অনন্য হক
২০২৫-এর একুশে গ্রন্থমেলায় এসেছে জগদীশ সানা’র দ্বিতীয় উপন্যাস- ভাটিকন্যা। যার প্রকাশক: শব্দশিল্প। কমিশন বাদে মূল্য: ১৮০ টাকা।
প্রথম দিন থেকে একুশের বইমেলায় পাওয়া যাচ্ছে-স্টল নং-৩৪৬, ৩৪৭, ৩৪৮ ও ৩৪৯।
পাওয়া যাচ্ছে রকমারিতেও।
এছাড়া যোগাযোগ করা যাবে প্রকাশক: 01817054023
লেখক: 01712030625
রকমারি: ০১৭০৮১৬৬২৩৯।
আজকের প্রত্যাশা সাহিত্যের পক্ষ থেকে কথা বলা হয়েছে লেখক জগদীশ সানার সঙ্গে।
ভাটিকন্যা ও সমসাময়িক সাহিত্য নিয়ে জানিয়েছেন নিজের অভিজ্ঞতা ও অভিমত।
একটু ভিন্নভাবে প্রকাশ করা হলো সাক্ষাৎকারটি।
একটুখানি পড়ে দেখি
————————-
বোট চলছে নিকলীর পথে।
মাঝি বীর। সুখিয়া ছাড়া আর
কোনো যাত্রী নেই আজ।
সুখিয়া বইয়ের ব্যাগ কাঁধে
নিয়ে বোটের ডেকের
উপর এসে বসে। সে তাকিয়ে
আছে অন্যদিকে।
বীর বুঝতে পারে সুখিয়া লজ্জা পায়।
সব মেয়েরা এমন কিশোরী
বয়সে ভালবাসার
মানুষের সাথে নির্জনে কথা
বলতে লজ্জা পায়।
বীর জিজ্ঞাসা করে -গান শুনবি সুখি?
সুখিয়া কিছু বলে না।
বীর গান শুরু করে-
সব সখিরে পার করিতে নেবো
আনা আনা, তোমার বেলায় নেবো সখি তোমার কানের সোনা,
সখিগো–আমি প্রেমের ঘাটের মাঝি, তোমার বেলায় পয়সা নেবো না।
গান শুনে লজ্জায় দু-হাঁটুর মাঝখানে মাথা লুকোয় সুখিয়া।
অনেকক্ষণ শোনার পরে সুখিয়া বলে -খুব সোন্দর হইছে,
এইবার থামেন।
তারপর আস্তে করে বলে – পঁচা-গান!
এবার দুজনই হেসে ওঠে!
অনেক ঝড়-তুফান পার হয়ে এসেছে ভাটিকন্যা
——————————————————–
মেলায় ভাটিকন্যা’র থাকার
কথা ছিল গত বছর।
কিন্তু প্রকাশের আগে
লেখকের জীবনে
ঘটে যায় পরপর দুটো বিপর্যয়।
ভাটিকন্যা দাঁড়িয়ে পড়ে; তবে হারিয়ে যায় না।
এ বছর বাংলা একাডেমির
গ্রন্থমেলার প্রথম দিন থেকেই
শব্দশিল্প প্রকাশনীর উল্লিখিত স্টলগুলোয় পাওয়া যাচ্ছে ভাটিকন্যা-কে।
নতুন কী এমন বার্তা নিয়ে
এসেছে এই ভাটিকন্যা?
——————————
লেখকে কথায়-
দেশের বড় একটা অংশজুড়ে হাওড়। প্রায় ২ কোটি লোক বাস করে সেখানে। সমতলের সাথে কিছুটা হলেও রয়েছে হাওড়ের সাংস্কৃতিক ভিন্নতা।
কিন্তু হাওড় আমাদের সাহিত্যে
অনেকটাই অনুপস্থিত। এ চিন্তা থেকে বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে চেষ্টা করা হয়েছে হাওড়-পল্লীর একটি বিশেষ সংস্কৃতিকে এই উপন্যাসে যত্নের সাথে তুলে ধরার।
সেটি কী? তা আর বলছি না এখানে। বই খুললেই পাওয়া যাবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করার পরপরই নব্বুইয়ের দশকের শুরুর দিকে ‘আমি কান পেতে রই’ নামের কবিতাগ্রন্থের মধ্য দিয়ে সাহিত্য জগতে আত্মপ্রকাশ করা লেখক জগদীশ সানা জানালেন-
২০২৩ সালের মেলায় এসেছিল
আমার একটি উপন্যাস –
‘মহামারির পরের পৃথিবী’।
প্রকাশক জানিয়েছিলেন উপন্যাসটির
বিক্রি রিপোর্ট যথেষ্ট উৎসাহব্যঞ্জক।
সেই প্রেরণা ও প্রেক্ষিতে শুরু হয়েছিল স্বপ্নের ভাটিকন্যাকে মানসপট থেকে তুলে এনে
শব্দ দিয়ে শরীর নির্মাণের কাজ।
আমার ৩০ বছরের সাথী
সহধর্মিনী শিখা (প্রয়াত)
ও মাতৃহারা দু’সন্তান
তুলি ও পিয়াল’র সহযোগিতায়
শেষ পর্যন্ত বইটি লিখে শেষ
করতে পেরেছিলাম।
একেকটি পর্ব লিখে ওদের
সবাইকে পড়ে পড়ে
শোনাতাম। দারুণ মতামত দিতে
পারতো। বিশেষ করে ওদের মা।
বিচ্যুতি ও অসঙ্গতি
ধরে ফেলার মতো এমন নিখুঁত
চোখ দুর্লভ।
বইটি প্রকাশের
বিষয়ে কনিষ্ঠ সহোদর
সাংবাদিক সুখদেব সানার
মূল্যবান পরামর্শ খুব কাজে লেগেছে।
আমার জন্মস্থান খুলনার পাইকগাছার গুণী শিল্পী নিহারদা (নিহার রঞ্জন ভদ্র)
একটি দৃষ্টিনন্দন প্রচ্ছদ এঁকে দিয়েছেন।
তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা।
সবশেষে প্রকাশক শব্দশিল্প’র
কর্ণধার শরীফুর রহমান
ভাই ও গ্রাফিকস শিল্পী আরিফ
ভাইয়ের আন্তরিক চেষ্টার
প্রশংসা না করা হলে
অন্যায় করা হবে।
অতঃপর আত্মবিশ্বাসী লেখক
———————————–
লেখক তার বাসনা প্রকাশ করে বলছেন, বাংলা সাহিত্য এখন যথেষ্ট সমৃদ্ধ। এ সমৃদ্ধ ভান্ডারে ছিটেফোঁটা ভালো কিছু যোগ করা গেলো কি-না- গুণী পাঠক বন্ধুদের কাছে তা জানার ইচ্ছেটা রইলো।
নিজের সৃষ্ট গ্রন্থ নিয়ে এবং গোটা সাহিত্যের ধ্রুপদী ধারা অক্ষুণ্ণ রাখতে অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসী লেখক সবশেষে ছড়া কাটলেন এভাবেই-
“শিল্প-সাহিত্যে সুষমা থাক
রুচির দুর্ভিক্ষ নিপাত যাক।
ক্লাসিক রীতির বিজয় হোক
দায়িত্ব নিক লেখক-পাঠক।”
গ্রন্থ: ভাটিকন্যা
লেখক: জগদীশ সানা।
সাক্ষাৎকার অনুলিখন: অনন্য হক।