ঢাকা ০৭:২১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ অগাস্ট ২০২৫

নিজেদের স্বার্থে স্বৈরাচারের দালালি করেছে একদল সাংবাদিক: প্রেস সচিব

  • আপডেট সময় : ০৫:৪৬:৩৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • ৯৭ বার পড়া হয়েছে

রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বক্তব্য রাখেন। ছবি সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক: অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় ছাড়াও গত ১৫ বছরে বিগত স্বৈরাচারী সরকারের আমলে সাংবাদিকদের একটি দল নিজেদের সুবিধার আশায় দালালি করেছে। তারা স্বৈরাচারকে স্থায়ী করতে, বৈধতা দিতে বয়ান তৈরি করে মানুষকে হয়রানি করেছে, অধিকার হরণ করেছে। বর্তমান বাংলাদেশে সাংবাদিকতার গুরুত্বপূর্ণ একটি সময় যাচ্ছে। দায়িত্বশীল ও গঠনমূলক সাংবাদিকতা করার সময় এসেছে।

রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘ফ্যাসিবাদমুক্ত গণমাধ্যম চাই’ প্ল্যাটফর্মের উদ্যোগে ‘গণমাধ্যমের ফ্যাসিবাদী বয়ান: ফিরে দেখা ১-৩৬ জুলাই’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন শফিকুল আলম।

শফিকুল আলম বলেন, সাংবাদিকেরা কী ভূমিকা পালন করেন, তার সব থেকে যায়। প্রতিটি দালালি ডকুমেন্টেড (নথিভুক্ত) হয়ে গেছে। ১-৩৬ জুলাই ছাড়াও ২০০৯ সাল থেকে বড় বড় ঘটনার বয়ান তৈরি করেছে এই দালালেরা। বড় কোনো ঘটনার সময়েও ফেসবুকে একটা বড় গ্রুপ, সাংবাদিকদের একটা গ্রুপ বয়ান তৈরি করত। তারা ঘটনাগুলোকে বৈধতা দিত। এগুলো করার মাধ্যমে স্বৈরাচারকে স্থায়ী ও মানুষের অধিকার হরণ করা হয়েছে। মানুষকে মারার বৈধতা দেওয়া হতো।

বিগত স্বৈরাচারী সরকারের আমলে গণমাধ্যমে নিয়োগের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক বিবেচনা ছিল বলে উল্লেখ করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব। তিনি বলেন, মেধা কতটুকু, কী সাংবাদিকতা করে, সেটা মুখ্য বিষয় নয়। ব্যক্তিজীবন, রাজনৈতিক মতাদর্শ কী, সেটা ছিল বিবেচ্য। এসব দেখার জন্য একটি গোষ্ঠী ছিল। জুলাই অভ্যুত্থানে শুধু পত্রিকাতেই দালালি হয়নি, বিভিন্ন ইউটিউব ভিডিও ও টক শোতেও হয়েছে। ভয়াবহ সাংবাদিকতা হয়েছে। এগুলো করার মূল কারণ ছিল পূর্বাচলে একটা প্লট বা অ্যাকাউন্টে অনেক টাকা।

তবে সব সাংবাদিক দালালি করেননি বলে উল্লেখ করেন শফিকুল আলম। তিনি বলেন, এই গণ-অভ্যুত্থানে পাঁচজন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। অনেকে আহত হয়েছেন। অনেকে এখনো ‘ট্রমাটাইজ’ (মানসিক আঘাতগ্রস্ত)। দেশের অনেক পত্রিকা, সাংবাদিকের ভালো ভূমিকা ছিল। অসহনীয় পরিস্থিতির মধ্যে থেকে গত ১৫ বছরে হাসিনাশাহির স্বৈরতন্ত্রের রক্তচক্ষুকে পাত্তা না দিয়ে তারা সাংবাদিকতা করেছে, মৃত্যুর সংখ্যা উল্লেখ করেছে। বাধা সত্ত্বেও ডিজিএফআই, রাজনীতিবিদ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, সাংবাদিক লীগকে উপেক্ষা করে যারা সাংবাদিকতা করেছে, তাদের স্যালুট।

বিগত সরকারের সময়ে যে সাংবাদিকতা হয়েছে, তার ওপর গবেষণা করার আহ্বান জানান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গবেষণা সরকারি উদ্যোগে হলে ধরা হবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে করা হচ্ছে। তাই বেসরকারি উদ্যোগে করতে হবে।

শফিকুল আলম বলেন, এখন স্বাধীন সাংবাদিকতার গুরুত্বপূর্ণ সময় যাচ্ছে। এমন বাংলাদেশ তৈরি করতে হবে, যেখানে কেউ দালালি করবে না। নতুন বাংলাদেশে দায়িত্বশীল ও গঠনমূলক সমালোচনার সাংবাদিকতা করতে হবে। সরকারের বিরুদ্ধে বলা যাবে। প্রমাণসহ যাকে ইচ্ছা সমালোচনা করা যাবে। স্বাধীন সাংবাদিকতা প্রয়োজন, যেখানে প্রতিটা সরকারকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করানো যাবে। এ লক্ষ্যে সরকার কাজ করছে। এ মাসের শেষে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন প্রতিবেদন জমা দেবে।

আলোচনা সভায় ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, তাঁর সংগঠনের দাবি হচ্ছে, একটি গণমাধ্যমও বন্ধ হবে না, কিন্তু গণমাধ্যমে ফ্যাসিবাদের কোনো দোসর থাকবে না। এর জন্য সময় লাগবে। এখনো কিছু গণমাধ্যম ফ্যাসিবাদকে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে যাচ্ছে। এ অবস্থা থেকে ফিরে আসতে হবে। সাংবাদিক কখনো দালালি করে না।

‘ফ্যাসিবাদমুক্ত গণমাধ্যম চাই’ প্ল্যাটফর্মটির মুখপাত্র প্লাবন তারিক অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। প্ল্যাটফর্মটি ১ থেকে ৩৬ জুলাই পর্যন্ত বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত শতাধিক সংবাদ-সম্পাদকীয়কে ‘কেস’ হিসেবে নিয়ে পর্যালোচনা করেছে। সেগুলোর মধ্য থেকে বাছাই করে কালের কণ্ঠ, জনকণ্ঠ ও ভোরের কাগজে প্রকাশিত ১০টি সংবাদ-সম্পাদকীয় এই সভায় মূল প্রবন্ধে উপস্থাপন করা হয়। এই সংবাদগুলোকে ফ্যাসিবাদের বয়ান হিসেবে উল্লেখ করেছে প্ল্যাটফর্মটি।

‘ফ্যাসিবাদমুক্ত গণমাধ্যম চাই’ প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক সাংবাদিক জয়নাল আবেদিন শিশির অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। আরও বক্তব্য দেন উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মাহবুবুল আলম, ছাত্রশিবিরের প্রকাশনা সম্পাদক সাদিক কায়েম প্রমুখ।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে ‘অবদান’ অস্বীকারেই নাখোশ ট্রাম্প

নিজেদের স্বার্থে স্বৈরাচারের দালালি করেছে একদল সাংবাদিক: প্রেস সচিব

আপডেট সময় : ০৫:৪৬:৩৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক: অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় ছাড়াও গত ১৫ বছরে বিগত স্বৈরাচারী সরকারের আমলে সাংবাদিকদের একটি দল নিজেদের সুবিধার আশায় দালালি করেছে। তারা স্বৈরাচারকে স্থায়ী করতে, বৈধতা দিতে বয়ান তৈরি করে মানুষকে হয়রানি করেছে, অধিকার হরণ করেছে। বর্তমান বাংলাদেশে সাংবাদিকতার গুরুত্বপূর্ণ একটি সময় যাচ্ছে। দায়িত্বশীল ও গঠনমূলক সাংবাদিকতা করার সময় এসেছে।

রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘ফ্যাসিবাদমুক্ত গণমাধ্যম চাই’ প্ল্যাটফর্মের উদ্যোগে ‘গণমাধ্যমের ফ্যাসিবাদী বয়ান: ফিরে দেখা ১-৩৬ জুলাই’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন শফিকুল আলম।

শফিকুল আলম বলেন, সাংবাদিকেরা কী ভূমিকা পালন করেন, তার সব থেকে যায়। প্রতিটি দালালি ডকুমেন্টেড (নথিভুক্ত) হয়ে গেছে। ১-৩৬ জুলাই ছাড়াও ২০০৯ সাল থেকে বড় বড় ঘটনার বয়ান তৈরি করেছে এই দালালেরা। বড় কোনো ঘটনার সময়েও ফেসবুকে একটা বড় গ্রুপ, সাংবাদিকদের একটা গ্রুপ বয়ান তৈরি করত। তারা ঘটনাগুলোকে বৈধতা দিত। এগুলো করার মাধ্যমে স্বৈরাচারকে স্থায়ী ও মানুষের অধিকার হরণ করা হয়েছে। মানুষকে মারার বৈধতা দেওয়া হতো।

বিগত স্বৈরাচারী সরকারের আমলে গণমাধ্যমে নিয়োগের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক বিবেচনা ছিল বলে উল্লেখ করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব। তিনি বলেন, মেধা কতটুকু, কী সাংবাদিকতা করে, সেটা মুখ্য বিষয় নয়। ব্যক্তিজীবন, রাজনৈতিক মতাদর্শ কী, সেটা ছিল বিবেচ্য। এসব দেখার জন্য একটি গোষ্ঠী ছিল। জুলাই অভ্যুত্থানে শুধু পত্রিকাতেই দালালি হয়নি, বিভিন্ন ইউটিউব ভিডিও ও টক শোতেও হয়েছে। ভয়াবহ সাংবাদিকতা হয়েছে। এগুলো করার মূল কারণ ছিল পূর্বাচলে একটা প্লট বা অ্যাকাউন্টে অনেক টাকা।

তবে সব সাংবাদিক দালালি করেননি বলে উল্লেখ করেন শফিকুল আলম। তিনি বলেন, এই গণ-অভ্যুত্থানে পাঁচজন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। অনেকে আহত হয়েছেন। অনেকে এখনো ‘ট্রমাটাইজ’ (মানসিক আঘাতগ্রস্ত)। দেশের অনেক পত্রিকা, সাংবাদিকের ভালো ভূমিকা ছিল। অসহনীয় পরিস্থিতির মধ্যে থেকে গত ১৫ বছরে হাসিনাশাহির স্বৈরতন্ত্রের রক্তচক্ষুকে পাত্তা না দিয়ে তারা সাংবাদিকতা করেছে, মৃত্যুর সংখ্যা উল্লেখ করেছে। বাধা সত্ত্বেও ডিজিএফআই, রাজনীতিবিদ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, সাংবাদিক লীগকে উপেক্ষা করে যারা সাংবাদিকতা করেছে, তাদের স্যালুট।

বিগত সরকারের সময়ে যে সাংবাদিকতা হয়েছে, তার ওপর গবেষণা করার আহ্বান জানান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গবেষণা সরকারি উদ্যোগে হলে ধরা হবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে করা হচ্ছে। তাই বেসরকারি উদ্যোগে করতে হবে।

শফিকুল আলম বলেন, এখন স্বাধীন সাংবাদিকতার গুরুত্বপূর্ণ সময় যাচ্ছে। এমন বাংলাদেশ তৈরি করতে হবে, যেখানে কেউ দালালি করবে না। নতুন বাংলাদেশে দায়িত্বশীল ও গঠনমূলক সমালোচনার সাংবাদিকতা করতে হবে। সরকারের বিরুদ্ধে বলা যাবে। প্রমাণসহ যাকে ইচ্ছা সমালোচনা করা যাবে। স্বাধীন সাংবাদিকতা প্রয়োজন, যেখানে প্রতিটা সরকারকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করানো যাবে। এ লক্ষ্যে সরকার কাজ করছে। এ মাসের শেষে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন প্রতিবেদন জমা দেবে।

আলোচনা সভায় ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, তাঁর সংগঠনের দাবি হচ্ছে, একটি গণমাধ্যমও বন্ধ হবে না, কিন্তু গণমাধ্যমে ফ্যাসিবাদের কোনো দোসর থাকবে না। এর জন্য সময় লাগবে। এখনো কিছু গণমাধ্যম ফ্যাসিবাদকে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে যাচ্ছে। এ অবস্থা থেকে ফিরে আসতে হবে। সাংবাদিক কখনো দালালি করে না।

‘ফ্যাসিবাদমুক্ত গণমাধ্যম চাই’ প্ল্যাটফর্মটির মুখপাত্র প্লাবন তারিক অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। প্ল্যাটফর্মটি ১ থেকে ৩৬ জুলাই পর্যন্ত বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত শতাধিক সংবাদ-সম্পাদকীয়কে ‘কেস’ হিসেবে নিয়ে পর্যালোচনা করেছে। সেগুলোর মধ্য থেকে বাছাই করে কালের কণ্ঠ, জনকণ্ঠ ও ভোরের কাগজে প্রকাশিত ১০টি সংবাদ-সম্পাদকীয় এই সভায় মূল প্রবন্ধে উপস্থাপন করা হয়। এই সংবাদগুলোকে ফ্যাসিবাদের বয়ান হিসেবে উল্লেখ করেছে প্ল্যাটফর্মটি।

‘ফ্যাসিবাদমুক্ত গণমাধ্যম চাই’ প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক সাংবাদিক জয়নাল আবেদিন শিশির অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। আরও বক্তব্য দেন উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মাহবুবুল আলম, ছাত্রশিবিরের প্রকাশনা সম্পাদক সাদিক কায়েম প্রমুখ।