ঝিনাইদহ সংবাদদাতা : পহেলা ফাল্গুন, ভালোবাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে ঘিরে ঝিনাইদহের ফুলচাষিরা পার করছেন ব্যস্ততম সময়। সারা দেশে ফুলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। আর এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে জেলার ফুলচাষিরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন ফুল পরিচর্যা, সংগ্রহ ও বাজারজাত করার কাজে। ভোরের আলো ফোটার আগেই চাষিরা নেমে পড়েন ক্ষেতে। গাঁদা, গোলাপ, রজনীগন্ধা, চন্দ্রমল্লিকা, গ্লাডিওলাসসহ নানা জাতের ফুল সংগ্রহের কাজ চলে টানা দুপুর পর্যন্ত। এরপর ফুলগুলো ঝিনাইদহ সদর উপজেলার গান্না, কালীগঞ্জ উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা, মহেশপুর উপজেলার নেপা বাজারে পাইকারদের কাছে বিক্রি করা হয়।
এই ফুলগুলো হাত বদলে পৌঁছে যায় ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে। সারাদেশে গাঁদা ফুলের ৭০ শতাংশ চাহিদা মিটে ঝিনাইদহ থেকে। ঝিনাইদহ সদর উপজেলার গান্না ইউনিয়নের চান্দের পোল এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে ফুলের চাষ করেন সোলাইমান হোসেন ও তার বাবা। নতুন করে এক বিঘা জমিতে জারবারা ফুলের চাষ করেছেন। বর্তমানে ১ একর জমিতে চন্দ্রমল্লিকা, জারবারা, গোলাপ ও গাঁদা ফুলের চাষ করেন। এসময় দেখা যায়, সামনে বিশেষ দিবসকে ঘিরে ফুল গাছের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছে সোলাইমান ও তার বাবা। অন্যদিকে শ্রমিক দিয়ে চন্দোমল্লিকা বাগান থেকে ফুল উঠানো হচ্ছে বিক্রয়ের জন্য। গোলাপ বাগানে ফুলে ক্যাপ পরিয়ে রাখা হয়েছে। জারবারা শেডেও নেওয়া হচ্ছে বাড়তি যত্ন, যেন আগামী দিবসে বাড়তি দামে বাগানের ফুলগুলো বিক্রি করতে পারে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য মতে, ঝিনাইদহে ২২৪ হেক্টর জমিতে ফুলের চাষ হচ্ছে। ঝিনাইদহ সদর উপজেলা ২৭ হেক্টর, কালীগঞ্জে ৭৫ হেক্টর, কোটচাঁদপুরে ৫২ হেক্টর এবং মহেশপুরে ৭০ হেক্টর। এর মধ্যে সব থেকে ঝিনাইদহ ও কালীগঞ্জে গাঁদা ফুলের চাষ বেশি হয়ে থাকে। আর এই ফুল সারাদেশের মধ্যে বিখ্যাত। ফুলচাষি সোলাইমান বলেন, দিবস বিবেচেনায় বিভিন্ন সময় ফুলের দাম কম বেশি হয়ে থাকে। বিশেষ দিবসকে ঘিরে ফুলের চাহিদা বেশি থাকে। এ কারণে ফুলের বাড়তি যত্ন নেওয়া হয়। গত বছর ফুলের বাজার অনেক ভালো ছিল, এ বছর একটু কম। তবে ১৪ ফেব্রুয়ারি, বসন্ত বরণ ও ২১ ফেব্রুয়ারি ফুলের দাম বেশি পাব বলে আশা করছি। গান্না বাজারে ফুল ব্যবসয়ী সোহাগ হোসেন বলেন, গত কয়েকদিন আগেও ফুলের বাজার অনেক কম ছিল। বর্তমানে ফুলের চাহিদা বেড়েছে। আর ঝিনাইদহের গাঁদা ফুল সারাদেশে বিক্ষাত। আজকের ফুলের বাজার গাঁদা ফুল মান ভেদে ২৫০ টাকা থেকে ৩৬০ টাকা ঝুপা, গোলাপ ২০ থেকে ২৫ টাকা পিস, জারবারা ৮ থেকে ১০ টাকা পিস, রজনীগন্ধা ৬ টাকা থেকে ৭ টাকা পিস, গ্ল্যাডিওলাস ১০ থেকে ১২ টাকা পিস পাইকারি বিক্রয় হয়েছে। ফুল চাষি রাজু বলেন, এ সময়টাতে ফুলের ভালো দাম পাওয়া যায়।
বিশেষ করে ১৩ ও ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে গোলাপের চাহিদা সবচেয়ে বেশি থাকে। একুশে ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা দিবসে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে রজনীগন্ধা, গ্লাডিওলাস, গাঁদার চাহিদা থাকে তুঙ্গে। বাজারে ফুলের দাম একটু কম হলেও চাহিদা আছে। তবে সামনে ফুলের বাজার আরও বাড়বে। জেলা ফুল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি জমির হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, সামনে সরস্বতী পূজা, পহেলা ফাল্গুন, ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবস এবং একুশে ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ফুলের চাহিদা বেশি থাকে। আর এই দিবসকে ঘিরে ঝিনাইদাহ থেকে ৫০ কোটি টাকার বেশি ফুল বিক্রয় করার টার্গেট রয়েছে। তিনি বলেন, গত বছর একটি গোলাপ বিক্রয় হয়েছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা, সেখানে বর্তমান বাজারে বিক্রয় হচ্ছে সবোর্চ্চ ২৮ টাকা। এবছর ফুলের অনেক উৎপাদন বেড়েছে। ফুলের বিভিন্ন ভ্যারাইটি উৎপাদন হচ্ছে, যার মধ্যে লিলিয়াম, গ্লাডিওলাস, গোলাপ, জারবারা, টিউলিপ, চন্দ্রমল্লিকাসহ বিভিন্ন ধরনের ফুলের চাষ হচ্ছে। ঝিনাইদহ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. নূর-এ-নবী বলেন, বসন্ত বরণ, ভালোবাসা দিবস ও একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ঝিনাইদহে ফুল চাষীরা ব্যস্ত সময় পার করছে। এখন তারা প্রতিনিয়ত ফুল তুলছে এবং বিক্রয় করছে।
এই ফুলগুলো দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠিয়ে দিচ্ছে। কিছুদিন আগে ফুলের যে দাম ছিল তার থেকে এখন দাম বেশি পাচ্ছে। যারফলে কৃষকরা লাভবান হচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর আশা করছি এই তিন দিবসকে ঘিরে গান্না বাজার থেকে ২০ কোটি টাকার ফুল বিক্রয় হবে।