ঢাকা ০৬:২০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ০৯ জুন ২০২৫

কৃষকরা লবণের মাঠে প্রথমবার সরিষা চাষে লাভ পেয়ে উচ্ছ্বসিত

  • আপডেট সময় : ০৫:১৪:০২ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • ৪৮ বার পড়া হয়েছে

কৃষি ও কৃষক ডেস্ক: জমির একপাশে চোখ জুড়ানো সরিষা ক্ষেত। আরেক পাশে চলছে লবণ চাষ। সরিষার ক্ষেত ও লবণ মাঠকে ভাগ করেছে ছোট একটি পাকা সড়ক। সম্প্রতি কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার উজানটিয়া ইউনিয়নের কালারপাড়া এলাকায় গিয়ে এমন দৃশ্যের দেখা মেলে।
স্থানীয় কৃষকরা জানিয়েছেন, উজানটিয়া ইউনিয়নে অন্তত চার হাজার একর জমিতে লবণ চাষ হয়। এসব জমিতে কৃষকরা কখনো ধান বা শীতকালীন সবজি চাষের সাহস দেখাননি। তিন বছর ধরে কিছু জমিতে লবণ সহনশীল ধান চাষ করছেন কয়েকজন কৃষক। তা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে শতাধিক কৃষক ধানের পাশাপাশি এখন শর্ষের চাষ করছেন।

সরেজমিন কালারপাড়া এলাকায় দেখা গেছে, উজানটিয়ার নূরীর বাজার যেতে ছোট একটি পাকা সড়ক। এই সড়কের পশ্চিমপাশে শওকত ওসমানের শর্ষের ক্ষেত। আর পূর্ব অংশে ফরিদুল আলমের লবণের মাঠ। দু’জনই ব্যস্ত রয়েছেন জমিতে।
শওকত ওসমান বলেন, ‘দেড় একর জমিতে বিনা-১৪ জাতের শর্ষে চাষ করেছি। এতে ৯০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। লবণ জমি হওয়ায় ফলন কম হলেও জমিকে লবণসহিষ্ণু ফসল উৎপাদনের উপযোগী করছি। লাভ না হলেও লোকসান হবে না।’ প্রথমবারের মতো শর্ষে চাষ করেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘গত বোরো মৌসুমে ধান চাষ করেছিলাম। ফেব্রুয়ারি থেকে আমন চাষ করব। বোরো ও আমনের মাঝখানের সময়টাতে জমি খালি পড়ে থাকে। এই সময় শর্ষে চাষ করা যাচ্ছে। মাঠ থেকে শর্ষে তুলতে ৬০ থেকে ৬৫ দিন লাগে।’

শুধু শওকত ওসমান নয়, উজানটিয়া ইউনিয়নের গোদারপাড়া, মিয়ারপাড়া, করিয়ারদিয়া এলাকায় অন্তত ১১০ জন চাষি এ বছর শর্ষে চাষ করেছেন। কৃষকদের শর্ষের ক্ষেতের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা যায়। কেউ কেউ মাঠ থেকে শর্ষে কাটছিলেন।
দীর্ঘদিন লবণের মাঠ হিসেবে ব্যবহৃত এসব জমিতে শর্ষের ফলন হওয়ায় কৃষকরা বেশ খুশি। তাদের কাছে লবণের মাঠের পাশে শর্ষের ফলন যেন মরুর বুকে হলুদ-সবুজ গালিচার মতো। মিয়ারপাড়া এলাকার চাষি আবদুর রশিদ বলেন, ‘প্রথমবার শর্ষে চাষ করে লাভের মুখ দেখেছি। স্থানীয় কৃষি অফিস সার ও বীজ দিয়ে সহযোগিতা করেছে। সার্বক্ষণিক তদারকি করেছেন কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা।’

পেকুয়া উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. শামশুদ্দিন বলেন, উজানটিয়ার সব জমিতে লবণ চাষ হতো। তেল ফসল উৎপাদন প্রকল্পের আওতায় সেখানে চাষিদের নানা সহায়তার মাধ্যমে শর্ষে চাষে উৎসাহিত করা হচ্ছে। আগামী মৌসুমে আরও বড় পরিসরে শর্ষে চাষের চেষ্টা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, প্রথমে কিছু এলাকায় সরকারিভাবে নলকূপ বসানো হয়। এই নলকূপের পানি দিয়ে লবণ জমিতে ফসল উৎপাদন করা হচ্ছে। শর্ষে ছাড়াও উজানটিয়ার কিছু এলাকায় ধান ও শীতকালীন সবজির চাষ হচ্ছে।
পেকুয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ রাসেল বলেন, ‘পেকুয়া উপজেলার মধ্যে উজানটিয়ার জমি বেশি লবণাক্ত। এ বছর আমরা তেল ফসল উৎপাদন প্রকল্পের আওতায় ১১০ কৃষককে ৪২ হেক্টর জমির জন্য বীজ, সার ও কীটনাশক দিয়েছি। প্রথমবারেই মোটামুটি ভালো ফলন হয়েছে।’ তিনি বলেন, পেকুয়া উপজেলায় চলতি বছর অন্তত ২৩৮ হেক্টর শর্ষের চাষ হয়েছে। এর মধ্যে উজানটিয়া ইউনিয়নে শর্ষে চাষ হয়েছে ৪২ হেক্টর জমিতে।

 

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

কৃষকরা লবণের মাঠে প্রথমবার সরিষা চাষে লাভ পেয়ে উচ্ছ্বসিত

আপডেট সময় : ০৫:১৪:০২ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

কৃষি ও কৃষক ডেস্ক: জমির একপাশে চোখ জুড়ানো সরিষা ক্ষেত। আরেক পাশে চলছে লবণ চাষ। সরিষার ক্ষেত ও লবণ মাঠকে ভাগ করেছে ছোট একটি পাকা সড়ক। সম্প্রতি কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার উজানটিয়া ইউনিয়নের কালারপাড়া এলাকায় গিয়ে এমন দৃশ্যের দেখা মেলে।
স্থানীয় কৃষকরা জানিয়েছেন, উজানটিয়া ইউনিয়নে অন্তত চার হাজার একর জমিতে লবণ চাষ হয়। এসব জমিতে কৃষকরা কখনো ধান বা শীতকালীন সবজি চাষের সাহস দেখাননি। তিন বছর ধরে কিছু জমিতে লবণ সহনশীল ধান চাষ করছেন কয়েকজন কৃষক। তা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে শতাধিক কৃষক ধানের পাশাপাশি এখন শর্ষের চাষ করছেন।

সরেজমিন কালারপাড়া এলাকায় দেখা গেছে, উজানটিয়ার নূরীর বাজার যেতে ছোট একটি পাকা সড়ক। এই সড়কের পশ্চিমপাশে শওকত ওসমানের শর্ষের ক্ষেত। আর পূর্ব অংশে ফরিদুল আলমের লবণের মাঠ। দু’জনই ব্যস্ত রয়েছেন জমিতে।
শওকত ওসমান বলেন, ‘দেড় একর জমিতে বিনা-১৪ জাতের শর্ষে চাষ করেছি। এতে ৯০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। লবণ জমি হওয়ায় ফলন কম হলেও জমিকে লবণসহিষ্ণু ফসল উৎপাদনের উপযোগী করছি। লাভ না হলেও লোকসান হবে না।’ প্রথমবারের মতো শর্ষে চাষ করেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘গত বোরো মৌসুমে ধান চাষ করেছিলাম। ফেব্রুয়ারি থেকে আমন চাষ করব। বোরো ও আমনের মাঝখানের সময়টাতে জমি খালি পড়ে থাকে। এই সময় শর্ষে চাষ করা যাচ্ছে। মাঠ থেকে শর্ষে তুলতে ৬০ থেকে ৬৫ দিন লাগে।’

শুধু শওকত ওসমান নয়, উজানটিয়া ইউনিয়নের গোদারপাড়া, মিয়ারপাড়া, করিয়ারদিয়া এলাকায় অন্তত ১১০ জন চাষি এ বছর শর্ষে চাষ করেছেন। কৃষকদের শর্ষের ক্ষেতের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা যায়। কেউ কেউ মাঠ থেকে শর্ষে কাটছিলেন।
দীর্ঘদিন লবণের মাঠ হিসেবে ব্যবহৃত এসব জমিতে শর্ষের ফলন হওয়ায় কৃষকরা বেশ খুশি। তাদের কাছে লবণের মাঠের পাশে শর্ষের ফলন যেন মরুর বুকে হলুদ-সবুজ গালিচার মতো। মিয়ারপাড়া এলাকার চাষি আবদুর রশিদ বলেন, ‘প্রথমবার শর্ষে চাষ করে লাভের মুখ দেখেছি। স্থানীয় কৃষি অফিস সার ও বীজ দিয়ে সহযোগিতা করেছে। সার্বক্ষণিক তদারকি করেছেন কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা।’

পেকুয়া উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. শামশুদ্দিন বলেন, উজানটিয়ার সব জমিতে লবণ চাষ হতো। তেল ফসল উৎপাদন প্রকল্পের আওতায় সেখানে চাষিদের নানা সহায়তার মাধ্যমে শর্ষে চাষে উৎসাহিত করা হচ্ছে। আগামী মৌসুমে আরও বড় পরিসরে শর্ষে চাষের চেষ্টা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, প্রথমে কিছু এলাকায় সরকারিভাবে নলকূপ বসানো হয়। এই নলকূপের পানি দিয়ে লবণ জমিতে ফসল উৎপাদন করা হচ্ছে। শর্ষে ছাড়াও উজানটিয়ার কিছু এলাকায় ধান ও শীতকালীন সবজির চাষ হচ্ছে।
পেকুয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ রাসেল বলেন, ‘পেকুয়া উপজেলার মধ্যে উজানটিয়ার জমি বেশি লবণাক্ত। এ বছর আমরা তেল ফসল উৎপাদন প্রকল্পের আওতায় ১১০ কৃষককে ৪২ হেক্টর জমির জন্য বীজ, সার ও কীটনাশক দিয়েছি। প্রথমবারেই মোটামুটি ভালো ফলন হয়েছে।’ তিনি বলেন, পেকুয়া উপজেলায় চলতি বছর অন্তত ২৩৮ হেক্টর শর্ষের চাষ হয়েছে। এর মধ্যে উজানটিয়া ইউনিয়নে শর্ষে চাষ হয়েছে ৪২ হেক্টর জমিতে।