১টার দিকে ঘটনাস্থলে যায় সেনাবাহিনীর একটি দল। ঘটনার পরপরই আশপাশের এলাকাগুলোতে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর টহল জোরদার করা হলেও জড়িত কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটিতে দেখা যায়, বনশ্রী ডি ব্লকের ৭ নম্বর রোডের ২০ নম্বর বাড়ির সামনে তিনটি মোটরসাইকেলে করে সাতজন ছিনতাইকারী ওই ব্যবসায়ীকে ঘিরে ধরে। ওই ব্যবসায়ীকে একটি বাড়ির গেটের সামনের রাস্তায় ফেলে দিয়ে একজন ছিনতাইকারী তার কাছ থেকে একটি ব্যাগ ছিনিয়ে নেয়। অন্যদিকে আরেকজন ছিনতাইকারী তাকে ধারালো ছুরি দিয়ে আঘাত করে যাচ্ছিল। এসময় ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী ‘মাগো মাগো’ বলে চিৎকার করছিলেন। ওই ভুক্তভোগী যখন ব্যাগ ছিনিয়ে নিতে ছিনতাইকারীদের বাধা দিচ্ছিলেন তখন আরেকজন ছিনতাইকারী তাকে লক্ষ্য করে কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়ে। ওই সময় ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী আরও জোরে জোরে মাগো মাগো বলে চিৎকার দিতে দিতে আত্ম রক্ষার্থে ছিনতাইকারীদের কাছ থেকে দৌড়ে কিছুটা পেছনের দিকে পালিয়ে যান।

এই দুর্ধর্ষ ছিনতাইয়ের ঘটনাটি বিপরীত পাশের ভবন থেকে স্থানীয় বাসিন্দারা ভিডিও করছিলেন। ছিনতাইকারীরা যখন ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীকে ছুরি দিয়ে আঘাত করছিলেন এবং গুলি ছুড়ছিলেন তখন ভিডিও করা লোকজনও জোরে জোরে চিৎকার করছিলেন। এসময় ভিডিওতে অপর একজন নারীর চিৎকারও শোনা যায়। তিনিও মাগো মাগো বলে চিৎকার করছিলেন। পরে ছিনতাইকারীরা ব্যবসায়ীর ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে ঘটনাস্থল থেকে দ্রুত তিনটি মোটরসাইকেলে করে চলে যায়। দুর্ধর্ষ এ ছিনতাইয়ের ঘটনার ১৮ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি করেছে।
তবে স্থানীয় একাধিক সূত্র বলছে, ঘটনার পরপরই প্রথমে পুলিশ ও পরে সেনাবাহিনীর দল ঘটনাস্থলে আসে। তারা পুরো বনশ্রী এলাকা পরিদর্শন করে। এমনকি সতর্কতা হিসেবে আফতাবনগরের মূল গেটেও টহল দিয়েছে পুলিশ।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

গুলি করে, কুপিয়ে ১৬০ ভরি স্বর্ণ ও নগদ টাকা লুট

বনশ্রীতে দুর্ধর্ষ ছিনতাই মামলায় অজ্ঞাত আসামি ৭

আপডেট সময় : ০৫:৩৪:৩৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর রামপুরার বনশ্রী এলাকায় স্বর্ণ ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেনকে গুলি করে ১৬০ ভরি সোনা ও এক লাখ টাকা ডাকাতির ঘটনায় মামলা করেছেন ভুক্তভোগীর স্ত্রী। মামলায় ৬ থেকে ৭ জনকে অজ্ঞাতপরিচয় আসামি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) রামপুরা থানায় বাদী হয়ে মামলাটি করেন ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেনের স্ত্রী হোসনেয়ারা।

সন্ধ্যায় রামপুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আতাউর রহমান আকন্দ মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, গুলিবিদ্ধ ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেনের স্ত্রী হোসনেয়ারা বাদী হয়ে অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগটি এজাহার হিসেবে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। এজাহারে ৬ থেকে ৭ জনকে অজ্ঞাত হিসেবে আসামি করা হয়েছে। এছাড়া ১৬০ ভরি স্বর্ণ ও নগদ এক লাখ টাকা ডাকাতি হয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে এজাহারে। আসামি গ্রেফতারের বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি বলেন, ঘটনাস্থলের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ ও ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি পর্যালোচনা করা হচ্ছে। জড়িতদের শনাক্তের পর আইনের আওতায় আনতে কাজ করছে পুলিশ।

রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ১০টার দিকে বনশ্রী ডি ব্লকের ৭ নম্বর রোডের ২০ নম্বর বাড়ির সামনে স্বর্ণ-ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেনকে (৪৩) গুলি ও ছুরিকাঘাত করে প্রায় ১৬০ ভরি স্বর্ণ ও নগদ এক লাখ টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।

রাত ১২টার দিকে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়। ভিডিওটিতে দেখা যায়, বনশ্রী ডি ব্লক ৭ নম্বর রোডের ২০ নম্বর বাড়ির সামনে তিনটি মোটরসাইকেলে করে মোট সাতজন দুর্বৃত্ত ওই ব্যবসায়ীকে ঘিরে ধরে। ব্যবসায়ীকে একটি বাড়ির গেটের সামনের রাস্তায় ফেলে দিয়ে একজন তার কাছ থেকে একটি ব্যাগ ছিনিয়ে নেয়।

অন্যদিকে আরেকজন আনোয়ারকে ধারালো ছুরি দিয়ে আঘাত করে যাচ্ছিল। এই সময় ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী মাগো মাগো করে চিৎকার করছিলেন। ছিনতাইকারীদের যখন ব্যাগ ছিনিয়ে নিতে বাধা দিচ্ছিলেন ওই ভুক্তভোগী তখন পাশে দাঁড়ানো আরেকজন তাকে লক্ষ্য করে কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়ে। এর কিছুক্ষণ পর মোটরসাইকেলে আসা দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রামপুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আতাউর রহমান আকন্দ বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ফুটেজ ও ঘটনাস্থলের আশপাশে থাকা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে জড়িতদের ধরার চেষ্টা চলছে। ব্যবসায়ীরা ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়ে মানববন্ধন করেছেন। রাস্তা অবরোধ করেছিলেন, তাদের অনুরোধ করে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। অপরাধীদের ধরার চেষ্টা চলছে।

মুহুর্মুহু গুলি আর ছিনতাইয়ের লোমহর্ষক বর্ণনা দিলেন ব্যবসায়ী আনোয়ার: রাজধানীর বনশ্রীতে আনোয়ার হোসেন (৪৩) নামে এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে গুলি করে তার সঙ্গে থাকা বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ ও নগদ এক লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয় দুর্বৃত্তরা। রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ১০টার দিকে ডি ব্লকের ২০ নম্বর বাসার সামনে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আহত ব্যবসায়ী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, দারোয়ানের স্ত্রী যদি গেট খুলে দিত তাহলে আজকে আমার এই গুলির ঘটনা ঘটতো না।

গুলিবিদ্ধ ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন। ছবি সংগৃহীত

রোববার রাতের মুহুর্মুহু গুলি আর ছিনতাইয়ের লোমহর্ষক ঘটনা সম্পর্কে একটি সংবাদসংস্থাকে দেওয়া এক বক্তব্যে তিনি এ আক্ষেপের কথা বলেন।

স্বর্ণ ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন বলেন, রাতে দোকান বন্ধ করে বাসায় ফেরার পথে আমার বন্ধুর দোকানে দাঁড়াই। সেখানে ৫ মিনিট তার সঙ্গে কথা বলে বাসার উদ্দেশে রওনা করি। আমার বাসার সামনে গিয়ে মোটরসাইকেলটি দাঁড় করাই। আমি দারোয়ানকে গেট খুলতে বলি। এর মধ্যে তিনটা হোন্ডা এসে আমাকে ঘেরাও করে ফেলে। এটি দেখে দারোয়ানের বউ গেট লাগিয়ে দেয়। তখনও তারা আমাকে গুলি বা কুপিয়ে আহত করেনি। আমি দারোয়ানকে বারবার গেট খুলতে বলি কিন্তু সে গেট খুলেনি। আপনারাতো ভিডিওতে দেখছেন তখন তারা আমার ব্যাগ নিয়ে টানাটানি করছিল। পরে আমাকে কুপিয়ে এবং গুলি করে আমার ব্যাগে থাকা ১৪০ ভরির মতো স্বর্ণ ও নগদ এক লাখ টাকা নিয়ে যায়।

তিনি বলেন, দারোয়ানের স্ত্রী গেট খুলে দিলে আমি কিন্তু বাসার ভেতরে ঢুকে যেতে পারতাম। তাহলে তারা আমার ব্যাগ এবং টাকা কিছুই নিতে পারত না। আমাকে গুলি ও কুপিয়ে জখমও করতে পারত না।

আহত স্বর্ণ ব্যবসায়ী আরও বলেন, ব্যাক দিতে না চাওয়ায় তারা আমাকে কুপিয়ে জখম করে। ৩টি গুলি করে। আমার দুই পায়ে দুটি গুলি করে। অন্ডকোষের নিচে একটি গুলি লাগে। তবে এখন পর্যন্ত চিকিৎসক জানিয়েছেন- আমার শরীরে কোনো গুলি নেই এবং অণ্ডকোষের একটি অপারেশন হবে। শরীরের যে কয়েকটি ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে সেগুলোর অপারেশন করা হয়েছে।

আনোয়ার হোসেন বলেন, এক সপ্তাহ আগে ডিবি পরিচয় দিয়ে আমাকে নানাভাবে ভয় ভীতি দেখায় দুর্বৃত্তরা। আমাকে বলেছিল আমি নাকি অবৈধ স্বর্ণ কিনি। আমার নামে নাকি মামলা আছে। এসব কথা বলে তারা আমার কাছ থেকে বিকাশের মাধ্যমে ৩০ হাজার টাকা নেয়। পরে তাদের আরও ১০ হাজার টাকা দেওয়ার কথা ছিল। তখন আমি তাদের ফোন দিই যে ভাই, সরাসরি এসে ১০ হাজার টাকা নিয়ে যান। তখন ওই ব্যক্তি ফোনের ওপার থেকে জানায়- ‘আমি ঢাকার বাইরে আছি, পরে এসে দেখা করব।’ এরপর আমি আবার ফোন দিলে অপর প্রান্ত থেকে বলেছিল- ‘ভাই আমার সিমটি হারিয়ে গিয়েছিল ওই লোকটি প্রতারক ছিল’।

তিনি বলেন, আমাকে তিনটি নম্বর থেকে ফোন দিয়েছিল সে নম্বরগুলো হলো-০১৯৪১৮৯৫৫২০, ০১৭০৭২২৯০৯৫, ০১৮৪৬৭৪০৭৪৭।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জরুরি বিভাগের আবাসিক সার্জন ডা. মোস্তাক আহমেদ বলেন, আমি কিছুক্ষণ আগে ওই রোগীকে দেখে আসলাম। বর্তমানে সে হাসপাতালের ১০২ নম্বর ওয়ার্ডের দুই নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন আছে। তার কাঁধে একটি ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। যার কারণে তিনি ওই হাতটি এখন নড়াচড়া করতে পারছেন না। তবে সেখানে অপারেশন করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত এক্স-রে করে আমরা তার শরীরের ভেতরে গুলি আছে সেটি এখনো দেখতে পাইনি। ধারণা করছি, তার অণ্ডকোষে একটি গুলি লেগেছে। সেটির অপারেশন করা হবে। আবারও তার অণ্ডকোষ ও কোমরে এক্স-রে করা হবে। তাহলে বলা যাবে সম্পূর্ণভাবে যে তার শরীরে কোনো গুলি এখনো আছে কি নাই। তবে তিনি এখন সুস্থ আছেন। আশঙ্কার কোনো কিছু নেই।

রোববার মধ্যরাতে যা ঘটেছিল: রামপুরা থানা পুলিশ ও স্থানীয়দের বরাতে জানা যায়, রোববার রাত সাড়ে ১০টার দিকে বনশ্রী ডি ব্লকের ৭ নম্বর রোডের ২০ নম্বর বাড়ির সামনে স্বর্ণ ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেনকে (৪৩) গুলি ও ছুরিকাঘাত করে প্রায় ১৬০ ভরি স্বর্ণ ও নগদ এক লাখ টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায় ছিনতাইকারীরা। রাত ১২টার দিকে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়।
ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। রাত ১টার দিকে ঘটনাস্থলে যায় সেনাবাহিনীর একটি দল। ঘটনার পরপরই আশপাশের এলাকাগুলোতে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর টহল জোরদার করা হলেও জড়িত কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটিতে দেখা যায়, বনশ্রী ডি ব্লকের ৭ নম্বর রোডের ২০ নম্বর বাড়ির সামনে তিনটি মোটরসাইকেলে করে সাতজন ছিনতাইকারী ওই ব্যবসায়ীকে ঘিরে ধরে। ওই ব্যবসায়ীকে একটি বাড়ির গেটের সামনের রাস্তায় ফেলে দিয়ে একজন ছিনতাইকারী তার কাছ থেকে একটি ব্যাগ ছিনিয়ে নেয়। অন্যদিকে আরেকজন ছিনতাইকারী তাকে ধারালো ছুরি দিয়ে আঘাত করে যাচ্ছিল। এসময় ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী ‘মাগো মাগো’ বলে চিৎকার করছিলেন। ওই ভুক্তভোগী যখন ব্যাগ ছিনিয়ে নিতে ছিনতাইকারীদের বাধা দিচ্ছিলেন তখন আরেকজন ছিনতাইকারী তাকে লক্ষ্য করে কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়ে। ওই সময় ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী আরও জোরে জোরে মাগো মাগো বলে চিৎকার দিতে দিতে আত্ম রক্ষার্থে ছিনতাইকারীদের কাছ থেকে দৌড়ে কিছুটা পেছনের দিকে পালিয়ে যান।

এই দুর্ধর্ষ ছিনতাইয়ের ঘটনাটি বিপরীত পাশের ভবন থেকে স্থানীয় বাসিন্দারা ভিডিও করছিলেন। ছিনতাইকারীরা যখন ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীকে ছুরি দিয়ে আঘাত করছিলেন এবং গুলি ছুড়ছিলেন তখন ভিডিও করা লোকজনও জোরে জোরে চিৎকার করছিলেন। এসময় ভিডিওতে অপর একজন নারীর চিৎকারও শোনা যায়। তিনিও মাগো মাগো বলে চিৎকার করছিলেন। পরে ছিনতাইকারীরা ব্যবসায়ীর ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে ঘটনাস্থল থেকে দ্রুত তিনটি মোটরসাইকেলে করে চলে যায়। দুর্ধর্ষ এ ছিনতাইয়ের ঘটনার ১৮ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি করেছে।
তবে স্থানীয় একাধিক সূত্র বলছে, ঘটনার পরপরই প্রথমে পুলিশ ও পরে সেনাবাহিনীর দল ঘটনাস্থলে আসে। তারা পুরো বনশ্রী এলাকা পরিদর্শন করে। এমনকি সতর্কতা হিসেবে আফতাবনগরের মূল গেটেও টহল দিয়েছে পুলিশ।