ঢাকা ১০:৩৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

পরোক্ষ করের চাপে বিপাকে মানুষ

  • আপডেট সময় : ০৭:৩৮:৫২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • ১১ বার পড়া হয়েছে

ছবি সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের কর ব্যবস্থার মাত্র দুই-তৃতীয়াংশ আসে প্রত্যক্ষ কর থেকে। যা সর্বনিম্ন আয়ের বস্তির মানুষ নির্বিশেষে জীবনযাপনের ব্যয় এবং সব ধরনের কেনা-কাটার মধ্য দিয়ে শোধ করতে হয়। এসব মূল্য সংযোজন কর, আমদানি শুল্ক, স্থানীয় পর্যায়ে শুল্ক ও রপ্তানি শুল্কের মাধ্যমে নেওয়া হয়।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য অনুযায়ী চলতি অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর ছয় মাসে মোট রাজস্বের ৬৬ শতাংশ বা এক লাখ চার হাজার ২৬১ কোটি টাকা এসেছে এই খাত থেকে। অন্যদিকে মানুষের আয়ের নির্দিষ্ট অংশ সরাসরি নেওয়ার পাশাপাশি ভ্রমণ কর মোট রাজস্বের এক তৃতীয়াংশ। জুলাই-ডিসেম্বর এ ছয় মাসে প্রত্যক্ষ করের পরিমাণ ৫২ হাজার ১৮৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা।

সরকারের ব্যয় নির্বাহে রাজস্ব আদায় করতে হয়। পরোক্ষ কর আদায় তুলনামূলক সহজ হওয়ার কারণে সরকারকে সে পথেই রাজস্ব আদায়ে যেতে হয়। বাংলাদেশ বিগত ৫৩ বছর ধরেই সে পথে রয়েছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যমে আহরণ করা মোট রাজস্বের ৩৪ শতাংশ প্রত্যক্ষ কর, আর পরোক্ষ কর ছিল ৬৬ শতাংশ।

২০১৬-১৭ অর্থবছরে প্রত্যক্ষ কর ছিল ৩১ দশমিক ৩৫ শতাংশ, পরোক্ষ কর ছিল ৬৮ দশমিক ৬৫ শতাংশ। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে প্রত্যক্ষ কর ৩০ দশমিক ৮১ শতাংশ, আর পরোক্ষ কর ৬৯ দশমিক ১৯ শতাংশ। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যমে আহরণ করা মোট রাজস্বের প্রত্যক্ষ কর ৩২ দশমিক ৫৬ শতাংশ, পরোক্ষ কর ৬৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ। ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রত্যক্ষ কর ৩৩ শতাংশ, পরোক্ষ কর ৬৭ শতাংশ। ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রত্যক্ষ কর ৩২ দশমিক ৭৯ শতাংশ, পরোক্ষ কর ৬৭ দশমিক ২১ শতাংশ। ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রত্যক্ষ কর ৩৪ দশমিক ১০ শতাংশ, পরোক্ষ কর ৬৫ দশমিক ৯০ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রত্যক্ষ কর ৩৪ দশমিক ৭১ শতাংশ, পরোক্ষ কর ৬৫ দশমিক ২৯ শতাংশ। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) সাবেক মহাপরিচালক মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধুরী বলেন, আমাদের প্রত্যক্ষ কর বাড়াতে হবে। আর আস্তে আস্তে পরোক্ষ কর কমাতে হবে। এবার কর বৃদ্ধিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) দুটি বড় ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে।

টিআইএন বৃদ্ধি, টিআইএনধারীদের আয়কর রিটার্নে বাধ্য করা ও কর প্রদানে সহজিকরণের অংশ হিসেবে প্রযুক্তির ব্যবহারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জানা গেছে, দেশের টিআইএন সংখ্যা প্রায় এক কোটি ২০ লাখ। এর মধ্যে আয়কর রিটার্ন দেয় মাত্র ৪০ লাখ। বাকি ৮০ লাখ টিআইএনধারী আয়কর রিটার্ন দেন না। এসব টিআইএন ধারী রিটার্নের আওতায় আনা গেলে কমপক্ষে ২০ শতাংশ প্রত্যক্ষ কর বাড়বে। তাই সব টিআইএনধারীকে আয়কর রিটার্নে বাধ্য করতে উদ্যোগ নিয়েছে এনবিআর। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সব দেশেই প্রত্যক্ষ কর বাড়ে ‘ইক্যুইটি প্রিন্সিপাল‘ হিসেবে। যার দশ লাখ টাকা আয় সে যদি ১০ শতাংশ হারে কর দেয়, যার ৫০ কোটি টাকা আয় স্ল্যাব অনুযায়ী তার ট্যাক্স উঠবে ৫০ শতাংশে। কিন্তু সম্পদশালীদের সুবিধা করে দেওয়ার জন্য কর কাঠামোতে পরোক্ষ করই দুই-তৃতীয়াংশ, যা সাধারণ মানুষের কাছ থেকে আদায় করা হয়।

 

 

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

পরোক্ষ করের চাপে বিপাকে মানুষ

আপডেট সময় : ০৭:৩৮:৫২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের কর ব্যবস্থার মাত্র দুই-তৃতীয়াংশ আসে প্রত্যক্ষ কর থেকে। যা সর্বনিম্ন আয়ের বস্তির মানুষ নির্বিশেষে জীবনযাপনের ব্যয় এবং সব ধরনের কেনা-কাটার মধ্য দিয়ে শোধ করতে হয়। এসব মূল্য সংযোজন কর, আমদানি শুল্ক, স্থানীয় পর্যায়ে শুল্ক ও রপ্তানি শুল্কের মাধ্যমে নেওয়া হয়।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য অনুযায়ী চলতি অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর ছয় মাসে মোট রাজস্বের ৬৬ শতাংশ বা এক লাখ চার হাজার ২৬১ কোটি টাকা এসেছে এই খাত থেকে। অন্যদিকে মানুষের আয়ের নির্দিষ্ট অংশ সরাসরি নেওয়ার পাশাপাশি ভ্রমণ কর মোট রাজস্বের এক তৃতীয়াংশ। জুলাই-ডিসেম্বর এ ছয় মাসে প্রত্যক্ষ করের পরিমাণ ৫২ হাজার ১৮৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা।

সরকারের ব্যয় নির্বাহে রাজস্ব আদায় করতে হয়। পরোক্ষ কর আদায় তুলনামূলক সহজ হওয়ার কারণে সরকারকে সে পথেই রাজস্ব আদায়ে যেতে হয়। বাংলাদেশ বিগত ৫৩ বছর ধরেই সে পথে রয়েছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যমে আহরণ করা মোট রাজস্বের ৩৪ শতাংশ প্রত্যক্ষ কর, আর পরোক্ষ কর ছিল ৬৬ শতাংশ।

২০১৬-১৭ অর্থবছরে প্রত্যক্ষ কর ছিল ৩১ দশমিক ৩৫ শতাংশ, পরোক্ষ কর ছিল ৬৮ দশমিক ৬৫ শতাংশ। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে প্রত্যক্ষ কর ৩০ দশমিক ৮১ শতাংশ, আর পরোক্ষ কর ৬৯ দশমিক ১৯ শতাংশ। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যমে আহরণ করা মোট রাজস্বের প্রত্যক্ষ কর ৩২ দশমিক ৫৬ শতাংশ, পরোক্ষ কর ৬৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ। ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রত্যক্ষ কর ৩৩ শতাংশ, পরোক্ষ কর ৬৭ শতাংশ। ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রত্যক্ষ কর ৩২ দশমিক ৭৯ শতাংশ, পরোক্ষ কর ৬৭ দশমিক ২১ শতাংশ। ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রত্যক্ষ কর ৩৪ দশমিক ১০ শতাংশ, পরোক্ষ কর ৬৫ দশমিক ৯০ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রত্যক্ষ কর ৩৪ দশমিক ৭১ শতাংশ, পরোক্ষ কর ৬৫ দশমিক ২৯ শতাংশ। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) সাবেক মহাপরিচালক মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধুরী বলেন, আমাদের প্রত্যক্ষ কর বাড়াতে হবে। আর আস্তে আস্তে পরোক্ষ কর কমাতে হবে। এবার কর বৃদ্ধিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) দুটি বড় ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে।

টিআইএন বৃদ্ধি, টিআইএনধারীদের আয়কর রিটার্নে বাধ্য করা ও কর প্রদানে সহজিকরণের অংশ হিসেবে প্রযুক্তির ব্যবহারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জানা গেছে, দেশের টিআইএন সংখ্যা প্রায় এক কোটি ২০ লাখ। এর মধ্যে আয়কর রিটার্ন দেয় মাত্র ৪০ লাখ। বাকি ৮০ লাখ টিআইএনধারী আয়কর রিটার্ন দেন না। এসব টিআইএন ধারী রিটার্নের আওতায় আনা গেলে কমপক্ষে ২০ শতাংশ প্রত্যক্ষ কর বাড়বে। তাই সব টিআইএনধারীকে আয়কর রিটার্নে বাধ্য করতে উদ্যোগ নিয়েছে এনবিআর। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সব দেশেই প্রত্যক্ষ কর বাড়ে ‘ইক্যুইটি প্রিন্সিপাল‘ হিসেবে। যার দশ লাখ টাকা আয় সে যদি ১০ শতাংশ হারে কর দেয়, যার ৫০ কোটি টাকা আয় স্ল্যাব অনুযায়ী তার ট্যাক্স উঠবে ৫০ শতাংশে। কিন্তু সম্পদশালীদের সুবিধা করে দেওয়ার জন্য কর কাঠামোতে পরোক্ষ করই দুই-তৃতীয়াংশ, যা সাধারণ মানুষের কাছ থেকে আদায় করা হয়।